অনুভূতিহীন । পর্ব - ২১



তিথি অভ্রকে জড়িয়ে সুয়ে আছে তখন মিঃ তিথিকে কল দিয়েনঃ

মির্জাঃ তিথি তোমার ঘুমের ডিস্টার্ব করলাম।
তিথিঃ সমস্যা নেই, স্যার আপনি বলুন।
মির্জাঃ তোমাকে কতবার বলেছি আমাকে অফিরের বাইরে স্যার বলবেনা আংকেল বলবা বুঝেছো। তুমি আমার মেয়ের মত।
তিথিঃ জি বলেন আংকেল।
মির্জাঃ তোমার গলাটা এতো ভারি ভারি লাগছে কেন কি হয়েছে মা?
তিথিঃ আংকেল কিছু হয়নি।
মির্জাঃ তোমার যত সমস্যাই হোক আমাকে বাবার মত শেয়ার করবা বুঝেছো?
তিথিঃ জি
মির্জাঃ তিথি আগামীকাল থেকে তুমি মিঃ অরশের সাথে কাজ করবা। অরশ যা যা বলে তাই শুনবা যে করেই হোক ওই প্রজেক্ট আমাদের পেতেই হবে। প্লিজ তিথি মা কষ্ট হলেও তুমি মিঃ অরশের মন রক্ষা করবা। অরশ ব্যক্তি হিসাবে অনেক ভালো তার কোম্পানি অনেক বড় তার সাথে আমাদের কাজ করতে পারাটা ভাগ্যের বিষয়।
তিথিঃ জি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। আল্লাহ হাফেজ।

পরদিন সকাল ১০ টায় অফিসে আসে তিথি।
অরশ তিথিকে বলেঃ তোমাকে সকাল ৯টায় উপস্থিত হতে বলা হয়েছিল?
তিথিঃ জি স্যার।
অরশঃ তা হলে ১ ঘন্টা লেট করে এসেছো কেন?
তিথিঃ স্যার আমি প্রতিদিন সকাল ১০ টায় অফিসে আসি এটা শুধু আজ নই, আরো কয়েকবছর আগে থেকেই।
অরশঃ নেক্সট টাইম লেট করলে তোমাকে ফাইন দিতে হবে আন্ডাস্টান্ড??
তিথিঃ স্যার আমার বাসায় কিছু কাজ থাকে তাই লেট হয়। তাছাড়া সকালে অফিসে আমার কাজ থাকেনা যে কারনে লেট হলে মির্জা স্যার কখনোই আমাকে কিছু বলেন না।
অরশঃ মির্জা স্যার কি করেছে সেটা আমি জানতে চাইনা তুমি ৯ টায় অফিসে আসবা এটাই ফাইনাল। বাসার কাজ বাসার টাইমে করবা। তোমাদের মত এইসব ফালতু মানুষের জন্য যত্য ঝামেলা। বাসায় কে আছে হাসবেন্ড? হাসবেন্ড কে সময় দেওয়ার জন্য সারারাত পড়ে রয়েছে আবার সকালে কিসের সময় দিতে হবে।
তিথিঃ সরি স্যার আর হবেনা কাজের কথা বলেন (কঠোর সুরে)
কিছুক্ষন পর
অরশঃ তোমার হাসবেন্ড কোথায়?
তিথিঃ আছে এখানেই।
অরশঃ এখানে মানে?
তিথিঃ এই শহরে থাকে।
অরশঃ কি করে সে?
তিথিঃ ভালো একটা ব্যবসা আছে উনার।
অরশঃ তুমি কি তাকেও উনি করে বলো?
তিথিঃ সম্মান আসে সম্পর্ক থেকে কেউ সেটা মানলে মানবে না মানলে নাই। আমি কখনো কাউকে অপমান করতে শিখিনি।

অরশঃ বাহ বেশ ভালোই কথা বলতে শিখেছো।
তিথিঃ বাস্তবতা মানুষকে অনেক কিছু শেখায় আমি সব সময় বাস্তবের সাথে থেকেছি।
অরশঃ তোমার হাসবেন্ডের ব্যবসা থাকতে তুমি এখানে জব করো কেন?
তিথিঃ সবার ভাগ্যে সব কিছু থাকেনা।
অরশঃ হ্যাঁ ঠিক বলেছো সবার ভাগ্যে সব কিছু থাকেনা। কিছু মানুষ ঝড়ের মত এসে কারো জীবন তছনছ করে আবার চলে যায়। তুমি কি মনে করেছো আমি সেদিনের কথা ভুলে গেছি যেদিন তুমি ২০ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়েছিলে। আমি তোমাকে আমার সব দিয়েছিলাম কিন্তু তুমি মাত্র ঐ কয় টাকার লোভ সামলাতে পারোনি
তিথি নিশ্চুপ, সত্যি সে চোর, তার বলার কিছু নেই।
অরশঃ যাও আমার জন্য গ্রিন টি নিয়ে আসো।
তিথিঃ স্যার আমি আপনার জন্য চা আনতে যাবো???
অরশঃ তোমার যোগ্যতা যেমন তুমি করবে তেমন।
তিথিঃ ওকে স্যার ২ মিনিটে চা নিয়ে আসতিছি। (হাসি মুখে)
তিথি চা আনতে গেলে অরশ ভাবছে, আমি অপমান করার জন্য বললাম কিন্তু তিথি এতো হাসি মুখে চা আনতে গেলো কেন।।
তিথি চা এনে
তিথিঃ তিথি এই যে আপনার চা।
অরশঃ তুমি তো একজন ট্রেইনার তোমাকে চা আনতে বললাম তুমি হাসি মুখে চা আনলে যে?
তিথিঃ কিছু কাজ থাকে যা অর্থ দিয়ে পরিমাপ করা যায়না। কিছু কাজ যা অনেক ক্ষুদ্র কিন্তু কিছু মুহুর্তে তা করতে সব চাইতে ভালো লাগে। অবশ্য আপনার মত অনুভূতিহীন ব্যক্তি তা বুঝবেনা।

লাঞ্চ টাইম।
তিথিঃ স্যার লাঞ্চের সময় হয়েছে খেয়ে নেন।
অরশঃ এটা তোমার বাসা নই অফিস তাই স্ত্রীর মত অধিকার দেখাতে এসোনা।
তিথিঃ স্যার আমি কি কখনো আপনার স্ত্রী হতে পেরেছি?
অরশ থতমত খেয়ে যায়, সে সত্যি সত্যি তিথিকে স্ত্রী বলে ফেলছে।।।।
অরশঃ না মানে আমার স্ত্রী কল দিয়ে আমাকে লাঞ্চের কথা মনে করিয়ে দিত তাই ভাবলাম যে সে হয়তো, কিন্তু ভুলে গিয়েছিলাম তুমি তো সামান্য একজন কর্মচারী।
তিথিঃ আপনার স্ত্রী হয়তোবা অনেক আশা ভালোবাসা নিয়ে কল দিতো, কিন্তু আমি বলছি এটা অফিসের রুলস। এখন সবার জন্য লাঞ্চ বাধ্যতামূলক।
অরশঃ ওহ তাই চলো দেখি কি কি আছে তোমাদের কেন্টিনে।
তিথিঃ স্যার আমি কেন্টিনে খায়না বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসি।
অরশঃ তাই তা হলেতো ভালো, তোমার বাসা থেকে আনা খাবার দিয়ে কি, আমি আজ লাঞ্চ করতে পারি??
তিথিঃ হ্যাঁ চলেন খাবেন। (খুশি হয়ে)
অরশঃ এতো খুশি হওয়ার কি আছে?
তিথিঃ মির্জা স্যার বলেছেন আপনার মন জয় করতে।
অরশঃ পারবে সেটা?
তিথিঃ সম্ভব হলে অনেক আগেই পারতাম।

তিথির কেবিনে অরশ চেয়ারে বসা।
তিথি খাবার বাটি থেকে ভাত বেড়ে অরশের সামনে দিলো।
অরশঃ তুমি কি এসব প্রতিদিন খাও?
তিথিঃ কোন সব?
অরশঃ এই যে ভাত তরকারি।
তিথিঃ হ্যাঁ প্রতিদিন খায়।
অরশঃ এতোভালো চাকরি করো, তোমার হাসবেন্ডের ব্যবসা আছে তা হলে তুমি এতো কম দামি খাবার খাও কেন?
তিথিঃ সবার ভাগ্যে সব কিছু থাকেনা।
অরশঃ আমার বাড়িতে কোন দিন এমন কিছু তৈরি হয়নি সেখান থেকে চলে এসে কি পেলে তুমি?
তিথি নিশ্চুপ।
অরশঃ বলো কি পেয়েছো?
তিথিঃ স্যার আপনি খাবেন? নাকি ফেলে দেবেন?
অরশঃ তোমার হাতের খাবার অনেক সুস্বাদু হয় টেস্ট করে দেখতে পারি মজা লাগলে খাব।
অরশ একটু তরকারি মুখে নিয়ে বলেঃ বাহ বেশ ভালোইতো, খাওয়া যায়।
তিথিঃ ওকে স্যার আপনি খান আমি দাঁড়িয়ে আছি।
অরশঃ তুমি খাবেনা? বসো আমার সাথে।
তিথিঃ না স্যার আপনি খান তাতেই হবে।
অরশঃ আরে বসো বসো এক সাথে ভালো লাগবে।
তিথি অরশের পাশে বসে খাওয়া শুরু করলো।
খাবার শেষে অরশ বলেঃ তুমি খুব সুন্দর ভাবে মানুষের মনে যায়গা করে নিতে পারো।
তিথিঃ লাভ কি তাতে যদি স্পেশাল মানুষের বুকে ঠাই না পাই।
অরশঃ তোমার হাসবেন্ড ভালোবাসেনা?
তিথিঃ হ্যাঁ অনেক ভালোবাসে আমায়। এমন ভালোবাসা পৃথিবীতে দ্বিতীয় কেউ বেসেছে কি না আমার জানা নেই।

বিকাল ৪ টা
তিথিঃ স্যার আমার বাসায় যাবার সময় হয়েছে।
অরশঃ এখনো অফিস টাইম শেষ হয়নি।
তিথিঃ স্যার প্লিজ এই মুহুর্তে আমার বাসায় যাওয়া টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ না গেলে অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে।
অরশঃ অফিস আর বাসাকে যার যার যায়গাতে রাখো। অফিসের মাঝে বাসার কথা ভুলে যাও।
তিথিঃ স্যার আমরা অফিস করি বাসায় সুখ পাবার জন্য তাই বাসার কথা ভুলে অফিস করার কোন মানেই হয়না। তাছাড়া এখন আমার আর কাজ নেই। আমি আসছি।
অরশঃ স্টপ আইছে। কাজ নেই কে বলছে ধরো এই গুলা কম্পিলিট করে আনো তার পর বাসায় যাবা।
তিথিঃ প্লিজ স্যার আমাকে যেতেদিন না গেলে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে। এইগুলা কালকে করেলও হবে।
অরশঃ আমি তোমার বস যা বলেছি সেটা করো যদি করতে না পারো তা হলে চাকরি ছেড়ে চলে যাও।
তিথি এক রাশ হতাশা নিয়ে অরশকে বলেঃ জি স্যার আমি সব কম্পিলিট করে যাব তার আগে একটা কল করে আসি।

সন্ধ্যায়
তিথিঃ স্যার সন্ধ্যা হয়ে গেছে আমার বাসায় যেতে হবে।
অরশঃ যে কাজ দিয়েছি সেগুলো কম্পিলিট করে যাবা।
তিথিঃ দেখুন স্যার খুবা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
অরশঃ তুমি চাইলেই যেতে পারো। আমি মির্জা কে বলে দিচ্ছি তুমি আমার কথা অমান্য করছো। আমি প্রজেক্ট ক্যান্সেল করে দেই।
তিথিঃ প্লিজ স্যার রিকুয়েষ্ট করছি। (অস্রুশিক্ত নয়নে)
অরশঃ ইমোশন দিয়ে বিজনেস হয়না।
তিথিঃ ওহ শিট আজকেই সব কাজ জমা হতে হলো। আপনার মত অনুভূতিহীন ইমোশনের কি বুঝবে৷
তিথি আবার কাজে মনোযোগী হলো।
কাজ শেষ করে অরশের কাছে ফাইল বুঝিয়ে দিয়ে বাইরে এলো।
অরশঃ রাত হয়ে গেছে চলো কোন রেষ্টুরেন্ট থেকে ডিনার করে বাসায় ফিরো।
তিথিঃ মিঃ অরশ আপনার সাথে একবেলা ডিনার করা আমার জন্যে ভাগ্যের ব্যাপার কিন্তু আমি পারছি না কারন এক্ষুনি বাসায় ফিরতে হবে। সন্ধ্যার পর এইভাবে একা কখনো বাইরে থাকিনি।
অরশঃ ওহ ভুলেই গিয়েছিলাম তোমার জন্য কেউ অপেক্ষা করছে।
তিথিঃ হ্যাঁ অপেক্ষা করছে। আপনি বুঝবেন না সে অপেক্ষার মুল্য। কারো অপেক্ষার মুল্য যে লাখ টাকা দিয়ে ক্রয় করা যায়না।
অরশঃ তাই আমার থেকে ২০ লাখ নিয়ে চলে এসেছিলে। যাও তোমার হাসবেন্ড অপেক্ষা করছে।
তিথিঃ আপনার প্রতিটি কথার যথেষ্ট জবাব আমার কাছে, কিন্তু সেগুলো আপনার আছে বলা বাহুল্য কারন আপনার তো ইন্টরেষ্ট নেই। তবে বলে রাখি কারো সম্পর্কে না যেনে মন্তব্য করা উচিৎ না। তিথি তাড়াহুড়ো করে গাড়িতে উঠে বিদায় হলো।
অরশ সেখানে দাঁড়িয়ে আকাশ পানে চাহিলো।
নিজেকে বললঃ একটা সময়া আমার সংস্পর্শে আসার জন্য কারন খুজতো আর এখন আমার থেকে পালাতে বাহানা খুজে আজব পৃথিবীর নিয়ম। (মুস্কি হেসে দিলো।)

চলবে......
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url