Breaking News

গল্প: ত্যাগ । পর্ব- ০৩

সকালে সকলে'ই এক সাথে নাস্তার টেবিলে বসলো, তবে ইমান কে চুপচাপ দেখে আয়েশা জিজ্ঞেস করল

- "কি হলো কোনো কারণে মন খারাপ হয়ে আছে?"
- "সুহানি তোমার মা কোথায়?"
- "মা মায়ান কে খাওয়াচ্ছে।"
- "শোনো, আমার সকালে O.T আছে। ক্রিটিকাল
পেসেন্ট যেতেই হবে। দুপুরে আমি তোমার মা, মায়ান কে নিয়ে বের হবো দয়া করে কেউ অযথা ফোন করে বিরক্ত করবে না আমাকে।
সেদিন তোমরা চাইলে পুরো বিষয়টি ম্যানেজ করতে পারতে, কিন্তু না। সিনক্রিয়েট করতেই হলো সকল কে আচ্ছা আমি যখন থাকবো না, তখন তোমরা কি করে সামাল দিবে? বলো? একটু বোঝাও আমাকে?"
- "বাবা আমরা আপনাকে ফোন করতে চাইনি, বড় মা বারবার করে ফোন দিতে বলেছিল আপনাকে।"
ইমান খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে গেলো, আয়েশা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আনিশা মিম কে দেখেই মৃদু হেসে বললো,

- "জানো বড় মা তোমার রান্না বরাবরই আমার খুব ভালো লাগে খেতে।"
- "কিন্তু আমি কোনো রান্না করিনি,আমি রান্না করতে অভ্যস্ত নই। আজ বোধহয়, ফুলির মা রান্না করেছে।"
- "ফুলির মায়ের হাতের রান্না তোর ভালো লাগে? মায়ের হাতের রান্না ছাড়া আর কোনো খাবার খেয়ে আমি শান্তি পাইনা।
সরি বোন, আমি অন্ত্যত এই বিষয়ে সাপোর্ট করতে পারলাম না তোকে।" রাফসামের কথায় আনিশা চুপ করে গেলো,
ইমান O.T সেরে ফিরে এলো দুপুর একটার মধ্যে।
ও ফ্রেশ হয়ে ছাঁদে গিয়ে মিম এবং মায়ান কে খুঁজতে শুরু করল। কারণ, এই সময় টা মিম ছেলেকে নিয়ে ছাঁদে'ই থাকে। কিন্তু সে ছাঁদে এসে মা ছেলে কাওকে খুঁজে পেলো না সে স্বপ্না কে ডেকে জিজ্ঞেস করলো,
- "তোমারদের মা কোথায়? মায়ান কার কাছে?"
- "সরি বাবা,

আমরা কিছু জানি না। মা বোধ হ'য় মায়ান কে ডক্টর দেখাতে নিয়ে গেছে।"
- "মানে কি? কোথায় থাকো তোমরা? খোঁজ রাখো না বাড়ির মানুষ গুলো কোথায় গেছে?" ওর চিৎকার চেঁচামেচি শুনে সকলে ছাঁদে জড়ো হয়ে গেলো সুহানি
আমতা আমতা করে বললো,
- "মা বোধহয় তোমার সাথে বেড়াতে যাবে না বলে মায়ান কে ডক্টরের কাছে নিয়ে গেছে?"
ইমান ফিরে এসে খবরের কাগজ টা নিয়ে হলে বসল আয়েশা বললো,
- "ছোটো কে ফোন করে ছিলাম, ফোন টা অফ করে রেখেছে।"
- "এ আর নতুন কি?"
- "চলো খাবে চলো।" ইমান রেগে গিয়ে বললো,
- "নিজে গিয়ে খেয়ে নাও না। আমার পিছনে এতো পরিশ্রম করতে কে বলেছে তোমাকে?"
ইমান কে রেগে যেতে দেখে নিজের ঘরে ফিরে এলো আয়েশা, সময় যত এগোচ্ছে ইমানের চিন্তা ততখানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে,

মিম মায়ান কে ডক্টর দেখিয়ে ওর জন্য কিছু জামা- কাপড় আর নিজের জন্য কিছু জিনিস কিনে ফিরে এলো বাড়িতে। ওকে দেখা মাঐ কানা-ঘুঁষা শুরু হ'য়ে গেলো।
আয়েশা এসে ওর হাত থেকে শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে
বললো,
- "ছোটো মনে আছে তোর? তুই একবার নাহিয়ানের জন্য পাঞ্জাবি কিনে ছিলি।
সে টা ছেলের পছন্দ হ'য়নি তাই কাজের ছেলে কে দিয়ে দিতে হলো আমাকে অবশেষে আমি গিয়ে এক টা পাঞ্জাবি কিনে আনলাম ছেলে সেটাই পছন্দ করল সে টা নিয়ে কিন্তু কোনো ঝামেলার পরতে হ'য়নি আমাকে।"
- "হুমম,
তাহলে এটার দ্বারা কি প্রমাণিত হ'য়? প্রমাণিত হ'য় যে শুধু মাত্র আপনার কু-শিক্ষার কারণেই আমার ছেলেমেয়েরা উচ্ছন্নে গেছে। শুনুন, যে ছেলে-মেয়েরা নিজের জন্মদাত্রী মা কে সম্মান করতে পারেনা তারা
নিজের পালিত মা কে যে ঠিক কত টা সম্মান করবে তা নিয়ে আমার অনেক সংশয় আছে। আর রইলো আমার মায়ানের কথা,

মায়ান আমার মতো করেই বড় হবে। আপনার এতো বাচ্চা পালার শখ, নিজে পয়দা করে নিন। দয়া করে আর আমার সন্তানকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন না আমার কাছ থেকে।
আমি এতোটা ও দানবীর নই যে বার বার মুক্তহস্তে
নিজের নারী ছেড়া ধন দান করে দেবো, ঠিক আছে?
আমি এখনো ভুলিনি সেসব কথা, শুধুমাএ আপনার জন্য আমি নিজের সন্তানদের কখনো সেভাবে কাছে পাইনি। তাদের মনের মতো মানুষ করে পারিনি তার কারণ, আপনি সারাক্ষণ ওদের রেখে দিতেন নিজের কাছে। আমার কাজ ছিলো শুধু খাওয়ানো আর ঘুম পরানো। কেন?
বাচ্চা আমার, তাদের জন্ম দিয়েছি আমি। আমার অধিকার কেন কম হতে যাবে? আপনি এবং আপনা
-রা, আমাকে না জানিয়ে আমার মেয়েকে নিয়ে গিয়ে
একটা মদখোর মাতালের সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন, কেন?
এতো অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে? হু আর ইউ?
আমাকে কেন এতো কিছু সহ্য করতে হবে? সঠিক সময়ে বাচ্চা নিলে এখন আপনার আমার বয়সী এক টা মেয়ে থাকতো,

আমার মুখাপেক্ষী হয়ে বেঁচে কখনো থাকতে হতো না আপনাকে। আপনি ওদের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমাকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন, এর বিচার ও আল্লাহ তা'য়ালাই করবে।" মিমের বলা প্রতি টি কথা
আয়েশা’র চোখে জল এনে দিলো, ইমান এগিয়ে এসে মিম কে উদ্দেশ্য করে বললো,
- "তোমার কি খুব, খুব ভালো লাগে অন্যের দূর্বল জায়গায় আঘাত করে কথা বলতে?"
- "অন্যরা যখন আমার দূর্বল জায়গায় আঘাত করে কথা বলে, তখন আপনার এতো নীতিবাক্য কোথায় থাকে?
কোই কখনো আমার পক্ষ নিয়ে তো আপনাকে কথা বলতে শুনিনি? আপনার বড় বউকে কথা শুনিয়েছি বলে আপনার খুব গায়ে লেগেছে?

শুনুন, যে তেমন, তার সাথে ঠিক তেমন টাই করা উচিত। সেটা এতোদিনে আমার শেখা হ'য়ে গেছে এ বাড়িতে এসে৷ দয়া করে আর কখনো'ই আমাকে টেকেন ফর গ্রান্টেড হিসেবে নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। অবশ্য, খান সাহেব আপনি চাইলে আমি মুক্ত করে দিতে পারি আপনাকে।
আমি আর এই পরিবেশে আমার ছেলেকে নিয়ে থাক
-তে চাই না। সত্যি'ই চাই না। আমার আর সহ্য হচ্ছে না কাওকে।"মহসীন সাহেব তখন ছেলেকে বললেন,
- "মা কি বলে গেলো? ও কি বলে গেলো? মুক্ত করে দেবে মানে? কি বোঝাতে চাইছে ও সবাইকে।"
- "বাবা আপনি।"

- "তুমি চুপ করো বড় বউ মা। তোমার জন্য এবং আমার কাপুরষ ছেলের জন্য এমন কিছু হলে আমি কখনো ক্ষমা করবো না তোমাদের দু'জন কে।"
মিম ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো, মায়ান বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। ছেলের ভয়ার্ত মুখ দেখে মিম তাকে হাসাতে কাতুকুতু দিতে লাগলো, সে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খেয়ে বিছানায় গড়াগড়ি খেতে লাগলো সাথে সাথে।
রাতে কেউ খাবার খায়নি, আবিন সুহানি কে বললো,
- "তোমার মনে হ'য় না মা আজ অনেক বেশি করে ফেলেছে?" সে কি ভেবে বললো,
- "মোটেও না, মায়ের জায়গায় আমি থাকলে। আমি কখনো'ই আমার সন্তানের ভাগ দিতাম না আমার সতীনকে আর রইলো সংসার করার কথা!

তোমার সংসারের মুখে লাথি মে'রে আমি কবেও চলে যেতাম এ বাড়ি থেকে। মা বলে, এতো কষ্ট সহ্য করে তোমাদের মুখ চেয়ে থেকে গেছে। আমি হলে না এতো টাও পিরিত করতে যেতাম না তোমাদের সাথে সাথে।"
- "এভাবে বলছ কেন?"
- "তো কিভাবে বলবো?
মায়ের দিক টা তোমরা কখনো ভেবে দেখেছ? সব থেকেও যে কিছুই নেই তার কাছে। সন্তান হিসেবে তোমরা তাকে কি দিয়েছ? ঘোড়ার আন্ডা?" আবিন
কোনো উওর দিতে পারলোনা তাকে। সুহানি বললো,
- "বাবা বড় মায়ের বিয়ের বয়স চল্লিশ বছর, তাদের বিয়ের পনেরো বছর পর মা এ বাড়িতে বউ হয়ে এসেছে। মায়ের বয়স তখন মাএ পনেরো বছর। এক টা কথা বলো,সে তখন সংসার জীবনের কি বোঝে?
মায়ের হিসেবে তো ভুল নেই।

সঠিক সময়ে বাচ্চা নিলে মায়ের বয়সী একটা মেয়ে তাদের ও থাকতো, কিন্তু বড় মা'ই সারা জীবন খাম- খেয়ালিপনা করে এসেছে।"
আবিন এবার ও চুপ করে রইলো, কি ভেবে জিজ্ঞেস করলো,
- "মা কি কিছু খেয়েছে?"
- "কি জানি? তোমাদের ফাইফরমাশ খাটতে খাটতে আর গিয়ে দেখার কোনো সুযোগ হ'য়নি মা কে।"
আবিন দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করলো,
- "মায়ান কিছু খেয়েছে?"
- "ও আবার কি খাবো? সারাক্ষণ ব্রেস্ট ফিডিং করে
মায়ের আঁচলের তলায় ঢুকে থাকে।" সে তখন মুচকি হেসে বললো,
- "এককালে আমিও মায়ের দুধ খেতাম।"
- "হ্যাঁ মায়ের রক্ত খেয়েই তো এতো বড় হয়েছ,লজ্জা করে না, না? আবার কথা বলছে।"
- "তোমার হঠাৎ কি হলো আবার? যাকে দেখি সে'ই শুধু আমায় বকা দিচ্ছে।" সুহানি ধরা গলায় বললো,
- "মা এতো দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। কখন কি হয়ে যায়? জানো? আমার না খুব, খুব ভয় করছে।" আবিন তাকে সামলোর চেষ্টা করলো, সুহানি কাঁদতে কাঁদতে বললো,
- "একটা বলবো?"
- "কি?"

- "আর কখনো খারাপ ব্যাবহার কোরো না মায়ের সাথে। আমার আজকাল বড় মা কে খুব সন্দেহ হ'য়।
মনে হ'য় যেন সে নিজের শারীরিক অক্ষমতা টা কে আমাদের সবাই কে ধরে রাখার জন্য ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে।
বাবা তাকে অন্ধবিশ্বাস করছে ভালো কথা, তাই বলে তার চোখ থাকতও অন্ধ হ'য়ে থাকা টা আমাকে বেশ ভাবাচ্ছে।" আবিন তখনও চুপ-চাপ, ইমান মিম কে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে এসে দরজায় কান পেতে শুনতে পেলো সে যেন কার সাথে ফোনে কথা বলছে? ইমান এবারও খুব অস্থির হ'য়ে পরলো।মিম দরজা খুলে সামনে তাকিয়ে দেখলো ইমান কেম
-ন অস্থির হ'য়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে তার পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলো। ইমান হঠাৎ বউয়ের হাত চেপে ধরে জিজ্ঞেস করলো,

- "এতো রাতে কে ফোন করেছিলো তোমাকে?"
- "আমার বন্ধু, কেন?"
- "তোমার কোনো বন্ধু,মানে পুরুষ বন্ধু ছিলো না এর আগে। তবে ইনি কোন বন্ধু?"
- "ছোটোবেলার বন্ধু, আর কিছু?"
- "তোমার এখন বিয়ে হয়ে গেছে।"
- "তো?
এই বিয়ে হ'য়ে নিজের সমস্ত শখ-আহ্লাদ বির্ষজন দিয়েছি। এখন কি বন্ধুদের সাথে ও মেলা-মেশা বন্ধ করে দিতে হবে? তাহলে এই সকল নিয়ম-কানুন শুধু মাএ আমার একার জন্য প্রযোজ্য কেন? আপনার বড় বউ কে ও বসিয়ে রাখুন বাড়িতে। তার বিজনেস করার প্রয়োজন কি প্রয়োজন নেই তো ইট'স ওকে।"
- "তুমি কথায় কথায় আয়েশা কে টেনে আনো কেন আমাদের মাঝে?"
- "আনি কারন,

আপনি এতো বছরে একটু,একটুও ইনসাফ করেননি আমার সাথে।
আর না আমাকে গুরুত্ব দিয়েছেন, বিয়ের পরে লেখা পড়া টাও করতে তো দেননি আমাকে। অথচ, বড় আপা? তার লেট নাইট পার্টি, তার বন্ধু-বান্ধব সব কিছুই ঠিক আছে? কি চান কি আপনি? আমি এই চার দেওয়ালের মাঝে পচে মরি, তাও সারাজীবন কোনো প্রতিবাদ না করে মুখে কুলুপ এঁটে?"
- "তুমি আর ও এক নও।"
- "তা কি করে হবো? আমার বাপের বাড়ি থেকে তো আর বছর বছর কাঁড়ি কাড়ি টাকা দেয় না আপনাকে
আপনার দায়িত্ব-কর্তব্য এবং ভালোবাসা শুধু মাএ আপনার বড় বউয়ের প্রতি সীমা-বদ্ধ। কাজেই এ সব নতুন নয় আমার কাছে।

আর আমি আপনার সাথে কথা বলতে ও ইন্টারেস্ট নই। ইদানিং আমার খুব গা জ্বলে আপনাকে দেখে।"
- "হুমম, তা তো বুঝি। সব'ই বুঝি, জীবনে তোমার নতুন বসন্ত এসেছে।" মিম তাকে গ্রাহ্য না করে চলে গেলো, নাহিয়ান এসে বাবাকে ঠায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
- "কি ব্যাপার বাবা? ঘরের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছো? মায়ের সাথে কি আবারও কোনো ঝামেলা হয়েছে?"
- "তোমার মা?"
- "কি?"
- "সে বোধহয় আর সংসার করতে চাইছে না আমার সাথে। আমি কখনো'ই তার মনের মতো হ'য়ে উঠতে পারিনি তার আমার ওপরে অনেক অনেক অভিযোগ আছে।"

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com