জেলাসবতী বউ । পর্ব -০১



আপনি আমাকে একটুও ভালবাসেন না। আমি কি খুব খারাপ? আমি কি ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না। ( তিথি ছল ছল চোখে তাকাল আমার দিকে)

আমি আশ্চর্য হলাম। হওয়ারই কথা। তিথি আমার পিচ্চি অর্ধাঙ্গিনী।
বয়স ১৭/১৮ হবে। যে তিথি বাসর রাতেই আমাকে ওর কাছে যেতে মানা করেছিলো।
সে নিজেই এখন বলছে, আমি ওকে ভালোবাসি না কেনো? বেশ বড়সড় ধাক্কা খেলাম।
হয়তো জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকছে। জ্বরের ঘোর কেটে গেলেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
এখন চলুন আপনাদের পিছনের ফ্লাসব্যাকে নিয়ে যাই।
( ফ্লাসব্যাকঃ - বাসর রাতে)
আমি দরজা টেলে রুমে ডুকতেই দেখলাম আমার পিচ্চি বউ খাটের এক কোনে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। আমি মুচকি হেসে দরজা লাগিয়ে একটু এগিয়ে গেলাম।
আমি গিয়ে খাটে বসতে বসতে বললাম,
- একি তিথি তুমি এভাবে বসে আছো কেনো?
তিথি কোনো কথা বলছে না। ধড়ধড় করে ঘামছে। আমি একটু ভয় পেলাম।
মেয়েটার জ্বর-টর এলো নাকি।
- তোমার জ্বর উঠেছে নাকি?
হাত এগিয়ে দিতেই তিথি পিছনে সরে গেলো।
- আপনি আমার কাছে আসবেন না বলছি।
- কেনো?
- আপনি খারাপ মানুষ। বুড়ো হয়ে আমার মতো পিচ্ছি মেয়েকে বিয়ে করেছে।
অবশ্য বিয়ে করেননি টাকা দিয়ে কিনেছেন।
( কাঁদতে কাঁদতে বলল তিথি)
আমি মুচকি হাসলাম। এইটুকু একটা মেয়ের মনে এমন ধারনা থাকাটাই স্বাভাবিক।
এখনোতো বিয়ের জন্য উপযুক্ত নয়। আর আমিতো এখনই অধিকার ফলাচ্ছি না।
আমার পিচ্ছি বউকে সময় দিবো। যখন ওও এডাল্ট হবে তখনই অধিকার নিয়ে যাবো ওর কাছে।
- তিথি, তুমি ভুল বুঝছো। আমি তো টাকা দিয়ে তোমার বাবা-মাকে সাহায্য করেছি।
টাকার বিনিময়ে বিয়ে করি নি তোমাকে।
- আপনি মিথ্যা বলছেন। আপনি একটা খারাপ লোক।
আপনি আমার মতো একটা পিচ্চি মেয়েকে কিনেছেন আপনার চাহিদা মেটানোর জন্য।
- আচ্ছা, আচ্ছা যাও কিনেছি। এখন এদিকে আসো দেখি তোমার জ্বর উঠেছে কি না?
আমি একটু এগিয়ে যেতেই তিথি বিছানা থেকে উঠে পড়ল।
- ছুবেন না আমায়। আমি কান্না করব কিন্তু।
- আরে, তিথি ভয় পাচ্ছো কেনো? আমি তোমার স্বামী। কিচ্ছু করবো না এদিকে আসো।
- না, আসবো না।
- আহা, আসো না।
- আসবো না বললাম তো। আপনি যদি আমার কাছে আসার চেষ্টা করেন।
আমি চিৎকার করব কিন্তু।
- আচ্ছা, যাবো না তোমার দিকে। এখন বসো বিছানায়।
ভয় পেয়ো না আমাকে। কিছু করব না তোমাকে।
- সত্যি বলছেন তো।
( পিচ্চিদের মতো বলল)
আমি হেসে দিলাম,
- হুম।
তিথি ভয়ে ভয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বিছানায় এসে বসল।
আমার থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বসেছে।
- তুমি এই বিয়েতে রাজি ছিলে না?
- না।
- কেনো? আমি দেখতে খারাপ, বুড়ো।
তিথি কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখল আমাকে। আমি এমন অবস্থা দেখে হেসে দিই।
- নাহ, আপনি কিছুটা বুড়ো হলেও যথেষ্ট হ্যান্ডসাম।
মাথা নিচু করে বলল।
- তাহলে...
- আমি এখন বিয়ে করতে চাইনি। পড়তে চাই।
( অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল আমার দিকে)
- ওও, তাই।
- হুম।
- তা কোন ক্লাসে পড়ো তুমি।
- এস,এস,সি দিয়েছি।
- ওও, কি গ্রেড পেয়েছো?
- গোল্ডেন এ+।
- ওমা তাই নাকি , ভালো তো। তুমি তো খুব ভালো ছাত্রী।
- আপনি শুধু ভালো বলছেন। আমি পুরো বিদ্যালয়ের ফাস্ট ছিলাম।
- ওও, তাই। হুম গুড গার্ল। কলেজে ভর্তি হতে চাও।
- হুম, চাইতো। কিন্তু, আপনি আমার সব সপ্ন নষ্ট করে দিলেন।
চোখ থেকে টপ করে পানি পড়ল। আমি একটু এগিয়ে গেলাম। চোখের পানি মুছে দিলাম।
- আহা! কাঁদছ কেনো?
তিথি একটু ভয় পেলেও কিছু বলল না।
- আচ্ছা, এখন যদি তোমাকে আমি কলেজে ভর্তি করিয়ে দিই।
- সত্যি...
খুশিতে জ্বলমল করে উঠল তিথি।
- হুম, কিন্তু আমারও যে কিছু চাই।
এবার তিথির মুখ কালো হয়ে গেলো। নিমিষেই মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো।
ভয়ের আধার হয়ে গেলো মুখ। আমার কাছ থেকে সরে গেলো।
- কিক কি?
তোতলাতে তোতলাতে বলল।
আমি ইশারা দিয়ে স্মাইল দেয়ার কথা বললাম। তিথি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
- কি হলো? স্মাইল করো।
- সত্যি, আপনি..
- হ্যা, আমি তোমার মুখের হাসি দেখতে চাই।
তিথি আশ্চর্যের মধ্যেও একটু হাসল।
- এখন যাও। ফ্রেস হয়ে শাড়ি পালটে এসে শুয়ে পড়ো।
তিথি মাথা নাড়াল।
পরদিন তিথিকে নিয়ে কলেজে ভর্তি করিয়ে দিলাম। তিথি সেই খুশি।
আমাকে জরিয়ে ধরল অজান্তে। পরে একটু লজ্জা পেয়ে ছেড়ে দিল,
- ধন্যবাদ। আসলে আমার মা-বাবা কখনো আমাকে কলেজে ভর্তি করাতো না।
পয়সার অভাবে সংসারই চলে না আর কলেজে পড়া।
মলিন হয়ে গেলো তিথির মুখ।
- উহু, তুমি তোমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছো না।
তিথি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাল আমার দিকে।
আমি ইশারায় স্মাইল দেয়ার ইঙিত করলাম। তিথি হেসে দিলো।
|
আসলে তিথিকে আমি টাকার মাধ্যমেই বিয়ে করেছি।
বিয়েতে কোনো ইন্টেরেষ্ট ছিল না আমার।
নিজেদের কোম্পানি আর ব্যবসা দেখাশুনা করেই বয়স পেরিয়ে যাচ্ছিল।
এখনতো ৩০ এর কৌটায় পড়ে গেছে। মা-বাবা তাড়া করল বিয়ের জন্য।
কি আর করা বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা শুরু হলো।
সেদিন অফিস থেকে বেরনোর সময় দেখলাম দাড়ওয়ান চাচা বসে কাঁদছেন।
আমি এগিয়ে গিয়ে চাচার কাধে হাত রাখলাম।
- কি হয়েছে চাচা?
চাচা চোখের পানি মুছে নিলেন। মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন,
- কিছু না সাহেব।
আমি রেগে গেলাম,
- চাচা, আপনিতো জানেনই আমি মিথ্যা বলা পছন্দ করি না। তবুও তুমি....
চাচা কেঁদে দিলেন।
- সাহেব, কি বলমু? মাস শেষে যা বেতন পাই তা দিয়ে আগে চললেও এখন আর চলে না।
মেয়ের লেখাপড়া, ঘরভাড়া। এখনতো দুইদিন ধরে চুলোয় আগুনও জ্বলছে না।
আমার মাইয়াটা না খাইয়া মইরা যাইব। হাতে টাকা কড়িও নাই।
আমি রাগ দেখিয়ে বললাম,
- তুমি আমাকে বলতে পারতে। আর সাহেব সাহেব কি?
আমি ছেলের মতো তোমার। নাম ধরেই ডাকবে।
আর এই নাও টাকা এগুলো দিয়ে তোমার বাসা ভাড়া আর কিছু খাবার নিয়ে বাসায় যাও।
আজ আর কাজ করতে হবে না...
চাচা কেঁদে দিলেন।
- আহা, কাঁদছ কেনো?
- তুমি মানুষ না বাবা দেবতা।
- এরকম বলতে নেই। এখন যাও বাসায়।
আমি এগিয়ে যেতেই তিনি আমার হাত ধরলেন।
- কিছু বলবে চাচা?
চাচা আমার পায়ে পড়ে গেলেন।
- আমার মাইয়াটারে তুমি বিয়া কইরা নেও বাজান। দুই বেলাতো খাইতে পারবে।
- আরে চাচা উঠুন কি করছেন?
- না, বাবা। তুমি আমার মেয়েকে বিয়া কইরা নাও। আমার মাইয়াটা খুব সুন্দর। আপনার পছন্দ হইব।
- চাচা, লাগবে না। তুমি বিপদে পড়লে বইল আমি এমনিতেই সাহায্য করব।
- না, বাবা। তুমি বিয়া কইরা নেও।
- আরে চাচা পায়ে পড়ছেন কেনো? আচ্ছা, আমি দেখছি।
তারপর আর কি? তিথিকে বিয়ে করে নিলাম। আসলেই মেয়েটা খুব পিচ্ছি।
|
( বর্তমানে)
- এই আপনি কথা বলছেন না কেনো? আমি সত্যিই খারাপ। আপনি আমাকে ভালোবাসেন প্লিজ।
( কাঁদতে কাঁদতে বলল)
- কে বলল তুমি খারাপ? তুমি তো আমার সবচেয়ে ভালো বউ।
- তাহলে, আমাকে ভালোবাসেন না কেনো? আর আপনার আর কয়টা বউ আছে।
আমি হেসে দিলাম।
- আর কেউ নেই। এই একটাই।
- তাহলে, আমি কি পচা? আমাকে আপনি একটুও ভালোবাসেন না কেনো?
- তুমি এখনি যদি ঘুমিয়ে পড়ো তাহলে আমি তোমাকে ভালোবাসব।
এখন তুমি ঝটপট ঘুমিয়ে পড়ো।
তিথিকে আমার বুকে আগলে ধরে বললাম।
- না, আগে আমাকে ভালোবাসেন।
- আহা, ঐষধ খেয়েছো এখন তোমাকে ঘুমুতে হবে।
আর বললাম তো আমি তোমাকে ভালোবাসব।
- সত্যি তো।
বুক থেকে মুখ তুলে তাকাল আমার দিকে।
- হুম।
তিথি আমার বুকে ঘুমিয়ে পড়ল।
.
চলবে...
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url