Breaking News

সুখ নেই কপালে । পর্ব - ০৪ এবং শেষ



কথা গুলো বলার পরপরই যখন সিমা আরও কিছু

বলতে যাবে ঠিক তার আগেই সবাই কে বাকরূদ্ধ
করে দিয়ে, আমার ছাত্রী রুহি, সিমাকে কোষে একটা
থাপ্পর দিয়ে বলল, প্লিজ জাস্ট এনাফ!আর নয়,এবার
দয়া করে বন্ধ করুন আপনার এই ঘৃণিত কথা গুলো।
আমি, স্যারকে যত দিন চিনি, সে-টুকুর উপর সম্পূর্ণই
ডিপেন্ড করে বলছি, আমার স্যার এরূপ ঘৃণিত,জঘন্য,
পাপ কাজ কখনো করতে পারেন না। এটা স্যারের
প্রতি আমার দীর্ঘ বিশ্বাস। আর কে আপনি? সাহস কি
করে হয় আমার টিউশনির স্যার সম্পর্কে এতটা বাজে
কথা বলতে?
"জবাবে সীমা,ধমকানোর কন্ঠ স্বর প্রয়োগ করে বলল,
-তোমার সাহস দেখে সত্যিই আমি বাকরুদ্ধ!আমাদের
বাড়িতে এসে, স্বয়ং আমাকেই সবার সম্মুখে থাপ্পর
মারলে?হাত কি একটু কাঁপলো না?তুমি এই আমাকে!
সীমা চৌধুরীর গায়ে হাত তুলেছো, তার নিজ বাড়িতে!
নিজ পরিবারের চোখের দৃষ্টির সন্নিকটে।এত পরিমাণ
দুঃসাহস? কত দিন যাবত চিনো তোমার স্যারকে?
অন্তত আমার চেয়ে বেশি তুমি শাহরিয়ারকে অর্থাৎ
তোমার টিউশনির স্যারকে মোটেও চিনো না কারণ
সরূপ, এক সময় তোমার ওই চরিত্রহীন স্যার আমার
ভালোবাসার মানুষ, আমার বয়ফ্রেন্ড ছিলো।আমাদের
শ্রেনীর নয় সে, তবুও সব বিভেদ মুছে আমি ওকে মন
থেকে ভালোবেসে ছিলাম কিন্তু তার যোগ্য ও ছিলো
না কোনোদিনই। যে নিজের মায়ের বয়সী শিক্ষিকার
বুক থেকে শাড়ীর আঁচল টেনে মাটিতে ফেলে দেওয়ার
মতো ভয়াবহ অন্যায় কাজ করতে পারে,সে কি সত্যিই
আমার মনের গহীনে থাকার যোগ্য ছিলো?অবশ্য নয়।
ওকে তো ওর কৃতকর্মের জন্য ভার্সিটি থেকে বের করে
দেওয়া হয়েছে, জেলও খেঁটেছে! ছাড়া পাওয়ার পর
পরিবার, আত্বিয়-স্বজন হয়তো কেউই ওর মতো বাজে
ছেলেকে ঠাই দেয়নি তাই বোধ হয় আজ সে তোমাদের
বাড়িতে টিউশনি করাচ্ছে। কারো সম্বন্ধে সঠিক কিছু
না জেনে তাকে ভালো অথবা চরিত্রবান, বলে সম্বোধন
করার ব্যাপারটা একদমই ভুল? যেটা তুমি করেছো?
সীমার এরূপ কথা-গুলো শুনে এবার রুহিও যেন বেশ
খানিক চমকিত অনুভব করলো। সাথে তার পরিবার
তো বটেই। চুপচাপ বসে রয়েছি। সবার চোখের দৃষ্টি
যেন এই মুহূর্তে আমি কেড়ে নিয়েছি।কেউই আর জানি
না কেনো চোখের পলক ফেলতে সংকোচ বোধ করছে
সবাই তাকিয়ে রয়েছে আমার এই মুখচ্ছবিটার নিকট।
জানি না আমি, মাথার গহীনটাও ফাঁকা আমার! এখন
ঠিক কি বলা উচিত আমার।হয়তো সবার মতো রুহিও
এবং তার পরিবার ভুল বুঝবেন,আমায়।হয়তো সেটাই
হবে। সু-নিশ্চিত আমি। জানিনা কতক্ষণই বা আমি
ছিলাম সেখানে, তবে বেশিক্ষণ আর ওভাবে সবার
সম্মুখে মাথা নিচু করে মোটেও, এক মুহূর্তের জন্যেও
পারিনি দাঁড়িয়ে থাকতে। আমি চলে এসেছিলাম তবে
আসার আগে সীমাকে উদ্দেশ্য করে কয়েকটা কথা
বলেছিলাম, সেদিন আমার কোনো অপরাধ ছিলো না।
আমি রৌহিকা ম্যাডামের সাথে কোনোই অসভ্যতামি
করিনি।তিনি আমায় ফাঁসিয়ে ছিলেন সেদিন।আমাকে
ভার্সিটি থেকে বের করে দেওয়ার মূলত ফন্দি আঁটে
ছিলেন। কেনো করেছিলেন সেটা আমি এখন বলতে
পারবো না তবে আমি সত্যিই নিরপরাধ ছিলাম।যেটা
তোমার একটু হলেও বিশ্বাস করার উচিত ছিলো কিন্তু
করো নি।
অতঃপর আর জানিনা সঠিক, তার পরে ঠিক কি হয়ে
ছিলো। আজ বেশ কয়েকদিন ধরে রুহিকে টিউশনি
করাতে ওর বাসায় যাওয়া হয়না আমার।অবশ্য রুহির
মা বেশ কয়েকবার ফোনও করে বলেছিলেন আমায়,
জুরুরী ভিত্তিতে তাদের বাড়িতে আসতে।কিন্তু তবুও
যাইনি আমি। কোন মুখ নিয়েই বা আমি যাবো।কেনো
যেন মন বারবার বলছে, তারাও পরিশেষে আমার
সম্বন্ধে ভুল কিছু বুঝেছেন। হয়তো অপমান করার
জন্যই বাড়িতে ডাকছেন। ছোট্ট রুমে, বিছানায় বসে
বসে চা দিয়ে বাসি রুটি ভিজিয়ে খাচ্ছিলাম। সেই
মুহূর্তে কে যেন দরজায় কড়া নাড়লো। হয়তো বাড়ি
ওয়াল এসেছে। এমনিতেই গত-মাসের ভাড়া এখনো
দেওয়া হয়নি।নিশ্চিত কথা শোনাতেই এসেছে আমায়।কিন্তু আমি ভুল ভেবেছিলাম।কখনোই ভাবি নি দরজা
খুলে আমি রুহিকে দেখতে পাবো।ওর চোখ-মুখে স্পষ্ট
রাগের ছাপ।দ্রুততার সাথেই আমার ছোট্ট রুম-খানার
ভেতরে এসে, রাগে দাঁত কট-মট করতে করতে বলল,
-কি ব্যাপার স্যার? আজ কত দিন হলো,আপনি কেনো
আমায় পড়াতে আসছেন না? মা-ও তো ফোন করে
অনেক-বার আপনাকে বাড়িতে আসতে বলেছিলেন।
তাহলে কি সমেস্যা আপনার? নাকী আমাকে পড়াতে
আর আপনার ভালো লাগছে না? তাই বোধ হয়
আসছেন না? আচ্ছা যদি তাই হয় তাহলে ঠিক আছে।
আমি আম্মুকে আজই বলে দিবো, আপনাকে আর
তাহলে কষ্ট করে আমাদের বাড়িতে আসতে হবে না?
রুহির কথা-গুলো শুনে আমি চুপ করে রইলাম। বলার
মতো তেমন কোনোই সাবলীল ভাষা খুঁজে যেন পাচ্ছি
না আমি। এমনিতেও রুহির কথা-বার্তায় স্পষ্ট ভাবেই
আমার নিকট ক্ষণে ক্ষণে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে,সত্যিই
তারাও হয়তো পরিশেষে ভুল বুঝেছেন আমার সম্বন্ধে।
এরূপ চুপ থাকাকে কেন্দ্র করে, কিছুক্ষণ রাগি চোখে
তাকিয়ে থাকার পর আচমকাই রুহি ফিক করে হেসে
দিয়ে বলল,
-আমি সু-নিশ্চিত আপনি ভয় পেয়েছেন?কি ভেবেছেন
আপনি হুম? সবার মতো আমরাও আপনার সম্বন্ধে
ভুল কিছু মনে পোষণ করবো? মোটেও না! সেদিন
আপনার উপর এরূপ জঘন্য অভিযোগ আমরা কেউই
বিশ্বাস করিনি তাই তো আপনি চলে যাওয়ার,বেশ
কিছু খানিক পর আমরাও চলে এসেছিলাম। তবে
একটা বিষয়ে আম্মু কিন্তু খুবই ক্ষুব্ধ!
"কিছুটা অবাক হয়ে আমি বললাম,
-কি সেটা?
"জবাবে ভেংচি কেটে রুহি বলল,
-এই যে,এতবার ফোন করে বলার পরেও,বাড়িতে
আসলেন না যে??
-ওহ!!
-তাহলে আসি স্যার?এবং আজ সন্ধ্যার পরে কিন্তু
নিশ্চয়ই আসবেন, অবশ্য আমাকে পড়াতে।
অতঃপর রুহি আর তেমন কিছুই বলল না।তবে চলে
যাওয়ার আগে আজও সেই, ঞ্যাঁ ঞ্যাঁ নন ক্রোতে!
কথাটা বলার পরপরই এক প্রকার রহস্য জনক ভাবে
হাসলো। যার অর্থ বা মানে কিছুই প্রবেশ করলো না
আজও আমার এই শূন্য মাথায়। একমাত্র সৃষ্টি কর্তাই
জানেন ভালো,কি মানে এর? তবে এটা ভাবে মনে বেশ
একটা তৃপ্তিই পাচ্ছি বটে! সবাই ভুল বুঝলেও, অন্তত
তারা আমার সম্বন্ধে ভুল কিছু মনে পোষণ করেন নি।
অতএব সন্ধ্যার পরে রুহিদের বাড়িতে এসে উপস্থিত
হয়েছি।অবশ্য আলগা কিছু,মিছা-মিছি আমার উপর
রুহির মা রাগ ঝেড়েছিলেন।পরিশেষে রুহিকে যখন
ইংরেজি পড়াচ্ছিলাম তখন হুঠ-হাট বাড়িতে কিছু
পুলিশ এসে,গুরুতর ভাবে আহত হয়ে দীর্ঘ দিন যাবত
হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় তোহফা ম্যামকে খুন
করার অপরাধে আমায় গ্রেফতার করেন।মূলত বেশ
কিছু দিন আগে তোহফা ম্যামকে হত্যা করা হয়ছে।
জিজ্ঞেসা বাদে সেখান কার এক জন নার্স আমায়
সন্দেহের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন।হয়তো সেই
নার্সটিই হবে।যার নিকট আমার আচরণ অস্বাভাবিক বলে মনে হয়ে ছিলো সেদিন।অতএব আমাকে থানায়
নিয়ে আসা হয়।যার মিনিট খানিক পর রৌহিকা
ম্যাডাম থানায় এসেছিলেন এবং একজন পুলিশের
ইঙ্গিতে আমার দিকে তাকানোর পর,রাগান্বিত হয়ে,
নিকটে এসে ঠাঠিয়ে,আমার গালে থাপ্পর বসিয়ে দিয়ে
সর্বোচ্চ গলার কন্ঠ স্বরে বললেন,তুই?তারমানে তুই
আমার,বাপ-মা মরা ভাগ্নিকে খুন করেছিস?কেনো?
সে তোর কিরূপই বা ক্ষতি করেছিলো?শিওর!আমার
উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই তুই আমার আদরের
ভাগ্নিটাকে খুন করেছিস!কারণ সরূপ আমার সাথে
ফাংশনে সেদিন অসভ্যতামি করার জন্যই তো তোকে
ভার্সিটি থেকে চিরতরে বের করে দেওয়া হয়ে ছিলো।
নিশ্চিত সেই জন্যই,হয়তো আমার উপর রাগে,ক্ষুব্ধ
হয়ে,প্রতিশোধের আগুনে নেশাক্ত হয়ে তুই আমার
ভাগ্নিকে খুন করেছিস!শুনে রাখ!আমি তোকে ছেড়ে
দিবো না।এর শেষ দেখেই,বরংচো দীর্ঘ নিশ্বাস নিবো
আমি।অফিসার?ওকে একদমই ছাড়বেন না!আমি
নিশ্চিত স্বয়ং ও-ই আমার ভাগ্নিকে হত্যা করেছে।শুধু
মাত্র আমার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য!!
রৌহিকা ম্যাডামের কথার উত্তরে আমি যখন বললাম,
এসব মিথ্যা?আমি এমন কিছুই করিনি!তিনি অবশ্য
মিথ্যেই বলছেন।তোহফা ম্যাম কে আমি হত্যা করিনি।
আর যেই মেয়ে আমার অনেক বড় উপকার করে
ছিলো তাকে আমি কেনোই বা হত্যা করবো?
এটুকুই খুব জোর-চো বলতে পেরেছিলাম ঠিক মতো।
তারপর আর কিছুই বলার সুযোগ আমায় দেওয়া
হয়নি।একপ্রকার জোরজবরদস্তি করেই আমাকে
জেলের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়।সেই সময় রুহিও
থানায় উপস্থিত ছিলো বটে।তখন আমি রুহির চোখে
কেনো যেন জল ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাইনি।
অতঃপর আজ বেশ কয়েকটা দিন আমার।অন্ধকার
এই জেলে অতিক্রম হলো।না জানি আর কত দিনই
বা আমাকে এভাবে জেলের মতো অন্ধকার একটা
জায়গায় বন্দী অবস্থায় থাকতে হবে।অবশ্য রৌহিকা
ম্যাডাম আমার বিরুদ্ধে যেসব প্রমানের যোগান
দিয়েছেন তাতে,জেল অথবা ফাঁসি নিশ্চিত আমার।
থানার ঘড়ির কাটায় রাত এগোরাটা ছুঁইছুঁই করছে,
সেই মুহূর্তে একজন মেয়ে এসে থানায় উপস্থিত হয়।
অবশ্য সেটা রুহিই ছিলো।জানি না সে কেনো এতো
রাতে থানায় এসেছে?কি কারণ তার!হয়তো আমার
সাথে কথা বলতে?কিন্তু তাই বলে এতো রাতে?
অতঃপর রুহি আমার সম্মুখে এসে যখন বলল,
-স্যার আপনি মাথায় কোনো চিন্তার সূত্রপাত ঘটাবেন
না?প্লিজ!যাই হোক না কেনো আমার আপনার উপর
সম্পূর্ণই বিশ্বাস,আস্থা রয়েছে।আমি জানি আপনি
নির্দোষ,হয়তো কেউ আপনাকে ফাঁসানোর চেষ্টা
করছেন।আগামীকাল আপনাকে অবশ্য কোর্টে তোলা
হবে।একদমই ভয় পাবেন না।পরিস্থিতি যেমনই হোক!
কেউ আপনার পাশে না থাকলেও এই আমাকে ঠিকি
আপনার পাশে পাবেন।
কথা গুলো বলার পরপরই যখন রুহি চলে যাচ্ছিলো,
তখন আমি,কান্না চেপে রুহিকে ডেকে বললাম,আমার
প্রতি তোমার এতো বিশ্বাস কোথা থেকে আসে রুহি?
কেনো আমার জন্য তুমি এসব করছো?এর পেছনে
কি কোনো স্বার্থ আছে তোমার!আচ্ছা তুমি কি আমায়
ভালোবাসো?
শত দুঃখের ভিড়ে,খানিক মুচকি হাসি খুঁজে নিয়ে রুহি
বলল,
-হ্যাঁ ধরে নেও তাই!
অতঃপর রুহি চলে যায়।পরের দিন আমাকে কোর্টে
তোলা হয়।যেখানে আমার মা-বাবাও উপস্থিত ছিলো।
তবে রুহিকে না দেখতে পাওয়াকে কেন্দ্র করে আমি
কেনো যেন তখন সম্পূর্ণই ভেঙে পড়েছিলাম।কিন্তু
আশ্চর্য জনক হলেও সত্যি,আমি সেদিন নির্দোষ
প্রমান হয়ে গিয়েছিলাম।এমনকি আসল অপরাধীর
মুখোশ ও সবার সম্মুখে উন্মোচন হয়েছিলো।
"মুলত,তোহফা ম্যাম কে স্বয়ং রৌহিকা ম্যাডামই হত্যা
করেছেন তার প্রধান কারণ সরূপ,সম্পত্তি!তোহফা
ম্যামের মা-বাবা উভয়ই দুষ্কৃতকারীতের হাতে খুন হয়।
যারপর বিশাল ধনদৌলতের একমাত্র মালিকীন কিন্তু
তোহফা ম্যামই ছিলো।অবশ্য তোহফা ম্যাম কে হত্যা
করে তার সমস্ত ধন-সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়াই ছিলো,
রৌহিকা ম্যাডামের মূল ও মূখ্যম উদ্দেশ্য।কিন্তু তাতে
তিনি,পরিশেষে ব্যর্থই হলেন।অন্যায়,পাপ,কখনো
থাকে না গোপন বা চাপা।সবার সামনেই উন্মোচন
হয়েছে,রৌহিকা ম্যাডামের সমস্ত কু-কির্তী গুলো।
অতএব রৌহিকা ম্যাডামকে যখন পুলিশ নিয়ে
যাচ্ছিলো,তখন আমি রৌহিকা ম্যাডামের উদ্দেশ্য,
তাচ্ছিল্যের সাথে বলেছিলাম, সেদিন আপনি আমায়
সবার সামনে ছাত্র হিসেবে কলঙ্ক বলেছিলেন তাই না?
আজ আমি বলছি, আপনি শিক্ষিকা নামের কলঙ্ক?
অতএব রৌহিকা ম্যাডামকে হাজতের উদ্দেশ্য নিয়ে
যাওয়া হয়।কারণ খুনের দ্বায়ে এবং আরও বিভিন্ন
কু-কির্তীর জন্য মূলত তার যাবত জীবন কারাদণ্ড হয়।
অতঃপর মা-বাবা আমাকে ঘিরে যেন কান্নায় ভেঙ্গে
পড়েন।তাদের এই মূহুর্তে আমি শুধুই শান্তনা প্রধান
করছি।ক্ষমা চাইছেন বটে।কি করবো,যতই হোক
নিজের মা-বাবাই তো।ভুল তো বুঝতেই পারেন।
পরিশেষে যখন কোনো এক মাধ্যমে জানতে পারলাম,
রুহি হাসপাতালে।তখন কোনো কিছু না ভেবে ছুটে
গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলাম তার সম্মুখে।এবং জানতে
পারলাম,আমার কেসটির জন্য রুহি যখন নিজের
পরিবারের কাছে টাকা চেয়ে ছিলো তখন রুহির
পরিবার কিন্তু স্পষ্ট ভাবে নিষেধ করে ছিলেন।টাকা
দিতে তারা একদমই তখন নারাজ ছিলেন।যার ফল
সরূপ বাধ্য হয়েই রুহি নিজের একটা কিডনি বিক্রি
করে,ভালো একজন উকিল ঠিক করেছিলো।যার
ভিত্তিতে,আজ আমি নির্দোষ প্রমানিত হয়েছি।রুহির
আসে-পাশে তার পরিবারের সবাই বসে রয়েছে।তারা
কাঁদছে,ক্ষমাও চাইছেন অনাবরত।কিন্তু তাদের সাথে
কোনোই কথা বলছে না রুহি।চুপচাপ সে।অতএব
আমাকে দেখা মাত্রই সবার সামনে জড়িয়ে ধরতে
একটুও পিছু-পা হায়নি রুহি।এতে সবাই একটু চমকে
গিয়েছিলো বটে।তবে পরবর্তীতে ব্যাপারটা ধীরে ধীরে
ক্লিয়ার হয়ে যায় সবার নিকট।পরিশেষে পাঁচ মাস পর
রুহির আবার অপারেশন করা হয়।মূলত যার প্রধান
উদ্দেশ্য ছিলো দ্বিতীয় কিডনিটা বসানো।যার কয়েক
দিন পর রুহি আর আমার বিয়ের ব্যাপারটা ফাইনাল
করা হয়।আবার আগের মতো সব কিছুই যেন ঠিক
হতে আরম্ভ করে।চাচার সেই কবেই জেল হয়েছে।
অবশ্য চাচিই পুলিশের হাতে চাচাকে তুলে দিয়েছিলেন
।চাচা জেলে যাওয়ার বেশ কয়েকদিন পরই তার
তত্বাবধানে থাকা আমাদের কিছু ধন-সম্পদ ফিরে
পেতে সক্ষম হয়েছিলাম।যেগুলো মূলত চাচা আমাদের থেকে ঠকিয়ে,প্রতারনা করে দখল করে
ছিলেন।বিয়ের ছয় দিন পূর্বে আমি,আর রুহি পার্কে
বসে বসে ফুচকা খাচ্ছিলাম,সেই মূহুর্তে আচমকা
কোথা থেকে যেন সীমা এসে আমার উদ্দেশ্য বলল,
-প্লিজ শাহরিয়ার!ক্ষমা করো আমায়?আমি ভুল
ছিলাম।তোমাকে সেদিন অবিশ্বাস করে ছিলাম।এতে
আমি ক্ষমা প্রার্থী।ভালোবাসায় ভুল বুঝাবুঝি থাকতেই
পারে!কিন্তু তাই বলে আমাকে রেখে তুমি এই ধর্ষিতা
চরীত্রহীন মেয়েকে বিয়ে করতে পারোনা মোটেও?
তুমিহীনা যে আমি বেঁচে রইতে পারবো না!
হঠাৎ সীমার এরূপ কথা শুনে উত্তরে মুচকি হেসে
আমি বললাম,
-আমি একজন ধর্ষিত মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি।
কিন্তু তবুও তোমার মতো এক পাপি নারীকে বিয়ে
করতে মোটেও রাজি নই!যে নিজের ইচ্ছেতেই ধর্ষিত
হয়।সেদিন ভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত ফাংশনে, রৌহিকা ম্যাডামের নাটক,অভিনয় গুলো কিন্তু কেউ না
দেখলেও তুমি কিন্তু ঠিকি দেখেছিলে।তবুও সেদিন
চুপ ছিলে।না দেখার অভিনয় করে ছিলে।সত্যি জানা
সত্যেও সেদিন তুমি আমার পাশে এসে দাঁড়াওনি!
সাপোর্ট করোনি?বরং লাঞ্চণা অপমান করেছিলে।
কিন্তু কেনো?বলতো সীমা?আমার ভালোবাসা নিখুঁত
ছিলো।বরং চো তোমার ভালোবাসায় খুঁত ছিলো।তাই
বোধ হয়,আমি বাদে তেমার অন্য কোনো ছেলের
সাথেও সম্পর্ক ছিলো।যার সাথে রাতে যেখানে,
সেখানে ঘুরে-বেড়াতে এমনকি রুম ডেটে আবাসিক
হোটেলেও যেতে তাই না সীমা?
আমার কথা গুলো শুনে সীমা হকচকিয়ে উঠলো।কিন্তু
তেমন কিছুই বলল না।অতএব আমি আবার বললাম,
-নিশ্চয়ই ভাবছো?আমি কি করে এসব জানলাম!
সেটাই তো রহস্য!হয়তো এসব জানতে আমার বেশ
খানিক দেরি হয়েছে,তবে যেভাবে,যেমনই হোক আমি
জেনেছি।কাউকে চরিত্রহীন বলার পূর্বে নিজের দিকে
তাকাও সীমা?চরিত্রহীন রুহি নয় সত্যি বলতে চরিত্র
হীন তো তুমি সীমা?আমার কেনো আজকাল ভাবতে
ও ঘৃণা লাগে তোমার মতো একটা দুশ্চরিত্রা মেয়েকে
আমি ভালোবাসতাম।অতঃপর আর তেমন কিছুই না
বলে রুহিকে নিয়ে আমি সেখান থেকে চলে আসলাম।
রাস্তা দিয়ে হাঁটছি দু'জন।হঠাৎ থেমে গেলাম আমি।
বললাম,আচ্ছা রুহি,এই ঞ্যাঁ ঞ্যাঁ নন ক্রোতে এর অর্থ ঠিক কি?
জবাবে রুহি হাস্যউজ্জল কন্ঠে বলল,
-এটা মারমাদের একটা ভাষা,মূলত যার অর্থ আমি
তোমাকে ভালোবাসি।
-এ্যাহ!
-হ্যাঁ গো!সরম করতো তো তাই এই প্রক্রিয়া অবলম্বন
করিয়া তোমাকে আমি ভালোবাসি বলতাম।বুঝলে
আমার বোকা হবু বর!
.
<>সমাপ্ত<>

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com