মুখ ‍খুললেন মোশাররফ করিম

মোশাররফ করিম। নামটা শুনলেই চোখে ভেসে উঠে চিরচেনা একটি চেহারা, যাকে আপনি ‘সিকান্দার বক্স’, ৪২০-এর ‘মন্টু’ হিসেবে ডাকতে পারেন। তাকে আপনি ‘এভারেজ আসলাম’ হিসেবে ডাকতে পারেন কিংবা জমজ নাটকের ‘এক্কা নিক্কা’ হিসেবে। এমন হাজারো চরিত্রে সাবলীল অভিনয় করে লাখো দর্শকের মন জয় করেছেন যে ব্যক্তিটি, তিনি টিভির পর্দায় আপনাকে অসংখ্যবার হাসিয়েছে, কাঁদিয়েছে। ভাবিয়েছে, একজন অভিনেতা এত সুন্দর অভিনয় করতে পারেন কীভাবে।
মোশাররফ করিম আমেরিকায় জন্মালে হয়তো অস্কার পেতেন। তার কারণে বাংলা নাটকের সংজ্ঞাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। কী সিরিয়াস ক্যারেক্টার‍, কী কমেডিয়ান, কী ইমোশনাল-সবকিছুতেই যেন তার সমতুল্য তিনিই। বাংলা নাটককে তিনি দিয়েছেন বহু কিছু। কিন্তু আজ এই ব্যক্তিটাকেই আমরা নাস্তিক বানিয়ে দিলাম, মুহূর্তে তার ফাঁসি চেয়ে বসলাম। আমরা কতটা অবিবেচক!
মোশাররফ করিম কোনো এক টিভি শোতে বলেছেন, ‘ধর্ষণের জন্য মেয়েদের পোশাক দায়ী নয়। তাহলে পাঁচ বছরের মেয়ে ধর্ষিত হতো না।’ এই কথাটা বলায় যে জাতি একজন গুণী ব্যক্তিকে নাস্তিকতার কাঠগড়ায় দাঁড় করায়, সে জাতি আসলে এমন ব্যক্তিকে ডিজার্ভ করে কি না, তাতে আমি সন্দিহান।
জনপ্রিয় এই অভিনেতাকে যারা অপবাদটি দিয়েছেন, তারা নিজেদের ইসলামপন্থী দাবি করেছেন। কিন্তু তাদের মানসিকতা নোংরা ছাড়া কিছুই হতে পারে না।
মোশাররফ করিম কেন নাস্তিক, তার পক্ষে যুক্তি পড়লাম। দেখলাম, অবাক হলাম। তারা বলছেন, ধর্ষণের প্রধান কারণ হলো যৌন উন্মাদনা। আর মেয়েরা ছোট পোশাক পরলে যৌন উন্মাদনা বেড়ে যায় পুরুষের। আর তাতেই হয় ধর্ষণ। এতে পুরুষের কোনো দোষ নেই, সম্পূর্ণ দোষ মেয়ের। আর মোশাররফ করিম তার বক্তব্যে মেয়েদের ছোট ড্রেস পরতে উৎসাহিত করেছেন। তাই তিনি শুধু নাস্তিকই নন, ইহুদিদের চামচা।
আপনাদের পুরুষত্বে সালাম। ইসলামে নারীদের পর্দা করার বিষয়ে কঠোর নির্দেশ রয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু পুরুষদের বিষয়ে ইসলামে কী নির্দেশ রয়েছে, আসুন দেখা যাক।
পবিত্র কোরআনের সূরা নুরের ৩০ নম্বর আয়াতে আছে, ‘মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের গুপ্তাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য মঙ্গল আছে। নিশ্চয় তারা যা করে, আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত আছেন।’ এ ছাড়াও নারীদের দিকে লালসার দৃষ্টিতে তাকানোও ইসলামে জেনার সমান, ধর্ষণ তো অনেক দূরের কথা।
ধর্ষণকারীদের কাছে পোশাক কোনো কারণই নয়। একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কখনোই ধর্ষণের মতো নোংরা কাজে লিপ্ত হতে পারে না। যে ধর্ষণ করবে, সে কোনো না কোনো এক বাহানায় নিজের কাজ করে নেবে। তাই একজন মোশাররফ করিমকে নাস্তিক বানিয়ে ধর্ষকদের পক্ষে কথা বলে তাদের ধর্ষণে উৎসাহিত না করি।
ধর্ষণের জন্য পোশাক দায়ী হতে পারে না-এই কথা বলায় কেউ নাস্তিক হতে পারে না। এই কথা বলায় আপনি তার কোনো রকম ক্ষতি চাইতে পারেন না। যদি চেয়ে থাকেন, তাহলে নিজের মন ও বিবেককে প্রশ্ন করুন, আপনার ভেতরে ধর্ষক সত্ত্বা লুকিয়ে নেই তো? আপনি মনে মনে মেয়েদের লালসার নজরে দেখেন না তো? 
এই বক্তব্যের জন্য এত গুণী একজন মানুষ জাতির রোষানলে পড়তে পারেন না। তিনি জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন না। কারণ তার বক্তব্য ভুল ছিল না। নোংরা মস্তিষ্কের লোকগুলো তার বক্তব্যকে ভুল ব্যাখ্যা করে গোটা জাতিকে ছোট করেছে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url