গল্গঃ গরু চোরের শাস্তি

সারারাতধরে দুজন গরু চোর দুটি গরু চুরি করে রাতের আঁধারে পথ হাঁটছে। একটিগাভী আর একটি ছোটবাছুর। তাদের সিদ্ধান্ত শহরের কাছাকাছি কোথাও গিয়ে গরু দুটি বিক্রি করবে।

বাপছেলের দিকে তাকিয়ে বলছে এই তুতুই জোয়ানমানুষ এতো আস্তে হাঁটছিস কেন? পায়ে কি মেন্দি দিছস?কেন বাজান তারাতাড়িই হাটতাছি। তয় রাস্তা ফুরায়না ক্যান। তুই আমার পিছনে পইরা থাহস।

ছেলেবলে, বাজান তুমি এই কারবারে পাক্কালোক আর আমি নতুন।তোমার সাথে পাল্লা দেওন কি আমার কম্ম!তাই বইলা এতো পিছনে পইরা থাকবি? জওয়ান পুরুষ পোলা গায়ের মাঝে শক্তি নাই? ছেলে বিরক্ত হয়ে বলে, থাকবো না কেন? মেলাশক্তি আছে!

অহনদৌড় দিবার কও নাকি? বাপছেলের কথার জবাবে কয়। এই এতো ত্যাড়াত্যাড়া জবাব দেস ক্যান? বাজান দুনিয়াতে এতো কারবার থাকতে তুমি এই গরু চুরিপেশাটা বাইচ্ছা নিলা কে সেইটা আমারেআগে বুঝাইয়া কও?

বাপহেঁসে বলে, শোন এই কামে পরিশ্রমেরচেয়ে লাভ বেশি! তাও আবার প্রত্যেকদিন করতে হয়না। এমনিতেই আমার রাইতে আমার ঘুম আহেনা। তাই কামডা আমার জন্য বেশ মানানসই!

তাই বলে, বাজান তুমি চুরি করবা?

এই বেশি কথা বলিস নাতো, কত বড় বড় পাশ দিয়া মানুষ চুরি করে!

আরআমি তো মূর্খ মানুষ।কিন্তু বাজান চুরি করলে তো পাপ!

বুদ্ধিমানদেরজন্য পাপ আমার মতো গরীব মূর্খের জন্য নাহ্! ছেলে বলে তুমি আমারে যতই বোঝ দেও কিন্তু বাজান চুরি কিন্তু চুরিই!

বুদ্ধিমানকরলেও চুরি আর মূর্খ গাধারাকরলেও চুরি!

বাপবিরক্ত হয়ে বলে, এই এতো জ্ঞানআমারে দিতে আসিসনে। যত মূর্খই আমিহইনা কেন। আমি কিন্তু তোর বাপ!

চুরিনা করলে কি খামু? আমিকি অন্য কিছু করতে জানি! আমার ভুল হয়েছে তোরে আমার সাথে নিয়া আসা। গেদু হারামজাদা আইজ কই যে পলাইলোবুঝতে পারলাম না? ছেলেও পাল্টা জবাব দেয়, আমি যদি আগে জানতা বাজান তুমি চুরি করবা। তয় শারাইস দিয়াটানলেও আমি ঘর থন বাইরহইতাম না।

বাহ্!বাহ্! পোলা আমার বড় হয়েছে! বাপেরমুখের উপর কথা কইতো শিখেছে। আরে তোর শরীরে যে রক্ত মাংসেরএতো বাহার সেইটা তো চুরির টেহেয়ায়কেনা খাওনের জোরে!

কিন্তুবাজান আমি তো ছোট বেলাথাইকা জাইনা আইতেছি তুমি গরুর পাইকার। তোমার কাছ থন মানুষ সস্তায়গরু কিনতে পারে। কিন্তু এখন দেহি তুমি পাক্কা চোর!

বাপরাগে চুপচাপ কথা না বলে, হেঁটহয়ে পথ চলে। ছেলেবলে, বাজান তোমার মনে কষ্ট লাগুক তা আমিও চাইনাকিন্তু কামডা ভালা না। ধরো পাপের কথা বাদ দিলাম! কিন্তু যদি একবার ধরা পড় কি মাইরটাখাইতে হইবো ভাবছো একবার?

এতোপটর পটর করিসনা মনু! এই কালু পাইকারআইজ পর্যন্ত ধরা খায় নাই! কিন্তু আইজ মনে হইতাছে তোর কারণে আমার ধরা খাওন লাগবো।

ছেলেবলে, বাজান আমার এইটা আমার প্রথম ও শেষ এরপরআমি তোমার সাথে আসুমনা! পারলে তোমারেও আইতে দেমুনা।

হাঁটতেহাঁটতে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করলো। কালু পাইকার চিন্তিত হয়ে ভাবে পথ তো এখনোঅনেক বাকি! আইজ মন হয় কপলটাখারাপ! পথেই আইজ সকাল হয়ে গেল। মনুর হাত পায়ে শক্তি কমে আসছে। যত দোষ ঐগেদু হারামজাদার। তাকে খুঁজেই তো দেরি হয়েগেছে।

একটাবাজারে আসতেই পুরো সকাল হয়ে গেল। মানুষ জন বের হচ্ছে।বাপ ছেলে দুরুদুরু বুকে এগিয়ে যেতে লাগলো। হঠাৎ একলোক তাদের পিছনে ডেকে জিজ্ঞেস করে।

এইযে ভাই এতো সকালে গরু কোন থন আনলেন? বাপছেলে একবারে উত্তর দিতে গিয়ে প্যাচ বাঁধিয়ে ফেলে। যা,উত্তর পায়লোকটা তাতে কেন যেন তার সন্দেহ হয়?

এতোসকালে গরু কিনতে গিয়েছিলেন! তা কোন জায়গাথেকে কিনে আনলেন? পলাশপুর। লোকটা ওদের চারপাশে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে, কার গরু? দাম কত নিলো?

কালুপাইকার বলে, ভাই আমগোরে কাম আছে যাই এইবার? বলে বাপ ছেলে একটু আগায় কিন্তু লোকটা তাদের পথ রোধ করেবলে, আমার মনে হয় গরু চুরিকরা হয়েছে!

কনকি ভাই নগদ টেকায় কেনা গরু! তবে নাম আর দাম জিজ্ঞেসকরতে পালিয়ে বাঁচতে চাইছেন মনে হয়? না ভাই কামেরজন্য!

গরুরমালিকের নামতো জিগাই নাই।

তয়দামটা একটু বেশিই নিলো পঞ্চাশ হাজার! কি যেন গ্রামেরনাম বললেন, পলাশপুর। আপনারা দাড়ান আমরা খুজ খবর নিয়ে দেখি পরে যাবেন।

লোকটাএকটা গ্রাম পুলিশের কাছে ওদের তুলে দেয়। কালু পাইকার অনুনয় করে বলে, আমগোরে যাইতে দ্যান। গরু আমরা পরে আইসা নিয়া যামু আমগোরে বাড়িতে অসুস্থ রুগি! লোকটা বলে, আহা! এতো অস্থির কেন?

ছেলেমনু বাপের মুখের দিকে তাকিয়ে কেঁদে বলে, বাজান!

এইতুমি কান্দো কেন? কালু পাইকার বলে, মায়ের অসুখ তো তাই!

আপনারাতো বিরাট কর্মঠ মানুষ! ঘরে রুগি রাইখা গরু কিনতে আইছেন? কালু পাইকার চুপ করে থাকে।

ছেলেকেঁদেই চলেছে। বাপ আস্তে ধমক দিয়ে বলে, চুপ কর মনু! তোরকারণে সন্দেহ আরও বাড়ছে।

আমারকপালটাই আইজ খারাপ! পলাশ পুরে খুঁজ নিয়ে জানা গেল। সেখান থেকে কোন গরু চুরি হয়নাই বা বিক্রি হয়নাই।

বাপছেলেকে খুঁটির সাথে বাজারের মধ্যে বাঁধা হলো। তারপর শুরু হলো মারের সাথে জিজ্ঞাসাবাদ। দুই দুটি বাঁশের কঞ্চি তাদের উপর ভাঙা হলো। কিন্তু তাদের এক কথা গরুআমরা কিনা আনছি। আপনারা ভুল করতাছেন।

মারেরচোটে বাজান গো বলে মনুবেহুশ হলো। তবুও কালু পাইকার পণ করে সত্যিবলবে না। এমন সময় গরুর মালিক গরু খুঁজতে খুঁজতে সেখানে এসে উপস্থিত হলো। এবং সে তার গরুচুরি গেছে বলে জানায়। গরু দেখতে পেয়ে সে যেন প্রাণফিরে পেল। গরু মালিক দেখতে পেয়ে সাড়া দিলো। তখন কারও বোঝার বাকি নেই এরা জাত চোর।

গ্রামপুলিশ নতুন উদ্যমে পিটানো শুরু করে। এমন সময় সেদিক দিয়ে যাচ্ছিলো গ্রামের গন্যমান্য এক ব্যাক্তি। গ্রামেরবিচার আচার সাধারণত সেই করে থাকে। তার খুব খারাপ লাগলো চোরের এমন প্রহার সহ্য করতে দেখে।

তিনিগিয়ে গ্রাম পুলিশের কাছে বললেন, আর কত মারবে?মেরে ফেলবে নাকি অনেক হয়েছে এখন ছেড়ে দাও!

নাসরকার সাহেব! চেয়ারম্যানের হুকুম ওদের মুখ থেকে আগের চুরির জবানবন্দি নেওয়া। যে পর্যন্ত স্বীকারনা করবে ততক্ষণ পিটাতে হবে।

গ্রামপুলিশ মারে আর জিজ্ঞেস করে,বল তোরা আর কতগুলো গরুচুরি করছোস? বাপ ছেলে চুপ!

সরকারসাহেব ওদের কাছে গিয়ে বলে, এই তোদের মাথায়কি বুদ্ধি নেই? হেগে দে দেখবি মারবন্ধ। সত্যি সত্যি ওরা হেগে শারা শরীরে মাখিয়ে ফেললো। এখন গ্রাম পুলিশের আঘাতে মল চারিদিকে ছড়িয়েপড়তে লাগলো।

গ্রামপুলিশ মার থামিয়ে বলে, সরকার সাহেব এটা একটা কাজ করলেন। এখন কি করি বলুন।সরকার সাহেব হেঁসে বলে, যাক কতক্ষণ বেচারা মার থেকে একটু বাচবে! এই বলে, সরকারসাহেব চলে গেলেন।

গ্রামপুলিশ ওদের পাশের নদী থেকে গোসল করিয়ে এনে। আবার পিটানো শুরু হলো। মনু জিজ্ঞেস বাজান তুমি কইলা বড় বড় বিদ্বানব্যক্তিরাও চুরি করে। আইচ্ছা বাজান তারা ধরা পরলেও কি এমন কইরামাইর খায়?

পরে পুলিশ এসে ওদের নিয়ে যায়। কিন্তু ততক্ষণে ওদের কর্ম সারা!

গল্প সমাপ্ত

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url