ভালোবাসি তাই । পর্ব -১৫

শপিংমলের ভেতরে এসে দেখলাম ইরাম ভাইয়া আরসায়ন ভাইয়া কথা বলছে। ঐদিকে ইরাম ভাইয়ারআম্মু আর খালামণি আলাপ জুড়ে দিয়েছে। ইরামভাইয়া আর সায়ন ভাইয়া আমাদের থেকে অনেকটাদূরে দাঁড়িয়ে আছে। তাই তারা কি বিষয়ে কথা বলছেসেটা আমি শুনতে পারছি না। কথা বলতে বলতেইরাম ভাইয়া হাসিতে ভেঙ্গে পরছে। আর সায়ন ভাইয়াভাবলেশহীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখ দেখে বুঝাকঠিন যে সে কি ভাবছে। ভদ্রতার খাতিরে ইরামভাইয়ার কথায় সায়ন ভাইয়া হ্যাঁ, হুমম উত্তর দিচ্ছেএটা আমি দূর থেকেই বুঝতে পারছি। সায়ন ভাইয়াকেদেখে মনে হচ্ছে ওনি কোনো বিষয় নিয়ে খুবই চিন্তিত।ওনার আবার কিসের চিন্তা সেটাই তো বুঝতে পারছিনা। আমি সায়ন ভাইয়াকে নিয়ে গবেষণা করার সময়হঠাৎ খালামণি বলতে লাগলো,
– বাহ মারিয়া তোকে তো আজ খুব সুন্দর লাগছে।সায়ন তো আজ তোর থেকে চোখই সরাতে পারবে না।আগে কখনো তোকে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখিনি।তোকে কিন্তু শাড়িতে খুব ভালো মানায়।
খালামণির কথা শুনে আপু মুচকি হাসলো। আপুকেদেখে মনে হচ্ছে আপু খুব লজ্জা পাচ্ছে। আসলে আপুখুব শান্ত -শিষ্ট। অনেকটা সংসারীও। সেজন্যইখালামণি আপুকে সায়ন ভাইয়ার জন্য পছন্দ করেছে।আমার যদি সায়ন ভাইয়ার প্রতি কোনো ফিলিংস নাথাকতো তাহলে আজ আমি সবচেয়ে বেশি আনন্দেথাকতাম। কিন্তু না আমি এবার আনন্দে থাকারই চেষ্টাকরবো। আমার মনের কথা মনেই থাক। কাউকে সেটাআর বলার প্রয়োজন নেই। যাকে বলার তাকে তোবলেছি। এসব মন থেকে ঝেড়ে ফেলাই ভালো। আমিএসবই ভাবছিলাম তখনি কেউ আমার গালে হাত দিয়েবলল,
– আপা শুধু কি আপনার ছেলের বউ সুন্দর নাকি?আমার ছেলের বউও কিন্তু অনেক সুন্দর। ওর দিকেএকবার দেখেন। শুধু নিজের ছেলের বউকে দেখলেহবে? ইরাম কিন্তু একেবারে একটা লক্ষ্মীমন্ত মেয়েকেইপছন্দ করেছে।
খালামণি এবার হেসে আমার দিকে তাকালো। এবারবলতে লাগলো,
– আপনাকে কিন্তু আমি কোনো সুযোগই দিতাম নামালিহাকে নেওয়ার। আমার যদি আরেকটা ছেলেথাকতো তাহলে তার বউ করে মালিহাকে নিয়ে যেতাম।দু বোনকে একবাড়িতেই নিয়ে যেতাম বুঝেছেন।
– হুমম ইরাম ও তো আপনার ছেলের মতই। তাহলেআর কি সমস্যা আপনার ছেলেরই তো বউ হচ্ছে।
– হুমমম সেটাও ঠিক বলেছেন।
দু জনের কথাবার্তায় অন্যরার ভালো লাগলেও সারাখুবই বিরক্ত হচ্ছিলো। তাই ও বলে উঠলো,
– আন্টিরা আমরা জানি এখানে কি করতে আসছি?আমার তো মনেই পরছে না। কেউ আমাকে একটু মনেকরিয়ে দিবে?
সারার কথা শুনে রিদন ভাইয়া বলে উঠলো,
– ঠিক বলেছেন মিস সারা আমি তো আমার নামটাইভুলে গেছি? আমার নামটা যেন কি?
– আপনার নাম ভাইয়া।
– এই না না আমার নাম মনে পড়ে গেছে। জনগণেরভাইয়া হওয়ার আমার কোনো ইচ্ছে নেই। সবাই যদিআমাকে ভাইয়া ডাকে আমার বউও আমাকে ভাইয়াডাকবে এ শখ আমার নেই।
রিদন ভাইয়ার কথা শুনে সবাই হেসে দিল। দুই আন্টিইবলল,
– আসলে দু বোনকে দেখে আমরা নিজেরাই ভুলেগেছিলাম যে আমরা এখানে কি করতে এসেছি। সারাসেটা মনে করিয়ে দিল। চলো চলো অনেক শপিংবাকি। সব আজকেই শেষ করতে হবে।
প্রায় তিনঘন্টা লাগিয়ে আমরা সবাই মিলে একে একেসব শপিং শেষ করলাম। সবশেষে আসা হলো শাড়িরদোকানে। বিয়ের দিনের শাড়ি চয়েজ করার জন্য।আমার এগুলা কোনোকিছুর প্রতিই কোনো ইন্টারেস্টনেই। শাড়ি দোকানদার আমাদের সামনে তারদোকানের প্রায় সব শাড়ি মেলে ধরলেন। একেক জনএকেক শাড়ি পছন্দ করছে কিন্তু কারও পছন্দইশেষপর্যন্ত ঠিক হচ্ছে না। এ অবস্থা দেখে সারা বলল,
– এভাবে সবাই মিলে শাড়ি পছন্দ করতে থাকলেকোনো শাড়িই আর কেনা হবে না। তার থেকে ভালোযার বউ সেই শাড়ি চয়েজ করুক। আমরা সবাই চুপকরে থাকি।
সারার কথা শুনে রিদন ভাইয়া বলে উঠলো,
– তাহলে চলুন মিস সারা আমি আপনাকে একটা শাড়িচয়েজ করে দেই।
রিদন ভাইয়ার কাজই হচ্ছে মেয়েদের ফটানো। সেটাকেউ না জানলেও আমি খুব ভালো করে জানি।সারাও কিন্তু কম যায় না তাই সারা হেসে জবাব দিল,
– ভাইয়া আপনি বোধহয় ভুল শুনেছেন আমি বলেছিবর তার বউকে শাড়ি চয়েজ করে দিবে। আমি এটাবলিনি যে ভাইয়েরা তার বোনকে শাড়ি চয়েজ করেদিবে। আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন।
সারার কথাশুনে রিদন ভাইয়া একেবারে চুপসে গেল।রিদন ভাইয়ার মুখ দেখে আমার খুব হাসি আসছিলো।কিন্তু আমি হাসিটা চেপে রাখলাম।
এদিকে সেই কখন থেকে ইরাম ভাইয়া একটা শাড়িহাতে নিচ্ছে আমার দিকে তাকাচ্ছে আবার সেটা রেখেদিচ্ছে। এই নিয়ে বোধহয় বিশটা শাড়ি ওনি এভাবেদেখে রেখে দিয়েছে। আর সায়ন ভাইয়া পকেটে হাতগুঁজে দাঁড়িয়ে আছে ওনার দৃষ্টি শাড়ির দিকে। তবেওনি বোধহয় এখনো কোনো শাড়ি চয়েজই করতেপারেননি। ছেলেদের আসলে এসব বিষয়ে অভিজ্ঞতাকম। তাই দুজনের কেউই গত আধাঘন্টা ধরে কোনোশাড়িই চয়েজ করতে পারেনি। হঠাৎ আমার চোখপরলো একটা গাঢ় সবুজ রঙের বেনারশীর উপর।সবুজ রং আমার সবসময়ই প্রিয় ছিল। কিন্তু বিয়েতেসবুজ শাড়ি কেউই পরে না। তারপরও আমি শাড়িটাহাতে নিলাম। শাড়িটা গায়ে একটু ধরে আয়নার দিকেতাকালাম। আয়নাতে তাকাতেই দেখলাম সায়ন ভাইয়াআমার দিকেই তাকিয়ে আছে। আমি শাড়িটা দেখেরেখে দিতে যাবো তখনি সায়ন ভাইয়া ইশারা করেবলল এটাই ঠিক আছে। আমি তখন আর অন্যকিছুভাবলাম না। আমি ঠিক করে ফেললাম এই শাড়িটাইআমি বিয়েতে পরবো। আপুর অন্যকোনো শাড়ি পছন্দনা হওয়াতে আপুও আমার শাড়িটার মত সেইমশাড়িটাই বিয়েতে পরার জন্য নিল। শাড়ি পছন্দ করাশেষ আমাদের শপিংও শেষ। আমরা এবার নিজেদেরবাসায় ফিরে আসলাম।।
আর মাত্র চারদিন বাকি আমাদের বিয়ের। আমারকোনোকিছুই ভালো লাগছে না। কেন যে খোদা সায়নভাইয়ার প্রতি আমার এমন ফিলিংস সৃষ্টি করেছেন কেজানে। ওনার প্রতি এ ফিলিংস না থাকলে হয়তো আমিআজ এত কষ্ট পেতাম না। আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা আমি ঠিক করছি নাকি ভুল করছি। আমার এখনকি করা উচিত? এ বিয়ে করে তো আমি বা ইরামভাইয়া কেউই সুখে থাকবো না তাহলে? বিয়ের চারদিনআগে আমার সবাইকে এ কথা জানানোটা কি ঠিকহবে? বাবার মান – সম্মান বলে কি আর কিছু অবশিষ্টথাকবে? জানি না কিচ্ছু জানি না। তবে আমি কখনোএ বিয়েটা ভাঙতে পারবো না। কার জন্য বিয়ে ভাঙবোযে কি না আমাকে ভালোই বাসে না তার জন্য? নাহআমি আমার বাবার সম্মানে কখনো আঘাত লাগতেদেব না। বাবার জন্য আমার ফ্যামিলির মানুষগুলোরজন্য হলেও আমাকে এ বিয়েটা করতে হবে। সবারখুশীর জন্য না হয় নিজের খুশীটা বিসর্জন দিলাম।এতে ও একটা অন্যরকম শান্তি আছে।
– কিরে কি ভাবছিস?
আমি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে এসবই ভাবছিলাম তখনিআপু পেছন থেকে কথাটা বলে উঠলো।
– নাহ কিছু না। কিছু বলবে?
– হুমম চল ছাদে যাই।
– আচ্ছা চলো।
ছাদে এসে আমি আর আপু ছাদের রেলিঙের উপরেবসলাম। আপু একটু ভেবে বলল,
– ভাবতে পারছিস মালিহা আর চারদিন পর আমরা এবাড়ি থেকে চলে যাবো।
যে বাড়িতে আমরা সেইছোটবেলা থেকে বড় হয়েছি সেই বাড়িটাতে আমরাআর থাকবো না।
মেয়েদের জীবনটা এমন কেন বলতেপারিস?
মেয়েদের আসল বাড়ি কোনটা মাঝে মাঝেআমি সেটাই বুঝতে পারি না।
ছেলেরা তো যে বাড়িতেছোট থেকে বড় হয় সে বাড়িতেই থাকে তাহলে আমরাকেন পারি না।
আমাদের বোধহয় নিজের কোনোবাড়িই নেই।
আপুর কথাগুলো একেবারে চরম সত্যি। কিন্তু আমিযেন বলার মত কোনো ভাষাই খুঁজে পাচ্ছি না।
আমিহঠাৎ আপুকে প্রশ্ন করে বসলাম,
– সায়ন ভাইয়াকে ভালোবাসো আপু?
আপু আমার দিকে কেমন করে যেন তাকালো। হয়তোবুঝতে পারেনি তার এ কথার উত্তরে আমি কিবললাম।
কিছু ভেবে আপু একটা মিথ্যে হাসি দিয়েবলল,
– ভালোবাসি কি না জানি না? শুধু জানি বিয়েটা করাআমার দায়িত্ব।
এখানে ভালোবাসার কোনোছিটেফোঁটা নেই আছে কেবল দায়িত্ব দায়িত্ব আরদায়িত্ব।
বাবা -মা আমাদের বড় করেছেন সেটাওনাদের দায়িত্ব আর আমরা
ওনাদের পছন্দে বিয়েকরবো এটা হচ্ছে আমাদের দায়িত্ব। এই পৃথিবীরসবকিছুই দায়িত্ব দিয়ে বাঁধা।
আর এই দায়িত্বটাইআমরা হাসিমুখে পালন করে যাই। যেখানে ভালোবাসাআছে কি না কেউ জানি না।
– কি কঠিন ভাষায় তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে।
আজ কয়দিন তুমি কেমন জানি ম্যাথ টিচারের মতসবকিছু ব্যাখা -বিশ্লেষণ করো। এগুলা আমার এ কানদিয়ে ঢুকে ঐ কান দিয়ে বেরিয়ে যায়।
আপু হাসি দিয়ে বলল,
– আচ্ছা যা আর তোর ম্যাথ টিচারের মত কথা বলবোনা। চল মাগরিবের আযান দিয়ে দিবে নিচে যাই।
– হুমমম চলো।
চলবে,,,,,,
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url