এলোকেশী কন্যা । পর্ব -০২
আলো পারু আর পুটির সাথে গল্প শেষ করে!তারপর আলো পারু আর পুটিকে মাঠে নিয়ে একটা
গাছের নিচে বেঁধে দেয়! যাতে পারু আর পুটির গায়ে রোদ না লাগে।
আলো পারু আর পুটির গায়ে হাত বুলিয়ে বাড়ি চলে যায়! তারপর ধবলির কাছে যায়!
আলো ধবলি কাছে গিয়ে দেখে ধবলির হাম্বা হাম্বা করে ডাকছে!
আলো দৌড়ে ধবলির কাছে যায় কারন ধবলিকে বেঁধে রাখা হয়েছে ওর মায়ের কাছে যেতে পারছে না।
আলো ধবলির গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তাও ধবলি থামছে না!পেট খুধা লাগলে কি আর হাত বুলালে খুধা কমে!ধবলির এভাবে ডাকা দেখে আলো কয়েকদফা গোয়ালাকে গালি দেওয়া শুরু করলো!
কারণ এখন গোয়ালা না আসা পর্যন্ত ধবলিকে ছাড়া যাবে না!
আর এখন ধবলিকে ছাড়লে ওর মায়ের কাছে গিয়ে সব দুধ খেয়ে নিবে!!
.
আলো ধবলির সাথে কথা বলতে বলতেই গোয়ালা ওর ভাঙা সাইকেল নিয়ে এসে হাজির হলো!
তারপর ধবলির মায়ের কাছে গিয়ে দুধ দোয়ানো শুরু করলো!
আলো মনে থেকে দোয়া করছে যাতে ধবলির মা গোয়ালাকে এক লাথি ছুঁড়ে! কারন এই উজবুক
গোয়ালাটার জন্য ধবলিকে এতক্ষণ কষ্ট করতে হলো।আলোর মনে মনে বলা এই কথাটা
যেন ধবলির মা সত্যি শুনতে পেল!এই কথা বলতেই ধবলির মা সত্যি সত্যি গোয়ালাকে দিলো
এক লাথি!আর গোয়ালা ধপাং করে গোবরের উপরে বসে পড়লো!আলো ওড়না দিয়ে মুখটা
ঢেকে মুখ টিপে হাসছে!গোয়ালা কল পাড়ে গিয়ে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে আবার
এসে দুধ দোয়ানোর কাজে লেগে পড়ে।গোয়ালা দুধ দোয়ানো শেষ করে
আলোকে আধাকেজির মত দুধ দিয়ে বাকিটা নিয়ে চলে গেল!আলো দুধের পাতিলটা
রান্না রেখে ধবলিকে ছেড়ে দিলো!আর ধবলি এক ছুটে গিয়ে ওর মায়ের দুধ খাওয়া শুরু করলো!
.
আলো দাড়িয়ে দাড়িয়ে ধবলির দুধ খাওয়া দেখছে!ধবলি প্রাণ ভরে দুধ খাচ্ছে আর ওর
মুখে দুইপাশে ফেনা জমে যাচ্ছে!ধবলি দেখতে খুব সুন্দর! ধবলির পুরো শরীর সাদা
পশম আর চোখ গুলো দেখে মনে হয় কেউ যত্ন করে কাজল দিয়ে দিয়েছে।
আলো ওখান থেকে সরে এসে ওর ছোট মায়ের কাছে গেল!
আলোঃ ছোট মা আইজ দুপুরে কি তরকারী রান্না করতে হইবো??
পারুল বেগমঃ এইসবও কি আমাকে কইয়া দেওয়ন লাগবো নাকি?(খিটমিট করে তাকিয়ে)
আলোঃ সব্জি আর ডাইল রান্না করবো নাকি মাছ!
পারুল বেগমঃ জলিল মিয়ারে কইছি মাছ দেওনের লাইগা! আইজ মাছ দিয়া যাইবো
একটু পর।বেগুন দিয়া আর মাছ ঝোল করবি আর করলা ভাজি করবি!আর রান্না
যদি খারাপ হইছে! তাহলে আইজ তোর পিঠে চ্যালাকাঠ ভাংবো আগেই কইয়া দিলাম।
আলোঃ আচ্ছা!!
রোদ আর মেঘ কেবল বাসায় ঢুকলো!মেঘকে ঢুকতে দেখে রকি তো ঘেউ ঘেউ করে বাড়ি
মাথায় তুলেছে!রোদ সবার সাথে কথা বলে ফ্রেশ হতে ওর রুমে চলে যায়!মেঘ তো গল্প
জুড়ে দিয়ে ওখানে কি করছে,কি খেয়েছে,কি দেখেছে এইসব।মেঘ গল্প শেষ করে ওর
রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রকিকে সাথে নিয়ে বাগানে চলে যায়!রোদ ফ্রেশ হয়ে শুধু
একটা থ্রিকোয়াটার প্যান্ট পড়ে উপুড় হয়ে পড়ে শুয়ে পড়ে!কারন জার্নি করে আসার পর
একটু ঘুমালে শরীরটা বেশ হালকা লাগে।রোদ একটা সময় ঘুমিয়ে পড়ে!!
বেশকিছু ক্ষন পর মেঘ রোদের রুমে উঁকি মারে!তারপর রুমের চারপাশে চোখ বুলিয়ে রোদের
ফোনটা খুঁজে!মেঘ যখনই দেখলো রোদের ফোনটা চার্জে দেওয়া তখন মেঘের মুখে হাসি ফুটে!মেঘ
গুটি গুটি পায়ে রোদের ফোনটা হাতে নিয়ে বেডের উপর উঠে!মেঘ রকির দিকে তাকিয়ে
ইশারা করে বলে যাতে কোন শব্দ না করে!রকি মেঘের কথা বুঝতে পেরে রকিও মেঝেতে
শুয়ে পড়ে!মেঘ রোদের পিঠের উপর শুয়ে ফোনের সাইন্ড কমিয়ে গেম খেলতে
শুরু করে!মেঘও গেম খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে যায়!!
রোদের ঘুম ভেঙে যায়!ঘুম ঘুম চোখ না খুলেই আগে পেছন দিকে হাত বাড়িয়ে মেঘকে ধরে!
তারপর রোদ ঘুরে মেঘকে বেডের উপর শুইয়ে দেয়!এটা মেঘের পুরনো অভ্যাস!
রোদকে ঘুমাতে দেখলেই মেঘ হয় রোদের বুকের উপর ঘুমাবে! আর না হয় পিঠের উপর ঘুমাবে।
আগে যখন মেঘ রোদের পিঠের উপর ঘুমাতো আর রোদ ঘুমের ঘোরে পাশ ফিরে ঘুরতেই মেঘ
ঠাস করে মেঝেতে পড়ে যেত!মেঝেতে পড়ে মেঘের মাথায় আব উঠে যেত! আর সাথে
তো আছে মেঘের গলা ফাটানো চিৎকুর।এভাবেই দিন দিন রোদেও অভ্যাস হয়ে গেছে
তাই ঘুমালেও চোখ না খুলেই আগে পেছন হাত দিয়ে আগে মেঘকে ধরে...!!
.
রোদ মেঘকে ভালো করে শুইয়ে দিয়ে ফ্রেশ হয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য রেডি হয়!
রোদের পছন্দের রং কালো!এজন্য রোদ কালো জিনিসই বেশি পড়ে!এখন রোদ কালো শার্ট,
কালো জিন্স, হাতে কালো একটা ওয়াচ,চুল গুলো ঠিক করে বডি স্পে মেরে ড্রেসিং টেবিলে
নিজেকে দেখে নেয়! তারপর রোদ মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে ওর ফোনটা নিয়ে নিচে
যায়!রোদ নিচে গিয়ে হালকা কিছু খেয়ে বাইক নিয়ে বের হয়!!
.
রোদের সব বন্ধু গুলো একটা লেকের পাশে আড্ডা দিচ্ছে!রোদ পড়াশোনা করে তার পাশাপাশি মিউজিসিয়ানও।রোদের ইচ্ছে গান নিয়েই কিছু করার।রোদ অনেক জায়গায় প্রোগ্রামও করে!
রোদের বন্ধুরা হলো আবির,আবৃতি,সিয়াম,আকাশ,রিদি,আশা,! আরো বন্ধু আছে বাট রোদের সব
চেয়ে কাছের বন্ধু হলো এরা ছয়জন।রোদ বাইক পার্ক করে লোকের পাড়ে গিয়ে বসে পড়ে!!
রিদি রোদকে বলে উঠে...
রিদিঃ কিরে হিরো!আবার এই কিলার লুকে বের হয়েছিস??
রোদঃ কেন তোর হিংসে হচ্ছে নাকি??(তেডি স্মাইল দিয়ে)
রিদিঃ তা তো একটু একটু হিংসে হচ্ছেই!
রোদঃ উফফ! আহারে (তেডি স্মাইল দিয়ে)
আবৃতিঃহা হা হা
সিয়ামঃ রিদি তোর জন্য আমারও খুব আপসোস হয় জানিস??
রিদিঃ কেন রে??
আকাশঃ আমারো খুব কষ্ট হয় তোর জন্য রিদি!খুব খারাপ লাগে!! (রিদিকে রাগানোর জন্য)
রিদিঃ আমার জন্য তোদের এত খারাপ লাগে কেন পুরো কথা টা তো বলবি??? (ভ্রু কুচকে)
সিয়ামঃ এই যে তুই, ১০ টা ভাষার ১০ বার রোদকে প্রপোজ করলি বাট ফলাফল শূন্য। হা হা হা
রিদিঃ তাই বলে তুই হাসবি কুওা!আজকে তোরে আমি!!!!!
রোদঃ এই তোরা থামবি!ঝগড়া করিস না তো!
আশাঃ রোদ একটা গান শোনা তো!তোর গান ছাড়া আড্ডা টা ঠিক জমছে না!
রিদিঃ হুমমম একটা গান শোনা!আর এমন একটা গান শোনাবি যাতে মনটা চাঙ্গা হয়ে যায়!!
সিয়ামঃ রিদি তোর মনটা এভাবে চাঙ্গা হবে না!তুই এক গ্লাস গোবরের জুস করে খেয়ে নে!
দেখবি মনটা চাঙ্গা হয়ে যাবে!!
আশাঃ ওর পেছনে তোরা লাগিস না তো!এই রোদ শুরু কর না!!
ফাগুনী পূর্ণিমা রাতে গান টা আমার খুব পছন্দ রোদ এটাই তুই গাইতে শুরু কর।
আকাশঃ এই আশা তোর পছন্দ এত খারাপ কেন??ইয়াক থু!
রোদঃ এই তোরা ঝগড়া করিস না!তোদের সবার পছন্দের গান গাইবো আজকে!
এখন রিমিস্ক চলবে কেমন....(তেডি স্মাইল দিয়ে)
যেন ঢাক আছে আর কাঠি নাই
তোরে ছাড়া আমার হালটা যে তাই
ভাবুক যে যা খুশি সবাই
চল ফাগুনী পূর্ণিমা রাতে
চল পলায়ে যা!!!!
(বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন)
রোদ একটার পর একটা গান এড করে রিমিস্ক গাইতে শুরু করলো!রোদের গান শুনে ওখানেই
একটা জটলা বেঁধে গেল!রোদও হাতে গিটার আর মুখে হাসি রেখে একটার
পর একটা গাইতে থাকলো...!তারপর রোদ রা লোকের পাড়ে থেকে চলে গেল!
সবাই রাস্তায় হাটছে আর গল্প করছে !তখন রোদ মনে মনে একটা কথায় ভাবছে...
রোদঃ বেশ কয়েকদিন ধরে আমি অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখছি!নিজেকে কেন জানি শান্ত
করতেই পারছি না।বার বার ওই স্বপ্নে দেখা খোলা চুলের ওই মেয়ে কে?আমাকে কেন
ইশারায় বার বার ডাকছে?কেন বার বার তার নূপুরের শব্দ আমার মনটাকে উতলা করে দিচ্ছে।
উফফ আমি আর ভাবতে পারছি না আমার মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা মেয়েটার মুখটা কেন
আমি দেখতে পারি না? বার বার তার অগোছালো চুল গুলো উড়ে এসে মেয়েটার মুখটা ঢেকে দেয়!
কে এই এলোকেশী কন্যা যে ধরা দিয়েও দিচ্ছে না ধরা..!! (মনে মনে)
.
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com