Breaking News

ভালোবাসার খোঁজে অস্ত যাচ্ছে আজও

কলাবাগানের আন্ডারগ্রাউন্ড রেস্তোরাঁয় পৌঁছাতে; লেকের ভেতরের পার্ক ধরে হেঁটে যাই ।
৩২ নম্বর। সামনে লেকের ধার, ফুচকার দোকান, মেটাল ব্রিজ আর গাছগাছালি।
ল্যাপটপ, ট্যাব আর গীটার নিয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে আছে অনেকে।
দূরের লাল ইটের খোপের ভেতর; ভর দুপুরেও প্রেমিক-প্রেমিকার ঠোঁটের কোলাজ, থামালো কাজ।
কেউ লম্বা গাছের সাথে আধশোয়া হয়ে প্রেমিককে দিয়ে তোলাচ্ছে স্টাইলিশ প্রোফাইল পিকচার।
কেউ বা ঘাসের ওপর এমন করে বসা যেন; সমুদ্রের ধারে পাথুরে নুড়ির ওপর আয়েশ করছে।
এপাশে পাতাহীন ন্যাড়া গাছে লাল শিমুল, ওপাশে গোলাপি বাগান বিলাস পাপড়ি ফেলে মখমলি পথ বিছালো।
সেই পথ মাড়িয়ে যাই যেন; এক পলকের কবিতা।
ডাস্ট এলার্জিতে খুক খুক করে কাশতে কাশতে দেখি মেঘ ফুটে বের হয়েছে নির্লজ্জ রোদ।
এতবছর পরেও এই হাঁটা পথটুকু চেনা লাগে। মনে পড়ে এক চেনামুখ।
লাল চায়ের মামা, ঝালমুড়ি, নতুন রাস্তা আর ঘোলা পানির লেক ধরে আবার হাঁটি।
আবারও কপোত-কপোতীরা সামনে৷ এরা একে অন্যের চশমার কাচ মুছে দেয়।
মাথা রাখে কাঁধে। একজনের খোঁপায় লাল ফুল। আমার মনে পড়ে,
মেলার ধুলাবালিতে পড়ে ছিল এমন এক চ্যাপ্টা গোলাপ। আমি আর বড় ভাইয়ের মতো
ভালোমানুষটা হেঁটে যাচ্ছিলাম। উনি হঠাৎ থমকে ফুলটা ভীষণ যত্নে তুলে নিলেন। আমি বললাম,
‘নিয়ে কী করবেন? ফেলেই দেন। হয়তো প্রত্যাখ্যানের ফুল কিংবা এর প্রয়োজন ফুরিয়েছে।’
অথচ উনি মাথা নাড়লেন। তারপর ফুলটা হাতে রেখেই; ডানে-বামে তাকিয়ে এক স্টলের
দেয়ালে গুঁজে দিলেন। যেন প্রাপকহীন কোনো চিঠির নাম কা ওয়াস্তে গন্তব্য এনে দেওয়া।
তবুও তো কিছু হলো। আমরা তাই মস্ত বড় কাজ করেছি এমন পার্ট নিয়ে;
লোকালয় থেকে স্টলের ভিড় ঠেলে এগিয়ে গেলাম ব্ল্যাক কফি খেতে।
লাল ফুলের গল্প আর লেক পেরিয়ে কাঙ্ক্ষিত রেস্তোরাঁয় খাই-দাই তো; সেখানের
সেলফি ওয়াল বেশ ইলুশ্যন ক্রিয়েট করে। স্বচ্ছ কাচ ভেদ করে উঁকি দেয় মেঘলা
আকাশ। বিচ্ছিরি এক ক্যাপাচিনো খেয়ে একাকী চলে যাই ২৭ নম্বর। এখানে আছে অরণ্য।
তবে তাতে নেই অজস্র বৃক্ষ। অথচ ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডে ডায়মন্ড আছে ঠিকই।
মাত্র ১১৫ টাকার বিনিময়ে ঘণ্টা দুয়েকের জন্য শানদার রেস্তোরাঁর ওয়াইফাই পাওয়া যায়।
নোটবুক আনতে মনে নেই বলে ক্যাশ রেজিস্টারের সাদা স্লিপ আর কলম পর্যন্ত পাই।
ফাঁকা রেস্তোরায় সবচেয়ে সুন্দর বসার জায়গা পেয়ে নিজেকে মনে হয় লাকি উইনার।
তবে কিছু লিখতে ইচ্ছে করে না। ল্যাথার্জিক। সাথে এক অদ্ভুত নৈঃশব্দ্য। চুপ মূহুর্ত চুপ।
যেন চায়ের চামচে স তে সেন্টু নয় বরং বিসর্গ তে দুঃখ বেজে যায় ইয়াসমিন লেভির গানের সুরে।
আর সিনেমা হলের ঘন পর্দার মতো সন্ধ্যা নেমে আসলে মনে হয়,
এই প্রাইভেসিহীন শহরে ডুবোশৈলে ধাক্কা খেতে খেতে সকলেই পরে থাকে পাতার পোশাক।
সকলেই এখানে গোলাপজল মেশানো আইস লেমন টি। সকলেই শহরবাজ।
সকলেই অদ্ভুত এক আঁধার নেমে আসা
উড়োজাহাজের বোকা যাত্রী। সকলেই লাভবার্ডস কিংবা লোনার কিংবা গ্রুপ চ্যাটের লোনলি কর্ণার।
যেখানে স্লাইডশো অনবরত প্রশ্ন করে যায়, ‘হ্যাপি অর স্যাড? স্যাড অর হ্যাপি?’
আর তাই নিজের সাথে নিজের দেখা হয় না বলে; সবাই খুঁজে বেড়ায় সেইসব আগুনের গোলককে,
যারা মরুভূমিতে পর্বতপ্রান্তে অজানা সমুদ্রতীরে নিবিড় ভালোবাসার খোঁজে অস্ত যাচ্ছে আজও…
– মাহরীন ফেরদৌস

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com