একটা বোকা মেয়ের গল্প

আজও আপনাকে দেখলাম; কলাভবনের সামনের রাস্তা ধরে প্রতিদিনকার মতোই মাথা নিচু করে ভ্যাবলার মতো হেঁটে যাচ্ছেন লাইব্রেরির দিকে। পিঠে সেই ছাই রঙা ব্যাগ আর গায়ে ফতুয়া। আচ্ছা, আপনি সব সময় ফতুয়া পরেন কেন? আপনার শার্ট নেই?

আপনি কি জানেন, ফতুয়া পরলে আপনাকে মেয়ে মেয়ে লাগে? 

আপনার চোখের গড়নটাও মেয়েদের মতো, লম্বা টানা ভ্রু। 

এমন ছেলে আমার একদম পছন্দ না। ছেলেরা কেন মেয়েদের মতো হবে! 

আপনি আর ফতুয়া পরবেন না। আর হাঁটার সময় মাথা নিচু করে হাঁটতে হবে কেন? 

আশপাশে কে আছে সেটা দেখলে খুব অন্যায় হয়ে যায়? কী ভাবেন নিজেকে? 

খুব ‘নরম-সরম’ মানুষ ভেবে মেয়েরা আপনার প্রেমে পড়ে যাবে? 

মেয়েরা এত বেয়াক্কেল না, বুঝছেন? আপনার মতো হাদারাম ছেলের প্রেমে কোনো মেয়ে পড়বে না।

 এমনিতে তো খুব ভাব নিয়ে থাকেন। 

আপনার ক্লাসমেট জিনিয়া আপুর সঙ্গে এত হেসে কথা বলা কেন? 

আর কোনো দিন যদি দেখি ওই মেয়ের সঙ্গে হাসাহাসি করতে, 

তাহলে মুখে চুলের কাঁটা গেঁথে দেব। সেদিন বুঝবেন হাসি কোথা দিয়ে কেমন করে বের হয়!


আমি কিন্তু খারাপ মেয়ে না। দেখতে ভালোই। 

নাইবা হলাম জিনিয়া আপুর মতো এত ফরসা, তাতে কী; আমি তো আর লম্বামুখো না। 

আমার চোখ দুটোও সুন্দর, অনেক ছেলেই বলেছে। 

আমার চুলের কারণে আমার রুমমেটরা তো আমাকে বনলতা সেন বলেই ডাকে। 

একবার একটু আশপাশে তাকালে কী হয়? আমার চোখে চোখ পড়লে বুঝি চোখ উঠবে?

 সেদিন তো শেষ রাতে ঠিকই আমার স্বপ্নে আসলেন! ছি! ছি! কী লজ্জা!! 

কান লাল হয়ে যাচ্ছে এখনো। আপনি কি জানেন, পরের দুই দিন আমি আয়নায় তাকাতে পারিনি!

 আপনার দিকেও তাকাতে পারিনি।


পরশু সকালে ডিপার্টমেন্টের সামনে এত মন খারাপ করে দাঁড়িয়েছিলেন কেন? 

আপনাকে এত মন খারাপ দেখলে অন্য কারও বুঝি খারাপ লাগে না? 

জানেন, আপনার হাসিমুখ দেখলে বুকের ভেতরের প্রজাপতিটা উড়ে উড়ে রং ছড়ায়, 

জীবনটাই রঙিন হয়ে ওঠে। আমি কিন্তু ঠিকই ওই দিনের আপনার মন খারাপের

 কারণ বের করেছি। একটা পরীক্ষায় একটু কম নম্বর পেলে এতটা মন খারাপ করতে হয়! 

আপনি এত বাচ্চা কেন! বড় হবেন না? ক্লাস শেষে বারান্দায় ওভাবে আর দাঁড়াবেন না। 

জুনিয়র মেয়েরা নোট চাইলে বুঝি সঙ্গে সঙ্গে গলে যেতে হয়? 

কোনো দিন নোট হাতে বারান্দায় দেখলে সব নোট পুড়িয়ে দেব। 

খোঁচা খোঁচা দাড়িতে কিন্তু আপনাকে বেশ লাগে! এত ঘন ঘন শেভ করার কী আছে! 

রাত জাগবেন না, চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। নীল রঙের জিনস 

প্যান্টটা আর পরবেন না, পায়ের নিচের অংশে ছিঁড়ে সুতা বেরিয়ে গেছে। 

এখন থেকে টি–শার্ট পরবেন। মাস্টার্স তো প্রায় শেষের দিকে, এবার চাকরির জন্য চেষ্টা করুন। 

আমাকে কিন্তু অনার্স পড়া শেষ হলেই বিয়ে দিয়ে দেবে। 

তখন সারা জীবন কে সামলাবে আপনার মতো হাদারামকে? সংসারজীবন নাকি খুব কঠিন। 

আমি অন্য কারও ওপর ভরসা করে তো আপনাকে ছেড়ে দিতে পারি না। 

আপনার চাকরি পাওয়াটা খুব জরুরি। আমি জানি, আমাকে ছাড়া আপনার চলবে না।


ইতি
বনলতা সেন।
পুনশ্চ: চিঠিটা পাওয়ার পর এই বোকা মেয়েটাকে খুঁজে নিয়েন। 

এই বোকা মেয়েটা আপনার কাঁধে মাথা রেখে শরতের চাঁদ দেখতে চায়। 

আপনি খুঁজে না নিলে কোনো দিনও আর আড়াল থেকে দেখব না আপনাকে। 

ভালোবাসি বলে কি সব দায় শুধুই আমার?

দুই বছর আগে মল চত্বরে সন্ধ্যায় হাঁটতে গিয়ে ঠিকানাবিহীন একটা নীল খামসমেত 
এই চিঠিটা কুড়িয়ে পাই। জানি না চিঠিটা তার প্রাপকের কাছে পৌঁছেছিল কি না। 
জানি না ছেলেটা বোকা মেয়েটাকে খুঁজে পেয়েছিল কি না। 
পৃথিবীতে কত ঘটনাই তো অজানা থেকে যায়!
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url