Breaking News

দিনাজপুর জেলা ভ্রমণ গাইড



দিনাজপুর জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর বিভাগের একটি জেলা। দিনাজপুর জেলা উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলার মধ্যে বৃহত্তম। এই অঞ্চল ভূতাত্ত্বিকভাবে ভারতীয় প্লেটের অংশ যা আদি জুরাসিক যুগে সৃষ্টি হওয়া গন্ডােয়ানাল্যান্ডের অংশ ছিল। জনশ্রুতি আছে, জনৈক দিনাজ অথবা দিনারাজ দিনাজপুর রাজপরিবারের
প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর নামানুসারেই রাজবাড়িতে অবস্থিত মৌজার নাম হয় দিনাজপুর। পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসকরা ঘােড়াঘাট সরকার বাতিল করে নতুন জেলা গঠন করে এবং রাজার সম্মানে জেলার নামকরণ করে দিনাজপুর।
চিত্তাকর্ষক স্থান
নয়াবাদ মসজিদ, আওকরা মসজিদ, আনন্দ সাগর, কান্তজীর মন্দির, কালিয়া জীউ
মন্দির, কোরাই বিল, গৌরগােবিন্দ, ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ি, চেহেলগাজী মাজার, জিয়া
হার্ট ফাউন্ডেশন, দিনাজপুর ঈদগাহ ময়দান, দিনাজপুর জাদুঘর, দিনাজপুর জিলা স্কুল,
দিনাজপুর রাজবাড়ি, নওপাড়া আদর্শ গ্রাম, পার্বতীপুর রেলওয়ে স্টেশন, বড়পুকুরিয়া
কয়লাখনি, বারদুয়ারি, মাতাসাগর, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বাের্ড, দিনাজপুর,
রামসাগর, রামসাগর জাতীয় উদ্যান, রুদ্রপুর দীপশিখা বিদ্যালয়, সিংহ দরওয়াজা, সিংড়া
জঙ্গল, সীতা কুঠুরী, সীতাকোট বিহার, সীমান্ত শিখা ক্লাব, হাকিমপুর, সুখসাগর, স্বপ্নপুরী,
হাজী মােহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাবড়া জমিদার বাড়ি, হিলি
স্থলবন্দর।

কান্তজির মন্দির
কান্তজির মন্দির বা কান্তনগর মন্দির ইটের তৈরী অষ্টাদশ শতাব্দীর মন্দির। দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ১২ মাইল উত্তরে এবং দিনাজপুর-তেঁতুলিয়া সড়কের প্রায় এক মাইল পশ্চিমে ঢেপা নদীর পারে এক শান্ত নিভৃতগ্রাম কান্তনগরে এ মন্দিরটি স্থাপিত। বাংলার স্থাপত্যসমূহের মধ্যে বিখ্যাত এ মন্দিরটির বিশিষ্টতার অন্যতম কমনও
হচ্ছে পৌরাণিক কাহিনীসমূহ পােড়ামাটির অলঙ্করণে দেয়ালের গায়ে ফুটিয়ে তোলা
হয়েছে। এ নবরত্ন বা নয় শিখর’ যুক্ত হিন্দু মন্দিরের চূড়া হতে আদি নয়টি শিখর
১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশের সর্বকৃষ্ট টেরাকোটা
শিল্পের নির্দশন রয়েছে এ মন্দিরে।
যাতায়াত : দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ১২ মাইল উত্তরে এবং দিনাজপুর-
তেতুলিয়া সড়কের প্রায় এক মাইল পশ্চিমে ঢেপা নদীর পারে এক শান্ত নিভূতগ্রাম
কান্তনগরে এ মন্দিরটি স্থাপিত শহর থেকে বাস কিংবা অটোতে করে অনায়াসে এখানে
যাওয়া যায়।

নয়াবাদ মসজিদ
দিনাজপুর জেলার কাহারােল উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের নয়াবাদ গ্রামে
অবস্থিত। জেলা সদর থেকে ২০ কিমি উত্তর-পশ্চিমে ঢেপা নদীর পশ্চিম তীরে এর
অবস্থান। ১.১৫ বিঘা জমির উপর মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত।
যাতায়াত : নয়াবাদ মসজিদ দিনাজপুর জেলা সদর থেকে ২০ কিমি উত্তর-পশ্চিমে
ঢেপা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। সুতরাং জেলা শহর থেকে অনায়াসে যে কোনাে
বাহনে করে এই নয়াবাদ মসজিদে যাওয়া যায়।

সীতাকোট বিহার
সীতাকোট বিহার দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত একটি বৌদ্ধ
বিহার। জনাব আবুল কালাম মােহাম্মদ যাকারিয়ার উদ্যোগে জেলা পরিষদের অর্থায়নে হয়েছিলাে এই বিহারে।
দিনাজপুর মিউজিয়ামে। হয়েছিলাে সীতাকোট বৌদ্ধবিহার। পরবর্তিতে ১৯৭২-১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দেও খনন চালানাে
এর এ বিভাগের পিরি সহায়তায় ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে প্ৰশ্নতাত্ত্বিক খননে আবিস্কৃত।
ব্রোঞ্জনির্মিত একটি বােধিসত্ত্ব পদাপাণি এবং বােধিসত্ত্ব মঙ্গশী মূর্তি সীতাকোট
বিহার থেকে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্ননিদর্শন। মূর্তি দুটির গঠনশৈলী থেকে অনুমান করা যায়,
এলি ৭ম-৮ম শতাব্দীতে তৈরি। এই বিহারের অধিকাংশ প্রত্নসামগ্রী সংরক্ষিত আছে
যাতায়াত: সীতাকোট বিহার দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত এটি বৌদ্ধ বিহার।

রামসাগর দীঘি
দিনাজপুর শহরের কেন্দ্র থেকে ৮ কিমি দক্ষিণে আউলিয়াপুর ইউনিয়নে অবস্থিত
দিনাজপুরের মহারাজাদের অন্যতম কীর্তি রামসাগর দীঘি। এর চারদিকে সবুজ প্রান্তর।
সেচ সুবিধা, প্রস্তাদের পানির কষ্ট দূরীকরণ এবং দূর্ভিক্ষপীড়িত প্রজাদের কাজের
বিনিময়ে খাদ্যের সংস্থান হিসেবেই রাজা রামনাথের আমলে এ দীঘি খনন করা হয়।
তার নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়। দীঘিটি খনন করতে তৎকালীন প্রায় ৩০,০০০
টাকা এবং ১৫ লক্ষ শ্রমিকের প্রয়ােজন হয়েছিল। দীঘির পাড়ের উচ্চটিলার উপর
অবস্থিত মনােরম বাংলােটি দেশী-বিদেশী অসংখ্য কৌতূহলী পর্যটকের নিকট যেমন
প্রতিনিয়ত স্বপ্নিল আকর্ষণ, তেমনটি প্রমােদবিহারীদের জন্য নিভৃত নিকেতনও বটে।
যাতায়াত : দিনাজপুর শহরের কেন্দ্র থেকে ৮কিমি দক্ষিণে আউলিয়াপুর ইউনিয়নে
অবস্থিত। দিনাজপুর সদয় থেকে অটো/রিক্সা যােগে।

সুরা মসজিদ
মসজিদটি জনহীন এক জনপদের নীরব সাক্ষী। এর নাম নিয়ে আছে নানা কথা
কেউ বলেন সৌর মসজিদ, কেউ বলেন সুরা মসজিদ, আবার কেউ বলে শহি খুজা
মসজিদ। সুর শব্দের অর্থ ‘অপদেবতা বা জ্বীন। স্থানীয় মুরুবীরা জানান, এক রাতের
মধ্যে জ্বীনেরা এটি নির্মাণ বনে দেন, তাই এ নাম সুরা মসজিদ হবেহে। সৌর শব্দের
অর্থ আসমানী বা গায়েবী অর্থাৎ লােকচক্ষুর আড়ালে যা ঘটে না হয় তাই গায়েবী। অর্থাৎ
গায়েবী ভাবেই মসজিদটি নির্মীত হয়েছে। আবার অনেকে বলেন- মােগল আমলে
বাংলার নবাব সুজা এটি নির্মাণ করে দেন বলে এর নাম শাহ সুজা মসজিদ হয়েছে।
এমন ধরণের আরাে অনেক কথা লােকমুখে শােনা যায়। বাস্তবে শাহ সুজার ক্ষমতা
গ্রহণের অনেক আগে এ মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। মসজিদের ভিতরে পশ্চিম দেয়ালে
মিহরাবগুলােতে উন্নতমানের কারুকাজ। মসজিদে ইটের সঙ্গে পাথরের ব্যবহার,
দেয়ালের মাঝে পাথরের স্তম্ভ, ইটের গাঁথুনি চোখে পড়ার মত। এছাড়া প্রত্যেক দরজার
নিচে চৌকাঠ পাথরের তৈরি। পুর্বে মসজিদে প্রবেশের সিড়ি আছে। ধারণা করা হয়
এখানকার এই প্রাচীনকীতির ধবংসাবশেষ গুপ্তযুগের পরে নয়।
যাতায়াত : দিনাজপুরের ঘােড়াঘাট ইউনিয়নের চৌগাছা মৌজায় (হিলি রােড)
প্রাচীন এ মসজিদটি অবস্থিত। দিনাজপুর জেলার ঘােড়াঘাট উপজেলা থেকে ৫
কিলােমিটার পশ্চিমে গেলে পাকা রাস্তার উত্তর বারে ৩৫০-২০০ গজ আয়তন বিশিষ্ট
বিশাল একটি পাড়ওয়ালা দীঘির দক্ষিণ বারে মসজিদটি অবস্থিত।


স্বপ্নপুরী
দিনাজপুর শহর থেকে ৫২ কিমি দক্ষিণে নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জে সম্পূর্ণ
ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় ১৫০ একর জমির উপর গড়ে উঠেছে নান্দনিক সৌন্দর্যের এক
স্বপ্নিল বিনােদন জগত স্বপ্নপুরী। স্বপ্নপুরীর প্রবেশমুখে স্থাপিত প্রস্তরনির্মীত ধবধবে সাদা
ডানাবিশিষ্ট দুটি সুবিশাল পরী যেন মােহনীয় ভঙ্গীতে পর্যটকদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে।
স্বপ্নপুরী হচ্ছে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বিনােদনকেন্দ্র। এখানে রয়েছে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন
পশু-পাখির অবিকল ভাষ্কর্য, কৃত্রিম পাহাড়, কৃত্রিম ঝর্ণা এবং ইট-সিমেন্টে নির্মিত
বাংলাদেশের এক সুবিশাল মানচিত্রের সমন্বয়ে তৈরী একটি কৃত্রিম চিড়িয়াখানা, জীবন্ত
পশুপাখীদের চিড়িয়াখানা, শিশুদের জন্য পার্ক, দোলনা, বায়ােস্কোপ ইত্যাদি।
যাতায়াত : দিনাজপুর শহর থেকে ৫২ কিমি দক্ষিণে নবাবগঞ্জ উপজেলার
আফতাবগঞ্জে স্বপ্নপুরী অবস্থিত। বাসযােগে যাওয়া যেতে পারে অথবা রেলযােগে
ফুলবাড়ী রেল স্টেশনে নেমে অটোরিক্সায় যাওয়া যায়।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com