Breaking News

গল্প:একটু আলতো স্পর্শ | লেখক:আল আহাদ সৌরভ

ভোর ছয়টা……. ঘুমিয়ে আছি। হঠাৎ একটা শীতল ঠোঁটের স্পর্শে দেহের শিরা উপশিরাগুলো কম্পিত হতে লাগলো। চোখ খুললাম দেখি আমার পাগলিা মুচকি মুচকি হাসছে। ভালোবাসার মানুষ গুলো ছোঁয়ার মাঝে এক ধরনের অদ্ভুত ভালবাসা বিরাজমান। যা কারো কাছে ইলেকট্রিক শর্ক আবার কারো কাছে সাগরে আতলের মত।
বউ: এই ওঠো.. অনেক সকাল হয়েছে।
আমি :হুমমম.. (ঘুমিয়েই)
বউ : হুমমম না ওঠো.. (বলেই সে চলে যাচ্ছে)
আমি :এই কোথায় যাচ্ছো? একটু বুকে আসো না গো…
আহা কি করছ সব সময় দুষ্টুমি করতে হয! আমার চুলগুলো সব এলোমেলো করে দিলে.. এই এখন ছাড়ো ফ্রেশ হয়ে আসো যাও।
আমি :যাচ্ছি.. এর আগে একটু আসো তো…
এই বলে পাগলিটাকে বুকে জড়িয়ে নিলাম খুব শক্ত করে। সে আমার বুকে কয়েকটা কিল ঘুষি দিয়ে পালিয়ে গিয়ে আয়নার সামনে বসল। বসেই চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে নিজেকে আড়াল করে দিল। ওর দিঘল কালো কেশওয়ালা ভেজা চুলগুলো দেখে আমি বসে থাকতে পারলাম না। উঠে গিয়ে নাকের ডগা ওর চুলে লাগিয়ে ঘ্রান নিতে লাগলাম। ওর চুল গুলো থেকে এক ধরনের অদ্ভুত ঘ্রান বের হচ্ছে যা ঘরটিকে মাতিয়ে তোলার সাথে সাথে আমাকেও মাতাল করে দিচ্ছে। আমি আস্তে আস্তে ওর গলার পাশে চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে ওর কানে নাক লাগিয়ে ঘ্রাণ নিতে লাগলাম। কানের পাশে আর গলায় আলতো করে চুমু এঁকে দিলাম ও ঘনঘন আর জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো। ওর এই শ্বাসক্রিয়া আমাকে পাগল করে দিল আমি হারিয়ে গেলাম এক অন্য জগতে। ও ঠিক তখনই বলে উঠলো এই এখন তো ছাড়ো। আমি বললাম না আরেকটু প্লিজ বলেই পেছন থেকে দুহাত প্রসারিত করে তার ফাঁকা কোমরটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম তার শ্বাসপ্রশ্বাস আবারও ঘন হয়ে এলো। হঠাৎ সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল আর আমার হাতে তোয়ালা দিয়ে আমাকে গোসলে পাঠালো। আমি বাধ্য ছেলের মত গোসল সেরে বের হলাম কিন্তু বের হয়েই আমার চোখ আকাশে উঠে গেল। সামনে যেন একটা পরী দাঁড়িয়ে আছে। ভাল করে দেখলাম এ তো আমার বউ! ঠিক তখনই মনে হল পৃথিবীতে এক সময় দলবেঁধে পরীরা এসেছিল। আর তারা হয়ত ভুল করে আমার বউকে রেখে সবাই চলে যায। ওকে পরী বলার কারণ ওআজ নতুন করে সেজেছে। ভেজা চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া, কপালে লাল টিপ, ভ্রু গুলো টানা টানা, চোখে কাজল, ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক দেওয়া আর পরনে লাল শাড়ি। আমি সেই স্কুল লাইফ থেকে ভাবতাম আমার বউ ঠিক এমন ভাবে সাজবে আর আমি বসে থেকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবো। আজ তার বহিপ্রকাশ ঘটল।
ভালবাসার মানুষগুলো হয়ত এভাবে মনের কথাটিকে বোঝে যায়। আমি আস্তে আস্তে বলতে লাগলাম আজ মনে হয় লিপস্টিক দিয়েই আমার ব্রেকফাস্ট হবে।
এই যাহ কি বলে দুষ্টুটা তোমার জন্য সেই কখনোই নাস্তা রেডি করে রেখেছি। চলো এখন নাস্তা করবে। এই দাঁড়াও তোমাকে একটু দেখি আগে!
হয়েছে পরে দেখিও.. সারারাত তো আমাকে ঘুমাতে দাও না। এখন নাস্তা করবে আমাকে একটু মুক্তি দাও।
কোথায় যাচ্ছ?? আবার আমি ওর হাতটা ধরলাম।
তুমি শুরু করো। আমি যাবো আর আসবো।
না একসাথে খাব।
ওকে বাবা আসতেছি পাগল একটা।
এই বলে আমার খাড়া নাকটাও বোঁচা করে দিল। চোখাচোখি বসে আছি দুজনে পরিবেশও নিস্তব্ধ। এই পাগলি খাইয়ে দাও না…..
নিজে খেতে পর না?? বড় না দিন দিন কি ছোট বাচ্চা হয়ে যাচ্ছো যে খাইয়ে দিতে হবে??
না পারি না তুমি খাইয়ে দাও…
পারবোনা পারবোনা…
ওকে তুমি আজ খাইয়ে না দিলে আমি খাবোই না।( অভিমানী সুরে)
আচ্ছা আসো খাইয়ে দিচ্ছে এই বলে ও আমাকে খাইয়ে দিতে লাগলো। আমিও তাকে খাইয়ে দিলাম। ব্রেকফাস্ট শেষ করার পর বউ বলল চলনা একটু ছাদে যাই মেঘলা আকাশের সূর্য টাকে একটু দেখে আসি। আমি আর না করলাম না। দুজনেই ছাদে চলে গেলাম। ও আমার হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে সূর্যের প্রথম আলো মাখছে। আর তখন আমি বললাম এই একটু পেছনে ঘুরে চোখটা বন্ধ করতো!
কেন??
বললাম না চোখ বন্ধ করতে!!
আচ্ছা আচ্ছা করতেছি..
সে চোখ বন্ধ করে আছে আমি তার ঘাড়ের চুলগুলো সরিয়ে নেকলেসটা পরিয়ে দিলাম। এবার চোখ খোলো।
এটা কি..?? (চোখে একরাশ বিস্ময)
তেমন কিছু না তোমার গলাটা ফাঁকা-ফাঁকা লাগতেছিল তাই ছোট্ট একটা উপহার।
সে আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার চোখ ভিজে আসছে, এটা বেদনার অশ্রু নয় এটা ভালোবাসার অশ্রু। সে হঠাৎ আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো। আমিও পাগলিটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম কখনোই যেন হারাতে দেবো না….

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com