Breaking News

সবাই পড়ুন ভাল লাগবে

বাবাকে সেদিন প্রথম চোখের জল ফেলতে
দেখেছিলাম, যেদিন বড় ভাইয়ার কপালে চুমু
দিয়েছিল পরীক্ষাতে প্রবেশের পূর্বে।
প্রথম ছেলে চাকুরীর পরীক্ষা দিচ্ছে। তাই
নিজের আবেগটা অনেক চেষ্টা করেও আটকে
রাখতে পারেনি।
.
দুটো বছর পর আবারো সেই বাবাকে দেখতে
পাচ্ছি।তবে কাদতে নয়। অসহায়ের প্রতিচ্ছবি দেখছি।বাবাদের কান্না করতে নেই। এরা বোবা
কান্না করে। বড় ভাইয়ার বাবাকে আর সহ্য
হচ্ছেনা। ভাল জব পেয়েছে, চাকুরীওয়ালা ভাবি পেয়েছে।তাই মানুষটাক পুরাতন মনে হচ্ছে।
আলাদা থাকতে চায়।
.

বাবা হাসিমুখেই নিজের সম্পত্তির অংশ লিখে
দিলেন। ইচ্ছা ছিল নাতী নাতনীদের সাথে বাকিটা
জীবন কাটাবেন।সেটা আর হলনা। রাত হলেই
বাবাকে বারান্দায় আজকাল একা থাকতে দেখি।
.
আমাদের বাকি দুই ভাইয়ের দিকে আজকাল
অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। কিন্তু নিজের দায়িত্ব
থেকে মানুষটাকে একটুও পিছু হটতে দেখিনি।
নিজের পরিশ্রম দিয়ে আমদেরও একি রকম যত্ন করছেন।কেবল মাঝে মাঝে অসহায়ত্বের চাপ
দেখতে পাই।
.
মেঝো ভাইয়াও প্রতিষ্টিত হলো। ভাইয়াকে বিয়ে
করিয়ে দিবার পর পরই পাল্টাতে থাকেন বড়
ভাইয়ার মত।লোকটাকে সহ্য হয়না। মুখে মুখে
খুব তর্ক করতে দেখি মেঝো ভাইয়াকে। বাবা
হেরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে থাকেন।হয়তো
মা বেচে থাকলে মানুষটা নিজের কষ্ট গুলি শেয়ার করতে পারতো।
.
মেঝো ভাইয়া সেদিন বাবার কাছে এসে আলাদা
থাকতে চায়নি। বাবা নিজেই আলাদা থাকার
জন্য বলল।কতটা অসহায় হলে নিজের সন্তানকে
আলাদা করে দেয়া যায়,তা হয়তো একমাত্র বাবা হলেই অনুভব করা যায়।
.
এখন বাবা আমার দিকে খুব অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। বড়.অচেনা মনে হয় আমাকে। এর আগে দুই ভাই
চলে গেছে। আমিও হয়তো থাকব না।চারপাশটাকেই খু্ব অসহায় মনে হয়।
.
কয়েক বছর পর আমি ভাল একটা চাকুরী পেলাম।
বাবাকে খুব উৎসাহের সাথে খবরটা দিলাম। বিষন্ন
মনে খুব খুশি হলেও একটা অসহায়ত্বের চাপ দেখতে পেলাম।
.
রাতে বাবা আমাকে নিজের রুমে ডাকলেন।
–রাতুল ভাল একটা জব তো পেলে। এখন
তোমার জন্য মেয়ে দেখব নাকি তোমার
পছন্দের কেউ আছে।
— জ্বী না বাবা, আপনার পছন্দমতই আপনার
সিদ্ধান্তেই সব হবে।
`
বাবা চুপচাপ বসে আছে। এর আগেও এমন কথা
আমার দুই ভাই বলেছিল।
আমি আবার বললাম,
— বাবা এখন যেতে পারি?
.
বাবা তখনো চুপ। নিজের চাপা কষ্টটা একটু সংবরন
করে বলল,
— তারপর তো তুইও আমাকে ছেড়ে চলে যাবি,
তাইনা বাবা??
ওদের মত আমাকে তোরও অসহ্য লাগবে
তখন।
`
আমি চুপটি করে ছিলাম। বাবা উঠে দাড়ালেন চলে
যাবার জন্য। বাবাকে শক্ত করে ঝাপটে ধরলাম। খুব
ভালবাসি তোমাকে বাবা। কোনদিন বলতে পারিনি
কতটা ভালবাসি। অনেক বেশি ভালবাসি। এরকম বলনা।
.
বাবাকে চোখের জল ফেলতে দেখিনি, চশমার
ফাক নিচ দিয়ে পানি পড়ছিল সেটা বুঝতে পারছিলাম।তবে সেটা অসহায়ত্বের ছিলনা।
ছিল নির্ভরতার কান্না।
.
এখন বাবার হাসিমুখটা দেখে কতই না ভাল লাগে।
নাতী নাতনীদের সাথে সারাদিন দুষ্টুমি ছাড়া তিনি
থাকবেন ই না। কত করে বলি বাজার করা লাগবেনা
তোমার। কে শোনে কার কথা।।আরো ভাল লাগে যখন দেখি বাপ মেয়ে মিলে মজার গল্প করে। ও হ্যা রিতুকে মানে আমার বৌকে নিজের মেয়ে বানিয়ে ফেলেছে। আমার থেকে বাবাকে তার বৌ ই বেশি কেয়ার করে।
.
আফসুস হয়, বড় অফসুস হয় ঐ ছেলেদের জন্য,
যারা বাবা নামক মানুষটার স্বর্গীয় ভালবাসাটাকে মিস করে।। সুখে আছি। ভাল আছি বাবা নামক নি:স্বার্থপর একটা ভালবাসার, ভাল লাগার অনুপ্রেরনার মানুষকে নিয়ে,,,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com