Breaking News

মনের মানুষ । পর্ব - ০৪



কথা গুলো বলে'ই থামলো ইমান, সামনে তাকিয়ে দেখলো আহনাফ সাহেব দাঁড়িয়ে আছে।

তিনি এসে ছেলের কাঁধে রাখলেন।

ইমান বিরক্ত হ'য়ে তৎক্ষনাৎ বেড়িয়ে গেলো কেবিন থেকে। রাতে,,,,,
দুই মা মেয়ে মিলে ঘোরাঘুরি করে বাসায় ফিরে এলো।
মিম ঘরে ঢুকে'ই দেখলো দ্বীন ওর বিছানায় ঘুমিয়ে আছে।
সে গিয়ে তখন তাকে ঝটপট ঘুম থেকে টেনে
তুললো, দ্বীন চোখ মুছতে মুছতে বললো,
- "দাদুভাই খুব অসুস্থ হয়ে পরেছেন। একটু তোর চল না ও বাড়িতে?"
মিম রেগে গিয়ে বললো,
- "সেটা একেবারে'ই অসম্ভব!
আমি কখনো সেই বাড়িতে ফিরে যাবো না, যে বাড়ি তে আমার মা কে অপমানিত হ'তে হ'য়েছে।
আর হ্যাঁ, তোর দাদুভাই একজন সুযোগ সন্ধানী লোক।
যে কি না আবারও অসুস্থতা'র ভান ধরে নতুন ড্রামা শুরু করেছে।

আর তিনি অসুস্থ হলে ও বা কি? ওনা'র একটা ভুল সিদ্ধান্তে'র জন্য'ই আমার
মায়ে'র জীবন টা তছ- নছ হ'য়ে গিয়েছে এবং আমি এই বিষয়ে কখনো আপোষ
যেতে চাই না। কারণ, উনি এক জন ভালো বাবা হলে নিশ্চয়'ই ওই বাড়িতে বিয়ে দিতেন না
নিজে'র অন্য আরেক মেয়েকে।
যে বাড়িতে কিনা,,,,,,,,,
তার বড় মেয়েকে প্রতি মুহূর্তে অবহেলা এবং অসম্মানে'র মুখোমুখি হতে হ'য়েছে।
কেমন বাবা তিনি?
জিনি সব টা জেনে ও চুপ করে ছিলেন।তিনি হ'য়তো অনেক আগে থেকে'ই অবগত ছিলেন
ছেলে'র প্রথম বিয়ে সম্পর্কে। এমনকি,,,,,,,,,,
এটাও হয়তো বা তিনি জানতেন যে সেই ছেলে তার প্রথম স্ত্রী দারা
প্রভাবিত হ'য়ে ছিলেন মারাত্মক ভাবে।
আচ্ছা,,,, ভাই আমি না হয় পুরোনো সে সব কথা বাদ দিলাম।
কিন্তু তোমার সে দাদুভাই তখন কোথায় ছিল

যখন কোর্টে সকলে মিলে মিথ্যে বদনাম দিয়ে ছিলো আমার মা কে?
কোই তিনি তো আমার মায়ে'র পাশে ছিলেন না।
তিনি কখনো'ই ছিলেন না বাবা হিসেবে আমার মায়ে'র পাশে।
না হলে আমাকে লোকের মুখে কেন শুনতে হবে, যে আমি আমার মায়ে'র অবৈধ সন্তান?
এই মিথ্যাচার গুলো কোনো সহ্য করতে হবে আমাকে আমার মা কে?
শোন আমি না আমার মায়ের মতোন এতটা ভালো মানুষ নই।
কাজে'ই ধরনের আশা করিস না আমার কাছ থেকে।
আর আমি ওই লোক টা কে কখনো ক্ষমা করবো না।
কারণ উনি সবটা জানা সত্ত্বেও আমার মায়ে'র কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে আমার বাবা কে?
উনি আমার মায়ের বাবা হওয়া সত্ত্বেও কি জানতেন না তার মেয়ে'র সম্পর্কে?
তাহলে এই ধরনে'র কথা
বার্তার কি লজিক ছিলো?
দয়া করে তোর দাদার হ'য়ে আর কখনো ওকালতি করতে আসিস না এ বাড়িতে। কারণ,,,,,,,
আমি এই ধরনের ছেঁচড়ামি সহ্য করবো না।

আমি মানুষ হিসেবে গন্য'ই করি না ওই স্বার্থপর আর লোভী লোকটা কে আর হ্যাঁ,,,
আমি এই কথা গুলো
দ্বিতীয়বার রিপিট করবো না।
আমি এমনি এমনি ল' নিয়ে পড়াশোনা করিনি,,, ঠিক আছে?
আমি আমার মায়ে'র মতোন এতো টা উদার হতে পারবোনা।
দুঃখিত, তোমরা দয়া করে এতোটাও মহৎ ভেবো না আমাকে। ইনশাল্লাহ,
আমার বার কাউন্সিল এক্সামের পর আল্লাহ তায়া'লা মুখ তুলে চাইলে
সেই সকল অমানুষ গুলোকে কোর্টে যেতে হবে।
যারা কি না আমার মায়ে'র সতিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে ছিলো,
জন্মের আগে'ই আমার অস্তিত্ব বিলীন করে দিতে চেয়েছিল এই দুনিয়া'র বুক থেকে।
আমি মনে করি আমার এই সৎ প্রচেষ্টায় আমার আল্লাহ তায়ালা আমার সঙ্গে আছেন।
নাহলে,,,,, আমার যুদ্ধের পথ এতো মসৃণ এবং সহজ কেন হবে?
আমি সকল চড়াই-উতরাই পার হয়ে ঠিক নিজের লক্ষে পৌঁছাবো।
কোর্টে টেনে নিয়ে গিয়ে যথা যোগ্য শাস্তি দেবো আমার মায়ে'র অপরাধীদে'র কে
কারণ তাদেরও দিন শেষে বুঝতে। হবে,"বাপের ও বাপ আছে।"
দুনিয়ায় শুধু তারা'ই সর্বেসর্বা না। আমার মায়ে'র পা এর কাছে নিয়ে ফেলবো
সেই সকল লোকদের কে।
তাদের কে আমি তাদের কর্মের শান্তি দিয়ে'ই ছাড়বো
আর আশা করব।

তুমি আর কখনো অন্তত ওদের হ'য়ে সাফাই গাইবে না আমার কাছে।
এতো বছর হ'য়ে গেছে বলে কিন্তু তাদের পাপ একটুও কমে যায়নি ব্রো।
এ বার হয়তো ষোলকলা পূর্ণ হওয়ার সময় এসেছে?"
এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে থামলো মিম, দ্বীন কে আবারও কড়া গলায় বললো,
- "বড় মামা ও কিন্তু ঠিক এই একই কারণে দূরে সরে এসেছে তাদের কাছ থেকে।
তোর তাদের সাথে সম্পর্ক আছে ভালো কথা। তাই বলে তারা বাঁচালো না ম*রলো।
সেই নিয়ে দয়া করে ঘ্যান ঘ্যান করবি না অন্তত আমার কানে'র কাছে।
আমি তাদের কথা শুনতে আগ্রহী নই।
এই জিনিস টা খুব ভালো করে ঢুকিয়েনে নিজে'র মগজে'র মধ্যে।"
আড়ালে দাঁড়িয়ে,,,,,,,,
মেয়ের বলা প্রতিটি কথা স্পষ্ট ভাবে শুনতে পেলেন মেহেরিশ এখন আর তার
একা বলে মনে হচ্ছে না নিজেকে।
আজ তার জীবনে প্রথম বারের মতোন খুব করে মনে হলো,
যে সে তার মেয়েকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পেরেছে। আজ তার কন্যা কে নিয়ে গর্ব হচ্ছে খুব।
কেননা সে এই নষ্ট সমাজ এবং তার লোকেদের বুড়ো আঙুল দেখাতে পেরেছে।
তাকে হাসিমুখে দেখে কিছু টা চমকে গেলো শিমুল।

তিনি শিমুলে'র হাব-ভাব দেখে তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
- "অফিস থেকে এক মাসে'র ছুটি নিয়েছি।
এখন থেকে শুধু সময় কাটাবো তোমার বুবুর সাথে।" শিমুল হাসতে হাসতে বললো,
- "উফফ, তাহলে তো আজ থেকে বুবু'র ঈদ। মানে,
বুবু শুনলে অনেক খুশি হবে।" মেহেরিশ তখন হাসতে হাসতে বললেন,
- "হুমম, তা ঠিক। তবে আজ থাক,,,,,, কাল বাড়িতে অনেক ভালো মন্দ রান্না হবে।"
সকালে হাঁটতে বেরুলেন মেহেরিশ।
তখন এক জন প্রতিবেশী ভদ্রমহিলা তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
- "আপা বেশ কয়েক দিন আগে আপনার মেয়েকে দেখলাম
রাতে এক ছেলে'র সাথে রিকশায় চেপে বাড়িতে ফিরছে?
না মানে, মেয়ে'র খোঁজ রাখেন কিছু? বর্তমানে যে অবস্থা।
বলা তো যায়না কখনো কি ঘটিয়ে বসে???
দেখুন,,,,,, আমি আপনার মেয়ের বদনাম করছি না।
কিন্তু আমার মনে হচ্ছে সে দিন কে দিন বেপরোয়া হ'য়ে উঠছে।

তাই সাবধান করে দিলাম, একটু দয়া করে চোখে চোখে রাখবেন তাকে।"
পাশের দোকানে'ই ইমান বসে ছিল ওই মহিলার কথা শুনে সে রীতিমতো হতভম্ব হয়ে গেছে।
সে দিন রাতে যেচে পরে তার সাথে খুব গল্প করছিল এমন কি মিম এর নামে অনেক
বদনাম ও করেছে তার কাছে। সে
এগিয়ে এসে,
ওই মহিলা কে উদ্দেশ্য করে কিছু বলত চাইলো। কিন্তু মেহেরিশ তার আগেই বলে উঠলো,
- "আপনি কি মনে করেন?
আমি একটুও অবগত নই আমার সন্তান সম্পর্কে?
আমি আমার বাচ্চা কে চিনি।
সে আর যাই হোক,,,,,,,, আপনার সন্তানদে'র মতোন কখনো চুল-কালি মাখাবেনা আমার মুখে। আর হ্যাঁ,
ঘটনা ঘটানো এবং রটনা রাটনো'র মধ্যে না বিস্তর পার্থক্য আছে। যেটা আপনার মতো কোনো ছেঁচড়া মহিলা বুঝবে না।

তাই দয়া করে কখনো আমার মেয়ে সম্বন্ধে ভুলভাল বোঝানোর চেষ্টা করবেন না আমাকে।
কারণ সে 'ক' বললে কখন 'খ' বলবে সেটা বোঝার ক্ষমতা আমার আছে।
আমি তাকে পেটে ধরেছি তো, আমি খুব করে জানি তাকে।
আর তা৷ ছাড়া যাদে'র নিজে'র হাঁড়ি ফুটো তাদের না অন্যে'র হাঁড়ির দিকে নজর দিতে নেই ঠিক আছে?" মেহেরিশের কথা শুনে উল্টো পথ ধরলেন মিসেস আফরান। ইমান এগিয়ে এসে বললো,
- "আন্টি একদম উচিত শিক্ষা দিয়েছেন ওই বেয়াদব
মহিলা কে ও হ্যাঁ,,,
সেদিন রাতে আমি মিমের সঙ্গে ছিলাম।
আমিই সঙ্গে করে নিয়ে এসে৷ ছিলাম ওকে।" তিনি মুচকি হেসে বললেন,
- "আমি জানি বাবা! সব শুনেছি তার মুখে।" বেলা
তখন নয়টা,
মিম আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠে নিচে এসে দেখতে পেলো
ইমান বসে নাস্তা করছে দ্বীন এবং মায়রার সাথে।
সে গিয়ে চোখ গরম করে মায়ে'র পাশে দাঁড়ালো,,,
ইমান হঠাৎ মিম কে দেখে মুচকি হেসে বলে উঠলো
- "আরেহ বাহ!

আরজিতিনার সাপোর্টার দেখছি নিচে এসে গেছে?"
মিম মুচকি হেসে বললো,
- "আপনি যে মানুষিক ভাবে অসুস্থ, এটা কি কেউ বলেনি আপনাকে? আপনি বরং ভালো এক জন সাইকিয়াট্রিস্ট দেখান,
ঠিকানা মেইল করে দিবো জনাব,,,,,,, ঠিক আছে?"
মেহেরিশ তখন মুচকি হেসে বললেন,
- "রাগ করে না লক্ষী মা, এরকম কেউ করে না কি মেহমানের সাথে?"
- "আমি তো ওনাকে ইনভাইট করিনি! তুমি করেছ, তুমি'ই প্যাম্পার করো তাকে।" তখন মেহেরিশ মিটি মিটি হেসে ইমানকে বললেন,
- "বাবা আজ রাতে তোমার দাওয়াত!!!!!
তোমাকে কিন্তু আসতেই হবে।" ইমান হাসতে হাসতে বললো,,,,
- "আমি অবশ্যই আসবো আন্টি।
তাতে কেউ আমায় অপছন্দ করলে আমার কিচ্ছু যায় আসে না তাতে।"
মিম তখন বিড়-বিড় করে বললো,
- "এই এলেন ঢেঁড়স যেন কোথাকার?
একে দেখলে'ই যেন আমার মাথার চান্দী টা গরম হয়ে যাচ্ছে।" ইমাম তাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
- "মনেমনে রাগ পুষে রেখে কি লাভ ম্যাডাম! আমাদের বোধহয় সন্ধি করে নেওয়া উচিত একে অপরের সাথে।"
- "দেখুন আমি সন্ধি নয়, যুদ্ধে বিশ্বাসী।
তাই কখনো সম্ভব নয় টা টা বাই বাই আল্লাহ চাইলে আমাদের আবারও দেখা হবে।"

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com