বাসর রাতের ভালোবাসা

বাসর রাতে মেয়েটি স্পষ্ট স্বরে জানিয়ে দেয় –
– এইযে শুনুন, আমি কিন্তু আপনাকে বিয়ে করতে চাইনি
অতণু বেশ ভদ্র, মার্জিত ছেলে। হাসিমুখে জবাব দেয় –
– হ্যা, জানতাম।
– তো বিয়ে করলেন কেন?
– এমনি
– শুনুন, রাগাবেন না! এমনি কোন কিছু হয় না,
.
অতনু কি বলবে ভেবে পায় না।
বিয়েটা ওর মায়ের ইচ্ছেতেই হয়েছে। মায়ের ইচ্ছের ওপর না বলতে পারেনি। অতনু চুপ করে থাকে।
ইতোমধ্যে মেয়েটি রেগে নাকের ডগা আর মুখ টকটকে লাল করে বসে আছে।
– কি ব্যাপার! চুপ করে আছেন কেন? সোজাসুজি বলে দিচ্ছি, আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারবো না!
আর আপনি আমাকে মোটেও স্পর্শ করবেন না!
.
অতনু হেসে মাথা নাড়ায়।
সুন্দরীদের রাগলে বেশ লাগে।
কিন্তু অতনু আর রাগাতে সাহস পায় না। এমনিতেই যা তিরিক্ষি মেজাজ করে বসে আছে!
অতনু আস্তে করে গিয়ে নিজের বালিশে মাথা রেখে শোয়।
দুজনেই ছাদের দিকে চেয়ে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি অতনুর উল্টোপাশে মুখ ফিরিয়ে শোয়।
একসময় মেয়েটি নিজ থেকেই কথা বলা শুরু করে,
এবার কন্ঠে আর কোন রাগ নেই,
কেমন যেন কান্নাভেজা কন্ঠস্বর-
– আমি একজনকে ভালোবাসতাম!
.
অতনু অবাক হয়।
ও জানত না এসব।
খানিকটা অবাক সুরে বলে,
.
– উনি কোথায় এখন?
– ও বেঁচে নেই আর!
.
বলে মেয়েটা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
অতনুরও বেশ মন খারাপ হয়।
মেয়েটাকে কি বলে যে স্বান্ত্বনা দেবে তা ভেবে পায় না ও।
অতনু চুপ করে থাকে।
আর ওদিকে মেয়েটি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে।
.
অতনু নিজের হাতটা মেয়েটির মাথার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় একটু,
কিন্তু আবার হাতটা সরিয়ে নেয় কি মনে করে ।
চুপ করে শুয়ে থাকে সে।
.
পরদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়ে অতনু।
উঠে দেখে মেয়েটি তখনো ঘুমিয়ে।
বাইরে গিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকে
ততক্ষনে আকাশ বেশ ফর্সা হয়ে উঠেছে।
কিন্তু মেয়েটি তখনও ঘুমিয়ে।
মেয়েটির নাম অদিতী।
.
সকাল প্রায় নয়টা বেজে গিয়েছে তখন।
অতনু ইজি চেয়ারে বসে একটা উপন্যাস পড়ছিল।
হঠাৎ বিছানা থেকে অদিতীর গলার অস্ফুট আওয়াজ পেয়ে বিছানার দিকে তাকায়।
দেখে, মেয়েটি ঘুম থেকে উঠেছে
আর ঘোরের মাঝে কি যেন বলছে অস্ফুট স্বরে।
অতনু তাড়াতাড়ি অদিতীর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
অদিতীর লম্বা চুল মুখের উপর ছড়িয়ে আছে এলোমেলোভাবে।
অতনু হাত দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে দেয়ার সময় টের পায়,
কপালটা ভীষণ গরম অদিতীর!
অতনু আঁতকে উঠে!
ভীষণ জ্বর মেয়েটার!
.
তড়িঘড়ি করে এক বালতি জল আর মগ এনে অদিতীর মাথায় আস্তে করে জল ঢালে অতনু।
কিছুক্ষণ পর শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়।
অদিতী উঠে বসতে চাইলে ওর হাত ধরে উঠে বসতে সাহায্য করে অতনু।
তারপর , অতনু গিয়ে নিজ হাতে বানানো ব্রেকফাস্ট এনে অতনুকে খাইয়ে দিতে যায়।
মেয়েটা বলে ওঠে,
– ব্রেকফাস্ট কে বানিয়েছে?
-আমি ( অবনত মুখে )
– খাইয়ে দেয়া লাগবেনা,
এদিকে দিন, আমি খেয়ে নিচ্ছি
.
অতনু কিছু মনে করে না।
চুপ করে অদিতীর কাঁপা কাঁপা হাতে খাওয়া দেখে অবাক চোখে।
মুখ দেখে বুঝা যায়,
মেয়েটি সারারাত ঘুমায় নি।
তবে বুকে সূক্ষ্ণ অনুভূতি জাগানো মায়াবী মুখ মেয়েটার।
অতনু অপলক চোখে চেয়ে থাকে।
.
অতনু ভেবেছিল জ্বর বুঝি সেরে গিয়েছে।
কিন্তু সেদিন রাত্রে শরীর কাঁপিয়ে আবার জ্বর এলো অদিতীর।
জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকছে ও ।
তাড়াতাড়ি করে অদিতীকে হাসপাতালে নিয়ে যায় অতনু।
মেয়েটির কষ্ট দেখে বুকটা ভারী হয়ে আসছে ওর।
হাসপাতালে নেয়ার পর ,
ডাক্তারের দেয়া ওষুধ খাওয়ানোর পর জ্বর কিছুটা কমে অদিতীর।
কিন্তু চোখ দুটো খুলতেও যেন ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ওর।
.
অতনু নিজ হাতে রাতের খাবার রান্না করে আনে অদিতীর জন্য।
মেয়েটি তখনো নিজ থেকে উঠে বসতে পারেনি।
অতনু ওকে উঠে বসায়।
অদিতীর মুখ দেখে ভীষণ মায়া হছে ওর। চেহারাটা কেমন রোগা রোগা হয়ে গিয়েছে।
অতনু নিজ থেকেই অদিতীর দিকে খাবার এগিয়ে দেয় নিজ হাতে।
অদিতী দুর্বল স্বরে বলে,
– আমাকে দিন, আমি খেয়ে নিচ্ছি
এবার অতনুর মন খারাপ হয় ভীষণ। অবনত চোখে অদিতীর দিকে খাবারের প্লেট এগিয়ে দেয়।
অল্প করে খেয়ে অদিতী আবার শুয়ে পড়ে।
ঘুমানোর আগে অতনু কে বলে,
– আপনিও শুয়ে পড়ুন
.
অতনু হেসে মাথা নাড়ায়।
অদিতী পাশ ফিরে শোয়।
ঘরের লাইট বন্ধ করে অতনু অদিতীর পাশে বসে থাকে।
জানালার ফাঁকে রাতের কলকাতা শহর দেখা যায় ওই।
আকাশভরা তারা ,নিচের রাস্তায় গাড়ির হেডলাইটগুলোর ছুটোছুটি আর অন্ধকারের মাঝে বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে থাকে অতনু।
এই যান্ত্রিক শহরে কেমন একা বোধ করছে আজ ও!
.
সারারাত ঘুমায়নি অতনু। শেষরাতের দিকে আবার প্রচন্ড জ্বর উঠে অদিতীর। অতনু তড়িঘড়ি করে এক বালতি জল এনে অদিতীর মাথায় ঢালে অল্প করে আর ভীষণ গরম কপালে হাত বুলিয়ে দেয়।
যেন অদিতীর শরীরের উত্তাপগুলো শুষে নিতে চাইছে।
তখন প্রায় ভোর হয়ে গিয়েছে।
সূর্যের আলো একটু করে ছড়াচ্ছে চারিদিকে।
অতনু অদিতীর কপালে জল ঢেলে চলেছে।
একসময় অদিতী জ্বর কমে যায় একটু একটু করে।
.
অদিতী চোখ মেলে অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে একটি অনিদ্রারত রুগ্ন মুখ ওর দিকে তাকিয়ে প্রশান্তির হাসি হাসছে। অদিতী জিজ্ঞেস করে,
– আপনি ঘুমাননি?
– ইয়ে মানে, ঘুম আসছিলো না , তাই জেগে ছিলাম
– ও
– খুব ক্ষিদে লেগেছে তো আপনার, হু?
– হ্যা
– একটু অপেক্ষা করুন
.
অতনুর দিকে চেয়ে অদিতী অবাক হয় ভীষণ ।
.
অতনু তাড়াতাড়ি করে আনাড়ি হাতে বানানো ব্রেকফাস্ট নিয়ে এগিয়ে যায় অদিতীর দিকে।
হাতে খাবার তুলে নিয়েও কি মনে করে আবার রেখে দেয় প্লেটে।
তারপর, প্লেটটা এগিয়ে দেয় অদিতীর দিকে অবনত চোখে।
অদিতী প্লেটটা হাতে নিয়ে অভিমানের সুরে বলে,
– খাইয়ে দেবেন না?
অবাক চোখে অদিতী দিকে তাকায় অতনু!
দেখে, মিটিমিটি হাসছে মেয়েটা।
অদিতী আবার জিজ্ঞেস করে,
– কি, খাইয়ে দেবেন না আমাকে?
.অতনুর মুখে তখন বিশ্বজয়ের হাসি।
.
সকালের সোনালী রোদ জানালার ফাঁক গলে তখন আছড়ে পড়ছে দুজনের গায়ে।
হাসিতে উদ্ভাসিত চারিদিক।
ভোরের আলো সাক্ষী হয়ে রইলো
একটি নতুন সূর্যোদয়ের আর একজোড়া প্রাণের ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ইতিহাসে ,,,,,!
ভালো থাকুক ভালোবাসাগুলো,,,,,!!
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url