বিরহ মিছিল । পর্ব - ০৭



কলেজ থেকে ফিরেই বড় জেঠার বাড়িতে গেল মুগ্ধতা। সম্ভবত আদিলের খোঁজে তার চালচলনে বোঝা গেলেও মুখে প্রকাশ করলো না।

আদিল নিজের ঘরে। সে পড়ার টেবিলে বসে পড়ছিল। মুগ্ধতা আদিলের রুমের সামনে এসে চারদিক উঁকিঝুঁকি মারলো। জেঠা বাড়িতে নেই৷ জেঠিমা নিজ ঘরে।
আদিলের পড়ার ব্যাঘাত ঘটিয়ে মুগ্ধতা ব্যাকুল কন্ঠে পিছন থেকে বলল,
" আমার একটা হেল্প করতে পারবে?"
এই একটা কথা মানুষকে দারুণ ভাবে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম। আদিল বিভ্রান্ত হলো কিনা বহিঃপ্রকাশ ঘটলো না৷ সে পড়ার টেবিলে স্থির থেকেই ঘাড় ঘুড়িয়ে বলল,
" কি হেল্প?"
মুগ্ধতার অব্যক্ত কথা আদিল কে বলার আগ্রহ খুঁজে পেল। ভীষণ হতাশা গলায় বলল,
" আমাদের কলেজ থেকে পিকনিকে নিয়ে যাবে।"
এইটুকু বলেই মুগ্ধতা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আদিল সতেজ মেজাজে আওড়াল,
" ভালো কথা।"
মুগ্ধতা আদিলের কথা বিরুদ্ধতা করে বলল,
" ভালো কথা হলেও আমি যেতে পারবো না। তাই এটা পঁচা কথা।"
আদিল প্রশ্ন করলো না কেন মুগ্ধতা পিকনিকে যেতে পারবে না। সে মুগ্ধতার কথায় সায় দিয়ে বলল,
" হুম পঁচা কথা।"
মুগ্ধতার মন খারাপ বেড়ে গেল। সে ভেবেছিলে আদিল জিজ্ঞেস করবে কেন যেতে পারবে না। কিন্তু সে গুড়ে বালি! আদিল কিছুই জিজ্ঞেস করলো না। মনের ভাব প্রকাশ করবে কিভাবে আদিলকে।
আদিল গলা ঝেড়ে বলল, "কি হেল্প বললে না?"
নিজের মনকে শান্ত করার প্রয়াসে মুগ্ধতা বিড়বিড় করলো, " যাক কেন জিজ্ঞেস না করলেও কি হেল্প চাই আদিল জিজ্ঞেস করেছে। এটাই অনেক।"
মুগ্ধতা অসহায় কন্ঠে বলল, " সত্যি হেল্প করবে তো?"
" আগে কি হেল্প এটা জানতে হবে। তবেই বলতে পারবো হেল্প করতে পারবো কিনা।"
মুগ্ধতা তুখোড় আত্মবিশ্বাস গলায় আওড়াল,
" তুমিই পারবে।"
একটু উদ্বিগ্ন দেখালো মুগ্ধতা কে কথাটা বলার সময়। আদিল মুগ্ধতা কে শান্ত করার জন্য বলল,
" বুঝেছি পারবো। এবার বলো কি হেল্প ?"
মুগ্ধতা অনিচ্ছা প্রকাশ করলো। মুখে বলল,
" আগে কথা দাও হেল্প করবে।"
ভ্রু যুগল কুঁচকে ফেললো আদিল। কিছু চলছে মনে মনে মুগ্ধতার, অনুমান আদিলের তবুও
প্রসঙ্গ বেশি দূর না গড়িয়ে বলল,
" আচ্ছা বলো।"
"সত্যি।"
আদিলের দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে মুগ্ধতা জেরা করলো। আশ্চর্য কার্যকলাপ! আদিল বলল,
" জি।"
আমতাআমতি করে মুগ্ধতা বলল,
"যেহেতু আমি পিকনিকে যেতে পারবো না।"
আদিল কথা অব্যাহত রাখতে বলল,
" সেহেতু? "
উচ্ছ্বাস সহিত মুগ্ধতা বলল,
" সেহেতু জয়দেবপুরের কাছের কোন জায়গায় আমি পিকনিক খাবো। সেই জায়গায় তুমি আমায় নিয়ে যাবে!"
আদিলের বিমূঢ় চোখ মুগ্ধতার পানে। আশ্চর্য কন্ঠে আওড়াল, " অদ্ভুত তুমি,তার থেকেও অদ্ভুত তোমার কার্যকলাপ ।" মনের কুঠুরিতে কথা টা গোপন রইল। আদিল কিংকর্তব্যবিমূঢ় স্বরে আওড়াল,
" এটাই কি হেল্প? "
"হুম।"
" এটাকে কি হেল্প বলে আদৌও? "
মুগ্ধতা পূর্নবার বলল,
" হুম।"
আদিলের পানসেচোখ মুখ মুগ্ধতার মাঝে বিরাজ করছে। আদিল বোঝার চেষ্টা করছে,হেল্প কাকে বলে!
-----------
একা একা দূরের জার্নি এই সময় অবধি মুগ্ধতার করা হয়নি। কলেজে ক্লাস শুরু হয়েছে কিছুদিন হলো। তন্মধ্যে কলেজ থেকে পিকনিক। কলেজ কতৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শেরপুর মধুটিলায় এই বার হবে পিকনিক। জয়দেবপুর থেকে মধুটিলা বাস দিয়ে যেতে কমপক্ষে পাঁচ ঘন্টা। যা মুগ্ধতার জন্য অসম্ভব ও দুষ্কর ব্যাপার।
সুন্দর করে পরিপাটি হয়ে মুগ্ধতা বাড়ি থেকে বের হলো। পরণে কলেজের পোশাক। জোড়পুকুরের মোড়ে এসে দাঁড়াল আদিলের অপেক্ষায়। রোদের প্রখরতায় চোখমুখ কুঁচকে আদিল হাজির হলো।
নম্ন স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
" আন্টি কে বলে এসেছো? তুমি কলেজের নামে পিকনিক করতে যাবে? "
নম্নতার আড়ালে মুগ্ধতা কে বিব্রত করা চেষ্টা। মুগ্ধতা ঠাস করে আদিল কে ইঙ্গিত করে বলল,
" আম্মু কে বলে তুমি বাসা থেকে আমায় নিয়ে আসতে। তাহলে আমায় মিথ্যা বলতে হতো না।"
ঠোঁটের আগায় জবাব তৈরি মুগ্ধতার। আদিল পকেট হাতড়ে রুমাল বের করে কপালের স্বেদজল মুছলো। রাস্তায় চলন্ত অটোরিকশা হাঁক ছেড়ে থামালো। অটো রিকশা রাস্তার বটগাছটার সামনে এসে থামলো। আদিল হাঁক ছেড়ে শুধালো,
" উঠে বসো মুগ্ধতা। আমরা এখন কানায়া ব্রিজ যাবো। "
.
চলবে....
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url