এর-ই নাম ভালোবাসা

রিফাঃ হ্যালো,জানপাখি তুমি কোথায়?
রাজঃ কেন? আমিতো বাড়িতে.......
রিফাঃ এখনি একবার পার্কে আসো,প্লিজ........
রাজঃ আমার একটা টিউশনি
আছে,আসতে পারলাম না........
রিফাঃ প্লিজ,প্লিজ
আসো...প্রতিদিনই তো পড়াও......আজকে
ছুটি দাও...
রাজঃ দেখ,এটা আমার কাজ।এটা না
করলে আমার পড়াশোনার খরচ
জোগাতে পারব না......
রিফাঃ প্লিজ আসো,যদি না আসো
তাহলে তোমার সাথে আড়ি!!হুম....
রাজঃ হা হা হা,আড়ি?কতহ্মণের জন্য
সোনাপাখি? ১ঘন্টা?.......
রিফাঃ না.............
রাজঃ ২ ঘন্টা? ৫ঘন্টা? ১ দিন?..........
রিফাঃ না,না, না.......
রাজঃ তাহলে.............
রিফাঃ তুমি যতহ্মণ না আসবে,ততহ্মণ
আমি ফোন দিতেই থাকব, দিতেই
থাকব.......
রাজঃ যদি ফোন বন্ধ করি??
রিফাঃ তাহলে,যে বাড়িতে পড়াও
সেখানে গিয়ে তোমাকে নিয়ে
আসব!!
রাজঃ এটা আবার কেমন আড়ি? তুমি
না,আসলেই একটা.....
রিফাঃ কি?বল বল...পাগলি তো?
সেটাই ভালো....তবুও প্লিজ আজকে
আসো..
অগত্যা রাজকে সেদিন ছুটি নিতে হল।
রাজ আর রিফার সম্পর্ক তিন বছরের।
দুইজনাই অনার্স ৪র্থ বর্ষের ছাত্র-
ছাত্রী।
রাজ মধ্যোবিত্ত ঘরের সন্তান।কিন্তু
রিফা বড়লোক বাবার আদরের
শেষকন্যা! (২য়)।দুইজনাই দুজনাকে খুব
ভালবাসে। মাঝে কে কাকে বেশি
ভালবাসে তা নিয়ে তর্ক হয়!!
প্রতিবারই রিফা ইচ্ছা করেই হার
মেনে নেয়!সেটা রাজ হইত বুঝতে
পারে!হইতবা না। কিন্তু দুজনার সম্পর্ক
দেখে যে কোন প্রেমিক-প্রেমিকার
হিংসা হবে!!
অবশেষে রাজ পার্কের কাছাকাছি
আসল।দেখে রিফা একটা নীল শাড়ি
পড়ে,রাস্তার ওপরপ্রান্তে দাড়িয়ে
আছে। এমনিতেই রিফা খুব সুন্দর। আজকে
আরো বেশি সুন্দর লাগছে!!
রাজ হা করে তাকিয়ে আছে....
ওপাশ থেকে রাজের হা করে
তাকিয়ে থাকা দেখতে পেল রিফা।
হাত দিয়ে ইশারা করল,খবর আছে!!
হঠাৎ কি যেন ভেবে রাজ দৌড়ে
রিফার কাছে আসতে চাচ্ছিল.....
কিন্তু.................(এক্সিডেন্ট)....................
রাজ নিজেকে একটা হাসপাতালের
কেবিনে আবিষ্কার করল! মাঝে ঠিক
কতহ্মণ সময় কেটেছে,রাজ আন্দাজ
করতে পারল না!!তবে এতটুকু বুঝতে
পাড়ল,আরেকটা পড়ন্ত বিকালের
সমাপ্তি হতে চলেছে!
তার কিছুহ্মন পড়ে রাজ আবিষ্কার
করতে পাড়ল,ওর বাম পা টা নেই....
কিন্তু,,,ওর কোন দুঃখ হচ্ছে না!!
ভাগ্যকে মেনে নিতেই হবে....তাই খুব
স্বাভাবিক।
একটু পড়ে যা দেখল?তা ওর চোখ
বিশ্বাষ করতে পারছিল না!!
দেখে রিফা একটু দূড়ে একটা চেয়ারে
ঘুমিয়ে আছে........
ঠিক তখন ডাক্তারের আগমন।
ডাক্তারঃ এখন কেমন লাগছে আপনার?
রাজঃ কোন কথা নেই! এক পলকে
তাকিয়ে আছে রিফার দিকে......
ডাক্তার সেটা লহ্ম্য করল.........
ডাক্তারঃ খুব ভাগ্যগুনে ওমন একটা বউ
পাওয়া যায়!!.......
রাজঃ মা............নে?
ডাক্তারঃ কাল সারারাত ওনি ঘুমান
নি! আর যখন শুনতে পেলেন, আপনার
একটা পা কাটতে হবে.....সে কি
কান্না?? সারারাত নামাজ
পড়েছে....আপনার জ্ঞান তখনো
ফেরেনি! কিছুহ্মণ আগেও কথা
বলছিলেন কি করা যায়?? আমি বল্লাম
প্লাস্টিকের পা লাগাতে হবে.....
এখন বোধহয় ঘুমাচ্ছেন.....
আপনার কি কিছু লাগবে? রাজ সাহেব?
রাজঃ হা?.....না না......
ডাক্তারঃ আপনার ঘুমুনো দরকার।
ঘুমানোর চেষ্টা করুন,কিছু লাগে
নার্সকে ডেকে বলবেন..........
ডাক্তার চলে গেলেন........
রাজ একপলকে তাকিয়ে আছে রিফার
দিকে....কি সুন্দর একটা মেয়ে!কত সুন্দর
লাগছে...কোন কিছুর অভাব নেই.........
এ যেন all is well.....শুধু এ কথাটা বললেও কম
হবে। ওর একটা সুন্দর ভবিষৎ
আছে......ভাবছে আর নিজের অজান্তে
চোখের অশ্রুধারা বেয়ে চলেছে.......
রাত ৮ টায় রিফার ঘুম ভাঙ্গল। তখনো
রাজ ওর দিকে চেয়ে ছিল!!আর
চোখের পানি বাধ মানছিল না.......
রিফাঃ তোমার কখন জ্ঞান ফিরল?
রাজঃ জীবনটা কিন্তু খেলা
না......এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে
হবে...........
রিফাঃ তো?....আমি কি করব?
রাজঃ আমার একটা কথা রাখবে....?
রিফাঃ কি?........
রাজঃ আমাকে ভুলে যাবে!সুন্দর
মনের একটা ছেলেকে বিয়ে করবে!!
বিশ্বাষ কর? আমার এতটুকু দুঃখ থাকবে
না...
রিফাঃ না..........!!
রাজঃ দেখ,জীবনটা ছেলে খেলা
না। আবেগ দিয়ে জীবন চলে না।
বাস্তবতার সাথে চলতে হয়..........
রিফাঃ দেখ,যা হয়েছে তারউপর
আমাদের কারো হাত নেই!!আর যদি
বল,,তাহলে এর জন্য আমিই দোষি.......
রাজঃ প্লিজ,এর জন্য নিজেকে দোষী
করে আমাকে কষ্ট দিবে না। আমার
জন্য হলেও অন্তত তুমি নতুন শুরু কর....দেখবে
ভালো লাগবে.......
তবুও আমার মত একজন পঙ্গুর সাথে...........
রিফাঃ তাহলে আমিও আমার একটা
পা কেটে ফেলব!!আমার আর তোমার
ভিতর কোন তফাৎ থাকবে না!! তুমিও
পঙ্গু, আমিও পঙ্গুু!!!
রাজঃ সরি,আসলে আমি বুঝতে
পারিনি তুমি আমাকে এতটা
ভালবাস!!আজ জীবনের কাছে সর্বোচ্চ
হারটা তুমিই হারালে আমাকে..........
.আজ আমার সব জয়,, একটা হারের কাছে
মাথা নত করল.......
রিফাঃ বাদ দেও তো!...তোমার
অপারেশন হবে....তুমি আবার হাটবে..
দুজনাই কাঁদছে ....এ কান্না ফুরোবার
না! এ কান্না কোন দুঃখের কান্না
না....
বাইরে থেকে দুটা নার্সেরও কান্নার
আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে,,যারা
জানালার কাছে দাঁড়িয়ে কথা
শুনছিল......
প্রকৃতিও বোধহয় অঝোরে কাদছে....
ভালবাসা যদি হয় এমন পাগলামি ? যদি
হয় এমন অন্ধ! তবে সেটাই প্রকৃত
ভালবাসা........
.....
প্রকৃত ভালবাসা দেহে নয়,,মনে বিরাজ করে...........
দেহের ভালবাসা ফুরিয়ে যায়....কিন্তু মনের ভালবাসা বেচে থাকে চিরকাল.......

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url