Breaking News

মেঘকন্যার রাজ্যে । পর্ব -০৪

সাঙ্গু নদীর তীরে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে ওরা, যদিও মনে শান্তি নেই। ওরা আকাশের দিকে তাকিয়ে বন্ধুদের খোঁজার উপায় বের করার চেষ্টা করছে। সামনের ওই পাহাড় আর জঙ্গলে যদি ওরা হারিয়ে গিয়ে থাকে, তবে খুঁজে বের করা কি আদৌ সম্ভব।
সাবা নিরবতা কাটিয়ে বলে,
“আশেপাশে মানুষের আনাগোনা কম। আকাশেও মেঘ করছে, আমার মনে হয় আমাদের এগিয়ে যাওয়া উচিত। এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করার কোনো মানে নেই।”
“এগিয়ে কোনদিকে যাবি?”(তন্বী)
তন্বীর কথায় সবাই ওর দিকে তাকায়। তন্বী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“সামনে জঙ্গল, শুধুই জঙ্গল। উঁচুনিচু পাহাড়ি রাস্তা, তারউপর ইরা আহত। কোথায় খুঁজবি ওদের?”
হতাশ হয়ে কথাগুলো বলছে তন্বী, এটুকু স্পষ্ট সবাই বুঝতে পেরেছে। ইরা তন্বীর কাঁধে হাত দিয়ে বলে,
“তন্বী, এতো হতাশ হচ্ছিস কেন? আমরা তো সেই জাতি যারা ২ ঘন্টায়ও সাতটা সৃজনশীল লিখেছিলাম। হাতের লেখা ছ্যাবড়া ছ্যাবড়া হবে, কেউ পড়তে পারবে না জেনেও লিখতাম।”
তন্বী প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে ইরার দিকে তাকায়। ইরা মুখ টিপে হেসে বলল,
“আমরা তো সেই জাতি, যে কিনা মনে থাকবেনা জেনেও পড়াশুনা করতাম।”
তন্বীসহ সবাই জোরে হেসে দেয়। হাসতে হাসতে একেকজনের পেটে খিল ধরে অবস্থা। ইরা আরেকটু অভিনয়ের সুরে বলে,
“ধরা খেয়ে গেলে বকা খেতে হবে জেনেই বায়োলজি ক্লাসে ফিজিক্স পড়া জাতি আমরা। স্যারের মাথা পাগল করতে পরীক্ষার হলে আনকমন প্রশ্নের এক্সট্রা অরডিনারি সৃজনশীলতা দেখিয়ে উত্তর দেয়া জাতি আমরা। (একটু থেমে) আম্মু জানে পরীক্ষার খাতা দিয়েছে, তাও তা আম্মুর কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা জাতি আমরা।”
মিম হাত তুলে বলে,
“বইন থাম, আর হাসতে পারতেছি না।”
ইরা চুপ থাকে। কিছুক্ষণ পর সবাই হাসি থামিয়ে হাঁপাচ্ছে। ইরা আবারো বলে,
“আমরা সেই জাতি…”
“একদম চুপ, আর হাসতে পারবো না।”
ইরার কথার মাঝে ওকে থামিয়ে দেয় সারাহ্।
সাবা বলল,
“সত্যিই স্কুল লাইফ, কলেজ লাইফ পেরিয়ে এসে নিজেদের কাজকর্মগুলো মনে পড়লে নিজেদেরই হাসি উঠে।”
সবাই আবারো চুপ। সারাহ্ বলে,
“হতাশা কেটেছে আপনাদের, ম্যাডামরা? এখন চলেন। একজায়গায় দাঁড়ালে একদম সেঁটে যায়।”
“আজব তো, আমরা কি শজারু নাকি?”(সাবা)
“শজারু সেঁটে যায়না।”(সারাহ্)
সবাই হাঁটা শুরু করে। হাঁটতে হাঁটতে নিজেদের মধ্যে তর্ক করছে সারাহ্ ও সাবা। টপিক সেই একটাই, শজারু সেঁটে যায় নাকি যায় না?
অন্যদিকে,
“দেখ, মেঘগুলো মনে হচ্ছে আমাদের গা ঘেষে যাচ্ছে।”(মিথিলা)
“বাতাসটা তো মাতাল করার মতো। ঠান্ডা মেঘ আমাদের ছুঁয়ে যাচ্ছে। উফ, অস্থির লাগছে।”(তিথি)
সুহানা ওদের দিকে তাকিয়ে বলে,
“কি শুরু করলি দুজনে? আমরা অনেক উপরে আছি, তাই এমনটা মনে হচ্ছে। আর তোদের দেখে মনে হচ্ছে আমরা এখানে হানিমুন করতে এসেছি।”
অনিয়া ও ইকরা ফিক করে হেসে দেয়। তিথি চোখ কুঁচকিয়ে বলল,
“ফাজলামি করবি না, আমি কখন বললাম এই কথা। আমি তো এই জায়গাটার কথা বলছি। আমার ইচ্ছা করছে এখানেই থেকে যেতে।”
“ও আচ্ছা, আর কি কি ইচ্ছা করছে?”(সুহানা ব্যঙ্গসুরে বলল)
“ইচ্ছা করছে নাচতে, গলা ছেড়ে গান করতে।”
তিথির গলায় ধরে মিথিলা বলল,
“অনেকক্ষণ বিনোদন পাচ্ছি না। নাচ শুরু কর।”
“ছি, ছি, আমার লজ্জা লাগে না বুঝি?”(তিথি)
“ন্যাকামি করিস না, তিথি।”(ইকরা)
তিথি জোরে হেসে উপরের দিকে তাকায়। তারপর তাড়াহুড়ো করে ওদের কাছে এসে বলে,
“আচ্ছা, বাকিরা কি আমাদের জন্য টেনশন করছে?”
“অবশ্যই, করছে। হয়তো ওরা আমাদের খুঁজে খুঁজে হয়রান হচ্ছে।”(অনিয়া)
“ওরা তো আর জানে না আমরা কতটা সুখে আছি এখানে।”(তিথি)
“সত্যি জায়গাটা অন্যরকম।”(মিথিলা)
অনিয়া মুচকি হেসে বলে,
“অন্যরকম লাগার কিন্তু একটা বিশেষ কারণ আছে।”
“কি কি?”
সবাই একসাথে চেঁচিয়ে বলে।
চারটা মাথা অনিয়ার মুখের সামনে এসে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অনিয়া বোকার মতো হেসে বলে,
“সরে বস, এভাবে তাকালে আমার হাসি উঠে।”
সবাই একটু সরে বসলে অনিয়া বলা শুরু করে,
“আগে অনেকবারই পাহাড় ভ্রমণ করেছি, কিন্তু কখনো দল বিচ্ছিন্ন হয়ে পথ হারাইনি।”
“ঠিক।”(তিথি)
“আগে এখন তাবুতে থাকিনি, রাতের খোলা আকাশ আর সকালের সূর্যোদয় এভাবে মাটিতে শুয়ে-বসে দেখিনি। কখনো অনিশ্চয়তা নিয়ে পাহাড়-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াইনি।”(অনিয়া)
অনিয়ার কথায় মাথা নেড়ে সবাই সম্মতি জানায়। মিথিলা বলে,
“আরেকটা কারণ আছে।”
“কি?”(সবাই একসাথে)
“আগে কখনো এতো কম খেয়ে এতোক্ষণ থাকিনি।”
সবাই হো হো করে হেসে দেয়। সত্যিই ওদের ক্ষুধা লেগেছে।
মিথিলার মাথায় গাট্টা মেরে তিথি বলল,
“মনে করানোর কি খুব দরকার ছিল?”
.
রাত নেমে এসেছে। পাহাড়ের গায়ে এক সমতল জায়গায় তাবু খাটিয়েছে সারাহ্, সাবা, ইরা, মিম ও তন্বী। একসাথে সবাই ঘুমাবে না, তাই মিম, ইরা, সাবা ঘুমিয়ে গেছে আর তন্বী ও সারাহ্ বাইরে বসে আছে।
“আকাশের মেঘগুলো দেখ।”
সারাহ্-র কথায় আকাশের দিকে তাকায় তন্বী। ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে আগুনের কাছে বসে আছে দুজনে। বাতাসের ঝাপ্টায় আগুন নিভে নিভে অবস্থা।
“তারাগুলো সুন্দর লাগছে, কিন্তু মেঘগুলো আরো সুন্দর লাগছে।”(তন্বী)
হঠাৎ শেয়ালের ডাক শুনা যায়। সারাহ্ ও তন্বী দুজনেই কিছুটা ভয় পায়। আশেপাশে শেয়াল আছে এটা একরকম নিশ্চিত, কিন্তু আগুন দেখলে ওরা এদিকেও চলে আসতে পারে। তাই দুজনে আগুন নিভিয়ে তাবুর গা ঘেষে বসে পড়ে।
“যদি শেয়াল চলে আসে, তখন আমরা কোথায় যাবো?”
ভয়ে ভয়ে বলল তন্বী।
সারাহ্ আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
“চল, তাবুর ভেতরে চলে যাই।”
দুজনে চুপচাপ তাবুর ভেতরে চলে গেল। তাবুর চেইন আটকে ভেতরে বসে থাকে। ঘুমে ঢুলে পড়ছে ওরা, কিন্তু ঘুমালে তো চলবে না।
.
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com