Breaking News

গল্পঃ তুমি যে আমার প্রিয়

সারাটা দিন ঘরের মধ্যে বসে থাকস, ঘুমাস খাস, কাম কাজ কিচ্ছু করোস না,

টাকা পয়সার জন্য বিয়ে দিতে পারছি না। লেখা পড়া করছিস কাজ তো করতে পারোস সেটাও করিস না।

তোর বাপ তো আমার উপর একটা বোঝা দিয়ে গেছে..

.(কথা গুলো বলছিল রিমির সৎমা)

-….(রিমি ঘরে বসে শুধু চোখ এর পানি ফেলছে)
,,
রিমির মা ছোট বেলায় মারা যাওয়ার পর রিমির বাবা আর একটা বিয়ে করে।

এতদিন পর্যন্ত ভালই ব্যবহার করেছে।

১ বছর আগে রিমির বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে রিমির সাথে এই ব্যবহার।
,,
রিমির একটা সৎ বোন আছে, তার নাম তানিয়া।
সেদিন রাতে রিমি তানিয়া কে ডেকে বলল…
-বোন, আমি চলে যাচ্ছি, একথা মা কে এখন বলবি না, কাল সকালে জিজ্ঞাস করলে বলিস (রিমি)
-আপু তুমি কোথায় যাবে??(তানিয়া)
-কাজ করতে (রিমি)
-না তুমি বাড়িতে থাকো
-ধুরর বাড়িতে বসে থাকলে কি টাকা আসবে?? এখন টাকার দরকার
-তুমি এখনই চলে যাবে??
-হুমমম
-আর আসবে না??
-আরে আসব তো এটা আমার বাড়ি, আমি আসব
-হুমমম
-আচ্ছা আমি যাওয়ার পর আমার রুমের বাতি টা নিভিয়ে দিস
-আচ্ছা ঠিক আছে আপু…

.

রিমি তানিয়ার কপালে একটা চুমু দিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরে…

তার বাড়ি থেকে মেইন রোড এ চলে আসে। এখান থেকে

সে বাসে করে শহরে চলে যাবে, আর সেখানে একটা কাজ খুঁজবে…
রাত তখন ৯ টা। রিমি বাসে উঠে।

তার শীত এর কাপড় আনতে সে ভুলে গেছে। রিমি তার সিটের কাছে যায়।

গিয়ে দেখে একটা ছেলে কানে হেড ফোন লাগিয়ে গান শুনছে…

রিমি টিকেট এর সাথে সিট নাম্বার টা আর একবার মিলিয়ে দেখল।

আর সিউর হলো এটাই তার সিট।
,,
,,
রিমি সিটে বসবে, কিন্তু বসতে পারছে না। আমতা আমতা করছে।

হঠাৎ ই ছেলেটি জেগে উঠে দেখলো, একটা মেয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে,

আর কাঁপছে…ছেলেটি বলল
-কিছু বলবেন??
-সিট টা আমার..(একদম করুন স্বরে, ঠান্ডায় কন্ঠ কাঁপছে তার)
-বসেন…. ওহহ সরে আমার পা আপনার সিটের অর্ধেক দখল

করে ফেলছে আমি বুঝতে পারি নি, আমি ঘুমের মধ্যে ছিলাম…

এই যে পা সড়িয়ে নিলাম এখন বসেন
,,
,,
রিমি কিছু না বলে সিটে বসে পড়লো। বাস চলতে শুরু করল।

বাতাসে রিমি আরও জোড়ে কাঁপছে। ছেলেটি বুঝতে পাড়ল মেয়েটির শীত লাগছে।
ছেলেটি তার জ্যাকেট টা খুলতে খুলতে বলল…
-এই যে জ্যাকেট টা নিন, নয়তো শীতে মরে যাবেন (ছেলেটি)
-….(রিমি তাকিয়ে আছে নেওয়ার সাহস পাচ্ছে না)
,,
,,
ছেলেটি জোড় করে তার হাতে দিয়ে বলল,-আরে কি ভাবছেন পরে নেন,

যা শীত পড়ছে, আর আপনি যেভাবে কাঁপছেন, তাড়াতাড়ি পরে নেন (ছেলেটি)
-আপনার ঠান্ডা লাগবে, আপনার টা আপনার কাছেই থাক(রিমি)
-গেঞ্জি আর শার্ট আছে, সমস্যা হবে না
-….(রিমি আর কিছু না বলে তার গায়ের উপর দিয়ে জ্যাকেট টা জড়িয়ে নিলো)
কিছুক্ষণ পর ছেলেটি বলল…
-আমি শুভ… আর আপনি??
-…(রিমি এটা শুনে তার দিকে তাকালো)
শুভ ভয় পেয়ে বলল
-ওহহ আপনি তো মেয়ে, সরি
-আমি রিমি
-ওহহ কই যাচ্ছেন??
-শহরে
-সেখানে রিলেটিভ এর বাসায় যাচ্ছেন
-না, কাজ করতে
-ওহহ কত বছর ধরে কাজ করছেন??
-আজ প্রথম যাচ্ছি
-ওহহ কি কাজ করতে যাচ্ছেন??
-এত প্রশ্ন করছেন কেনো??
-সরি
-…(রিমি চুপ)

.

একটু পড়েই রিমি আবার বলতে শুরু করলো
-এই প্রথম শহরে যাচ্ছি, কাজ করতে। (রিমি)
-তো মেয়ে মানুষ হয়ে এত রাতে রওনা হইছেন কেনো??(শুভ)
-দিনে কি পালানো যায়?? আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি
-কি বলেন! তাহলে আপনার বাসার সবাই তো টেনশন করবে
রিমি একটু হেসে বলল
-টেনশন করার মানুষ গুলো আমায় ছেড়ে চলে গেছে(রিমি)
-কি??(শুভ)
-কিছু না, আপনি বুঝবেন না। আপনি কোথায় যাচ্ছেন??
-বাসায় ফিরছি,
-আপনি শহরেই থাকেন??
-হ্যা
-ওহহ কোথায় গিয়েছিলেন??
-মেয়ে দেখতে
-ওহহ আপনার বিয়ের জন্য
-আরে নাহ, বন্ধুর বোন এর মেয়ে হইছে,
-তা আপনার বন্ধু কই?? আপনি একা ফিরছেন কেনো??
-একা ফিরছি না, বন্ধু তার জি এফ এর সাথে পেছনের সিটে, তাকিয়ে দেখেন একবার
রিমি পেছনে তাকাতেই একটু লজ্জা পায়, কারন পেছনের মেয়েটি, ছেলেটির কাঁধের উপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলো।
রিমি একটু হাসে…এটা দেখে শুভ বলল
-হাসছেন কেনো??(শুভ)
-না এমনি (রিমি)
-…(শুভ আর কিছু বলে না)

.
বাস রাত ১২ টার দিকে শহরে পৌছে যায়। রিমি শুভ একসাথেই বাস থেকে নামে।
বাস থেকে নামার পর…শুভর বন্ধু চলে যায়। তারপর রিমি বলে…
-আপনার জ্যাকেট টা (রিমি)
-ওহহহ মনেই নেই(শুভ)
-আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
-হুমমম, তো এখন কই যাবেন আপনি??
-দেখি এখানে কোথাও থেকে কাল ব্যবস্থা করতে হবে
-কিহহহ! রাতে বাইরে থাকবেন??
-তাছাড়া কই যাবো?? এখানে কেউ নেই আমার। আর এখন মধ্যরাত, রাত শেষ হতে বেশি সময় লাগবে না
-আচ্ছা তো থাকেন, আমি যাই
-হুমমম
রিমি একটু হাটলো। তারপর একটা ফুটপাতে এসে দাড়ালো।

রিমি শীতে আবার খুব কাঁপছে। তার ভয় ও করছে খুব।

এদিকে ওদিক বার বার তাকাচ্ছে। একসময় রিমি বসে পড়লো।
-এই যে উঠেন জ্যাকেট টা পড়ে নিন (শুভ)
-আ আ আপনি বাসায় যান নি??(রিমি)
-আমি তো গাধা, এরকম অবস্থায় আপনাকে রেখে আমি চলে যাই
-না আপনি যান সমস্যা নেই
-সমস্যা নেই তো খুব সহজ ভাবে বলছেন, অনেক সমস্যা হবে চলেন
-….(রিমি শুভর দিকে ভয়ে তাকিয়ে আছে)

.
-চলেন
-কই যাবো
-আমার বাসায় চলেন
-না আপনি যান
-আমার বাসায় মা বাবা বোন, পরিবারের আরও অনেকই আছে, ভয় পাবেন না চলেন
-না থাক আপনি যান
-দেখেন এখান কার পরিবেশ ভালো না, এখানে থাকা ঠিক হবে না, চলেন আমার সাথে
-হুমমম

.
দুজন হাটছে
-জ্যাকেট এর হাতার মধ্যে দিয়ে হাত ঢুকান, এমন ভাবে জড়িয়ে ধরে আছেন জ্যাকেট কে, মনে হচ্ছে জ্যাকেট এ অনেক গন্ধ(শুভ)
-…..(রিমি জ্যাকেট টা গায়ে দিলো)
-হা হা হা হা কেমন লাগছে হি হি হি
(রিমিকে একটা কাকতাড়ুয়ার মতো লাগছিলো, জ্যাকেট টা অনেক বড়)
-আপনি তখন বাসায় যান নি কেনো??
-আপনার জন্য, দূরে দাড়িয়ে দেখছিলাম কি করেন,
-আচ্ছা আমি যাবো না, আপনার বাবা মা,

আপনাকে কিছু বলতে পারে এত রাতে মেয়ে নিয়ে বাসায় ফিরছেন
-সমস্যা নেই ম্যাডাম তারা যানে আমি কেমন…
-হুমমম
-আর কতদূর?? (রিমি)
-এইতো ৫ মিনিট, ভয় পাবেন না আমি খুব তাড়াতাড়ি বাসায় নিয়ে যাচ্ছি।

আমি যানি আপনার টেনশন হচ্ছে (শুভ)
হঠাৎ ই কয়েকটা কুকুর ঘেউ ঘেউ করে উঠলো, রিমি ভয়ে শুভর হাত ধরে ফেলল…
-কুকুর দেখেই এত ভয়! আর আমাকে বুঝান সমস্যা নেই আপনি থাকতে পারবেন তাই না??? (শুভ)
-….(রিমি কিছু বলে না)

.

কিছুক্ষণ পর শুভর বাসায় পৌছে যায়…
-এই যে আমার বাসা, আর ভয় নেই(শুভ)
-হুমমম (রিমি)
শুভ কলিং বেল চাপার কিছুসময় পর শুভর মা দরজা খুলে দেয়…
-এতসময় লাগে আসতে??(শুভর মা)
-আসলে মা একটা সমস্যা হয়ে গেছে (শুভ)
-কি সমস্যা??
-এই যে মেয়েটা… (শুভ আর মেয়েটাকে দেখতে পায় না)
রিমি ভয়ে শুভর পেছনে গিয়ে দাড়িয়েছে..
-আরে আপনি পেছনে কেনো?? সামনে আসেন….(শুভ)

চলবে………?….

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com