হায় রে ভালবাসা

-কেমন আছো এখন? হাতের কি অবস্থা?
-আগে বল তুমি আমার ফোন রিসিভ করলে না
কেন? কতোবার ফোন করলাম।
- ব্যস্ত ছিলাম। তুমি তো জানো
আমি যে জব করি সারাক্ষন ঝামেলায় থাকতে হয়, কাজের ও খুব চাপ।
-তাই বলে দিনে একবারও কি কথা বলা যায় না?
আজ কতদিন ধরে তুমি এমন করছ।
-আমি ফ্রি হলে তো তোমাকে কল দিতামই।
এতোবার কল দেয়ার কি আছে?
-তুমি তো কল করই না। তিনদিন ধরে দেখলাম
না আমি? আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে
দিয়েছ। যখন হাত কেটে ফেললাম তখন তুমি খোঁজ
নিচ্ছ, তাও ফেসবুকে।
-তুমি কি শুরু করেছ এসব? তোমার শুকরিয়া করা
উচিত যে আমি তোমার সাথে কথা বলছি।
তোমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়াই
বেটার।
-এসব কি বলছ তুমি? আমার সাথে কথা বলা বন্ধ
করে দিবে কেন?
-তুমি আমার সাথে কথা না বললে
আমাদের সম্পর্ক এখানেই থেমে যাবে, আমাদের বিয়ে হবে না। আর
তোমার সাথে বিয়ে না হলে আমি তো কাউ কে বিয়ে করবনা, তোমাকে ছাড়া আমি কিকরে বাচবো?
অন্য সময় হলে রাহিন দিয়ার এমন কথাবার্তা
শুনে আবেগি হয়ে যেত রাগ অভিমান
সব চলে যেত। তবে এখন কথাগুলো শুনে
রাহিনের মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেল।
বলল,
-দিয়া তোমার এসব ফালতু চিন্তা করার
সময় থাকতে পারে কিন্তু আমার নেই। প্লিজ
আমাকে আর বিরক্ত করো না।
দিয়া এবার জবাবে বলল,
-সরি রাহিন কিন্তু তুমি বোঝ না কেন তোমার
সাথে কথা না বলে আমি থাকতে পারি না।
বলো তুমি আমার ফোন ধরবে, আগের মত নিয়মিত
কথা বলবে, বল? গম্ভীর ভাবটা বজায় রেখে রাহিন
বলল,
-ঠিক আছে আমি তোমার ফোন ধরব, আগের মতো
নিয়মিত কথাও বলব তবে একটা শর্তে।
-কি শর্ত বলো আমি এক পায়ে রাজি আছি
-তুমি এখন থেকে সব রকম পাগলামি বন্ধ করে
দিবা। মন দিয়ে পড়ালেখা করবা ওকে?
-আজব হাত কাটছি তো তোমার কারণে। তুমি যে
আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিসিলা?
ঐজন্যই তো।
-দেখ দিয়া আমাদের সামনে লম্বা ক্যারিয়ার পরে
আছে। আমাকে অনেক বড় হতে হবে এজন্য ঠিক মত মনযোগ দিয়ে অফিসের কাজ করতে
হবে। আর তোমাকে বিয়ে করার জন্যই তো আমি
এতোকিছু করছি। এভাবে কথা বলতে থাকলে
আমাদেরই তো ক্ষতি, বোঝ না কেন?
-বুঝি তো কিন্তু দিনে একবারও কি কথা বলা যায়
না? শুধু একবার?
-আচ্ছা ঠিক আছে। আমিই ফোন দিব ফ্রি
থাকলে, তুমি দিবা না।
-আচ্ছা ঠিক আছে, আমি তোমার ফোনের
অপেক্ষায় থাকব।
-ওকে আমি রাখি এখন, কাজ করব বাই মুহূর্তের
মধ্যেই রাহিন নামটার
পাশে সবুজ বাতিটা চলে গিয়ে এক্টিভ এ
মোমেন্ট এগো লেখা এসেছে। একটা
দীর্ঘশ্বাস ফেলল দিয়া। রাহিন টা আজকাল
কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। আগে নিজেই
সারাদিন দিয়াকে বিরক্ত করতো, হয় ফোন,
নাহয় টেক্সট, ফেসবুক চ্যাট, অথবা ইমো সবখানেই দিয়ার সাথে কথা বলতো
রাহিন। দিয়া ব্যস্ত থাকার কারণে কথা
বলতে না পারলে সে খুব অভিমান করতো,
দিয়াকেই মজার মজার কথা বলে অভিমান
ভাঙাতে হতো। অথচ আজকাল রাহিন ফোন রিসিভ
করে না, টেক্সট এর রিপ্লে দেয় না।
এমন কেন হচ্ছে? রাহিন কি তবে বদলে
যাচ্ছে? আর ভাবতে পারে না দিয়া।
চোখের পানিতে তার গাল ভিজে
উঠছে।
. নাক দিয়ে বের করা সিগারেটের ধোঁয়ার
কুন্ডলী পাকিয়ে শূন্যে মিলিয়ে যাওয়ার
দৃশ্যটা মনযোগ সহকারে দেখছে রাহিন। আর
ভাবছে দিয়ার অস্তিত্বকেও যদি এই
ধোঁয়ার মত মিলিয়ে দিতে পারত! মেয়েটাকে
দিনের পর দিন অসহ্য লাগছে রাহিনের কেমন
ন্যাকা ন্যাকা ভাব, একটু কিছু হলেই
কান্না কাটি আর আত্মহত্যার হুমকি দেয়।
আবেগের বশে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাহিন
দিয়া মোটেও ওর টাইপের না। তারচেয়ে
স্নিগ্ধা মেয়েটা বেশ মানানসই হবে,
রাহিনের সাথে, রাহিনের ফ্যামিলির সাথেও। স্নিগ্ধা
বড়লোক বাবার একমাত্র
মেয়ে, স্মার্ট আর মার্সিডিসে করে যাওয়া
আসা করে সেখানে দিয়া প্রতিদিন
আটপৌরে সালোয়ার কামিয পড়ে রাস্তায়
দাঁড়িয়ে থাকে দুই নাম্বার বাসের জন্য।
নাহ্! দিয়ার সাথে রিলেশন কন্টিনিউ করা যাবে
না। কিন্তু এখন ব্রেক আপের কথা
বললেই নিশ্চিত ও সুইসাইড অ্যাটেম্পট
নিবে। তখন রাহিন ই ফেঁসে যাবে। কৌশলে
কিছু করতে হবে। যাতে দিয়া থেকে সহজেই
মুক্তি পাওয়া যায়।
................. হায় রে ভালবাসা...........
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url