গল্পঃ যদি হাতটি ধরো | লিখা-সাঈদ নাফিজ
এস এস সি পরিক্ষা শেষ করে কলেজে ভর্তি হয়েছি প্রায় তিনমাস হয়ে গেলো।এর মাঝে কখনো ক্লাসে যাওয়া হয়নি, ক্লাস করাতো দুরের কথা কলেজের বারান্দায়ও পা রাখা হয়নি।
ক্লাস না করার পিছনেও কারন আছে, আমি আরেকটা সাইট নিয়ে পড়ছি, তাই ক্লাস করার মতো সময় হয়ে ওঠেনি।।আজ আম্মুর পিড়াপিড়ি তে কলেজে আসতে হলো।।কলেজে এসে কেমন যেন সবকিছু অপরিচিত লাগছে, কোথায় আমাদের রুম কোথায় আমার শ্রেণীকক্ষ সেটাতো জানিনা।। তাই কলেজে না ঢুকে কলেজ থেকে একটু দুরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম কারো কাছ থেকে ক্লাসের সন্ধান নেয়ার জন্য।।
কিছুক্ষণ পরে দেখতে পেলাম যে একটা মেয়ে কলেজের দিকে আসতেছে, হাতে কিছু বই, হয়তো মেয়েটা এই কলেজেই পড়ে,দেখি তাকে কলেজ বিষয়ে জিজ্ঞাস করা যাক।
মেয়েটা আমার সামনে দিয়ে চলে যেতে গেলে পিছন থেকে তাকে ডাকদিলাম….
-ইস কিউজ মি!! একটু শুনবেন!! (নাফিজ)
আমার ডাকশুনে মেয়েটা কেমন করে যেন আমার দিকে তাকিয়ে বললো
-আমাকে কি ডেকেছেন?? (মেয়েটা)
-হ্যাঁ, আপনাকেই ডেকেছি।।কেন আপনাকে ডাকা কি নিষেধ আছে নাকি?? (নাফিজ)
-না,নিষেধ থাকবে কেন।। হঠাৎ করে ডাকলেন যে তাই আরকি।তো বলেন কি মতলব নিয়ে ডেকেছেন?? (মেয়েটা)
–মতলব তো আছে অনেকই, কোনটা বলবো বলেন? (নাফিজ)
–আমার এতো মতলব শুনার টাইমনেই,আপনি কি জন্য ডেকেছেন সেটা বলেন, আর যদি না বলেন তাহলে আপনার কাজে আপনি যান,আমার ক্লাস আছে আমি চললাম। (মেয়েটা)
–আরে, কথা বলার আগেই তো দেখছি চলে যাচ্ছেন, কথাটাতো শুনবেন তাইনা?? তারপর না হয় চলে যান।।(নাফিজ)
-কি কথা বলেন!? (মেয়েটা)
-আপনি কোন ক্লাসে পড়েন? (নাফিজ)
–সেটা না জানলেও চলবে। আপনি সেটা যেনে কি করবেন?? (মেয়েটা)
-একটা হেল্প করবেন?? যদি করেন তাহলে বলতে পারি। (নাফিজ)
–নাহ, আ আ আমি কোন হেল্প-টেল্প করতে পারবো না। (মেয়েটা)
-আরে আমিতো শুধু হেল্প করতে বলেছি, টেল্প তো করতে বলিনি।।আমার একটা করলেই হবে।। আমি শুনেছি যে মেয়েরা নাকি খুবই দরদী,কই এখনতো দেখি তার উল্টো।সাধারণ একটু হেল্প করতেও কার্পণ্য করে। (নাফিজ)
–আপনি তো দেখছি মহা মুশকিল একজন লোক।আচ্ছা বলেন কি হেল্প করতে হবে।(মেয়েটা)
–এইতো এবার লাইনে আসছেন।।আচ্ছা বলুন তো ইন্টার ফাষ্টইয়ারের রুমটা কোথায়?? (নাফিজ)
–কেন আপনি জানেন না রুমটা কোথায়?? (মেয়েটা)
–জানলে তো আর আপনাকে ডিস্টার্ব করতাম না তাইনা?? জানিনা দেখেইতো আপনাকে হেল্প করতে বললাম। (নাফিজ)
–ওহ আচ্ছা আসলে আইয়্যাম স্যরি! আমি বেপারটা বুঝতে পারিনি। (মেয়েটা)
–স্যরির গুল্লি মারি! শালির শয়তান্নি আমারে হেল্প না করে এখন স্যরি মারাচ্ছিস (মনেমনে)
না স্যরি বলার কি দরকার।।রুমটা দেখিয়ে দিন তাতেই হবে। (নাফিজ)
–আচ্ছা ঠিকআছে, আপনি আমার সাথেই আসুন। আমি আপনাকে রুম দেখিয়ে দিচ্ছি। (মেয়েটা)
–নাহ, আমি আপনার সাথে যেতে পারবোনা। (নাফিজ)
–কেন, এনিপ্রবলেম?! (মেয়েটা)
–অবশ্যই,, আমি আপনার সাথে যাবোনা। কি কারনে যাবনা কারনটা জানেন?? আপনার সাথে যাবোনা এই জন্য যে, আমি যদি আপনার পিছুপিছু যাই তাহলে লোকে ভাববে যে ছেলেটা কতবড় অশব্য একটা মেয়ের পিছু নিয়েছে। আমি এতবড় অপবাদ শুনতে পারবোনা।। (নাফিজ)
–হাহাহা তাইনাকি?? আচ্ছা তাহলে কি ভাবে যাবেন?? (মেয়েটা)
–আমি আপনার সামনে যাব আর আপনি আমাকে পিছন থেকে দিক নির্দেশনা দিতে থাকবেন যে এদিক না ওদিক যান।তাহলেই হবে।আর যদি লোকে কিছু ভাবে, তাহলে লোকে ভাববে যে ছেলেটা খুব ভদ্র, ছেলেটা ভদ্র দেখে মেয়েটা তার পিছু নিয়েছে (মাইরালা)
–কি?? এই যে হ্যাঁলো!! আমি আপনার পিছু নিতে পারবোনা।। আমি আপনাকে রুম দেখিয়ে দিচ্ছি সোজা ওখানে চলে যাবেন, এতে আপনার ও নিরাপদ আমারও নিরাপদ।। (মেয়েটি)
–সেটা বললেইতো হয়।। আচ্ছা বলুন কোথায় ফাষ্টইয়ারের রুম?? (নাফিজ)
-এই যে এখান দিয়ে সোজা ঐ গাঁছটির পাসকাটিয়ে ডানদিক দিয়ে যাবেন, ওখান থেকে হাতের বামে যাবেন, বামে যেয়ে সোজা চলে যাবেন, দেখবেন আপনি আপনার গন্তব্য পৌঁছে গেছেন।।(মেয়েটা)
-ধন্যবাদ, কি মারেফাতে প্যাচরে।।
আমি কি বাচ্চা নাকি হ্যাঁ! যে আমাকে আমার শ্রেণীকক্ষটা খুঁজে দিতে হচ্ছে কারো।আসলে হয়েছে কি জানেন, কলেজে নতুনতো তাই কারো সাথে পরিচিতো হওয়ার জন্য এই একটু টাইমপাস করলাম।।মেয়েটার পথ বাতলে দেয়া রাস্তাকে অনুসরণ করে হাঁটতে লাগলাম।
ওখানে যেয়ে দেখি যে একটা রুম দেখে মনে হচ্ছে এটাই আমাদের ক্লাস রুম। রুমে অনেক স্টুডেন্ট আছে মনে হচ্ছে।
তারপর রুমের ভিতরে ঢুকার চিন্তা ভাবনা করলাম, দরজার সামনে দাড়িয়ে দেখলাম বুকটা কেমন যেন করছে। নতুন ক্লাস, তা আবার ৩ মাস পরে আসছি আমি নবাব সাহেব।।
কেমন যেন একটা ভীরুতা কাজ করছে মনে, হঠাত করে পিঁছন থেকে কে যেন বলে উঠলো যে..
আরে এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? এটাইতো আপনার ফাষ্টইয়ারের রুম।।
আমি কথাটা শুনে পিঁছনে ফিরে দেখি যে রাস্তায় প্রথম সাক্ষাৎকার সেই মেয়েটা আমার পিঁছনে দাঁড়িয়ে আছে, আমি তাকে দেখে বললাম…
–আমি তো জানিই এটা আমাদের ক্লাসরুম।আপনার বলতে হবেনা।। (নাফিজ)
–তো এতোই যখন জানেন,তাহলে আমাকে রাস্তায় এভাবে জিজ্ঞেস করলেন কেন?? (নাফিজ)
-এমনি, আচ্ছা আপনি কি ফাষ্টইয়ারে পড়েন???(নাফিজ)
–নাহ, আমি একাদশ শ্রেনীতে পড়ি।। (মেয়েটা)
–যেই লাউ সেই কদু।। আচ্ছা তাহলে চলুন ক্লাসে যাবেন না?? (নাফিজ)
–আমি কেন আপনার ক্লাসে যাবো?? আমিতো এই ক্লাসে যাবো। আপনি কিসে পড়েন?? (মেয়েটি)
–কেন, পড়ার টেবিলে পড়ি।। (নাফিজ)
–আরে তা বলিনি,,মানে আপনি কোন ইয়ারে পড়েন?? (মেয়ে)
–আপনি যেই ইয়ারে পড়েন,আমিও সেই ইয়ারেই পড়ি । (নাফিজ)
–কি বলেন?? কখনো তো দেখলাম না আপনাকে।আজই প্রথম দেখলাম।। (মেয়ে)
–কখনো কলেজে ক্লাস করতে আসিনি তো তাই দেখেননি।আজ এসেছি তাই আজই দেখেছেন।(নাফিজ)
–ওহ আচ্ছা!! আপনার নামকি জান্তে পারি?? (মেয়ে)
–অবশ্যই জান্তে পারেন।বাবা মা নাম রেখেছেইতো বলার জন্য । আমার নাম মুহাঃ সাঈদ নাফিজ।
–আমার নাম শুনবেন না?? (মেয়ে)
–বললে শুনবো, না বললে কি করে শুনি বলেন?? (নাফিজ)
–আমার নাম মুসাঃ সুমাইয়া জান্নাত সবাই জান্নাত বলেই ডাকে।।আপনার নামটা খুবই সুন্দর । (জান্নাত)
–হুমমম জানি, সেও বলে যে আমার নামটা খুবই সুন্দর।(নাফিজ)
–সে বলতে কার কথা বলছেন?? (জান্নাত)
–কে আবার,আনিফার আম্মুর কথা বলছি।।
-/আনিফার আম্মু কে জান্তে পারি?(জান্নাত)
–ক্লাস শুরু কয়টায় জান্তে পারি?? (নাফিজ)
–হুমম,,১১ টায় শুরু।।
–জ্বি,ঘড়ির কাটাও বলছে ১১ টা বাজতে দুই মিনিট আছে চলুন ক্লাসে যাই,অনেক বকবক করেছি।। (নাফিজ)
–আরে ওটা একটু বলে জাননা?? (জান্নাত)
–পরে কোনদিন জান্তে পারবেন।চলুন ক্লাসে যাই।।
চলবে….