Breaking News

শেষ বিকেলের রোদ । পর্ব -২৬



বেলা ১২ টা,
সফলভাবে অস্ত্রোপচার শেষ হয় আলিয়ারের। আছিয়া হাসপাতালে আসার পর থেকে কান্না করেই যাচ্ছে। ইব্রাহিম উনাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ। কি করে সান্ত্বনা দিবে? মায়ের মনকে শান্ত করা কি এতোই সহজ?

১২:৩০ টার দিকে আলিয়ারকে অবজারভেশন রুমে নেয়া হয়। এখন থেকে ৭২ ঘন্টার অবজারভেশনে থাকবে আলিয়ার। আছিয়া, জিনাত, ইব্রাহিম, আহমেদ, সুলতানা, জেরিন ও মুগ্ধ সকলে করিডোরে আছে। অল্পকিছু সংখ্যক মানুষই কেবল অবজারভেশন রুমে দেখা করতে পারবে।
আছিয়া আলিয়ারের সাথে দেখা করতে যায়। আলিয়ারকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে।
আলিয়ার একটু হেসে বলল,
“কান্না করো না তো আম্মু, আমি ঠিক আছি।”
আছিয়া সোজা হয়ে বসে বলে,
“হুম, তা তো ঠিক থাকবেই। তুমি তো সবসময়ই ভালো থাকো।”
আলিয়ার হেসে মায়ের হাত ধরে। আছিয়া ধমকের সুরে বলে,
“কি সমস্যা আলি তোমার? এতো বড় সমস্যার কথা কাউকে জানাও নি কেন?”
“আসলে তোমাদের চিন্তায় ফেলতে চাইনি।”
এদিকে বাইরে সুলতানা জিনাতের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
“ডোনার কে?”

“জানি না।”
সুলতানা ফিসফিস করে ধমকে সুরে বলল,
“জানি না মানে? তোরা তো এখানেই ছিলি।”
“হুম, কিন্তু তার দেখা পাইনি।”
সুলতানা ওর আরেকটু কাছে এসে বলল,
“অন্যকারো কি দরকার ছিল? তুই ডোনেট করতি?”
জিনাত সামনের দিকে তাকিয়ে বলে,
“ভাইয়া নিষেধ করেছিল।”
“কোন ভাইয়া?”
কপাল কুঁচকে কথাটা বলল সুলতানা।
জিনাত সুলতানার দিকে তাকায়,
“আলিয়ার ভাইয়া।”
“আলিয়ার এখন তোর ভাই হয়ে গেছে?”
“আগে থেকেই ছিল।”
বলে জিনাত অন্যদিকে চলে যায়।

আছিয়া রুম থেকে বেরিয়ে এসে করিডোরে থাকা চেয়ারে বসে পড়ে। মুগ্ধকে কাছে টেনে বলে,
“বাবা, আমার ছেলেটাকে দেখে রেখেছো। কে বাঁচিয়েছে আমার ছেলেটাকে?”
মুগ্ধ ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
“আন্টি, আপনি উত্তেজিত হবে না প্লিজ। আলিকে আল্লাহই বাঁচিয়েছে। ঠিক সময়ে কেউ একজন ডোনেট করার জন্য এসেছে। সে না আসলেও আমি ডোনেট করতাম।”
আছিয়া মুগ্ধের কপালে চুমো দিয়ে বলে,
“আমার সোনা ছেলে। কে সেই লোক?”
“জানি না আন্টি, আমরা তার দেখা পাইনি। ডাক্তারও তার নাম বলেনি।”
আছিয়া একবার ইব্রাহিমের দিকে তাকায়। তারপর মুগ্ধকে বলে,
“কেন, জানো?”

“না, হয়তো সে নিজেকে প্রকাশ্যে আনতে চাচ্ছে না।”
আছিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। কে সে, যে আলিয়ারের জীবন বাঁচালো? নিজের শরীরের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটা অন্য একজন অপরিচিতকে দিয়ে দিলো এতো অনায়াসে?
অন্যদিকে,

তুবা কেবিনে শুয়ে আছে। কিডনি ডোনেট করলে ডোনারের শরীরে তেমন একটা ক্ষতি হয় না। শরীরের দুটো কিডনি সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলে যেকোনো একটা নিশ্চিন্তে ডোনেট করা যায়।
এমনিতে তুবা সুস্থ থাকলেও প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দিয়েছে। আপাতত ওকে এক ব্যাগ রক্ত দেয়া হচ্ছে। ওর শরীরটাও অনেক দুর্বল,
তুবা আছে তিনতলায় একটা কেবিনে আর আলিয়ার আছে চারতলার অবজারভেশন রুমে।
অনু ওর পাশে বসে আছে। একমাত্র অনুই জানে তুবা এখানে এসেছে, বাসায় জানে তুবা ওর ফ্রেন্ডের বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছে। যদিও বাসা থেকে বোরকা পড়ে বের হয়েছে।
তুবা অনুকে ডেকে বলল,
“আলিয়ার কেমন আছে?”
অনু একবার ওর দিকে তাকায়,
“ঠিক আছে সে।”

একটু থেমে অনু বলল,
“ওদেরকে কেন জানাচ্ছো না তুমি? হয়তো এই কারণে তোমার আর ওর মিল হয়ে যেতে পারে? আর তুমি তো এখানে কোনো ভুল করোনি।”
তুবা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্যদিকে তাকায়। ও জানে ও কি করছে, কেন করছে। 
আলিয়ার যদি অসুস্থ না হতো তবে কখনোই এখানে আসতো না সে।
রাতে,

অনু হোটেল থেকে খাবার নিয়ে হাসপাতালে ফিরে এসেছে। 
টেবিলে খাবারগুলো রেখে তুবার পাশে এসে বসে বলল,
“খেয়ে নাও, এসো।”
“ইচ্ছে নেই ভাবি।”
অনু ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
“ঠিক আছো তুমি?”
“হুম।”

“কোনো বিষয়ে চিন্তিত মনে হচ্ছে?”
তুবা একটু সোজা হয় শুতে চেষ্টা করে। বামপাশে একটা বড় বেন্ডেজ থাকার কারণে সেদিকে বেশি চাপ দিতে পারছে না। একটু ডানদিকে ভর দিয়েই শুয়ে থাকে সে।
অনু আবারো বলে,
“বললে না তো?”
“ভাবি, ভাইয়া এখন দেশে নেই বলে আমরা এখানে আসতে পেরেছি। কিন্তু ভাইয়া যদি জানতে পারে তখন কি হবে?”
অন তুবার কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বলে,
“আজ না হয় কাল সবাইকে জানাতেই হবে, এসব গোপন থাকে না বা রাখা যায় না।”
“কিন্তু ভাবি…”

তুবাকে থামিয়ে দিয়ে অনু বলে,
“কিছু খেয়ে নাও, না হলে আবারো রক্তশূন্যতা হবে। আমি কিন্তু এতো টাকা আনিনি, যা দিয়ে বারবার রক্ত কেনা যাবে।”
তুবা ফিক করে হেসে দেয়। অনুও মুচকি হাসে।
অন্যদিকে,
অবজারভেশন রুমে রোগীর পরিবারের কোনো সদস্যদের থাকা এলাউ নয়। তবুও করিডোরে বসে আছে আছিয়া। কিছুতেই বাসায় যাবে না সে। সুলতানা, জেরিন, আহমেদ বাসায় চলে গেছে। বিকেলের দিকে মুগ্ধও চলে গেছে। ইব্রাহিম এখনো আছিয়ার পাশেই বসে আছে।
জিনাত বাসায় গিয়েছিল এখন আবারো এসেছে। ইব্রাহিম জিনাতকে দেখে বলে,
“তোমার চাচীকে বোঝাও, শরীর খারাপ হবে তো।”
জিনাত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

“কাকা, তুমি চাচী আম্মুর মনের অবস্থাটা বুঝতে পারছো না। আলিয়ার নিজের অসুস্থতার কথা কাউকে জানায়নি, অবাক করার ঘটনা ছিল এটা।”
ইব্রাহিম কিছুটা বিরক্তি নিয়েই বলে,
“আলিকে তো চেনো, ছোটবেলায়ও ব্যথা লুকানোর অভ্যাস ছিল। ও তো এটা ভুলেই গেছে ছোটবেলার হাত পা কাটা আর কোমড়ের তিন চামড়া কাটা এক নয়।”
জিনাত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাচের দরজার ফাঁক দিয়ে একবার আলিয়ারকে দেখে। ঘুমের ওষুধ দিয়ে হয়তো ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।
জিনাত আছিয়াকে বলে,
“চাচী আম্মু বাসায় চলো, কাল সকালে আবার এসো।”
আছিয়ার হাত ধরা মাত্রই বাচ্চাদের মতো তা ছাড়িয়ে নেয় আছিয়া। জিনাত বোকা বোকা চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এরকম অদ্ভুত আচরণ করাটাও কি নরমাল?
এমনসময় জিনাতের ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে মুগ্ধের,
“জিনু, আলি কেমন আছে?”

জিনাত মুচকি হেসে একটু সরে গিয়ে মুগ্ধকে কল দেয়। মুগ্ধকে কলব্যাক করলে মুগ্ধ বলে,
“ও জিনু, আলির কি অবস্থা?”
“ঘুমাচ্ছে, কিন্তু আলির থেকে খারাপ অবস্থা চাচী আম্মুর।”
মুগ্ধ চমকে উঠে,
“কি হয়েছে আন্টির?”
“আরে, এখনো হসপিটালে আছে, কিছুতেই বাসায় যেতে চাচ্ছে না। উনি কি এখনো বাচ্চা যে জোর করে নিয়ে যাবো?”
মুগ্ধ হেসে দেয়। জিনাত রেগে বলে,
“তুমি হাসছো?”
“সরি, আসলে বলার স্টাইলটাই এমন ছিল।”
“কথা নাই।”
“ওয়েট ওয়েট।”
মুগ্ধ চেঁচিয়ে উঠে।
জিনাত গাল ফুলিয়ে বলল,
“কি?”

“আন্টিকে বলো বাসায় না গিয়ে এভাবে বসে থাকলে আলিয়ার সুস্থ হবে না, বরং বাসায় গিয়ে আলিয়ারের পছন্দের নানাবিধ খাবার রান্না করে ওর জন্য অপেক্ষা করুক।”
“চেনো না তুমি চাচীকে, একথা বললে এক্ষুণি বাসায় গিয়ে রান্না শুরু করবে।”
“ও মা গো, কি সাংঘাতিক নারী! এক কাজ করো, সত্যমিথ্যা যা আছে সব গুলিয়ে পেঁচিয়ে বলে নিয়ে যাও। এভাবে অবজারভেশন রুমের সামনে বসে থেকে লাভ নেই।”
“ঠিক আছে।”
মুগ্ধ কল কাটে, আছিয়া যে ছেলের জন্য পাগলামি করে তা নতুন নয় তবে এমন অবুঝের মতো আচরণ করবে তা মুগ্ধ ভাবতেও পারছে না।
৫ দিন পর,

ঘড়িতে বিকাল ৫ টা, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাসায় চলে যাচ্ছে তুবা। যাওয়ার আগে আলিয়ারের কেবিনের বাইরে থেকে আলিয়ারের ঘুমন্ত মুখটা দেখে যায়। আলিয়ারকে হয়তো আরো কয়েকদিন ভর্তি রাখা হবে।
রিসিপশনে গিয়ে দেখে অনু হাসপাতালের বিল মেটাচ্ছে। তুবা পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
“বিল কত হয়েছে?”
“সেটা জেনে তুমি কি করবে? তুমি বাইরে গিয়ে টেক্সিতে বসো।”
তুবা আশেপাশে তাকিয়ে বলে,
“ডা. সিহাবের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম।”
অনু বিল মিটিয়ে তুবার হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে টেক্সিতে বসায়। তারপর ধমক দিয়ে বলে,
১৫ দিন, কাটায় কাটায় ১৫ দিন বাসা থেকে বের হবে না।”
তুবা বাচ্চাবাচ্চা ফেস করে তাকিয়ে আছে। অনু ব্যাগগুলো গাড়িতে তুলে নিজেও উঠে বসে। তুবা ওর হাতে সুড়সুড়ি দিয়ে বলে,
“কি হয়েছে ভাবী?”

“তা বাসায় গেলে বুঝবে।”
তুবা ভয় পেয়ে যায়। অনুর কথার অর্থ কি? তবে কি তাজিম বাসায় চলে এসেছে? না, কোনো খবর ছাড়া কি ডানার ভরে এসেছে নাকি, হয়তো অন্য কোনো কথা আছে।
বাসায় যাওয়ার সময় নিজের জন্য একটা নতুন সিম কিনে নেয় তুবা।পুরাতন সিমটা আর ব্যবহার করবে না সে, আলিয়ার ভালো থাকুক। কালো মেয়ে ওর মা পছন্দ করবে না, তা নিয়ে ওর মা আর ওর মাঝে হয়তো মনোমালিন্য হবে যা তুবার ভালো লাগবে না।
রাতে,

জিনাত রাতের খাবার নিয়ে হাসপাতালে এসেছে। আছিয়া আছে আলিয়ারের সাথে।
জিনাত খাবারের বক্সগুলো টেবিলে রেখে আছিয়াকে বলল,
“চাচী আম্মু, ফ্রেশ হয়ে নিন।”
“ঠিক আছে।”

আছিয়া গামছা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। জিনাত আলিয়ারের বেডের পাশে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ে।
আলিয়ার চোখ খুলে জিনাতকে দেখে আবারো হতাশ হয়। বারবার তুবাকে খুঁজে সে অথচ তার দেখা নেই।
আলিয়ার ধীরেধীরে উঠে বসে,
“জিনাত?”
জিনাত আলিয়ারের দিকে তাকায়,
“হুম।”
“তুবা কি জানে আমি এখানে?”
জিনাত কথা ঘুরানোর জন্য বলে,
“খাবার খেয়ে নে, আমি তোর জন্য…”
জিনাতের কথায় মাঝেই আলিয়ার বলে,
“এটা আমার কথার জবাব নয়।”
জিনাত মাথানিচু করে ফেলে,
“সেদিন রাতে জানিয়েছিলাম।”
“কোন দিন?”
“যেদিন তোকে হস্পিটালে আনলাম, সেদিন রাতে।”
“কি বলেছিল?”
“ঠিকানা নিয়েছিল।”
“আসেনি?”
“না।”

আলিয়ার গভীরভাবে কষ্ট পায়, মনটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে। তুবা এরকমভাবে কঠোর হয়ে যেতে পারে তা আলিয়ার কখনো কল্পনাও করেনি।
জিনাতকে বলল,
“আমার ফোন কোথায়?”
জিনাত আশেপাশে তাকায়। টেবিল, টেবিলের ড্রয়ারে দেখে তারপর আছিয়ার ব্যাগে ফোন পায়।
আলিয়ারের হাতে ফোন দেয়া মাত্রই আলিয়ার তুবার নাম্বারে কল করে। ওপাশ থেকে সুকন্ঠী নারী বলে,
“আপনি যে নাম্বারে কল করেছেন তা এই মুহূর্তে বন্ধ আছে।”
আলিয়ার হতাশ হয়ে ফোন রেখে শুয়ে পড়ে। বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাই মরে গেছে, যদি ডোনার পাওয়া না যেত আর ও মরে যেত তবেও কি তুবা আসতো না?
কিছুক্ষণ পর আলিয়ার বলল,
“ডোনার কে?”

জিনাত খাবার সাজাচ্ছিল। আলিয়ারের কথায় ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
“জানি না, দেখিনি।”
“ছেলে নাকি মেয়ে?”
“হয়তো ছেলে, ওতো সকালে কোন মেয়ে তোর জন্য আসবে?”
“ওহ।”
আলিয়ারের এই ছোট্ট কথাটার মধ্যে হাজারো আক্ষেপ, হাজারো কষ্ট জড়িয়ে আছে যা ছিটেফোঁটাও জিনাত বুঝতে পারছে না।
অন্যদিকে,
খাবার টেবিলে বসার সময়ও হালকা ব্যথা অনুভব করে তুবা। চোখমুখ খিঁচে তা সহ্য করে নেয়।
মহসিন গম্ভীর কন্ঠে বলে,
“তোমার কোন বান্ধুবির বিয়ে হলো তুবা?”
তুবা একবার অনুর দিকে তাকালে অনু বলল,
“বাবা, ওই আনিকা…”

হাতের ইশারায় অনুকে থামিয়ে দেয় মহসিন। অনু চুপ করলে তুবা আমতাআমতা করে বলে,
“আনিকার বিয়ে ছিল।”
“আচ্ছা, সুপ্তি বা স্নিগ্ধা কি তা জানে না বা ওরা যায়নি?”
এতোক্ষণে তুবা বুঝতে পারছে মহসিন কি বোঝাতে চেয়েছে। তারমানে সুপ্তি ও স্নিগ্ধার সাথে যোগাযোগ হয়েছে উনার।

তুবা জোরপূর্বক হাসির রেখা টেনে বলল,
“না, আসলে ওদের সাথে আনিকার সম্পর্ক ভালো নয়।”
“তাই বলে কোনো ফ্রেন্ডের বিয়ে থাকলেও ঘুণাক্ষরেও টের পাবে না?”
ধমক দিয়ে কথাটা বলল মহসিন।
তুবা মাথানিচু করে ফেললে মহসিন অনুকে বলে,
“মেয়ে মিথ্যা বলেছে বলে তুমিও ওকে আস্কারা দিয়েছো? এমনটা আশা করিনি।”
অনু ভয়ে ঢোক গিলে। তাজিম এই কথা জানতে পারলে তুবার চেয়ে অনুই বেশি বকা খাবে।

১ মাস পর,
আলিয়ার এখন আগের থেকে অনেকটা সুস্থ থাকায় আজ অফিসে এসেছে। যদিও তেমন কাজ করছে না। শুধু একটু কাজকর্ম দেখছে, এতোদিন পর অফিসে এসেছে কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কিনা তা তো দেখতে হবে।

লাঞ্চের সময় অফিস থেকে বেরিয়ে যায় আলিয়ার। একটু ঘুরাঘুরি করা দরকার। হাসপাতাল আর বাসায় শুয়ে বসে থেকে থেকে শরীরে জং ধরে গেছে।

বাইক না রিকশায় করে তুবার ভার্সিটির সামনে যায় ও। এই কয়েকদিনেও তুবা ওর সাথে যোগাযোগ করেনি। ভার্সিটির অনেক স্টুডেন্ট বাইরে আছে, তারমানে কোনো ডিপার্টমেন্টের ছুটি হয়েছে। আলিয়ার জানে এই সময়ই তুবার ছুটি হয়।

রিকশার ঝাঁকুনিতে একটু আধটু সমস্যা হচ্ছে আলিয়ারের, যা রিকশার থেকে নেমে দাঁড়ানোর সময়ই টের পায় আলিয়ার। যদিও আগের অসহ্য যন্ত্রণার কাছে এ ব্যথা তুচ্ছে। সারাজীবন ঋণী থাকতে হবে সেই অচেনা ডোনারের প্রতি। কে সে তা জানার প্রচন্ড ইচ্ছে জাগছে মনে। এসব ভাবতে ভাবতেই ভার্সিটির গেইটের কাছাকাছি চলে এসেছে সে।

একটু দূরে তুবাকে দেখে দোকান থেকে একটা চকলেট কিনে ফুটপাতে এসে দাঁড়িয়ে তার খোসা ছাড়াচ্ছে। আলিয়ার সেদিকে এগিয়ে যায়।

আলিয়ার গিয়ে ওর পাশে দাঁড়ায়। ওকে দেখেও না দেখায় ভাণ করে তুবা। চুপচাপ চকলেটে কামড় বসিয়ে রিকশার আশায় রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে।

“ভালোবাসি, ভালোবাসি বলতে পেরেছো অনেকবার। কিন্তু আফসোস, একবারও প্রমাণ করতে পারোনি। কি অদ্ভুত না! যাকে ভালোবাসলাম সে আমার খারাপ সময়ে আমাকে ছেড়ে চলে গেল, কিন্তু পাশে থাকলো সেই মেয়েটা যাকে আমি তোমার জন্য ছেড়েছি।”

আলিয়ারের কথায় কোনো বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ হলো না তুবার। সে নিজের মতো চকলেট খেয়েই যাচ্ছে। কোনো বাইরের মেয়ের সাথে নিজের ভালোবাসার তুলনা ও করতে চায় না। বরং আলিয়ারকে ভালো রাখতে নিজে থেকেই সরে যাচ্ছে তার জীবন থেকে।
তুবার কোনো উত্তর না পেয়ে আলিয়ার নিজে থেকেই বলল,

“বাহ, কোনো কথাই নেই। থাকবেই বা কি করে? নিজের কথা বলার মুখটা নিজেই নষ্ট করেছো। খুব আফসোস হচ্ছে, নিজের সময়টা তোমার জন্য নষ্ট করার আফসোস।”

তুবা কোনো উত্তর না দিয়ে ফুটপাত থেকে নেমে রাস্তায় যায়। খালি রিকশায় উঠে চলে যায় নিজ বাসার উদ্দেশ্যে। পেছনে ফিরে তাকানোরও কোনো প্রয়োজনবোধ করে না। অবাক হয়ে ওর যাওয়া দেখে আলিয়ার। এ কোন তুবা? এই তুবা কি না ওকে এতো ভালোবাসতো?
.
চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com