Breaking News

এ ভালবাসার কি নাম দেব | পর্ব - ০১


(সারা বাড়ি ঢাক ঢোল, সাউন্ড বক্স, লোকের গমাগম, ছেলে পুলে দৌড়াদৌড়ি করছে
এখানে ওখানে,বাবা খুবই ব্যাস্ত কাকাদের সাথে কি সব হিসাব নিকাশ আর এখানে
একবার ওখানে একবার,মা তো আতির্থ্যের জন্য স্বজনদের নিয়ে এখানে ওকে বসতে
দিচ্ছেন ওখানে আবার তাকে ডাকছে,চাচাতো ভাই বোনেরা তো আমাকে নিয়ে মজার আসর
বসিয়েছে, এমন সব প্রশ্ন আর উপদেশ দিচ্ছে যে হাসি চেপে রাখা আর দ্বিতীয়
বিশ্ব যুদ্ধ করার মত ঠোটে ঠোট কামড়িয়ে ধরে রাখছি, তাও মাঝে মাঝে পারছি না
হেসে ফেলতে হচ্ছে!! বুঝতেই পারছেন কি অবস্থায় আছি আমি!!!
ও ও ও মাফ করবেন এত কিছু বলছি আগা গোড়া কিছুই বুঝেন নি বুঝি???
আরে মশায় আমার বিয়ে,,,, হা আজ আমার বিয়ে হচ্ছে সবাই বাড়িটা মাথায় করে
রেখেছে আর আমি লজ্জাবতী মেয়ের মত বসে বসে বাসরে বসে সব দেখছি,,, সবাই
ব্যাস্ত আর কি সব অদ্ভুত কাজ করছে সবাই,,, এই একবার চেয়ার টেবিল সেট করছে
আবার ওই সরাচ্ছে,,,এই পেয়াজ কাটছে ওই সেগুলো রান্নার ঘরে নিয়ে যাচ্ছে,,,এই
মাংস কুটছে তো ওই মাছ,,,এই রান্না করছে তো ওই মশলা মেপে দিচ্ছে,,, এই আবার
বাইরে থেকে পরামর্শ দিচ্ছে কি কখন দিতে হবে আর কতটা দিতে হবে,,, তো ওই বলছে
হুম দিয়েছি আর লাগবে না কিংবা ওহহহহ ভুলে গেছি,,,
পিচ্চি রা কি আর
বলব- এক একজনে বালতি লোড করে রেখেছে রঙ্গের নিজেরা তো মাখা মাখি করছেই সাথে
সবাই কে যাকে যাকে সুযোগ পাচ্ছে তাকে মারছে,,, কেউ চিল্লাচ্ছে তো কেউ
চুপ!!!
আর আমার ছোটো ভাই বোনেরা তো বাইরে থেকে আসা সুন্দরীদের সাথে
চোখা চোখি করছে!!! তা দেখে আরোও মুখের হাসি ধরে রাখতে পারছি না!!!
এমনিতেই আমাকে নিয়ে হাসা হাসি করছে,, তারপর হাটুর বয়সি ওদের কাজ কার্বার
দেখে আরোও লজ্জা লাগছে,,, আর হবে না কেনন??? আমার যে বিয়ে হচ্ছে তা মনে
হচ্ছে না মনে হচ্ছে ওরাই বুঝি মেয়ে দেখতে এসেছে এখনই ওরাই বস!!! আর একেক
জনের সাজ সজ্জা দেখে কি আর বলব!!! বিয়ে বুঝি ওরাই করতে এসেছে!!!
যে
কাকির ওজন ৯০+ সেও বেশ কোমর দুলিয়ে ড্যান্স দিচ্ছে,,,বুড়া বুড়ি সবাই ফোকলা
দাতে হাসতেছে মাঝে মাঝে যৌবনেও ফিরে যাচ্ছে সে কি কান্ড!!! যে চাচি অলস আর
হিসুটে সে আজ কর্মঠ ও সাহায্যকারী হয়ে গেছে, যে রান্না ঘরে কোনো দিন ঢুকে
নি সে আজ কনুই ঠেকিয়ে কড়াই, বড় বড় হাড়ি তে চামচ দিয়ে নাড়াচ্ছে,কেউ বা তা
নিয়ে ফটু তুলছে!!! মনে হয়য় ক্যামেরার সামনে নিজেকে একদিনের জন্য কর্মঠ আর
কর্তব্যপরায়ণতা দেখাচ্ছে ক্যামেরায় তার ছবি উঠছে ভাবা যায়!!!,
সারা
বাড়ির এমন এক পরিবারের মত হাতে হাতে,কাজে কাজে,কাধে কাধে,ভাব আর একাত্মা
দেখে খুবই ভাল লাগছিল আমার, যেন জান্নাতে সবাই এমন আনন্দ করছি,,, কেউ
হিংসা করছে না কেউ আমতা আমতা করছে না,,, হাসা হাসি,,, একে অপরকে সাহায্য
করছে যে যত পারছে,,,
আমি শুধু দুচোখ ভরে দেখছি সবাইকে চোখের সামনে কি হট্টগোল হচ্ছে সব আমার জন্য হা আমিই তো মূল কারণ তাদের আজ এই মহা মিলনের!!!
বেশ ধুমধাম বাসর গেল,,, সকালে আবার সবাই প্রস্তুত মেয়ের বাড়ি মানে আমার বউয়ের বাড়ি যাবে বউকে আনতে!!! সবাই তৈরী,,,
কাল সারা রাত এমনিতেই কাঠের পুতুলের মত বসে থাকতে হয়েছে আমায় আর সবাই যে
যার মত মজা করছে আমাকে নিয়ে,,, মনে হয় কোনো দিনই ওরা বিয়ে বাড়ি তে যায়
নি!!! খুবই ক্লান্ত আমি তবুও হাসি মুখে কথা বলতে হচ্চে আর নিজেকে স্বাভাবিক
দেখাতে হচ্ছে!!!
যা হোক পৌছোলাম বিয়ে বাড়িতে সবাই ভালভাবেই!!! বেশ
সাজানো আর গোছানো আয়োজন ছিল,রান্নাটাও ভালো হয়েছে,সবাই তৃপ্ত হলো আয়োজন
ভালো দেখে,,,
এবার মহানবীর সুন্নত মোতাবেক মসজিদে আমাদের বসানো হলো
পাশাপাশি আর দেন মোহর আর মোহরানার, কাবিন নামা সব সব সারা হলো আর শেষে
অমূল্য আর আসল তিন পবিত্র আর ইন্টারেস্টিং মজার বাক্য উচ্চারিত করানো হলো
মুখ থেকে,,, হুম তা হল—
কাজি সাব ফোকলা দাতে উচ্চারিত করছিলেন—
অমুক গ্রামের জনাব অমুকের একমাত্র মেয়ে মোছাম্মাদ অমুকেরর সাথে জনাব
অমুকের একমাত্র ছেলে মোহাম্মাদ অমুকের সহিত একলক্ষ ১টাকা দেন মোহরে
সজ্ঞানে সেচ্ছায়, নিজ ত্রী বলে মেনে নিয়ে বলুন “কবুল”
– আমি কবুল!!!
সবাই আলহামদুলি্লাহ পড়ে উঠলো!!!
আবার কাজি সাব বললেন- (
না মশাই এতবার নিজের বিয়ের কবুল পাঠ পড়ে বলা যায়!!! লজ্জা করে না বুঝি!!!)
যা হোক এটা জেনে রাখুন যে মোট তিনবার পড়ানো হলো আমাকে আর তিন বারই সবাই পড়ে উঠলো–
আলহামদুলিল্লাহ্!!!
এবার ওর দিকে সবাই তাকিয়ে পড়ে রইলো সবাই –
কারণ এবার ওকে পড়ানো হবে ওই তিন ইন্টারেস্টিং শব্দ- “কবুল, কবুল আর কবুল”।
.
কাজি সাব-
.
অমুক গ্রামের জনাব অমুকের একমাত্র পুত্র মোহাম্মাদ অমুকেরর সাথে জনাব
অমুকের একমাত্র কন্যা মোছাম্মাদ অমুক সহিত একলক্ষ ১টাকা দেন মোহরে সজ্ঞানে
সেচ্ছায়, নিজ স্বামী বলে মেনে নিয়ে বলুন “কবুল”-
.
– কোনো সাড়া নেই!!!
.
আবার কাজি সাব বললেন-
.
অমুক গ্রামের জনাব অমুকের একমাত্র পুত্র মোহাম্মাদ অমুকেরর সাথে জনাব
অমুকের একমাত্র কন্যা মোছাম্মাদ অমুক সহিত একলক্ষ ১টাকা দেন মোহরে সজ্ঞানে
সেচ্ছায়, নিজ স্বামী বলে মেনে নিয়ে বলুন “কবুল”-
.
– কোনো সাড়া নেই!!!
.
পাশে শ্বাশুড়ি মা আর চাচাতো বোনেরা ছিল মানে আমার সালিরা,,, ওরা কানে কানে
আর স্বাশুড়ি মা মৃদু কন্ঠে বলছেন কবুল বল মা, কবুল বল মা!!!
.
– কোনো সাড়া শব্দ নেই!!
.
আবার কাজি সাব পড়লেন-
.
অমুক গ্রামের জনাব অমুকের একমাত্র পুত্র মোহাম্মাদ অমুকেরর সাথে জনাব
অমুকের একমাত্র কন্যা মোছাম্মাদ অমুক সহিত একলক্ষ ১টাকা দেন মোহরে সজ্ঞানে
সেচ্ছায়, নিজ স্বামী বলে মেনে নিয়ে বলুন “কবুল”-
– না ও কিছুই বলছে
না!!! ক্ষনিকের মত মনেনে হলো পাশে যে মানুষটা বসে আছে সে মানুষ তো নাকি
সুধু চেয়ার,, এ পর্যন্ত ওকে সরাসরি ভাল করে দেখি নি আজ,,, কি রকম সাজানো
হয়েছে তাও খেয়াল করি নি,,, আর কি করে দেখব বলুন আশে পাশে এত লোকজন ওভাবে
যদি তাকাই কেউ না কেউ দেখে ফেলবে!!! আর আহম্মোক ছোট বোন মাসুমার হাতে ইয়া
বড় ক্যামেরা,, সব কিছু সে রেকর্ড করে রাখছে,,, বুঝেন তাহলে কেমন সুখে আর
খুশিতে এখন আমার পজিশন!!! তবে যে দিন মেয়ে দেখতে গিয়েছিলাম সে দিন ওই
একবার সামনা সামনি দেখে ছিলাম অ্যারেন্জমেরেজ বুঝতেই পারছেন!!!

সামনে এসে ওর নাম বলল আর আমি হা করে তাকিয়ে ছিলাম!!! কি অপরুপ প্রেয়সী সে
না শুধু প্রেয়সী দিয়ে শেষ করা যাবে না একদম প্রেয়সিনী সে,,,চেহারাটা চাদের
মত যেমনটা বলে লোকেরা,,, চোখ দুটো কাজলের মত কাল, টারা টারা,ঠোট কি আর
বলবলব!!! হাসি দিলে হাজার খানা যুবক টাসকি খেয়ে পড় যাবে,,, কিন্তু সে দিন ও
খুব একটা হাসে নি, তবুও বোঝা যায় কি তার ঠোটের রক্তিমাতিমা!!!মাথার
কেশরাশি কোমর পর্যন্ত,,,
উচ্চতা আর ওজন মোতাবেক ঝাঝকাস আর কিছু বলা
দরকার আছে বলে মনে করি না!!! মব মিলিয়ে নিজেকে কালা মানিকের ধলা বউ মার্কা
মনে হচ্ছিল নিজেকে,,,যদিও আমিও কম কিসে তার প্রমাণ আজ ওর সাথে আমার বিয়ে,,,
নিশ্চয় আমাকে তার পছন্দ হয়েছে না হলে কেন সে বিয়ের পিড়িতে বসবে???
পাশে নিজের বউ তাও মুখ ফিরিয়ে তাকাতে পারছি না!!!
কি কষ্ট!!! কি কষ্ট!!!
যা হোক— মেয়ে যে ওই ইন্টারেস্টিং শব্দ দুটো বলছে না!!!
সবাই বলা বলি করতে লাগলো লজ্জা পাচ্ছে মনে হয়, আবার কেউ কেউ বলতে লাগলো
সময় চলে যাচ্ছে আর মেয়ের লজ্জা কাটে না!!! ইত্যাদি ইত্যাদি!!!
অবশেষে প্রায় আধা ঘন্টা পর তৃতীয় শব্দ কবুল শোনা গেল!!! তাও আমি শুনতে পেলাম না ভাল মতো,,,
শুনি আর না শুনি সবাই যখন কবুল পড়ল তখন বোঝা গেল মেয়েটার সাথে আমার বিয়ে সম্পন্ন হলো!!!
লিখিত স্টেম্পে সাইন করলাম দু জনে, আর ওর স্বাক্ষর দেখলাম একদম কম্পিউটার্স কপি হাতের লেখা উফফফফফ এ দেখি চায়ের দামে শরবত পাচ্ছি!!!
অবশেষে শালিদের আর শালাদের প্যারা মুক্ত হলাম সাড়ে ৫ হাজার টাকা দিয়ে!!! বুঝেন নাই কি প্যারা???
আরে ভাই আমার মাথার শাহী টুপি আর রুমালটা তত ক্ষণ ওদের দখলে চলে গিয়েছিল যখন ও ৩০ ঘন্টা লাগিয়েছিল ৩ মিনিটের শব্দ উচ্চারণ করতে!!!!
.
সব শেষে,,, মাইক্রো চেপে বসলাম আমার পরিবার আর ও ”
.
তবে এতটাও সহজ ছিল না কান্না কাটি, আবদার, অনুরোধ, দোয়া আক্ষেপ,আর মন
কারাপ করে সবার থেকে বিদাই নিল ও যেমনটা আমার বোনের সাথে হয়ে ছিল!!! খুব
কেদেছিলাম ওর জন্য যে দিন সে আমাদের ছেড়ে গিয়েছিল!!!
বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে গেল—
আমি ওঠানে সবার সাথে ছিলাম ও দিকে বাসর ঘরে বউকে রেখে ফাজিল আমার ফহিন্ন বইন বলল—
– ভাইয়া!!
– কি???
– ভাবি ডাকে তোমাকে, তাড়াতারি যেতে বলল!!!
বাড়ি ভর্তি লোক জন ছোট ছেলে পুলে, মাঝারি চাচাতো ভাই বোন বন্ধু বান্ধব ,বয়োজেঠ্য মা বাবা, চাচা চাচি, খালা খালু, সবাই ছিল।
ফাজিল আর সময় ক্ষণ পেল না ইয়ার্কি করার!!!
বাড়ি সুদ্ধ আমি সার্কাসের সং হয়ে গেলাম!!!
মনে মনে বললাম, ফহিন্নী দেইখ্খা নিমু তোরে মাছি!! ! (আমি দিছি নামটা মাসুমা থেকে মাছি)
ঘরে প্রবেশ করে আমি লাগিয়ে দিলাম দরজাটা,,,
কোথায় থেকে কেমন করে কি ভাবে যেযে শুরু করব সাত পাঁচ ভেবে পাচ্ছিলাম না!!!
.
আসল কথা নিজ কে লজ্জা লাগছিল না শরম ওটা ভেবে নেন আপনেরা,,,
সব কথা কি মুখে বলা যায়!!!
অবশেষে খাটে দেখি বউকে বসা আর মুখটা হালকা নিচে নামানো!!!
ওই টুকুতেই দেখলাম ওকে খুবই সুন্দরী আর লাবণ্য ময়ী রুপের ডিম্বা দেখাচ্ছে!!!
.
লজ্জা টাকে লাথি মেরে যেই যাব তার কাছে—
.
আমাকে স্পর্শ করবেন না আমি আপনাকে আমার ভালবাসা দিতে পারব না।
আপনার ইচ্ছা পূরণ করতে পারব না,,,।
.
চলবে……..

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com