অল্পসময়ের ভালোবাসা
আইসক্রিম খাবে?
= না।
– তাহলে কি?
= কিছু না।
– কিছু না খেলে হবে নাকি? কিছু তো
খাও, প্লিয। আই ইন্সিস্ট
….. আশেপাশেরর সবার দিকে তাকিয়ে
মেয়েটা বলল।
= তাহলে আমি মুরগির ঠ্যাং খাব।
– কিহ, হাহাহাহা। আচ্ছা।
…..চিকেনের অর্ডার দিলাম। একটু পর
চিকেন ফ্রাই দিয়ে যাবে।
= আপনি আঁকতে পারেন?
– উম, খুব ভাল না। চেস্টা করি আর
কি।
= তার মানে আপনি আঁকতে পারেন।
( চোখে মুখে হাসির ঝিলিক)
– হ্যাঁ, ওই আর কি। একটু আধটু।
= আমার একটা ছবি এঁকে দিতে
পারবেন?
– তোমার?
= হ্যাঁ, আমার।পারবেন না?? (মুখটা
নিচু করে)
– আচ্ছা আমি দেব। অনেক সময় লাগবে
কিন্তু!!
= লাগুক। অনেক সময় আছে। প্লিয
.
….মেয়েটাকে আর হতাশ করতে চাইলাম
না।
– আচ্ছা, তুমি এখানে বসো।আমি কাগজ
আর পেন্সিল নিয়ে আসি।
= আচ্ছা।
.
আমি পাশের স্টেশনারির দোকানের
উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। মেয়েটাকে আমি
চিনি না। আজ রেস্টুরেন্টে বসে মুরগির
একটা পা চিবাচ্ছিলাম।হঠাৎ আমার
টেবিলের সামনের চেয়ার এ একটা মেয়ে
এসে বসলো।আমার কোন আপত্তি ছিল
না। কিন্তু মেয়েটা কেমন যেন উশখুশ
করছিলো।আমি নিজেই আগ বাড়িয়ে
বললাম।
– কোন সমস্যা?
= না মানে, অনেকদিন পর বাইরে বের
হলাম। এখানে তখন রেস্টুরেন্ট ছিল না।
.
……….এখানে রেস্টুরেন্ট হয়েছে তা
প্রায় ৪ বছর হয়েছে। তার মানে মেয়েটা
অনেক দিন এখানে আসে না।……
– ওহ, তা কিসে পড়েন আপনি?
= আমি ৪ বছর আগে এইচএস পাশ
করেছিলাম। এরপর আর পড়া হয়নি।
– কেন?
= এমনি।
– ওহ।
…….আমি আর বেশি ঘাঁটালাম না।
মেয়েটা বকবক করছিলো।
= জানেন, আমার বাডিতে একটা টিয়া
পাখি আছে। এত্ত দুস্টু, কি আর
বলবো। একদিন কি হলো জানেন? আমি
খাবার দিচ্ছিলাম….
……আমি খুব ভাল শ্রোতা। মেয়েটার
কথায় অসম্ভব মায়া। বাচ্চা বাচ্চা
স্বভাব।মেয়েটা এককথায় অনেক
কিউট। আজকাল কার মেয়েদের মত
মাথায় উঁচু করে ফুলিয়ে স্কার্ফ পরেছে।
কিন্তু মেয়েটা কে অসম্ভব মানিয়েছে।
মেয়েটা কথা বলেই যাচ্ছে।
– তোমার টিয়ার নাম কি?
= চিচি।
– চিচি?? আর তোমার নাম?
= নুপুর।
.
.
আমি একটা এফোর সাইজ অফসেট, আর
একটা 2B আর 6B পেন্সিল কিনলাম।
এই দুটোতেই হয়ে যাবে। রেস্টুরেন্ট এ
ফিরলাম। দেখলাম মেয়েটা সুন্দর করে
সস এর সাথে চিকেন ফ্রাই খাচ্ছে।
– স্যরি। একটু দেরী হয়ে গেলো।
= না না। ঠিক আছে। ফ্রাই টা কিন্তু
অনেক টেস্টি।
– ওহ, ধন্যবাদ।
= আরে আপনি কেন বলছেন, আপনি
তো আর বানান নি।
– ও হ্যাঁ তাইতো।
……বোকামি ধরা পড়ায় লজ্জায় মাথা
চুল্কাচ্ছি। নুপুর হাসছে। হাসলে ওকে
খুব সুন্দর লাগে।
.
আচ্ছা, নুপুর কে আমি চিনি না জানি
না। ২ ঘন্টায় মেয়েটার সাথে এত ভাল
বন্ধুত্ব কি করে হল। আবার ওর ছবিও
এঁকে দিচ্ছি। কি জানি, এই জাদু মনে হয়
নুপুর ই পারে।
= এই যে মিস্টার, ফালতু ভাল করে আঁকবেন
কিন্তু, পচা হলে আবার আঁকতে হবে।
– তোমার চুলটা খোলা থাকলে আরও
ভাল হত।
= না না না। আমি স্কার্ফ খুলব না।
(চেঁচিয়ে)
– ওকে ওকে। কাম ডাউন। আমি বলিনি
যে খুলতে হবে। বলেছি খোলা হলে ভাল
হত।
= স্যরি।অনেক জোরে হয়ে গেছে।
বুঝতে পারিনি।
…..চিৎকার করে আবার বুঝতে পারেনি।
কথা শুনেই মেজাজ গরম হয়ে গেলো। যাই
হোক, অনেক সময় নিয়ে ওর ছবি আঁকা
শেষ করলাম।
– দেখো কেমন হয়েছে।
( ভ্রু কুঁচকে দেখছে। না জানি কি খুঁত
বের করবে)
= অনেক ভাল হয়েছে।
– সত্যি, তোমার ভাল লেগেছে?
= হুম। তবে আপনিই ঠিক। চুল আঁকলে
আরো ভাল লাগত।
– আমি তো সেটাই বললাম। তুমিই
তো….
= জানেন, আমি এতদিন। প্রায় ৪ বছর
বাইরে বের হই না।
– কেন?
= আমাকে বের হতে দেয় না। আমার
লাং ক্যান্সার। কেমো দিতে দিতে
আমার মাথার লম্বা চুলগুলো পরে গেছে।
আমি কলেজে ও ভর্তি হতে
পারিনি।
…..হঠাৎ যেন পরিবেশটা গুমোট হয়ে
গেলো। আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম
না। এই মেয়েকে দেখলে কে এটা বিশ্বাস
করবে। বাইরের কৃত্তিমতা মেয়েটাকে
স্পর্শ করেনি। গাছের সবুজ পাতার মত
সজীব দৃষ্টি।মানুষের এত কস্ট কাছ
থেকে না দেখলে বোঝা যায় না।
= আমাকে সব সময় কেমো নিতে হয়।
৪ বছর ধরে তিতা আর গলা ধরানো
ওষুধ খেয়ে আমি আর কিচ্ছু খেতে
পারতাম না। তখন আমার নাকে নল
ঢুকিয়ে খাবার দেয়া হত।প্রচন্ড কস্ট
হত। আমাকে বাইরে নিয়ে যেত না।
গেলেও গাড়ির ভেতরে বসে যতটুকু
বাহির দেখা যায় ততোটুকু। আমার কোন
বন্ধু ছিল না। কলেজের বন্ধুরা আর
আমার খবর নেয় না। কাল ডাক্তার
বলেছে, আমি আর বেশিদিন বাঁচবো না।
মা বাবা অনেক কান্না করছে।
আমি কতবার বললাম আমাকে ঘুরতে
নিয়ে যেতে। নিয়েই গেলো না। তাইতো
আমি আজকে না বলে বের হয়েছি।
আমার এত ভাল লাগছে বোঝাতে পারবো
না। আমি খুব খুশি।
……………………………………
আমি নুপুর এর কথাগুলো শুনছিলাম
জোরে জোরে কাঁদতে ইচ্ছা করছিলো।
কিন্তু এই মেয়ে একদম নির্বিকার।
= আপনার আঁকানো ছবি আমি
সারাজীবন, ওহ না না। যতদিন বাঁচবো
ততদিন রেখে দেব। আমি এখন যাই।
একটু পর সন্ধ্যা হয়ে যাবে।
এই বলে নুপুর চলে গেল আর আমার দুচোখ জলে ভরে গেল ………………
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com