স্যার প্রেম করে

পড়তে বসে ক্লাস ফাইভ পড়ুয়া স্টুডেন্ট মুচকি মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করল..
-স্যার গতকাল পড়াইতে আসেন নাই কেন?
গতকাল মানে ১৪ ফেব্রুয়ারি।কি জন্যে পড়াতে আসিনাই সেটা আর নাই বা বলি।কারন তো আমি জানি।কিন্তু ছাত্রকে না আসার কারণ কিভাবে বলি!
না শুনার ভান করে চট জলদি বই হাতে নিয়ে অংক বইয়ের সবচেয়ে কঠিন সরল অংকটা বের করে বললাম
-দ্রুত করে ফেল।ভুল হইলে কিন্তু মাইর হবে।
এতটুকু বাচ্চা ছেলে।১৪ ফেব্রুয়ারিতে টিচার কেন পড়াতে আসেনি এই প্রশ্ন করে কিভাবে ও! নাহ! ঘোরতর অপরাধ এটা।উত্তর তো দিবইনা, সোজা আজকে মাইরা কাইত কইরা ফালাব।যে কঠিন অংক দিছি তাতে ভুল তো নিশ্চিত করবে।মনে মনে ভাবলাম আমি।
-স্যার!পড়াইতে আসেন নাই কেন?
অংকটা খাতায় তুলে আবার ও একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল।
এবার প্রচন্ড রাগ আর সেই সাথে চোখ বড় বড় করে বললাম
-পড়তে বসে এতো কথা কিসের হুম! দ্রুত অংক কর।
এই পুলারে আজকে মারতে হবে।প্রচুর মারতে হবে।জিজ্ঞাস করলাম বাড়ির কাজ করছো?
অন্যদিন যেই ছেলে বাড়ির কাজের কথা শুনলে আগেই স্কেলের বারি খাওয়ার জন্য হাত পেতে দিতো আজ সেই ছেলে খাতা বের করে দিয়ে একটা ভেটকি মাইরা বললো..
-এইযে স্যার।
খাতাটা নিলাম।নিজের চশমাটা ঠিক করে খাতার প্রত্যেকটা লাইন ধরে ধরে দেখলাম।নাহ বাড়ির কাজ দিয়েও আটকানো গেলো না।একটা ভুল ও করেনি।যেভাবেই হোক এরে আজ মাইর লাগাতে হবে।কিভাবে মারা যায় সেই উপায় খুঁজতে লাগলাম।
বাড়ির কাজের খাতা দেখতে দেখতে সরল অংক করা শেষ।খাতা জমা দিছে দেখার জন্য।
খাতা দিয়ে কলমের পিছন অংশে একটা কামড় দিয়ে আবার ও জিজ্ঞেস করল..
-স্যার! একটু বলেন না কি জন্য পড়াতে আসেন নাই।
উত্তর না দিয়ে আমি বললাম ঐ রুম থেকে সিলেবাস টা আনো।ছাত্র সিলেবাস আনতে অন্য রুমে গেলো এই ফাকে অংকে ছয় এর জায়গাতে ৬ টা ৫ বানায়ে দিলাম। ব্যস! আমার কাজ শেষ।
সিলেবাস নিয়ে আসার পর অংকে ভুল ধরে সেই একখান উত্তম-মধ্যম দিলাম।নির্লজ্জ ছাত্র তাও মুখে হাসি নিয়ে টেবিলে শুবার ভঙ্গিতে ডান হাত গালে ঠেস দিয়ে জিজ্ঞেস করলো..
-এবার তো অন্তত বলেন স্যার! কি জন্যে পড়াতে আসেন নাই।
এই পর্যায়ে ছাত্রের মা প্লেটে করে মিষ্টি আর গ্লাসে পানি নিয়ে এলো।আন্টির দিকে তাকায়ে দেখি সেও মুচকি মুচকি হাসতেছে।ছাত্র যেরকম প্রশ্ন করতেছে আর স্যার যেভাবে সেই প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছে তাতে ছাত্রের মা’র হাসার ই কথা।পাশের রুম থেকে সব কিছুই শুনা যাচ্ছে হয়তো!
নাস্তা দিয়ে আন্টি চলে গেল।
সাধারণত নাস্তা যেটাই দিয়ে যাক ছাত্রের সাথে সেটা শেয়ার না করে আমি একাই সব সাবাড় করি।পড়তে বসে আবার খাওয়া কিসের!
কিন্তু আজ পরিস্থিতি ভিন্ন।মিষ্টি দিয়ে ছাত্রের এই অপ্রস্তুত প্রশ্ন যদি বন্ধ করা যায় তাতে ক্ষতি কি।ছাত্রকে মিষ্টি খেতে বলে নিজেও টুপ করে একটা মিষ্টি মুখে পুড়ে দিলাম।মিষ্টির স্বাদে চোখ টা বন্ধ হয়ে গেছে ঠিক এমন সময় আঙুল চাটতে চাটতে ছাত্র আবার ও জিজ্ঞেস করলো..
-স্যার কেন আসেন নাই?আপনার কি অসুখ করছিল?
মিষ্টি খেয়ে মাথাটা খুলে গেলো মনে হয়।
বললাম..
-হু অসুখ ছিলো।
-কি অসুখ স্যার?
-(OLD)Obsessive Love Disorder।ডাক্তার দেখাতে গেছিলাম।ডাক্তার দেখায়ে আসতে আসতে দেরি হয়ে গেছে।তাই আসিনাই।
এইবার পড়।এখন আবার OLD কি অসুখ এইটা জিজ্ঞাস করলে কিন্তু পিটায়ে পিঠের ছাল চামড়া তুলে ফেলব বলে দিলাম।
ছাত্র আর কিছু জিজ্ঞাস করলনা।
(OLD) যে এক প্রকার প্রেম রোগ আর সেই রোগের ডাক্তার আই মিন আমার প্রেমিকার সাথে দেখা করতে গেছিলাম এইটা আর মুখ ফুটে বলতে হলো না।
স্যার তার ফাইভ পড়ুয়া ছাত্রকে বলবে ভালোবাসা দিবসে প্রেমিকার সাথে দেখা করতে গেছিলাম।এইটা কিভাবে হয়! কি লজ্জা! কি লজ্জা!
মনে মনে আশ্বস্ত হলাম এই ভেবে যে লজ্জাটা অন্তত পেতে হল না।এবার মানে মানে কেটে পরলেই হয়।
পড়ায়ে শেষ করে বের হলাম।চাবি নেওয়ার জন্য দুতলার বারান্দা থেকে ছাত্র ব্যাগ নামিয়ে দিল।যখন চাবিটা দিচ্ছি ঠিক তখনি উপর থেকে ছাত্র বলল..
-স্যার আপনার কোনো অসুখ হয়নাই,আমি জানি।গতকাল আমি আর আম্মু আপনারে নীল শাড়ি পরা এক আপুর সাথে রিকশায় দেখছি।আপনার হাতে গোলাপ ছিল।
কথা সত্য।সে নীল শাড়ি পরেই এসেছিল।
-আম্মু বলছে “তোর স্যার প্রেম করে”।
এরপর মান ইজ্জত এর বারোটা বাজিয়ে বারান্দায় উদ্দাম নৃত্যের সাথে সাথে বলতেছে “হেহেহেহে…স্যার প্রেম করে.. স্যার প্রেম করে”।
আমি আর পিছনে তাকালাম না।দ্রুত হেটে ছাত্রের চোখের আড়াল হলাম।মান ইজ্জত সব পিছন থেকেই ধুয়ে যাক।সামনা সামনি কিছু বলেনি এটাই শুকরিয়া।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url