গল্পঃ পাঁজরের হাড়

আজ অফিস ছুটি,টিভিটা ছেড়ে দিয়ে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে চুমুক দিবো ঠিক সেই সময় টিভির বড় পর্দার নিচে ছোট্ট হেডলাইনটা চোখে পড়লো,তুলিকে কয়েকটা নরপশু মিলে গণহারে রেপ করে রাস্তার ধারে নগ্ন অবস্থায় ফেলে রেখে চলে গেছে,মিনিটের মধ্যেই যেন আমার দুনিয়া দাড়ি অন্ধকার হয়ে গেলো,চায়ের কাপটা ঠাসসস করে মাটিতে পরে দুই টুকরো হয়ে গেছে,নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস এই করাতে পারছি না!

পাশের রুম থেকে ছোট্ট বোনটা দৌড়ে আসলো কিছু পড়ার শব্দ শুনে,এসে দেখে চায়ের কাপটা মাটিতে পরে কয়েক টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে,আর আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝড়ে পড়ছে,
মিলি,মিলি হচ্ছে আমার ছোট বোন..!
ভাইয়া কি হয়েছে তোর..?
আমার কোন সারা শব্দ নাই,চোখ বড় বড় করে টিভির হেডলাইনটার দিকে এখনো তাকিয়ে আছি,
মিলি,এই ভাইয়া কি হয়েছে তোর কথা বলছিস না কেন...?
মিলিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে টিভির হেডলাইনটা পড়তে বললাম,
মিলি,হেডলাইনটা পড়ে জোরে চিৎকার করে উঠলো,নাহ এটা হতে পারে না,তুলির সাথে এমনটা হতে পারে না,এ আমি বিশ্বাস করি না,
তুলি আর মিলি একই সাথে পড়ে,মিলির বান্ধবী তুলি,মিলি আমাকে তুলির সাথে রিলেশন করিয়ে দেয়,দুই বছরের রিলেশন আমাদের,
আমাদের রিলেশন নিয়ে বাসায় ও কেউ অমত করেনি,তুলির ইন্টার পরিক্ষা শেষ হলে আমাদের বিয়ে হওয়ার কথা,পরিক্ষাটার জন্যই বিয়েটা আটকে আছে,না হয় তুলিকে অনেক আগেই নিজের করে নিতাম!

মিলির চিৎকার শুনে আম্মু-আব্বু দুজনেই রুম থেকে দৌড়ে আসে,
আম্মু,কি হয়েছে মিলি..
মিলি,কান্না করতে করতে বলে আম্মু টিভির হেডলাইনটা পড়ো...?
আম্মু,হেডলাইনটা পড়ে ঠাসস করে সোফার উপরে বসে পরে,
কারোর এই যেন বিশ্বাস হচ্ছে না!
আমি নাহ আর বসে থাকা যাবে না,এখনি তুলির বাসায় যেতে হবে,
গ্যারেজ থেকে গাড়িটা বের করে তুলির বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম!
(আর আমি কে সেট তো সবাই জানেন এই নতুন করে কিছু বলার প্রয়োজন নাই,আমি আকাশ মাহমুদ,পড়া লেখা শেষ করে বাবার বিজনেস দেখাশোনা করছি)
তুলির বাসায় যেতেই তুলির আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো,বাবা আমার মেয়ে..

নরপশু গুলা যে আমার মেয়ের জীবনটা শেষ করে দিলো,এখন কে আমার মেয়েটাকে গ্রহণ করবে,তুমিও তো গ্রহণ করবা না..!
আকাশ,ও কান্না করছে,প্লিজ এভাবে বলবেন না,তুলিকে কখনোই আমি ছাড়বো না,তুলি কোথায় এখন...?
তুলির আম্মু,তুলিকে হসপিটালে এডমিট করানো হইছে,ডাক্তাররা বলছে ওর শরীর থেকে প্রচন্ড রকমের ব্রিডিং হওয়ায় সে বেহুশ হয়ে গেছে,আর তুলির আব্বুও ঐ খানে..!
আকাশ,আচ্ছা আপনি থাকেন আমি যাচ্ছি...!
আকাশ,গাড়িটা নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়,
হসপিটালে পৌঁছানোর পর দেখে তুলির বাবা মাথায় হাত দিয়ে কেবিনের সামনে বসে আছে...!
আকাশ,আংকেল তুলি কোথায়...?
আংনেক হাত দিয়ে দেখিয়ে দিলো কেবিনের ভিতরে!
আকাশ,কেবিনের ভিতরে ঢুকে দেখে তুলি ছোট বাচ্চার মত হসপিটালের বেডের মধ্যে জড়োসড়ো হয়ে ঘুমিয়ে আছে,মুখে মাক্স লাগানো...!
আকাশের চোখ জোড়া যেন আবার ভিজে যাচ্ছে,আকাশ আস্তে আস্তে করে তুলির কাছে যাই,তুলির কোন সারা শব্দ নাই,সে তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে,আর মনে মনে একটা শপথ করে,কলিজা তোমার এই অবস্থা যারা করছে তাদের এক টাকেও আমি ছাড়বো না,আমার নিষ্পাপ কলিজাটার গায়ে যারা হাত দিছে ওদের হাত আমি ওদের দেহ থেকে আলাদা করে ফেলবো,তুলিকে এই অবস্থায় দেখে আকাশ যেন আর নিতে পারছে না,ভিতর থেকে কুঁকড়ে কুঁকড়ে কান্না আসছে,কি ভাবে পারলো নরপশু গুলা নিজের শারীরিক চাহিদা মিটাতে এমন একটা নিষ্পাপ মেয়েকে গণহারে ধর্ষন করতে...!

একটু পর ডাক্তার আসে,প্লিজ আপনি একটু বাহিরে যান আমরা রুগীর চেকআপ করবো,
আকাশ,কেবিনের বাহিরে এসে চুপ করে বসে আছে,একটু পর ডাক্তার বের হয়,আর রুগীর সাথে কে আছে ডাক দেয়,আংকেল আর আমি এগিয়ে যাই..!
ডাক্তার,দেখেন ওর উপরে অনেক ধকল গেছে,এই টুকু বাচ্চা মেয়ের সাথে এমন আচরন করা হয়েছে,তাই সে মেনে নিতে পারেনি,আপনারা টেনশন করিয়েন না এখন সমস্ত কিছু ঠিক আছে,আপনারা বিকালে ওকে ঘরে নিয়ে যেতে পারেন,তবে যদি রুগীর জ্ঞান ফিরে আসে,আশা করি বিকালের আগেই জ্ঞান ফিরে আসবে...!
দুপুরের আগেই জ্ঞান ফিরে আসে তুলির,বিকালে তুলিকে বাসায় নিয়ে আসি আংকেল আর আমি মিলে...!

তুলিকে রুমে শুইয়ে দিয়ে ওর পাশে বসে আছি,
তুলি,বাবা আকাশকে এখান থেকে যেতে বলো..?
তুলির বাবা,তুলি মা কি বলছিস..?
আকাশ চলে যাবে মানি,সে তোর এমন ধারা খবর শুনে পাগলের মত করে ছুটে আসে,
তুলি,বাবা একবার বলেছি আর বলতে পারবো না,ওকে এখান থেকে চলে যেতে বলো ওর চেহারা আমি আর দেখতে চাইনা...!
আকাশ,তুলি কি বলছো তুমি এই সব..?
তুমি,কেন কি বলেছি শুনতে পান নাই খুব চেচিয়ে বলে,আমি আপনার চেহারা দেখতে চাই না,আপনার জন্য আমার এই হাল হয়েছে,আপনি এখনি দূর হন আমার চোখের সামনে থেকে!
আকাশ,তো কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না কি বলছে তুলি এই সব,আমার জন্য ওর এই হাল হয়েছে মানে কি, আমি তো ওকে ভালোবাসি, আমার জন্য কেন ওর এই হাল হব, ওর তো কোন ক্ষতি আমি চাই না!

তুলি,আপনি কি কানে শুনতে পান না..?
আপনাকে বলেছি এখনি এখনি আমার চোখের সামনে থেকে দূর হতে...?
আকাশ,আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি,প্লিজ তুলি তুমি এভাবে রাগীও না!
আচ্ছা আংকেল থাকেন আমি আসছি,চোখের পানি ঝড়াতে ঝড়াতে বাসায় এসে পড়ে আকাশ,যাকে এত ভালোবাসি সেই আমাকে এমন ভাবে দোষারোপ করলো,তার সাথে এমন হওয়ার কারন নাকি আমি,আচ্ছা সমস্যা নাই দোষারোপ করো যত ইচ্ছে হয় দোষারোপ করো,কিন্তু আমি হাল ছাড়ছি না,তোমার এই হাল যারা করেছে তাদরে শরীর আমি টুকরো টুকরো করে নরপশুকে খাওয়াবো...!
এভাবে কিছুদিন কাটে,তুলি আমার থেকে সমস্ত যোগাযোগ অফ করে দিছে,বাসায় গেলেও উল্টা-পল্টা বলে তাড়িয়ে দেয়,আমাকে সে দুই চোখেই দেখতে পারে না কেন জানি,আমি কি এমন করলাম যে আমার সাথে এমন করছে ও,
অন্যদিকে

আম্মু প্রতিদিন জিজ্ঞেসা করে তুলি মা কেমন আছে,ওর খবর নিচ্ছি কিনা,আম্মুকে মিথ্যা বলতে হয় রোজ,এ ছাড়া কি বা করার আছে,
আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তুলি ছেলে জাতির উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে,
একদিন বিকাল বেলা অফিস করে বাসায় ফিরছি,রাস্তায় জ্যাম লেগেছে তাই জ্যাম ছুটার অপেক্ষা করছি,কিন্তু হটাৎ জ্যামে আটকে পরা একটা বাইকের দিকে নজর যায়,তুলি একটা ছেলের বাইকের পিছনে বসে আছে,ছেলেটা কে চেনা যাচ্ছে না কারন হেলমেট পড়া,তবে মেয়েটা যে তুলি সেটা স্পষ্ট বুঝাই যাচ্ছে...!


চলবে....?
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url