Breaking News

এক প্রতিবাদী নারীর জীবন যুদ্ধের গল্প । পর্ব- ৪২

শ্বাশুড়ি আম্মা বয়স হয়েছে এবার তো খাবার দেখে লালা ঝরানো বন্ধ করুন।
আমি আবার নিজের জিনেসে অন্যের নজর সহ্য করতে পারি না।
সাজ্জাদের বৌয়ের কথা শুনে লিলি বেগম বললো,এই বৌ আমি কিছু বলছি না বলে আমাকে তুমি যা নয় তা বলে যাচ্ছো ব্যাপারটা কি!
এটা কেন ভুলে যাচ্ছো আমি তোমার স্বামীর মা হয়।
আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলবে বুঝলে?
লিলি বেগমের কথা শুনে সাজ্জাদের বৌ ক্ষেপে বলল, সম্মান মাই ফুট।
শুধুমাত্র আপানাদের জন্য আমার কলিজার টুকরা ভাই জেলে কি ভেবেছেন আমি তা ভুলে গেছি!
আর যেখানে আপনার ছেলেকেই ভয় পায় না আমি সেখানে আপনি কোন ক্ষেতের মুলা শ্বাশুড়ি আ…ম্মা…..।
ও আরেকটি কথা না বলে পারছি না,ভবিষ্যৎ এ যদি আমার স্বামীর আনা কিছু আমায় না বলে খান তো জিহ্বার স্বাদ সারাজীবনের জন্য ঘুচিয়ে দিবো।
কথাটা মনে রাখবেন।
লিলি সাজ্জাদের বৌয়ের কথা শুনে কি বলবে ভেবে পায় না।
সেদিনের আসা মেয়ে কিনা তাকে অপমান অপদস্থ করছে ।
সে এই দুঃখ কোথায় রাখবে?
লিলি বেগমের এমন কপাল যে এই মেয়েটা সব সময় তার সাথে এতো বাজে আচরণ করে।
সে একটা কথা বললে তাকে তিনটা শুনিয়ে দেয় ।
তবুও আমার ছেলে ও স্বামীর কাছে ও ভালো।
ও আমার সাথে এমন আচরন করে সে কথা আমার স্বামী এবং ছেলেরা বিশ্বাস করতে চায় না।
অবশ্য তার কারণও আছে, সাজ্জাদের বৌ কখনো ওর স্বামী বা শ্বশুড়ের সামনে উচ্চস্বরে কথা পর্যন্ত বলে না।
তারা জানে মেয়েটা নরম ভদ্র স্বভাবের ।
তাইতো লিলি বেগম কয়েকবার সাজ্জাদের কাছে ওর বৌয়ের নামে বিচার দিয়েছে।
মায়ের স্বভাব সম্পর্কে সাজ্জাদ তো আগে থেকেই অবগত ছিল সেজন্য মায়ের কথা তেমন আমলে নেয়নি।
আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে , নিজের বৌকে সাজ্জাদ জমের মতো ভয় পায়।
তাছাড়া সাজ্জাদ তো এখন নিজেকে নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত যে এসব শুনার সময় কোথায়?
আর লিলি বেগম আলমাস চৌধুরীর সাথে এসব কথা বলতে গেলেই বলবে, আমাকে কোনো ঝামেলায় ঝরাবে না।
তোমাদের মেয়েলি ঝগড়ায় আমি কিছুতেই নেয়।
আলমাস চৌধুরীর কথা শুনে লিলি ক্ষেপে আলমাস চৌধুরীকে কিছুক্ষণ বকাঝকা করে থেমে যান
আজকাল লিলি বেগমের মনে হয় সে একা হয়ে গেছে।
আগে তো তার সব কাজে শৈলী ভাবী থাকতো কিন্তু নিজের স্বার্থে শৈলী ভাবীকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
এই বাড়িতে এখন লিলির বেগমের কথা বলার মতো যদি কেউ থাকে তো সে হচ্ছে সাদ।
কারণ সাদ আজকাল বাড়িতে বেশি কাটায় বিশেষ করে তার রুমেয় থাকে অফিস টাইম ছাড়া।
সাদ বাড়িতে থাকলেও না থাকার মতো পড়ে থাকে। লিলি বেগমের কথা শুনা বা দাম দেওয়ার সময় কোথায়?
সাদ তো ক’দিন ধরে একা একা থাকে।
ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না।
ঘুমায় না।
যে ছেলে বাসার থাকলে সবাইকে আনন্দে মেতে রাখতো সে সাদ কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে।
এখন যে সাদ আছে সে কথায় কথায় রেগে যায় ।
যতক্ষন বাসায় থাকে হয় ছাদে না হয় নিজের রুমের মধ্যে অন্ধকার করে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে।
এখন তো ওর সাথে কোনো কথায় বলা যায় না।
লিলি বেগম ভেবে পায় না তার এমন হাসি খুশি ছেলেটার হঠাৎ করে কি এমন হলো যে নীরব হয়ে গেছে।
মাঝে মাঝে ছেলের এমন নির্লিপ্ততা দেখে রাগ হয় কিন্তু তাতে সাদের কিছু এসে যায় না।
সাদের মনে হয় রেশমাকে ছাড়া এই পৃথিবীতে বেঁচে আছে এটাই তো বেশি।
এই জীবনে আর কখনো হয়তো তার কাছে আগের মতো হবে না।
তার প্রিয়তমা এখন অন্যের স্ত্রী এ কথাটি ভাবলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না সাদ।
রেশমাকে অন্যের স্ত্রী রূপে দেখে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকা কতটা কঠিন তা এ ক’দিনে হারে হারে টের পাচ্ছে।
সাদ মাঝে মাঝে অবাক হয় যে ভালোবাসা কখনো ডানা মেলে খোলা আকাশে উড়তে পারিনি।
যে ভালবাসা ছিল শুধু এক পক্ষিক তার গভীরতা এতো কেন?
অন্যদিকে মৌরি শানকে নিয়ে কিছু ভাবতে চায় না তবুও কিছু ভাবনা মাথায় এসে পড়ে।
ইদানিং শানের পরিবর্তন চোখে পড়ার মতো ।
শান এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে চেষ্টা করে, অফিসে থেকে এসে বাবার সেবা যত্ন করে।
কারো সাথে উচ্চস্বরে কথা বলে না , এমনকি কাজের লোকের সাথেও নরম হয়ে কথা বলে।
প্রতিদিন লুকিয়ে লুকিয়ে নিজের ছেলে ও মৌরিকে দেখে তবে ওদের কাছে যায় না মৌরি রাগ করবে সেজন্য।
শানের এই পরিবর্তন থেকে মৌরি শুধু একটা কথায় ভাবে সে আগে মৌরির কথা কেনো একটুও ভাবেনি ।
সেই তো ভালো হয়েছে।
কেন বিয়ের পর মৌরিকে নিজের স্ত্রী রুপে মেনে নেয়নি।
কেন শান আজকের মতো কোমলতা সেদিন মৌরির মায়ের সাথে দেখায়নি।
সেদিন যদি মৌরির মায়ের প্রতি কোমলতা দেখাতো তাহলে ওদের জীবন এমন হতো না।
মৌরির ও স্বামী সন্তান নিয়ে একটা সুখের সংসার থাকতো।
তালাক না হয়েও
সমাজের চোখে স্বামীর পরিত্যক্ত হয়ে থাকতে হতো না।
জীবনে সফল তো সে হয়েছে তবে এখানে আসতে মানুষের কম অপমান , লাঞ্ছনা গঞ্জনা সহ্য করতে হয়নি।
স্বামী পাশে ছিল না বলে কতো পুরুষের বাঁকা চোখের স্বীকার হয়েছে।
এসব কিছু হয়েছে শানের জন্য ।
তাই শানের পরিবর্তনে মৌরির এখন কিছু যায় আসে না।
ইদানিং মৌরির মনে প্রশ্ন জাগে তার কারণে মেহরাব বাবার আদর থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে না তো?
সে নিজের স্বার্থে শানের কাছে থেকে মেহরাবকে দূরে সরিয়ে রাখছে না তো?
ছেলে যদি বড় হয়ে বলে, আমার বাবা না হয় কিছু একটা ভুল করেছে তাই বলে তুমি আমায় আমার বাবার আদর থেকে বঞ্ছিত করলে?
বাবা তো তোমার কাছে কতবার মাফ চেয়েছে তবুও তুমি নিজের জেদ ভুলে তাকে মাফ করতে পারলে না মা?
সেদিন মৌরি ছেলের প্রশ্নের কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না!
আচ্ছা মেহরাব কী সেদিন আমার কষ্ট ,ত্যাগ ও আজকের পরিস্থিতি বুঝবে ?
বুঝবে না কেন অবশ্যই আমার ছেলে তার মা’কে বুঝবে মেহরাব তো অন্য সব বাচ্চাদের মতো নয় যে সে তার মা’কে ঠিক বুঝে।।
মৌরি প্রশ্নটা নিজেকে করে উত্তরও নিজেই দিল।
তবে হ্যাঁ ,সেদিন আগুনে থেকে রেশমাকে সাদ ও শান
ওর বোনকে বাঁচিয়েছে সেজন্য মৌরি শানদের প্রতি কৃতজ্ঞ তবে এর বেশি কিছু না।
পাঁচ মাস পর
ভাগ্যের ফেরে আজকে যে ধনী আগামীকাল সে গরীব।
আজকে অর্থের জোরে তুমি যাকে অবহেলা অবজ্ঞার চোখে দেখছো,
আগামীতে তার পানে হয়তো সাহায্যে চাওয়া লাগতে পারে ।
কেও কী বলতে পারে তার ভবিষ্যৎ কী?
তাইতো সময় থাকতে নিজেকে শুধরে নিতে হয়।
এক সময় লিলি বেগমের অহংকারে পা মাটিতে পরতো না।
এই তো কিছু দিন আগের কথা ছেলেদের ও স্বামীর রোজগার নিয়ে কতো বড়াই করলো শানের মায়ের সাথে।
শানের বোন জেবাকে যা নয় তা বললো।
শানের বাবা যখন সংসার চালাতো তখন কিন্তু শানের মা শৈলী কখনো লিলির সাথে খারাপ আচরণ করেনি।
শৈলী যদি কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করে থাকে সে হচ্ছে মৌরি।
এছাড়া শৈলী লিলি বা অন্য কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি।
কিন্তু মাত্র অল্প কিছুদিন লিলির স্বামী ও ছেলেদের টাকায় এই সংসার চালানো হয়েছে।
সে সময়ে লিলি বেগমের পা যেনো মাটিতে পড়তে চাচ্ছিল না।
দিন রাত শৈলী কে কথা শুনাতে মুখিয়ে থাকতেন।
পান থেকে চুন খসলেই কোমরে আঁচল গুঁজে ঝগড়া করতে নেমে পড়তেন।
আর যে শৈলী বেগমের দাপটে ও কটু কথা কারণে মৌরি কোণঠাসা হয়ে পড়তো।
সে শৈলী নিজেই ছোট ঝায়ের দাপটে কোণঠাসা হয়ে গেছে।
সময়ের সাথে সব কিছু বদলে যায় তাইতো মৌরির জায়গাতে শৈলী এসেছে।
আর প্রকৃতি তো আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো ধরা বাধা নিয়ম মেনে চলে না।
যে টাকা খেয়ে ন্যায় কে অন্যায় বানিয়ে ফেলবে।
মানুষের প্রতিশোধ নিতে হলে টাকা পয়সা, ক্ষমতা ও লোকবল লাগে।
কিন্তু প্রকৃতির প্রতিশোধে তা লাগে না।
তাইতো সেদিনের লিলির দাপট এখন আর নেয়।
এখন লিলির প্রতি মুহূর্ত কাটে ভয়ে।
কারণ সেদিন সাজ্জাদের বৌকে ফোনে বলতে শুনেছিল, তার কাছে শ্বশুড় ও শ্বাশুড়ি হচ্ছে একটা ওটকো ঝামেলা ।
সাজ্জাদের বৌ তা সহ্য করতে পারবে না।
তাইতো সে ভেবেছে যতদিন তাদের বল শক্তি আছে।
সাজ্জাদের বৌয়ের কাজকর্ম করে দিতে পারবেন শুধুমাত্র ততদিন তাদের নিজেদের সাথে রাখবে।
যেদিন থেকে আর কাজকর্ম করতে পারবে না সেদিন থেকে এদের বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসবে।
তার কথা শুনে
ফোনের অপর পাশে থেকে হয়তো কেউ বলেছিল,তোর কথা সাজ্জাদ যদি না শুনে তখন তো তাদের সেবা যত্ন তোকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও করতে হবে।
ফোন লাউট স্পিকারে থাকায় লিলি বেগম কথাটা শুনে ফেলে।
লিলি বেগমের মনে একটু আসা জাগে তার পুত্র বধূ হয়তো এখন ইতিবাচক কিছু বলবে।
কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে সাজ্জাদের বৌ বললো,আরে তুই জানিস না, আমার স্বামী পুলিশকে হেব্বি ভয় পায়।
আর তুই তো জানিস আমার আগের প্রেমিক পুলিশ ছিল।
তার বাবা মা আমাকে মেনে নেয়নি বলে বিয়ে করতে পারেনি।
তবে ঐ ছেলে এখনও আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।
তাকে একটা ফোন করে আমার স্বামীকে থ্রেট দিতে বললে খুশি খুশি রাজি হয়ে যাবে।
আর স্বামী আমার পুলিশের থ্রেটে মা তো ভালো কথা আমি সিউর সে নিজের নামটাই ভুলে যাবে ।
সাজ্জাদের বৌয়ের কথা শুনে লিলি বেগম হতভম্ব হয়ে গেছে।
এই মেয়ে তো মারাত্মক ডেঞ্জার আর হবেই না কেন যার ভাই বাপ গুন্ডা সে ভালো হয় কি করে।
ইস্ কি ভুলটাই না হয়ে গেছে।
মৌরিকে শায়েস্তা করতে ওর ভাইকে এর মধ্যে জড়িয়ে এই মেয়ের চক্করে ফেসে গেছি।
না ওর ভাইয়ের সাথে কথা বলতাম না এই মেয়ে আমার পরিবারে ঢোকার সাহস পেতো।
এখন লিলি বেগম কি করবে তাই ভেবে পাচ্ছে না।
সাদ বা সাজ্জাদ কেউ তার কথা শুনে না।
এদিকে দিন দিন সাজ্জাদের বৌয়ের অত্যাচার বেরেই চলছে।
অন্যদিকে মৌরি না চায়তে ও ওর চোখে এ বিষয়গুলো ধরা দেয়।
মৌরি তখন মনে মনে বলে,পাপ বাপকেও ছাড়ে না তাইতো আজকে আপনার এই পরিণতি ।
আমার যদি ভুল না হয় সামনে সময় আপনার আরও ভয়ংকর পরিণতি হতে পারে।
মৌরি মনে মনে ভাবছে, একটা মেয়েই আরেকটি মেয়ের ,,,
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com