Breaking News

অবহেলায় অপমানিত|পর্ব -৩

এই গল্পটা শুরু করার আগে কিছু কথা আপনাদের বলতে চাই এর আগে যারা আমার [অবহেলা অপমানিত -২] গল্পটা পড়েছেন তারা অনেকে আমাকে রিকোয়েস্ট করেছেন, এই গল্পটা তিন নাম্বার পার্ট বের করতে তাই আজ [অবহেলা অপমানিত -৩] বের করলাম।
আগের গল্পটা অনেকে কপি করেছে, কপি করে তাদের নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছে। যখন বিভিন্ন গ্রুপে গল্পটা পোস্ট করি তখন তারাই আমাকে বলে কপিবাজ।
যাইহোক গল্পে আসা যাক,,,,
৫টা বছর কেটে গেল কিভাবে যে গেলো টেরই পেলাম না, শত কষ্ট, শত বাধা নিয়ে আজ অনার্স ফার্স্ট ইয়ার পর্যন্ত পড়ছি।
আমার আপন বলতে কেউ নেই,
শুধু রয়েছে একমাত্র আমার জীবন সঙ্গী আমার ডায়রিটা।
এই ডায়রিটার ভেতর আমি লিখে রেখেছি, আমার কষ্টের জীবন কাহিনী।
আমি যে ভার্সিটিতে পরি সেখানে সব বড়লোকের ছেলে মেয়েরা পড়ে, অনেকেই এই ভার্সিটিতে ঢুকেছে ঘুষ দিয়ে কিন্তু আমি নিজের মেধা আর যোগ্যতার দিয়ে এসেছি।
ভার্সিটির সব ছেলেমেয়েরা অনেক স্টাইলিশ, তারা প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের জামা কাপড় পরে আসে শুধু একমাত্র আমি ছাড়া।
সাদা ডিলে ডালে শার্ট চুক চুক করে মাথায় তেল দিয়ে আসা একমাত্র ছেলে আমি আমিও তাদের মত stylish ভাবে চলাফেরা করতে পছন্দ করি কিন্তু আমি এতই গরিব যে এসব ভাবনা নিজের ভিতর পুষে রাখি।
আমাদের ভার্সিটির একটা মেয়ে আছে নাম হলো তার কবিতা, কবিতা দেখতে অনেক সুন্দরী অনেক, মায়াবী চেহারা তার, কথার ধরন অনেক সুন্দর, মিষ্টি কন্ঠের অধিকারী। আমার থেকে অনেক ভালো লাগে মেয়েটাকে কিন্তু একমাত্র এইটা সেই মেয়ে যে সবার কাছে আমাকে জোকার বানিয়ে ছাড়ে। আমি আগের দিনের মত ডিলেডালে শার্ট ও প্যান্ট পরি দেখে।
ভার্সিটি কেউ আমাকে দেখতে পারেনা সবাই আমাকে নিয়ে হাসে কিন্তু আমি সেটাকে পাত্তা দেইনা। এভাবে কাটে কিন্তু আমার দিনগুলি। ভার্সিটি সবায় আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। বিশেষ করে কবিতা।
কবিতা মেয়েটা বড়লোকের মেয়ে অহংকারে বরা তার ভিতর।
একদিন ভার্সিটি গেট দিয়ে প্রবেশ করার সময় অন্যমনষ্ক হয়ে হাটার কারনে হঠাৎ করে কার সাথে যেন ধাক্কা খেলাম।
আমি নীচে পড়ে গেলাম,
উপর দিকে তাকিয়ে দেখি কবিতা দুই,তিন হাত পিছনে পরে আছে, মনে হয় আমার সাথে ডাক্কা খাওয়ারর সময় পিছনে গিয়ে পড়েছে,
আমি সোজা হয়ে দাঁড়াতে দাড়াতে বললাম, সরি কিন্তু তার আগেই আমার গালে ঠাস করে বিকট আওয়াজ হলো।
আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না।
কবিতা বলতে শুরু করল-
– ছোটলোকের বাচ্চা সুন্দরী মেয়ে দেখলে খালি ডাক্কা খাওয়ার ইচ্ছে হয়, বেয়াদব। কোথায় থেকে জানা আসে এইসব ছেলে।
আমি নির্বোধ ভাবে সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম,
এখানে আমার কিছু করার নেই,
এক অসহায় আমি।
ভার্সিটির কোন ক্লাস করতে ইচ্ছে নেই আজকে। চলে এলাম চলে যেখানে আমি থাকি। একটু পরে কাজে চলে যাব। আজকে অতিরিক্ত কাজ করব তাহলে টাকাটা বেশি পাব।
এই ঘটনার দুই তিন দিন পর,,
ভার্সিটির মাঠ প্রাঙ্গন থেকে ক্লাসে যাচ্ছি তখন খেলাম আরেক ধাক্কা!!!!!
তাকিয়ে দেখি কবিতা। আমার ভাগ্য এত খারাপ কেন? আবার কবিতার সাথে ধাক্কা খেলাম… কিন্তু এবার তো আমি পথ দেখে হাঁটছিলাম!! তাহলে কি কবিতা ইচ্ছে করে আমার সাথে ধাক্কা খেলো? (মনে মনে বলতে লাগলাম)
আমাকে আজেবাজে কথা বলার জন্য কি সে আমাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিলো??
তবুও আমি ভদ্রতা বজায় রাখার জন্য সরি বললাম। কিন্তু সে উল্টা বলতে লাগলো…….
-কিরে ছোটলোকের বাচ্চা তুই আবারো আমার সাথে ধাক্কা খেলি! জানোয়ারের বাচ্চা….
ঠাসসসসসসসসসসসসস ঠাসসসসসসসসসসসসস করে দুটি থাপ্পর দিল।
প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছি, গালে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম নির্বোধ ভাবে।
সে আবার বলতে লাগলো…..
-কুত্তার বাচ্চা মেয়ে মানুষ দেখলেই লোভ সামলাতে পারিস না!!!!!!!
আমার মাথা গরম হয়ে গেল,
গালিটা আমার মার উপরে গিয়ে পরল,,
নিজের রাগকে আর কন্ট্রোল করতে পারলাম না।
আমি ও ঠাসসসসসসস করে একটা থাপ্পর মারললাম আর বলতে লাগলাম…………
– চুপ থাক তুই এতক্ষন যাবৎ অনেক কথা বললি, আমার মাকে নিয়ে গালি দিলি, তোর সাহস কি করে হয়? আমি কোন দেখে ধাক্কা খাইনি তোর সাথে বরং তুই আমার সাথে ধাক্কা খেলি!!!! আমাকে কি তুই বোকা পেয়েছিস?? যখন তখন হাসির পাত্র বানিয়ে দিবি আবার ধাক্কা দিয়ে নিজে এসে মারবি!!! কি পেয়েছিস আমাকে তুই?? তোর মত বড়লোকের মেয়েদের আমার চেনা আছে কিসের এত অহংকার, বাবা বড়লোক বলে তাই, আর আমরা ছোটলোক বলে তাই? হ্যাঁ আমরা গরীব হতে পারি,,,, তাই বলে কি সবার কাছে অবহেলার পাত্র হয়ে যাব।
থাপ্পড়টা এত জোরে মেরেছিলাম যে কবিতার চোখদিয়ে পানি পরতে শুরু করলো।
ব্যথা থেকে অপমানিত বেশি হয় হয়েছে।
কবিতা ভাবতে পারেনি পুরু ভার্সিটির সামনে তাকে এভাবে অপমান করবো, থাপ্পর মারব।
আমি রাগে চলে আসলাম বাড়ীতে।
দুই তিন দিন ভার্সিটিতে কবিতাকে দেখিনি।
আমি যেখানে কাজ করতাম হোটেলে সেখানথেকে আমাকে বের করে দেয়া হলো আমার চাকরিটা চলে গেল, জানিনা কেন আমাকে বের করে দেওয়া হল। পকেটে যে টাকা ছিল টা শেষ।
আজকে ভার্সিটিতে না খেয়ে যেতে যেতে হচ্ছে।
ভার্সিটিতর ঢুকতেই কিছু ছেলেরা আমাকে ডাকলো। একটা বট গাছের আড়ালে নিয়ে গেল, সেখানে নিয়ে আমাকে মারতে লাগলো, মারতে মারতে ভার্সিটির মাঠ প্রাঙ্গনে নিয়ে আসলো।
সবাই তামাশা দেখছে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে কেউ আমাকে বাঁচাতে আসলো না।
এভাবে সকালে কিছু খেয়ে আসেনি।
আমাকে অনেক মারতে ছিল, কারো ডাক শুনে তারা থেমে গেল কন্ঠটা খুব পরিচিত মনে হল তাকিয়ে দেখি কবিতা।
কবিতা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল………..
-দেখ ছোটলোকের বাচ্চা মার খেতে কেমন লাগে। আমাকে অপমান করা না,,, কথাটা বলে আমার বুকের উপর একটা লাথি মারলো।
হাই হিল জুতা পড়েছিল আমি মা বলে একটা চিৎকার দিলাম বুকের ব্যথায়। হাই হিল জুতাটা মনে হলো আমার বুকের ভিতরে ঢুকে যাচ্ছিল।
আর একটা লাথি মেরে আমাকে বলতে লাগল…….
-আমাকে অপমান করা না, দেখ কি শাস্তি আজকে তোকে দেঈ, জীবনের শিক্ষা পেয়ে যাবি।
আমাকে থাপ্পড় মারা,দেখ কিভাবে প্রতিশোধ নিলাম।
আমার ব্যাগের ভিতর যা ছিল সব লন্ডভন্ড করে পেলে দিল।
আমাকে আরো অনেকক্ষণ মারল। তারপর আমি অনেক কষ্টে আমার ডায়েরিটা আমি নিজের কাছে নিয়ে নিলাম।
এক সময় তারা মারা বন্ধ করল। ডায়েরীটা হাতে নিয়ে আমি উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম। আমার শরীর এমনিভাবে রক্তে ভিজে গেছে। অনেক কষ্ট উঠলাম চলার মত শক্তি নেই আমার।
পিছন দিক থেকে আবার আমাকে একজন লাথি মারলো, লাথি সামলাতে না পেরে আমি সামনে গিয়া উপুড় হয়ে পড়লাম। পিছনে তাকিয়ে দেখি কবিতা আমাকে সেই লাথিটা দিয়েছে।
কবিতা বলতে লাগলো………
-দেখলি কিভাবে প্রতিশোধ নিলাম আমি, আরো নিতে পারতাম কিন্তু নিলাম না ছেড়ে দিলাম তোকে।
আমি অনেক কষ্টে আবার উঠে দাড়ালাম। কবিতার দিকে এক আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।
কিছু বলতে চাইলাম কিন্তু বললাম না, দু চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না আর।এ পৃথিবীতে আমার এই একমাত্র ডায়রিটা ছাড়া কিছু নেই।
কবিতা আমাকে বলল,,,,,,,
-দেখিতো ডায়েরিটা কি আছে, ডায়রিটাকে বারবার বুকে আগলে রাখছিস।
এক প্রকার জোর করে আমার থেকে ডায়রিটা নিয়ে নিতে চাইল আমি কিছুতেই দিলাম না বরং ডায়েরিটা নিয়ে গেটের দিকে এগোতে লাগলাম কবিতা ও আমার পিছে পিছে আসতে লাগলো আমি গেট থেকে বের হলাম এমন সময় আবার কবিতা আমার হাত থেকে ডায়েরিটা নিয়ে নিতে চাইল।
আমি আবার জোর করে ডায়েরিটা আমার কাছে রেখে দিলাম। আমি হাটা ধরলাম রাস্তার দিকে।
হাঁটতে অনেক কষ্ট হচ্ছে রক্তে শার্টটা ভিজে যাচ্ছে।
আমাকে এমনভাবে পিটিয়েছে যে মাথা ঘুরতেছে মাথা ঘুরতে ঘুরতে রাস্তার মাঝখানে চলে এলাম, শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার দেখছি,
কে জেন বড় ধরনের ধাক্কা দিল, আমি ছিটকে পড়ে গেলাম রাস্তায়। আমার ডায়েরীটা কোথায় গেছে আমি নিজেও জানিনা।
আমার নিশ্বাস বন্ধ আসছে।
অন্যদিকে কবিতা দেখে আরিয়ান ঘুরতে ঘুরতে রাস্তার মাঝখানে চলে এসেছিলো, 1 টা প্রাইভেট কার এসে ওকে ধাক্কা দিলে রাস্তার মাঝখানে ছিটকে পড়ে গেল।
ওর ডায়রিটা অনেক দূরে ছিটকে পড়লো ওর মাথা দিয়ে অনবরত রক্ত পড়ছে আশেপাশের লোকজন এসে ওকে ঘিরে ধরলো।
কবিতার বুকটা কেঁপে উঠলো, সে নিজেও জানেনা বুকটা কেন কেঁপে উঠলো। স্তব্ধ হয়ে গেল কবিতা। তার কারণে আরিয়ান মারা যাচ্ছে সে কিছু করতে পারছেনা কবিতা গিয়ে আরিয়ানের ডায়েরীটা হাতে নিল।
ডায়রিটা রক্তে ভিজে গেছে,,,,,,,,,,
কেমন হয়েছে জানবেন কিন্তু, ভালো নাও হতে পারে তাই বলে কেও বাজে কমেন্ট করবেননা।

                                                                          (চলবে)

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com