Breaking News

গল্পঃ - খলনায়ক | লেখকঃ - নিরব ইসলাম

বাস এর জানালার কাঁচে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদছে লুবনা।
সে পালিয়ে এসেছে..নিজ বাড়ি থেকে নয়..শ্বশুর বাড়ি থেকে..
মাত্র ৫দিন আগেই তার বিয়ে হয়েছিল।
পারিবারিক ভাবেই বিয়েটা হয়েছিল তবে কেন যেন সবকিছু শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে গেল।
মামার সংসারে থাকতো লুবনা তার মা আর ছোট ভাইয়ের সাথে।বাবা মারা যাবার পর ই মামা তার কাছে নিয়ে যায় তাদের।
বাবা যখন জীবিত ছিল সবকিছু ভালোই কাটছিল।
বড় মেয়ে হিসেবে বাবার খুব আদরের ছিল লুবনা।
হঠাৎ করেই বাবার ক্যান্সার ধরা পরায় সবকিছু যেন তছনছ হয়ে যাচ্ছিল।
ক্যান্সার শুধু বাবাকেই শেষ করে দিলনা সাথে সাথে বাবার জমানো ভবিষ্যৎ ও শেষ করে দিল।
লুবনা আর লুবনার ছোট ভাই পলাশকে নিয়ে মা বড্ড অসহায় হয়ে পরেছিলেন।
লুবনার ছোট মামাই তখন তার কাছে নিয়ে গেলেন।
অনেক ইচ্ছে ছিল লুবনার পড়ালেখা করে বাবার পাশে দাড়াবে তার আগেই বাবা চলে গেল…
বড় মেয়ে তারউপর মাথার উপর অভিভাবক নেই।
যার অভিভাবক থাকেনা তার মাথার উপর হাজার অভিভাবক এর সৃষ্টি হয়।
তখন নিজের ইচ্ছে বলতে আর কিছুই থাকেনা।যে যখন যা বলে তাই মেনে নিতে হয়।
হুট করেই লুবনার মা লুবনাকে এসে বলে কাল তোকে দেখতে আসবে..
লুবনা মাকে বললো, মা বাবা মারা গেল মাত্র ৬মাস হলো,এর মাঝেই আমায় মাথার বোঝা ভাবতে শুরু করে দিলে?
মা কেঁদে দিয়ে বলে মা আমারা আর কতদিন তোর মামার উপর থাকবো?
আর বিয়ে যেহেতু করতে হবে তাহলেই আগেই করে নে।
লুবনা: অনার্সের আর ৩বছর বাকি মা।তারপর আমিও চাকরী করতাম।আর কোন চিন্তা থাকবেনা।
মা: বিয়ের উপযুক্ত বয়স তোর হয়েছে এখন আর বাহানা করিস না এই বলে মা চলে গেল।
লুবনা বুঝেছে বাবা মারা যাবার পর মা অনেকটা বদলে গেছে।
যে তাকে ঠাই দিয়েছে সে তার কথামতই চলবে।
তাই লুবনা আর অমত জানালো না বিয়েতে।
অবশ্য সে জানে তার মতামত এ কিছুই আসে যায়না।
তবে সে জানে,সে মায়ের মাথার উপর থেকে খুব বড় চিন্তা নামাতে যাচ্ছে।
লুবনার মামা-মামি তার মা কে বুঝিয়েছে এই ছেলের চেয়ে আর ভালো ছেলে পাবে না।
লুবনাকে পড়াবেও বলেছে।
জীবনের গন্তব্যপথে একজন এর নির্দেশনাই মানায়..
যখন একাধিক মানুষ নির্দেশক হয়ে যায় তখন জীবন মুখ থুবড়ে পরে।
লুবনার ও তাই হয়েছে…
হেল্পার এর ডাক শুনে লুবনা চোখ খুললো..
আফা টিকেট দেন..
লুবনা: টিকিট কাটিনি।
আমি নতুন বাজার নামবো।
হাতের আংটি খুলে দিয়ে বলে এটা রাখেন ভাই।
আমার কাছে টাকা নেই।
হেল্পার: কি বলেন আফা…৯০টাকা ভাড়া মাত্র আর আফনে আমারে আংটি দেন?
আংটি কেনার টাকা আমার কাছে নাই।
লুবনা: আংটি কিনতে হবেনা রেখে দিন।
হেল্পার: আফা আপনার টাকা কি চুরি হইছে?
লুবনা চুপ করে তাকিয়ে আছে…
মনে মনে ভাবছে আমার তিল তিল করে জমানা স্বপ্ন চুরি হয়েছে
হেল্পার: আফা আমি অতো লোভী না।আপনার টাকা আমি ই দিয়া দিমুনে।আপনি আংটি রাইখা দেন।
লুবনা ছেলেটির দিকে তাকিয়ে চোখ পানিতে ভরে গেল।
মনে মনে ভাবছে আমার ভাইটাও তো এই ছেলের বয়সি…
ওকে কি আমি আর কখনো দেখতে পাবো?
নাকি আর কখনই না??
লুবনা সিট এ হেলান দিয়ে ভাইয়ের মুখ মনে করতেই বিয়ের আগের দিনে ভাইয়ের কথা মনে পরে যায়।
যখন বিয়ের জন্য লুবনাকে পাত্র পক্ষ দেখতে এসেছিল ছোট ভাই তখন লুবনার কানের কাছে এসে বলে আপু এই লোকরে বিয়ে করিসনা।
লোকটারে দেখলেই বুঝা যায় ভালোনা।
কিন্তু লোকটা বড়লোক আছে।
লুবনা তাকিয়ে বলে কি করে বুঝলি?
পলাশ উঠে বলে হাতে দুইটা ফোন
তারউপর স্বর্নের ঘড়ি পরে এসেছে।
লুবনা রাগ করে বলে ঘড়ি স্বর্নের বুঝলি কি করে?
পলাশ উঠেই বলে মামি, মামাকে ইশারা দিয়ে দেখিয়েছে যে হাতে স্বর্নের ঘড়ি তখন শুনেছি।
লুবনা তখন শুধু দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো..
বিয়ের পর নাকি ছেলে লুবনার, মা ভাইয়ের দায়িত্ব নিবে। একথা শুনেই লুবনা বুঝেছিল মামা-মামি তার বিনিময়ে তাদের মাথার বোঝা নামাতে চায়…
হেল্পার: কি ভাবছেন আফা?
লুবনা আতকে উঠে বলে কিছুনা।আপনি অনেক ভালো ভাই।নাম কি আপনার?
হেল্পার: বসির।
আফা আপনার কপাল কেটে গেছে।আপনারে সামনে হাসপাতালে নামিয়ে দিমু?
লুবনা কপালে হাত দিয়ে দেখছে রক্ত বের হচ্ছে।
লুবনা বলে না আমায় নতুন বাজার ই নামিয়ে দিও ভাই…
গাড়ি চলতে লাগলো…
লুবনা গাড়ির জানালার বাইরে প্রকৃতির দিকে অপলকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে,কপালে যা হবার তাই হয়েছে।কপালে রক্ত বের হবার ছিল তাই হয়েছে।
তাই বাকি পথটাও কপালের উপর ছেড়ে দিলাম…
” চলবে……………..

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com