Breaking News

বস যখন বর |পর্ব-০৯

ইতি- ওনি ফেরেনি??

ড্রাইভার- কিছু ভাবছেন বউমণি??

ইতি- নাহ কিছু না। অফিসে চলেন। অফিসে গিয়ে যেনো অস্থিরতাটা আরো বেড়ে গেলো। কারণ ওনার কেবিনটা ফাকা। ওনি নেই। তাহলে কি অফিসেও আসেন নি??? গেলো কোথায়। এতো ভাবছি কেনো যেখানে খুশি যাক আমার কি?? হুহ….খারাপ একটা মানুষ মরে যাক আমার কি??? খাটাশ উফফ….. আমি চাই না ওনার কথা ভাবতে বলেই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলাম।

রাফসান- কার কথা ভাবতে চাও না??

ইতি- হুমম….হায় খোদা শুনে ফেলেনি তো। কিসব বলছো??

রাফসান- বলছো তো তুমি। কার কথা ভাবতে চাও না।

ইতি- কি আবল তাবল বলছো। আমি আবার কার কথা বললাম।

রাফসান- সেটাই তো জানতে চাচ্ছি।

ইতি- তোমার মাথা গেছে চলো ক্যান্টিনে যাই চা খেয়ে আসি তোমার মাথা ঠিক হয়ে যাবে।

রাফসান- মাথা আমার না তোমার গেছে। চলো।

ইতি- ক্যান্টিনে গিয়েও আমার চোখ যেনো ওনাকে খুজছে। কিন্তু ওনাকে তো কোথাও দেখতে পারছি না। উফফফ…..কেন জ্বালায় ওনি আমাকে এতো। ভেবে কান্না আসছে ইতির।


ইতি- অনেক্ষণ নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখলাম।

রিমি- মেম আসবো??

ইতি- এসো। রিমি গতকালকের জন্য
I am sorry। তুমি কিছু মনে করো না।

রিমি- না না মেম কি বলেন। আমি কিছু মনে করি নি। রিমি জিঙ্গাসু চোখে ইতির দিকে তাকিয়ে রইল।

ইতি- হুম। কিছু বলবা।

রিমি- মেম আপনি স্যারের কোনো নিউজ জানেন??

ইতি- কোন স্যার??

রিমি- MD Sir

ইতি- ঘড়ির দিকে তাকালাম ৪টা বাজে। আবার রিমির দিকে তাকালাম। ওনি এখনো আসেন নি??

রিমি- অসহারের মত জবাব দিলো। নাহ মেম। কিছু পেপারে স্যারের সই দরকার। কি করবো বুঝতে পারছি না।

ইতি- তাহলে ফোন দাও।

রিমি- দিয়েছি Out of reach Ma’am

ইতি- হুম,,,,,তুমি যাও আমি দেখছি। বলে তো দিলাম আমি দেখবো কিন্তু এখন কি করি। মাথায় কিছু আসছে না। সাত পাচ ভেবে ওনাকে ফোন দিলাম।

আমি যে নম্বর টি তে ফোন করেছেন তা এই মুহূর্তে বন্ধ আছে। অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন ধন্যবাদ।

ইতি- উফফ….ফোন টাও আউট ওফ রিচ এখন কি হবে??? দূর আসলে আসুক না আসলে নাই। চিন্তাও হচ্ছে বিরক্তও লাগছে। আর ভাবতে পারছি না।


অফিস টাইমও শেষ।

ইতি- বেরতেই দেখি ড্রাইভার দাড়িয়ে আছে। গাড়িতে বসে পরলাম।

রাফসান- এতো ডাকলাম শুনলো না মেয়েটা। কিন্তু কার গাড়ি তে যাচ্ছে। সিকিউরিটিকে জিঙ্গেস করে দেখি। সিকিউরিটি।

সিকিউরিটি- জি স্যার

রাফসান- ইতি মেম কার গাড়িতে গেলেন। জানেন গাড়িটা কার??

সিকিউরিটি- জি MD Sir এর গাড়ি।

রাফসান- MD Sir??

সিকিউরিটি- জি স্যার সকালে তো এই গাড়িতেই আসতে দেখেছি।

রাফসান- MD Sir এর গাড়ি করে ইতি যাওয়া আসা করে কাহিনিটা ঠিক মিলছে না।

ইতি- আবার হাজার চিন্তায় পরে গেলাম। কাকে জিঙ্গেস করবো।

ড্রাইভার- বউমণি স্যার বাসায় যাবেন না?? গতকাল যেভাবে রেগে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলেন আমাকে শুধু বলে গেলেন আপনাকে যেন একা বাহিরে না ছাড়ি।

ইতি- জবাব দিতে পারলাম না। ওই সময়ও আমার কথা ভেবেছেন। অনেক আশা নিয়ে বাসায় ডুকলাম হয়ত এখন ওনাকে বাসায় পাবো। কিন্তু না ওনি নেই। সন্ধ্যা শেষ হয়ে রাত হয়ে গেলো ওনার আসার কোন খবর নেই। ফোনের পর ফোন দিয়েই যাচ্ছি কোন খবর নেই। এখন যে পাগল পাগল লাগছে নিজেকে। কি করি। কিছুই ভেবে পাচ্ছি। এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো?? যে মানুষটা বিনা কারণে এতো কষ্ট দেয় তা জন্য কেনো আমার বুক জ্বলে?? কেনো??? উফফ….হঠ্যাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো রোদ এসেছে বলেই দৌড় দিলাম।

Delivery boy- Mr.Rod Chowdhury এর নামে পারসেল আছে।

ইতি- ওনি বাসায় নেই আমি ওনার Wife আমাকে দিন। ওটা নিয়ে রেখে দিলাম। কান্না করে দিলাম। ওনি কোথায় আমার যে আর সহ্য হচ্ছে না। আবার ফোন দিলাম। খাটের পাশে রাখা ওনার ছবিটা নিয়ে ফ্লোরে বসে পরলাম। ছবিটা বুকে নিয়ে হাউমাউ করে কান্না করলাম। বুকটা ফেটে যাচ্ছে আমার ওনাকে দেখার জন্য। ওভাবেই বসে বসে ঘুমিয়ে পরলাম কান্না করতে করতে।

সকাল-

ইতি- ঘুম ভাংতেই আবার ওনাকে খুজতে শুরু করলাম। নাহ ওনি আসেন নি। তাহলে কি আমি ওনাকে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেললাম। ভাবতেই বুকটা খা খা করছে। মনে হচ্ছে এখনি যদি ওনি সামনে আসেন ওনাকে বুকের মাঝে লুকিয়ে নিবো। অনেক্ষণ অপেক্ষা করে অফিসের জন্য রেডি হয়ে নিলাম। ওনি নেই আমিও যদি না যাই কিভাবে হবে। যাবার সময় সিকিউরিটিকে বলে গেলাম ওনি আসলে যেনো সাথে সাথে আমাকে ফোন করে জানায়।

অফিসে


ইতি- আমাকে আসতে দেখে রাফসান প্রায় দৌড়ে এলো আমার কাছে।

রাফসান- গাড়িটা কার???

ইতি- চোখ কপালে উঠে গেলো আমার। কিসের গাড়ি??

রাফসান- যে গাড়িটা দিয়ে তুমি মাত্র এসেছো।

ইতি- কিসের গাড়ি??? রাফসান আর কোন কথা বলল না। আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে সবার সামনে দিয়ে। আহ রাফসান লাগছে। প্লিজ…. ও কোন জবাব দিলো না। টানতে টানতে আমাকে টেরেসে নিয়ে গেলো। আমাকে Almost সামনের দিকে ছুড়ে মারলো। আমি ওর ব্যবহারে অনেক অবাক হয়ে গেলাম।

ইতি- কি হচ্ছে রাফসান??? আমার হাতে লাগছে। এ ভাবে সবার সামনে দিয়ে নিয়ে আসার মানেটা কি??

রাফসান- মানে কি তুমি বুঝ না?? আজ অনেকগুলো দিন ধরে দেখছি তুমি অন্য মনস্ক হয়ে আছো। কখনও কাঁদছো আবার কখনও কষ্ট পাচ্ছো বাট কেনো??? কেনো কষ্ট পাচ্ছো??? কে দিচ্ছে তোমাকে এতো কষ্ট??? কারো কোন কথায় এতো কষ্ট পাওয়ার মানুষ তুমি না। অবশ্যই মানুষটা তোমার লাইফে অনেক Important তা না হলে তুমি এমন আচরণ করতে না।

ইতি- আমি রাফসানের কথা শুনে থর থর করে কাঁপছি। এতোক্ষণ অনেক চেষ্টা করেছি নিজে ধরে রাখার কিন্তু

রাফসান- MD Sir এর সাথে তোমার কি সর্ম্পক???
কেনো ওনার গাড়ি তোমাকে দিয়ে যায় নিয়ে যায়???
Why???
অফিসের সবাই তোমাকে নিয়ে নানারকম মন্তব্য করছে।
তোমার আর স্যারকে নিয়ে।
কেনো???
Damn answer me…..??

ইতি- রাফসান অনেক রেগে গেছে। ওনার কথা বলায় আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। কেঁদেই দিলাম।

রাফসান- তার উপর আজ তিন দিন ওনি নেই। কোথায় গেছেন ওনি ইতি??? সবাই বলে তুমি জানো। কেনো বলে??? তুমি কে হও ওনার যে তুমি জানবে??? বলো??

ইতি- আমি কেঁদেই দিলাম। কাঁদতে কাঁদতে বসে পরলাম। আমি জানি না ওনি কোথায় প্লিজ ওনাকে এনে দাও…..???

রাফসান- ইতির কথা শুনে রিতিমত ধাক্কা খেলাম। কি হয়েছে ইতি।

ইতি- আমার ভুল হয়ে গেছে আমি আর কখনও এমন করবো না। শুধু একবার ওকে ওনে দাও প্লিজ একবার???

রাফসান- কাকে এনে দিবো???

ইতি- ??…ওনি এতোটা কষ্ট পাবে আমি বুঝতে পারিনি। আমি ওনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না রাফসান আমার রোদকে চাই প্লিজ কেউ ওনায় এনে দাও প্লিজ???

রাফসান- রোদ স্যার।?????? এই ইতি ইতি তাকাও আমার দিকে তাকাও বলছি। ঠান্ডা হও প্লিজ। ইতি

ইতি- আমার সত্যিই ভুল হয়ে গেছে আমি আর কখনও স্ত্রীর অধিকার ফলাতে যাবো না। ??? এতো টাই ভেংগে পরেছিলাম যে আর আটকে রাখতে পারলাম না সব বলে দিলাম।

রাফসান- স্ত্রী??????? ইতি শান্ত হও প্লিজ শুনু আমার কথা।

ইতি- অনেক কষ্টে শান্ত হলাম। তাও বুক ফেটে কান্না আসছে।

রাফসান- তোমরা বিয়ে করেছো??

ইতি- সবটা তো বলেই দিয়েছি তাই আর বাকিটা লুকালাম না। বলে দিলাম সব কিছু কিভাবে হলো আমাদের বিয়ে আর কেনো হলো।

রাফসান- ইতি তাকাও তো আমার দিকে।

ইতি- রাফসানের দিকে তাকালাম। ও আমার হাতটা ধরল।

রাফসান- ওর হাতটা ধরলাম। প্লিজ এখন যা জিঙ্গেস করবো তার সত্যি সত্যি জবাব দিবে। ভালোবাসো তাকে??

ইতি- কিছুক্ষণ অসহায়ের মত তাকিয়ে রইলাম।

রাফসান- ভালোবাসো তাকে??

ইতি- ভালোবাসি হ্যাঁ নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসি। হ্যাঁ রাফসান ভালোবাসি আমি আমার স্বামীকে অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি।

রাফসান- তো এভাবে ভেংগে পরলে চলবে খুজে বের করতে হবে না তোমার ভালোবাসার মানুষটাকে??

ইতি- হুম

রাফসান- এবার সামনে পেলেই বলে দিবে তাকে কতটা ভালোবাসো।

ইতি- প্লিজ একবার খুজে দাও। ওকে সারাজীবন বুকে আগলে রাখবো প্লিজ

রাফসান- পাগলী একটা চলো আর কেঁদো না।

ইতি- চলে আসছিলাম আবার দাড়িয়ে গেলাম রাফসান।

রাফসান- বলো

ইতি- আমাদের কথা কাউকে বলো না প্লিজ।

রাফসান- ওর মাথায় হাত দিয়ে চুল নেড়ে বললাম পাগলী তুমি না বললেও আমি কাউকে বলতাম না বলে একটা হাসি দিলাম।

ইতি- আমরা নিচে নেমে এলাম। আমাদের দেখে রিমি দৌড়ে এলো।

রিমি- হাপাতে হাপাতে….আমি আপনাদের সারা অফিসে খুজছি আর আপনারা এখানে।

রাফসান- কেনো??? কি হয়েছে???

রিমি- আপনাদের মিটিং এর সময় হয়ে গেছে আর ওদিকে ক্লাইনটরাও চলে এসেছে।

ইতি- ওহ সিট এই ডিলটা আমাদের কোম্পানীর জন্য অনেক Important রাফসান ডিলটা আমার চাই ই চাই। বলেই দিলাম দৌড়।



মিটিং রুমে-

ইতি- I am extremely Sorry Gentle man’s to keep you guys waiting. Lets start the meeting….
আমি মিটিং শুরু করে দিলাম কিছুক্ষণ পরেই একটা ফোন এলো। তাড়াহুড়ো ফোন সাইলেন্ট করতে ভুলে গেছি।
Sorry gentle man’s.
ফোনটা সাইলেন্ট করে দিলাম। কিন্তু ফোন আসতেই থাকলো। বার বার ফোন আছে দেখে আমার ভিতরে কেমন যেনো করে উঠলো। হঠ্যাৎ রোদের কথা মনে পরে গেলো।
Excuse me gentle man’s.
আমি ফোন রিসিভ করলাম।
হ্যালো কে বলছেন??

ওপাশে- আপনি কি ইতি বলছে??

ইতি- জি। আপনি কে??

ফোনে যা বলল শুনে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। রাফসান আমাকে লক্ষ করলো। আমি ফোন রেখেই দৌড়ে বেরিয়ে গেলাম। ড্রাইভার যলদি চলো।

ড্রাইভার- বউমণি কি হয়েছে??

ইতি- কিছুই বললাম না শুধু যত দ্রুত সম্ভব গাড়ি চালাতে বললাম। যলদি পৌছে গেলাম। লিফট টাও উপরে আর অপেক্ষা না করে সিড়ি দিয়েই ৭ তলায় উঠে গেলাম। আর কান্না আটকে রাখতে পারলাম না। বসে পরলাম। আমার রোদ।?? হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে????



চলবে………

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com