Breaking News

গল্পঃ ছেলেটির গন্তব্যহীন পথ চলা

আম্মা গো ভুত,,,,,,ত,,,,,,,,ত

মেয়েলি কন্ঠে কথাটা কানে ভেসে আসতেই কার অসাড় দেহ আমার উপর এসে পরল।R সাথে সাথে আশপাশ থেকে কিছু লোকজন ছুটে এসে মেয়েটাকে ঘরে নিয়ে খাটের উপর শুয়িয়ে দিল।মেয়েটার জ্ঞান ফিরানোর জন্য চোখে পানি ছিটা দিয়া হচ্ছে।R আমার দিকে কয়েক জোরা বিরক্ত কর চোখ নিয়ে কেউ কেউ তাকিয়ে আছে।সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু ভদ্র মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে মুখে ওরনা চেপে মিটমিট করে হাসছে।তাদের মধ্যে থেকে একজন হুংকার দিয়ে বলে উঠল,,,,
এই ছেলে রাতে কারেন্ট না থাকলে তুই বাসা থেকে বের হোস কেন?আর বেরই যদি হবি,তবে মুখে লাইট ধরে বের হতে পারিস না??তোর জন্য যদি মেয়েটার কিছু হয়।তাহলে তোর খবর আছে বলে দিলাম।কথা গুলো শুনে বুকের ভিতরের সেই জন্ম গত ঘা টা থেকে আবারও রক্ত ক্ষরন হতে শুর করল।এসব কথার কারন একটাই,,,
R তা হল এই সুন্দর্য্যের পুজারি মানুষ গুলোর মাঝে আমি কুচ্ছিত কালো।কালো বললে ভুল হবে,,অনেকটা আফ্রিকান কালো।কি ভাবছেন,নিজেক এত বড় উপাধি কেন দিচ্ছি?আমি দেইনি,আমার আশেপাশের ভদ্র সমাজের মানুষ গুলোর দিয়েছে।তারা যে ভুল বলে তা কিন্ত না!!R তার জন্যই কারেন্ট যাওয়ায় পর মোম কিনার জন্য সিড়ির কাছে আসতেই মেয়েটা আমাকে দেখে,ভয় পেয়ে উপরে ঘটনার সুত্রপাত।ভদ্র মহিলার কথায় চোখ দুটো হঠাত ঝাপসা হয়ে আসল।হয়ত দু ফোটা অশ্রু জমা হয়েছে।অশ্রু সিক্ত হতাসাগস্থ চোখ নিয়ে মেয়েটার জ্ঞান ফিরার জন্য তাকিয়ে আছি।চোখ দুটো আটকে গেছে মেয়েটির মায়াবি চেহারায়।নিষ্পাপ বাচ্চাদের মত চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।আর আমার শরীরের সাথে মেচিং করা কালো চোখ দুটোও সেই সুন্দর্য্যে বাধা পরেছে।কিন্ত তবুও সৃষ্টিকর্তার কাছে মনে মনে দোয়া করছি যাতে মেয়েটার খুব তাড়াতাড়ি জ্ঞান ফিরে আসে।তা না হলে,ভদ্র মহিলার কথার থেকেও ভয়াবহ কিছু আমার জন্য অপেক্ষা করছে।এমন কি বাসাও ছাড়তে হতে পারে।অনেক কষ্টে এই বাসাটা পেয়েছি।
আগের বাসাটা ছাড়তে এক কথায় বার্ধ্য হয়েছিলাম।কারন সেই বাসা থেকে সকালে চোরের মত বের হতে হত।কি ভাবছেন আমি চোর বা বড় কোন অপরাধী?হে সত্যি আমি অপরাধী,,কিন্ত আমার অপরাধ হচ্ছে,এই সুন্দর সমাজে আমি কুচ্ছিত কালো।সকালে আমার মুখ দেখলে নাকি এই ভদ্র সমাজের মানুষ গুলোর যাত্রা অশুভ হয়।তবে আমার এই কালো চেহারাটাও আবার কার কার উপকারে আসে।একদিন সন্ধার সময় সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছি হঠাত শুনতে পেলাম,এক ভদ্র মহিলা তার বাচ্চাকে বলছে আব্বু তাড়াতাড়ি খাও না হলে,দুই তালার কালো ভুতটার কাছে তোমাকে দিয়ে আসব।সেদিন অনেক কেঁদেছিলাম এই ভেবে,একজন মা তার সন্তানকে সাদা-কালো,ধনী-গরিব বৈষমর শিক্ষা দিচ্ছে।ছোট বেলায় খুব কাঁদতাম মাকে জড়িয়ে ধরে।কারন বাবা ত জন্মের আগেই এতিমের খাতায় নাম তুলে দিয়ে চলে গেলেন।বন্ধুবান্ধব আর মানুষের কুটক্তি কথা শুনে,যে মায়ের আচলের নিচে মুখ লুকিয়ে কাঁদতাম।সেই মা ও ৭বছর বয়সে তার কুচ্ছিত কালো ছেলেটাকে পুরাপুরি এতিম করে চলে গেলেন।তাই নতুন ঠিকানা হল এতিমখানা।সেখানে শুর হল কষ্টের নতুন অধ্যায়।পড়া না পারলে মারের পাশাপাশি একটু বেশি কিছু জুটত আমার ভাগ্যে।

এক দিন পড়া না পারায় হুজুর মারতে মারতে বলল,দেখতে ত ভিখারি ছেলেদের মত পড়ালেখা করে কি করবি?এর চাইতে ভিক্ষা কর কাজে দিবে।সেই দিন হুজুরের কথা শুনে বাগানে বসে কাঁদছিলাম,হঠাত পিঠে কার হাতের ছোয়া পেলাম।ঘুরে তাকিয়ে দেখি এতিমখানার বড় হুজুর।আমাকে জিজ্ঞাস করল,কিরে বাবা মন খারাপ?মুখটাও ত শুকনো লাগছে দুপুরে খাওয়া হয়নি বুজি?আমার সাথে আয় বলে,নিজে দুপুরে না খেয়ে,সেই খাবার পাশে বসে থেকে আমাকে খাওয়ালেন বড় হুজুর।আর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,কার কথায় কষ্ট পেলে একা বসে বসে কখন কাঁদবি না,সোজা আমার কাছে চলে আসবি।মা,বাবা নেই ত কি হয়েছে?তোর বড় হুজুরের বুকটাত আছে।এই বুকটাতে তোর জন্য জায়গার কম পরবে না।মা মারা যাওয়ার পর এই প্র্থম কার কাছে আশ্রয় খুজে পেয়েছিলাম।তারপর যখনি কষ্ট পেতাম বড় হুজুরের বুকে মাথা লুকিয়ে কাঁদতাম।R তিনি বুকে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে সান্তনা দিত।১৮ বছর বয়সে তিনিও একা করে চলে গেলেন।বন্ধ হয়ে গেল এতিমখানার দরজা।

শুর হল বাহ্যিক পৃথিবীর সাথে যুদ্ধ।ছোট খাট একটা চাকরি নিয়ে বেচে থাকার তুমুলযুদ্ধ।এখনও ২২ বছর বয়সে এক দুয়ারে লাথি খেয়ে,অন্য দুয়ারে আশ্রয় খুজে বেরায়।শুধু যে চাকরি ক্ষেত্রে তা কিন্ত না,বাসা পেতেও যুদ্ধ করতে হয়।আগের বাসা ছাড়ার পর দুই দিন না হতেই,নতুন বাসায় এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হল।তাই সৃষ্টিকর্তার কাছে মনেমনে আকুতি মিনতি করছি মেয়েটার জ্ঞান ফিরার জন্য,হঠাত দেখি মেয়েটা চোখ মেলে তাকাল।আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুশকি হাসি দিল।আমি সাথে সাথে ঐ খান থেকে মাথাটা নিচু করে বের হয়ে আসলাম।এখন অফিস থেকে এসে তেমন বাসা থেকে বের হইনা।R সন্ধার পরে ত কোন কাজ থাকলেও বাহিরে যাই না।তেমন একটা খারাপ লাগে না,কারন ছোট বেলা থেকে এভাবেই বড় হয়েছি।R সময় কাটানোর জন্য আমার কিছু ফুল গাছ ত আছেই।লাথি উস্টা খেয়ে যেখানেই যাই সাথে করে গাছ গুলো নিয়ে আছি।কারন এই ফুল গাছের সাথে আমার অনেক মিল,আমি যেমন লাথিউস্টা খেয়ে এই কস্টের শেষ হবে ভেবে বেচে থাকি।ফুল গাছ গুলোও একটি ফুল ঝরে যাওয়ার পর নতুম কলি থেকে ফুল ফোটার আশায় বেচে থাকে।

ছাদে একদিন বিকালে গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছি,হঠাত পছনে দেখি সেই মেয়েটি।কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তাড়াতাড়ি চলে আসলাম।তারপর বেশ কিছুদিন আর ছাদে গেলাম না।যদি মেয়েটার সামনে পরে যাই এই ভয়ে।কিন্ত বেশি দিন ফুল গাছ গুলোকে ছাড়া থাকতে পারলাম না।কারন আমার শত কষ্টের বোকা সাক্ষি ঐ গাছ গুলো।একদিন চোরের মত ছাদে যাচ্ছি গাছ গুলো দেখার জন্য,,দেখি সেই মেয়েটি গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছে।তাড়াতাড়ি নিচে নামতে যাব মেয়েটা দৌড়ে সামনে এসে পথ আটকালো,কি বেপার আপনি আমাকে এভাবে এরিয়ে চলেন কেন?আমার উপর এখনো রাগ করে আসেন?
আমিঃনা রাগ করব কেন?
মেয়েঃবিশ্বাস করেন ঐদিন আমি ইচ্ছা করে এমনটা করিনি।হঠাত আপনি অন্ধকারে সামনে এসে পরলেন তাই ভয় পাইছি।কিন্ত এর জন্য সবাই আপনার সাথে এমন কেন করল বুজতে পারলাম না,,
আমিঃকারন আমি যে,এই সুন্দর সমাজে ভয়ংকর সুন্দর মানুষ,, তাই,(হতাসাগস্থ হাসি দিয়ে)
মেয়েঃএখানে আপনার কোন দোষ নাই।আপনার জায়গায় যদি ধবধবে সাদা কোন লোকও থাকত,তাহলেও অন্ধকারে তাকে দেখা যেত না,,

আমিঃতাতে কি,,,,সমাজের মানুষের এত কিছু ভাবার সময় কোথায়???
মেয়েঃহয়ত(দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে)অহ আমার নাম ফারিহা,,,R আপনার?
আমিঃফয়সাল
ফারিহাঃখুব সুন্দর নাম,,,
আমিঃসুন্দর কিনা জানি না।তবে মনে হয় নামের সাথে জীবনের খুব মিল আছে।ফারিহাঃমানে??
আমিঃমানে,ফয়সাল নামের অর্থ সমাধান।R আমাকে প্রতিদিনই বেচে থাকার জন্য নতুন নতুন সমাধান খুজে বেরাতে হয়।হা হা হা

ফারিহাঃআপনি ত খুব সুন্দর করে কথা বলতে পারেন।আমার বন্ধু হবেন(হাতটা বাড়িয়ে)
আমিঃআমার সাথে বন্ধুত্ব করে সমাজ বিরোধী হওয়া লাগবে না আপনার,, কথাটা বলেই রুমে চলে আসলাম।পরদিন সকালে দরজায় নোক করার শব্দ পেয়ে দরজা খুলে দেখি কেউ নাই।কিন্ত নিচে একটা বক্স পরে আছে।R তাতে কিছু নুডুস,বুজতে বাকি রইল না এটা কার কাজ।এরপর থেকে প্রায় এমন ভুতুড়ে বক্স পাই।

এভাবে আস্তে আস্তে ফারিহা R আমার মাঝে কেয়ারিং শেয়ারিং বাড়তে শুর করল।আমি কোথাও না বলে গেলে বা রাত করে রুমে ফিরলে ফারিহা রাগ করে না খেয়ে বসে থাকে।প্রতিদিন অন্তত একবার দেখা না করলে গাল ফুলিয়ে কান্না করে।আস্তে আস্তে ফারিহার প্রতি আমার দুর্বলতা সৃষ্টি হতে শুর করল।এতে আমার মনের কতটা দোষ আছে,আমি তা জানি না।হয়ত ভালবাসার অভুক্ত মনটা হঠাত কার ভালবাসা পেয়ে,তাকে আঁকড়ে ধরে বাচার সপ্ন দেখছে।

কোন এক পড়ন্ত বিকালে ফারিহা আর আমি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি আমার সেই ফুল গাছ গুলোর পাশে,নিজের ভিতরে আকা সপ্ন গুলো আজ ফারিহাকে বলতে ইচ্ছা করছে।তাই আমার বাগানের সব থেকে সুন্দর ফুলটা ছিড়ে ফারিহার সামনে ধরে বললাম,,,,

চলনা ফারিহা বাকিটা পথ এক সাথে হাটি,,,

কথাটা বলার পর ফারিহা আমার হাত থেকে ফুলটা নিয়ে মাটিতে ছুড়ে মেরে, আমাকে ঠাস করে চর মেরে বসল,,,,,,
ফারিহার ঐ সুন্দর মায়াবী মুখটা হঠাত করেই কেমন জানি বদলে গেল।আমার মনে হল আমি এক অন্য ফাহিহাকে দেখছি।হঠাত চারদিক মেঘাচ্ছন্ন হয়ে গেল এখন শুধু বর্ষণ এর বাকি।তাও শুর হয়ে গেল,,
ফারিহাঃকি বললি তুই?তোর মত রাস্তার ছেলের হাত ধরে আমি সারা জীবন কাটাব!!ঐ দিনের ঘটনার জন্য আমার নিজেকে কাছে একটু খারাপ লাগছিল তাই তোর সাথে একটু মিশেছি।এটা কি আমার অপরাধ?তোর মত ছেলেকে করুনা করা যায়,ভালবাসা যায় না,বুজলি?R যার বাপ,মার ঠিক নেই সে কিনা আমাকে ভালবাসতে চায়?(অবহেলার হাসি দিয়ে)
আমিঃকথাটা শুনে নিজের চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলাম না।অনেক কষ্ট করে শুধু একটা কথা বললাম,ফারিহা আমার বাবা,মার পরিচয় আছে,,,
ফারিহাঃযা,,যা জানা আছে আমার,,,বলেই হনহন করে চলে গেল।আজ অনেকদিন পর আবারো দু চোখে বর্ষণ হচ্ছে।আর নিরব সাক্ষি আমার সেই বোবা ফুলগাছ গুলো।রাতের আধারে বেরিয়ে পরলাম কোন এক অজানা গন্তব্যে।সাথে আমার শত দুঃখ,কস্টের বোকা সাক্ষি ফুল গাছ আর অসংখ্য সুইয়ের আঘাতে জর্জরিত কয়েক বছর আগের পুরাতন অর্ধ ছিড়া কিছু কাপুড়,,,,,
এই পথের শেষ কোথায় তা আমার জানা নাই,,,,
সবশেষে একটা কথায় বলব,,সমাজের অন্য মানুষ গুলো কেমন তা না ভেবে,গল্পের বড় হুজুরের মত সবাই নিজেকে গড়ে তুলতে চেষ্টা করি।তাহলে হয়ত হাজারো কষ্টের মাঝেও ফয়সালদের জীবনে একটা সুখের কথা থাকবে।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com