অসুখ

আমরা ভেবেছিলাম এটা কোন ছোঁয়াচে অসুখ। আশ্চর্য ব্যাপার হলো,
অসুখ হলেও মনে মনে আমরা সবাই কেন যেন এই অসুখটাতে আক্রান্ত হতে চাচ্ছিলাম।
আমরা কেউ কাউকে বলিনি কিন্তু আমরা জানি, আমরা আক্রান্ত হতে চাচ্ছিলাম।
মরণঘাতি হলেও কিছু যায় আসে না ধরনের চাওয়া।
কিন্তু গতকালই স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় বেরসিকের মত জানিয়ে দিলো, ভালো লাগা কোন ছোঁয়াচে অসুখ নয়।
হতাশ হওয়া উচিত ছিল হয়তো। কিন্তু নতুন করে আমরা কেউ হতাশ হলাম না।
পুরোনো অনেক হতাশাই আমাদের আত্মার জামা-কাপড় হয়ে লেপ্টে আছে।
আমরা বরং দীর্ঘদিনের সেই ভালো না লাগা স্বাভাবিকতা নিয়ে বসে রইলাম।
রাস্তা দিয়ে সেই মানুষটা হেঁটে যাচ্ছিলো তখন,
যে অতি সম্প্রতি ভালো লাগা অসুখে আক্রান্ত হয়ে মাঝে মধ্যেই রাস্তায় হাঁটতে বের হয়।
আকাশ দেখে, পাখির ডাক শোনে,
গাছের নিচে দাঁড়িয়ে বুক ভরে অক্সিজেন নেয় আর গাছের সাথে কিসব কথা বলে,
বৃষ্টি হলে হইহই করে ভিজতে নামে, নদীর কাছে গিয়ে কান পাতে, জ্যোৎস্না হলে গান গায়।
অসুখে আক্রান্ত মানুষটাকে দেখে আমাদের ভেতর কেউ একজন আমাদের হয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
আর ঠিক তখন কেউ একজন বমি করলো। যেখানে কিছু চকচকে শূন্যতা,
আঠালো ভ্রান্তি আর জমাট বাধা অন্ধকার ছিল। আমাদের কেউ একজন তখন রুটিন মেনেই বললো, ‘ধুর, ভাল্লাগে না’।
আমরা আমাদের দীর্ঘদিনের ভালো না লাগা স্বাভাবিকতা ধারণ করে ভালো লাগা অস্বাভাবিকতা
ধারণ করা মানুষটাকে হেঁটে হেঁটে দূর থেকে আরো দূরে চলে যেতে দেখলাম।
আমাদের থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাওয়া মানুষটা যেন লাল রঙা সূর্যের মাঝে ঢুকে যেতে লাগলো।
অথবা লাল রঙা সূর্য মানুষটার মাঝে। মানুষটা বিন্দুর মত ছোট হয়ে মিলিয়ে গেল এক সময়।
আমরা তাকিয়ে রইলাম। সূর্যের দিকে। শেষ কবে সূর্য দেখেছিলাম?
দেখেছিলাম কি আদৌ কখনো?
আমরা মনে করার চেষ্টা করি। বাতাসের গায়ে তুড়ি ছুটিয়ে আমরা আমাদের আশ্বস্ত করি,
“আরে, সূর্যই তো! দেখবো না কেন! দেখেছি নিশ্চয়!”
সন্ধ্যা যখন তার গায়ে লেগে থাকা ছিটেফোটা বিকেলকেও ঝেড়ে ফেলে পূর্ণ রাত হয়ে যায়
অথবা, বিজ্ঞ নক্ষত্রেরা যখন বরাবরের মত আমাদের অলক্ষ্যে নিজেদের বয়স আরো
একটু বাড়িয়ে নেয়, তখনো আমরা বসে থাকি।
আমরা মনে করতে পারিনি, শেষ কবে সূর্য দেখেছিলাম।
মোস্তাফিজুর রহমান শুভ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url