Breaking News

গল্পঃ অবহেলা

আজকে একটু দেখা করতে পারবা..??
অনেকদিন কোনো দেখা হয় নি আমাদের..??(আমি)
> ও স্যরি আজকে দেখা করতে পারছি না।
অন্যদিন দেখা হবে কেমন.? আজকে আমার
ম্যাথম্যাটিক্স-২
এসাইনম্যান্ট আছে। (নিঝুম)
>> আচ্ছা অন্যদিন নাহয় দেখা করবো।
ভালোভাবে এসাইনম্যান্ট করো।
> হুম….
.
এই বলে নিঝুম ফোনটা রেখে দিলো।
একটাবার
খোঁজ নিল না কেমন আছি..?? এরকম তো ছিলো
না। তাহলে কী আমি তাকে আজও চিনতে পারি নি।
এসব ভাবছিলাম আর টেইলর সুইফ এবং এলি গোল্ডউইং-এর গান শুনছিলাম।
.
এতোক্ষণ যার কথা বলছিলাম, ও নিঝুম।
মেঘলা  তানহা
নিঝুম। বাড়ি বাঘেরহাট। আম্মুর বান্ধাবীর মেয়ে।
সেই সূত্রে ওর সাথে পরিচয়। পরিচয় থেকে
ভালোলাগা। আর ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা।
.
আর আমি মোস্তাক আহমেদ সিনহা । যদিও অন্য
আরেকটা নাম আছে। তবে সিনহা নামেই ওর কাছে পরিচিত।
.
ওর সাথে আমার অ্যাফেয়ারটা এসএসসির পর থেকে। কিন্তু বর্তমানের নিঝুম আর অতীতের
নিঝুম সাথে মিল খুঁজে পাই না। আগে অনেক কেয়ার নিতো, অভিমানটাও আহ্লাদী সুরে ভাঙ্গাতো। কিন্তু এখন সে অনেক ব্যস্ত
হয়তো।
হয়তো তার লেখাপড়া নিয়ে । তাই হয়তো সময়
দিতে পারছে না।
যাইহোক ওর ভালোটা আমিও চাই। তাই সবকিছু
মেনে নেই। কিন্তু আমার ছোট ছোট আবদার
গুলোও কী পূরণ করতে পারা যায় না। খুব বেশী
কিছুতো চাই নি। শুধু আমাকে একটু সময় দিবে। তাও
হয়ে উঠে না তারপর ও নিঝুমকে আমি ভালোবাসি।
.
.মাগরিবের আযানের সুর ভেসে আসলো পাশের
মসজিদ থেকে। গানটা বন্ধ করে উঠে আস্তে আস্তে বাসার উদ্দ্যেশে হাঁটতে লাগলাম।
আর আনমনে ভাবতে লাগলাম ফেলে আসা দিনগুলো।
এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে এলাম। এসে ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম। একটা থ্রিডি
ডিজাইন করতে হবে। আম্মু এসে চা দিয়ে
গেলো। চা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ ফোন আসলো একটা
নাম্বার থেকে। যার কোড সংখ্যা নয়টা।
আমি  পিকআপ করতেই, বললো, আর ইউ মোস্তাক আহমেদ.??
>> ইয়ে। আই এম।
-গুড। ইউ আর সিলেক্ট ফর স্টাডি ইন অস্ট্রেলিয়া।
ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন।
>> রিয়েলী। আই এম ভেরি এক্সাইটেড।
থ্যাকংস ফর ইউর গুড নিউজ।
-গুড বাই
.
আমি খুশিতে আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম। আর বললাম ,
আম্মু আমি অস্ট্রেলিয়াতে পড়ার চান্স পেয়েছি।
আম্মু খুশিতে কেঁদে ফেললো। আমার কপালে
চুমু দিয়ে চলে গেলো বাবাকে খুশির খবরটা
জানাতে। আম্মুরা হয়তো এমনই হয়, সন্তানের
আনন্দের সংবাদ শুনে যেমন কাঁদে। তেমনি দুঃখের সংবাদ শুনে কাঁদে।
গুড নিউজ টা শুনে আব্বু ও কেঁদে দিলেন।
অজান্তে আমার চোখ থেকেও দু’ফোটা জল গড়িয়ে নিচে পড়লো। আমি এবার বেসিনে গিয়ে চোখে পানির ঝাপটা দিয়ে আসলাম।
ল্যাপটপটা বন্ধ করে ভাবলাম। নিঝুমকে তো গুডনিউজটা জানানো দরকার।
এমন সময় এসে আম্মু ডিনারের জন্যে ডাকলেন। তাই ভাবলাম খাওয়া শেষে জানাবো।
.
খাওয়া শেষ করে এসে নিঝুম কে ফোন দিলাম। রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ পিকআপ করছে না । প্রায় অনেকবার রিং-এর পর ফোন ধরলো, ধরেই বলতে লাগলো।
> এতো বার ফোন দেওয়া লাগে নাকি…??
জানোনা এই সময়ে ব্যস্ত থাকি।
.
অনেক রেগে বললো কথাগুলো। তাই আমি কিছু না বলে চুপ করে আছি…। আমার চুপ করে থাকা দেখে ও আবার বললো,
> কী হলো কথা বলছো না কেন.?? ফোন দিয়ে..।। গাধা কোথাকার। কোন ছাগলের পাল্লায় যে পড়লাম।
.
আজকে গাধা বলায় অন্য দিনের মতো ভালোবাসা, আর আদর মিশ্রিত ছিলো না। আজকে খুব
অবহেলা করে বলেছে….।। এভাবে কখনো বলে নি আমায়। আমি ওসব বাদ দিয়ে বললাম,
>> স্যরি, অসময়ে ফোন দেওয়ার জন্যে…।
(কান্ন াময় কণ্ঠে)
> এখন ঢং শুরু করেছো.?? ভনিতা না করে
সোজাসুজি বলো কেন ফোন দিয়েছে…।।
>> দুপুরে খেয়েছিলে….?(আমি)
> না। তুমি খেয়েছো.?(নিঝুম)
>> হুম।
> আমার বদলে তুমি খেয়েছো। আমার না খেলেও চলবে। (রাগ নিয়েই বললাে)
>> ওহহহ…!!! রাত্রে খেয়েছো…?
> না। আমার খাওয়া নিয়ে তোমার এতো মাথাব্যাথা কেন.??
>> তুমি তো আমার প্রিয় মানুষটা তাই কেয়ার নিতে হয় একটু..।
> যত্তোসব ঢং। আমি খাই না খাই তা আমি নিজে বোঝবো। তোমাকে বলে দিতে হবে না।
আর আমার যদি এতোই কেয়ার নেও তাহলে পড়ার সময়ে আর ফোন দিবে না ।
>> আচ্ছা। ঠিক মতো পড়ো, খাওয়া-দাওয়া করবে।
ঠিক মতো ঘুমাবে না হলে শরীর খারাপ করবে।
.
কান্না আটকিয়ে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে বললাম…।
ও ছাগল বলে রেখে দিলো।
তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে ট্যাপ ছেড়ে খুব কাঁদলাম।
কাঁদলে নাকি মনটা হালকা হয়। কিন্তু আমার মনটা
হালকা হচ্ছে না। মনে হয় কেউ আমার বুকে পা দিয়ে চাপ
দিয়ে ধরে রেখেছে । খুব কান্না করলাম রাত্রে।
কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ি।
.
সকালে উঠলাম। ব্রেকফাস্ট করে, উঠে নিজের
কাগজপত্র সব রেডি করলাম। জমা দিতে হবে । খুব
বেশী দিন নেই। কিন্তু এই সুখবরটাও নিঝুমকে
জানাতে পারলাম না। ওর কথা মনে পড়তেই চোখ
দিয়ে পানি চলে এলো। তারপরও আমি নিঝুমকে
ফোনদিয়ে ওট খোঁজ নিতাম। ওর খাওয়া- দাওয়া,
পড়া- শোনার খবর নিতাম। কিন্তু ও ওর মতোই নির্লিপ্তি থাকতো।
ওর কাছে নিজেকে খুব নিঃস্ব মনে হতো।
এখন আর রাত্রে ফোন দিই না। ও হয়তো ব্যস্ত থাকে
পড়াশোনা নিয়ে। কিন্তু রাত্রে কী
খাওয়া-দাওয়া
করেছে জানতে ইচ্ছে করতো খুব। মাঝে
মধ্যে ফোনও দিয়ে দিতাম। আর ও খুব বকতো
আমার, মনে হয় আমি ওর কাছে কোনো
গুরুত্বই
বহন করছি না।
.
.
খুব কষ্ট হতো। বুক ফেটে কান্না আসতো।
ছাদে বসে খুব কাঁদতাম। ভালোবাসার
শুরুটা আবেগ-

হলেও পরিণতিটা যে অবহেলায় হয়, আজ তা
বোঝতে পারলাম। জোরে জোরে কান্না
করলাম। হে আল্লাহ্ কী অপরাধটা ছিল
আমার যার
জন্যে আমাকে তুমি এমন করে কষ্টো
দিচ্ছো।
কষ্ট যদি দাও তবে সইবার ক্ষমতা দাও না
কেন…..??
আমি আর কষ্টগুলো বহন করতে পারছি না।
আমার তোমার কাছে নিয়ে যাও। কান্নার
শব্দগুলো অনেক দূরে মিলিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ
জানে এই কান্নারর কারণটা কী।।।।।
.
আস্তে আস্তে কান্না কমে আসলো।
নিজেকে খুব ভারি বোঝা মনে হলো নিজের
কাছে….।। খুব কষ্টে রুমে চলে এলাম। এসে না খেয়েই শুয়ে
পরেছি। ফ্রেশ-ট্রেশ কিচ্ছু হইনি। আম্মু
ডাকছিলো, বললাম ক্ষুধা নেই।
.
.
এর মধ্যে এগিয়ে আসছে ১৪ই ফেব্রুয়ারী। এই
দিনটা তাকে নিয়ে কাটাতে চাই,
যেভাবেই
হোক…..
.
ফোন দিলাম নিঝুমকে…।ওর আম্মু ধরলেন…
– হ্যালো..!!(নিঝুমের আম্মু)
>> আন্টি..?? আসসালামু ওয়ালাইকুম..।(আম
ি)
– ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো
বাবা সিনহা.?
তোমার আব্বু আম্মু কেমন আছে.??
>> আমি ভালো (মিথ্যা বললাম).। আব্বু-
আম্মুও ভালো
আছে..। আপনারা কেমন আছেন.?
– ভালো। তুমি নাকি অস্ট্রেলিয়া চান্স
পেয়েছো বিএসসি করার জন্যে.??
>> জ্বী আন্টি দোয়া করবেন।
– তাতাে অবশ্যই। ওখানে গেলে আমাদের
ভূলে যেও না।
>> কী যে বলেন আন্টি..?? আপনাদের ভূলতে
পারবো না। আন্টি নিঝুম কই..??
– নিঝুম ওর রুমে আছে….।।। ওয়েট করো
দিচ্ছি।
.
কিছুক্ষণ পরে…….
> হ্যালো….!!!(নিঝুম)
>> কেমন আছো…??(আমি)
> আছি ভালোই। খারাপ থাকার তো কারণ
নেই।
(তাচ্ছিল্যেরর সুরে)
>>ওহহ। ভালো(একটা দীর্ঘশ্বাস
ছাড়লাম).। আমি
কেমন আছি জানতে চাইবে না।
> না। কারণ তুমি ভালো আছো…।
>> আমি একটু ভালো নেই। তোমায়
ছাড়া….।।(কেঁদ
ে দিলাম)
> হুম।
>> প্লিজ নিঝুম আমায় এভাবে কষ্ট দিও না।
আমি খুব মিস করি তোমায়। তোমায় জন্যে কাঁদি
খুব। প্লিজ তুমি এমন হয়ো না।(কাঁদার কারণে ফুঁফিয়ে বের হচ্ছে কথা)
> আমার তোমার ন্যাকা কান্না শুরু করে দিলে।
যত্তোসব..!!! দিলে মুডটাই নষ্ট করে।
>> আচ্ছা আমার কথা কী তোমার একবারও মনে পড়ে না..??
> না। তবে পড়লেও খুব কম।
>> আচ্ছা তুমি তো এমন ছিলে না…। কতো
ভালোবাসতে..। কেয়ার করতে..। আজ এমন হলে
কেন.?? কেন নিঝুম…??(জোরে কেঁদে দিলাম)
> সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে। তুমি একটা বোরিং
ছেলে..।.। তোমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না আর…।
>> নিঝুম এমন করে বলো না প্লিজ। আমার খুব কষ্ট হয়।
> এই তোর মতো ছেলেকে কী ভাবে
বলবো..। আহ্লাদ করে। এই সময় আমার নাই।
আর তুই আমাকে ফোন দিবি না।
ডিসগাস্টিং……
.
.
ফোনটা খুব জোরে রেখে দিলো। আমার কান্না
আসছে চোখের জলগুলো বাঁধ মানছে না ।
নিঝুম আমাকে হার্ট করতে দ্বিতীয়বার ভাবছে না।

হে খোদা সবাই কেন এতো কষ্ট দেয়।। নিঝুম কী আমাকে একটু ও বোঝে না। জবাব দাও খোদা..??
কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেলাম।
.
সকালে উঠে ব্রাশ করতে করতে আয়নায়
দেখছি নিজেকে। নিজেকে নিজেই চিনতে পারছি
না। সব কিছুথেকে প্রাণ হারিয়ে গেছে। কোনো
চঞ্চলতা নেই। সবকিছু প্রাণহীন লাগে।
খাবারটাও স্বাদহীন….।। মন ভালো থাকলে সবকিছু
ভালো থাকে…..
.
এই কয়েকদিনে আম্মু আবার অবস্থাটা বুঝতে
পারছে। এটা নিয়ে নিঝুমের আম্মুর সাথেও মনে
হয় কথা বলেছে। আমার সাথে ব্রেকফাস্ট
টেবিলে কথা বলার সময় বোঝতে পারলাম।
.
নিঝুমের আম্মু হয়তো নিঝুম কে বুঝিয়েছে…..।ত
াই আজকে নিঝুম ফোন দিলো বিকেলে..।
> হ্যালো…। সিনহা কোথায় তুমি….??? (নিঝুম)
আমার খুশিতে কথা বের হচ্ছে না। ওফোন দিয়ে কথা বলছে দেখে….।
>> আআআমি…। বাসায়.। কেমন আছো তুমি.??(আমি)
> ভালো। আজকে সন্ধ্যায় তুমি সিপি ফাইভ স্টারে
দেখা করবে..?
>> আচ্ছা….।।
.
খুশি মনে ওয়াশরুমে ঢুকে সেভ করে নিজেকে ফ্রেশ করে নিলাম।
তারপর রেডি হলাম আস্তে আস্তে….

বিকেলে….
আমি ওর জন্যে বসে আছি……। অনেক্ষণ ওয়েট
করার পর ও আসলো। এসেই বসলো মুখোমুখি
চেয়ারে…..।।। হ্যান্ডব্যাগ থেকে টিস্যু বের
করে মুখটা মুছলো । আর আমি ওর দিকে তাকিয়ে
আছি….। ও মুখ মুছে আমার দিকে খেয়াল করলো।
এতো সময় ধরে যে তার সামনে একটা ছেলে বসে আছে হয়তো তার মনেই হচ্ছে না….।।
তাই আমিই বললাম….
>> কেমন আছো…..???(আমি)
> হুম। ভালোই…। কী বলবে তাড়াতাড়ি বলো আমার সময় নেই…।।(নিঝুম)
>> দুপুরে খেয়েছিলে..?
> তুমি এগুলো বলতে আমায় ডেকেছো…।।
আমি মাথা নাড়লাম….।।ও আবার বললো…
> আমি যে কারণে ডেকেছি তোমায়…..??
>> হুম বলো..। কেন.?
> আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমার পরীক্ষা
শুরু হবে। তাই আমি চাইনা তুমি আম্মু বা আমাকে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব কর…।

আজকের পর্ব শেষ,,,,,,,,,,,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com