Breaking News

ডেসটিনি অব লাভ | পর্ব -০২

আমার ভাবনাচিন্তার মাঝেই আবরার হেসে উঠলো,আমি চমকে ওর দিকে তাকালাম।
ওর হাসি অন্যকিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে!
—‘হাসছো কেনো?’
আবরার আমার মুখের সামনে মুখটা নিয়ে এসে ফু দিলো,
সাথে সাথে আমি কেঁপে উঠলাম,মুখের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো সরে গেলো!
আবরার ঠোঁটদুটো প্রসারিত করে হাসলো,হাসিমুখেই বললো,
–‘তোমার কী মনে হয়,তুমি ব্রেকআপ চাইবে আর আমি ব্রেকআপ করে নিবো?’
আমি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে ওর মুখের দিকে তাকালাম,
ও আবার হাসলো!ওর হাসি অনেক টা মুভির ভিলেনের মতো লাগলো!
–‘ইউ আর রং,মিস শ্রুতি! দুনিয়া উল্টে গেলেও আমি তোমাকে ছাড়বো না।’
আমি চুপ করে রইলাম,আবরার আমার গালে হাত ছোঁয়ালো,শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো,
–‘তুমি তো জানোই আমি এমন,পাগলাটে।তুমি জানো না তোমার সাথে কথা বলতে না পারলে আমার দম বন্ধ হয়ে যায়।এ চারটাদিন বিষের মতো ঠেকেছিলো আমার কাছে।আমি পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে,কখনই পারবো না।’
আমি চোখ তুলে তাকালাম,ওর চোখে গভীর দৃষ্টি রেখে বললাম,
–‘এ কথা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা। কে বললো,আপনি আমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবেন না?পারবেন,হয়তো প্রথম কয়দিন কষ্ট হবে,কিন্তুু পরে ঠিকই পারবেন।’
আবরার টু শব্দও করলো না,শুধু আমার দিকে তাকিয়ে রইলো!ওর চাহনী বলে দিচ্ছে,’আমি পারবো না,শ্রুতি কিছুতেই না।
কিছুসময় পর আবরার বলে উঠলো,–‘শ্রুতি একদম সত্যি কথা বলবে,তুমি কি সত্যিই এ কারনে ব্রেকআপ চাইছো,নাকি অন্য কোনো কারন?’
আমি মাথা নিচু করে রইলাম,জবাব দিলাম না।ও এবার আমার হাত টা ওর মাথায় নিয়ে বললো,–‘আমার কসম লাগে সত্যি কথা বলো।’
আমি সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকালাম।ও আবারো বললো,–‘কসম লাগে,সত্যি কথা বলো।তুমি কেনো আমাকে ইগনোর করছো?বলবে?’
আমি হাত টা সরিয়ে নিয়ে উল্টো ঘুরে বললাম,
–‘হ্যা,ইগনোর করছি।বুঝেছেন?আমি আপনাকে ইগনোর করছি!’
–‘কিন্তুু কেনো?’
–‘আপনি জানেন আমি কে?আমার সম্পর্কে কতটুকু জানেন?আপনি বলেন তো আপনার মায়ের নাম কী?’
আবরার কপাল কুচকে বললো,–‘কেনো?’
–‘কেনো, তাই তো?ওয়েট বলছি,আমার পুরো নাম, শ্রুতি হাসান!বাবার নাম মেহরাব হাসান।আমার বাবারা পাঁচ ভাই আর এক বোন। দূর্ভাগ্যবশত বাবারা বলে যে উনাদের কোনো বোন নেই,উনারা শুধু পাঁচ ভাই!উনাদের কাছে,উনাদের বোন মৃত। আমি নিজেও জানতাম না উনাদের বোন আছে কি না?একদিন ঘর ঝাড়ু দেওয়ার সময় আমি একটা ছবি কুড়িয়ে পেয়েছিলাম,সেটা দেখে মাকে প্রশ্ন করলাম যে মা উনি কে? মা তখন তাড়াহুড়ো করে ছবি টা আমার হাত থেকে নিয়ে লুকিয়ে রাখলো। একটা কথা বলে রাখি,আমি সব বিষয় নিয়ে অনেক কিউরিয়াস,অর্থাৎ কৌতূহলপ্রবণ।তো আমি চুপিচুপি মেঝো চাচীকে জিজ্ঞেস করলাম এ ব্যাপারে। তখন চাচী ই আমাকে বলেছিলে যে উনার কথা। ‘
আবরার কৌতূহলী চোখে তাকালো,চোখের ইশারায় বললো,–‘যে কী বলেছে?’
ওর প্রশ্নের জবাবে আমি সব খুলে বললাম। চাচীর ভাষ্যমতে,
নিরা ফুফির সাথে চাচ্চুর বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়ে ঠিক হয়েছিলো।
ছেলের নাম নাকি নেহাল। চাচ্চুর সাথে উনার উঠাবসা ছিলো,
বাবাকেও নাকি খুব শ্রদ্ধা করতো। উনাদের নাকি আবার বেশ ধনসম্পদ রয়েছে।
তো ছেলেটার নাকি ফুফিকে পছন্দ হয়েছিলো।
তাই সে তার বাবামাকে বিষয়টা জানায়, উনারা তখন দিদুনকে বলে এ বিষয়ে।উনাদের কথা হলো,
উনারা ফুফিকে ঘরের মেয়ে করে নিয়ে যাবেন,তবে এখন নয় আরো চার বছর পর।
যখন তাদের ছেলে বিদেশ থেকে ফিরে আসবে তখন একসাথে বিয়ে দিয়ে ঘরে তুলে নিবে।
যেহেতু দাদাজান বেঁচে নেই আর সম্বন্ধ ও ভালো তাই দিদুন ও কোনোকিছু না ভেবে উনাদের কথা দিয়ে দেয়। একমাত্র মেয়ের ভালোর জন্য উনারা বিয়ে ঠিক করে ফেলে নেহালের সাথে।
ফুফি তখন নবম শ্রেণিতে পড়ে তাই এ বিষয়ে উনাকে জানানো হয় নি।
দিনের পর দিন কেটে যায়,কেউ আর ফুফিকেও বলেও নি।
পুরো পরিবারও এ সিদ্ধান্তে খুশি হয়ে যায়,নেহাল চাচ্চুও বিদেশ চলে যায়।
দেখতে দেখতে বছরগুলোও কেটে যায়,
নেহাল চাচ্চুর ও বিদেশ থেকে ফিরে আসার সময় ঘনিয়ে আসে।
হঠাৎ একদিন ফুফিকে জানানো হয় যে ফুফির বিয়ে, ফুফির কোনো মতামতও নেওয়া হয় নি।
সারা বাড়ী তখন বিয়ের সাজে সজ্জিত, সব ই ঠিক ছিলো।
যখন ই ফুফিকে বিয়ের আসরে নিয়ে আসার জন্য আম্মু যায় তখন ফুফিকে কোথায়ও পায় নি,
শুধুমাত্র একটা চিঠি পরেছিলো টেবিলের উপর।
চিঠিতে লিখা ছিলো উনি এ বিয়ে করতে পারবে না,
উনি উনার প্রেমিক অর্থাৎ উনার প্রাইভেট টিউটরের সাথে চলে যায়।
তৎক্ষণাৎ পুরো বিয়ে বাড়ীতে রটে যায় যে বিয়ের কনে ভেগে গিয়েছে। আগেই বলেছি নেহাল চাচ্চুরা সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোক ছিলেন,সেজন্য অনেক নামিদামী মানুষও উপস্থিত হয়েছিলেন বিয়েতে।
এত এত মানুষের সামনে উনাদের সম্মানের মানহানি ঘটে যায় সেদিন।
নেহাল চাচ্চুর বাবার তো সেখানেই হার্ট এট্যাক এসে যায়।
ব্যাস সেদিন ই শুরু হয়ে যায় দুপরিবারের দ্বন্দ্ব।
এক কাঁধে চলাচল করা দুপরিবার একদিনেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
উনারা যা নয় তা বলে অপমান করেছিলেন আমাদের।
সেদিন সবাই খুব কষ্ট পেয়েছিলো,চাচ্চুও খুব কেঁদেছিলেন।
সেদিন থেকেই উনারা দুই পরিবারের সাপে-নেউলে সম্পর্ক হয়ে যায়।
মাঝেমাঝে চাচ্চু আর বাবাইকে কাঁদতেও দেখি।
ফুফির জন্য উনাদের মনে প্রচুর ঘৃণা আর রাগ রয়েছে।
আর এ নিরা ফুফি কে জানো? তোমার মা,বুঝেছেন আপনি?’
আবরার তখন অবাক পানে আমার মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে আছে,
ও যে বেশ বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে সেটা তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
কয়েক সেকেন্ড থম মেরে দাড়িয়ে রইলো।এরপর বড়বড় নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো,
মিনিট দুয়েক এর মতো পায়চারী করলো।চোখ বন্ধ করে,
দুহাত দিয়ে মাথাভর্তি চুলগুলো খামছে ধরলো আর বিরবির করে বলতে লাগলো,’ও মাই গড,ও মাই গড!’।
আবরার অনেকক্ষণ পর ভাবনাচিন্তা বাদ দিয়ে শ্রুতির দিকে চোখ তুলে তাকালো,করুণ গলায় বললো,
—‘এসবের সাথে আমাদের কিসের সম্পর্ক?তুমি কেনো আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছো?’
আবরারের কথায় ভীষণ অবাক হলাম,
ও কী বললো?ও কি বুঝতেছে না যে ওর আর আমার সম্পর্ক বাবাই কখনো মেনে নিবে না!
বাবাই যদি জানে,আমি তোমার সাথে রিলেশনে ছিলাম,তাহলে না জানি কী করে বসে?
আমি পারবো না কখনোই পারবো না,বাবাইকে কষ্ট দিতে।
—”কি হলো,বলো?কেনো তুমি আমার সাথে এমন করছো?কেনো ইগনোর করছো?”
শ্রুতি কাঠকাঠ গলায় জবাব দিলো,
–”সহজ জবাব, আমার বাবা কখনো এ সম্পর্ক মানবেন না।
সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি, আর তাই আমি শুধু শুধু সম্পর্ক টটা টেনে মায়া বাড়াতে চাইছি না।
আমার কাছে আমার ফ্যামিলি আমার ফার্স্ট চয়েস,ফার্স্টট প্রায়োরিটি!”
আবরার কয়েক সেকেন্ড আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো,
ওর রিয়েকশন দেখে বুঝতেই পারছি না যে ও কী ভাবছে? তবে জানি,
ওর ভাবনা টা সম্পূর্ণ আলাদা হবে,একদম আমার ভাবনাচিন্তার বাহিরে।
–‘জানো,আমাদের জীবনে অসুখী হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় হাত কিন্তুু আমাদের ই রয়েছে।
সবাই শুধু শুধু ভাগ্যের দোষ দেয়,কিন্তুু সেটা একদম ই সঠিক নয়।
এর পিছনে আমরা নিজেরাই দায়ী। আমরা সবসময় ভবিষ্যৎ এর চিন্তায় বিভর থাকি।এটা হবো,
ওটা করবো,এটা করলে ওটা হবো,ওর সাথে মিশলে ভবিষ্যৎ এ এই হতে পারবো না সেই হতে পারবো না,
ওর সাথে মিশলে পারবো।আজ এটা করবো না,কাল করবো।
এসব ভেবেই আমরা আমাদের বর্তমানকে উপেক্ষা করি।
অথচ আমাদের প্রকৃত সুখ বর্তমানের কাজের উপর নিহিত।আজ যা করবো সেটার ফল ই ভবিষ্যৎ এ পাবো।
আমার ধারনা,ভবিষ্যৎ এর চিন্তা করে বর্তমানকে উপেক্ষা করা উচিত নয়।
তুমি যদি শিউর হয়েই থাকো যে ভবিষ্যৎ এ তোমার সাথে এমন হবেই তাহলে তুমি কেনো সেটার জন্য ভবিষ্যৎকে ইগনোর করছো?বরং তোমার উচিত বর্তমানকে উপভোগ করা। তাই আমার অনুরোধ,
ভবিষ্যৎ এ কী হবে না হবে,সেটা না ভেবে নিজের বর্তমানকে উপভোগ করো।
এমন তো হতে পারে, কোনো মিরাক্কেল হবে আর তোমার আমার মিল হবে।
পজিটিভ কেনো থিংকিং করো না, সবসময় কেনো নেগেটিভ ই ভাবো?হোয়াই?’
এটুকু বলে আবরার থামলো,পলক ঘুরিয়ে শ্রুতির মুখের পানে তাকালো।
শ্রুতি তখন বিভোর হয়ে আবরারের দিকে তাকিয়ে আছে, ও কী ভাবছে সেটা আবরারের জানা নেই।
তবে ওর কথায় যে কিছুটা এফেক্ট করেছে সেটা ভালোয় বুঝেছে।
ও ভাবে শ্রুতির হয়তো এখন কিছুটা সময় চাই,ভাবতে দেওয়া হোক ওকে।
তাই সে শ্রুতির মুখোমুখি হয়ে বললো,
—-‘আই থিংক, এখন তোমার কিছু সময় দরকার।হ্যাভ সাম স্পেচ!আর হ্যা,
আমার কথাগুলো ভেবে দেখো। আজ আসি।’
আবরার চলে যাওয়ার মিনিট দশকের মধ্যেই কলিংবেল বেজে উঠলো,
শ্রুতি তখনও ভাবনাচিন্তায় বিভোর ছিলো।তিনবার বেল বেজে উঠতেই ও গিয়ে দরজাটা খুলে দেয়।
দরজা খুলতেই ও চমকে যায়,ভীষণ চমকে যায়।
অবাক হয়ে ও তাকিয়ে আছে বাহিরে দাড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটির দিকে!
চলবে……

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com