Breaking News

বোরখা পরা সেই মেয়েটি | লেখক: সেখানে ফাহাদ

গাড়িটা স্টপিস হতেই লাফ দিয়ে ওঠে পরলাম।একটা সিটও পেলাম। এই সময়ে গাড়ি ভিতর সবথেকে বেশি জ্যাম থাকে।জ্যাম থাকে রাস্তাও। একদিকে অফিস অন্যদিকে গার্মেন্টস। আমি আকাশ,বাড়ি ঠাকুরগাও।ঢাকার শ্যামলিতে একটা প্রাইভেট ক্লিনিকে চাকরি করি। আর বাসা মিরপুর দোয়ারি পারা।

সেই হিসাবে প্রতিদিন আটটা পাচঁটায় বাসে করে আসা যাওয়া হয়। একটা মেয়ে আমার সিটের পাসে উপরের পাইপ ধরে দাড়িয়ে আছে। গাড়িটা কল্যাণপুর এসে থামল। পেছন থেকে এক ভদ্রলোক নামার জন্য গেইটের আসার সময় মেয়েটাকে একটা ধাক্কা দিল।কিন্তু ধাক্কা না দিয়েও লোকটা বের হতে পারতো।
মেয়েটা নিজেকে কন্ট্রোল রাখতে না পেরে একটা হাত আমার কাধের উপর ভর করে
কোন রকম দাড়িয়ে রইল।
মেয়েটা বোরখা পরা ছিল,চোখ ছারা কিছুই দেখা যায় না।
ওর মুখ থেকে একটা শব্দ বের হলো
সরি ভাইয়া।
আমার নিজেরি লজ্জা হতে লাগল।আমি বসে আছি ও মেয়ে হয়ে এভবে দাড়িয়ে আছে।
আমি ওঠে ওনাকে বসতে বললাম।
মেয়েটা একমুহুর্ত দেরি না করে বসে পরল।
পাসে বসা থাকা ভদ্রলোক বাসের একটু ঝাকুনিতে মেয়েটার উপর ধাক্কা খাচ্ছে।
মেয়েটার হয়ত এমন পরিস্থিতির সহে গেছে।তাই মুখ ফুটে কিছুই বলছে না।
মিরপুর দশে এসে ঐ লোক নামার জন্য সিট থেকে উঠতে লাগল।
মেয়েটা সিট থেকে দাড়িয়ে জায়গা করে দিল।
লোকটা চলে যাওয়াতে মেয়েটা জানালার পাসের সিটে চেপে বসলো।
আমি খালি সিটে পেয়ে বসলাম।
মেয়েটা কি যেন বিরবির করতে লাগল।
বেশিরভাগ সময়ই দাড়িয়ে যেতে আসতে হয়।কখনও মেয়েদের সাথে পাসাপাসা অথবা পিঠের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে।বসার সৌভাগ্য খুব কমই সময়ই হয়।
পুরবি সিনেমা হলের সামনে গাড়ি থেকে
নেমেই বাসার দিকে পা বারালাম।
অফিসে যত কষ্ট না হয়,তারচেয়ে বেশি কষ্ট হয় অফিসে যাওয়া আসার সময়।
সন্ধ্যা সাতটা ও দশটায় একটা করে টিউশনি করি। বাসার উপরে একটা অন্যটা পাচঁ মিনিটের রাস্তা।এই টিউশনির জন্যই এখানে থাকা।চারতলা বাড়ির নিচে ছোট একটা রুম আছে,সম্ভবত দাড়োয়ানের জন্য বানিয়েছে।দাড়োয়ান না থাকাতেই আমার কাছে ভাড়া দিয়েছে মাসে চার হাজার টাকা।
চাকরিটা নতুন,তবে বেতন নিয়ে ঝামেলা নাই।মাসের শুরুতে পরিশোধ করে দেয়।
আর টিউশনি থেকে যা পাই তা আমার চাওয়ার থেকেও বেশি ।
অনার্স পাস করে ঢাকায় এসেছি মাস্টার্স কমপ্লিট করার জন্য।
হঠাৎ চাকরিটা হয়ে গেল।
সব মিলিয়ে ভালই আছি।শুধু ক্লাস করতে পারিনা এমনকি বইও ধরার সুযোগ নাই।তারপরও আমি হ্যাপি।
বাড়ি থেকে আজ প্রায় ছয় হয় এসেছি।প্রতিদিন মা বাবা সাথে কথা বলি।আদরের ছোট বোনের মধুর মধুর বায়নাও মেটানো চেষ্টা করি।
আমার এত পরিশ্রম বাবা মায়ের সহ্য হয়না।
বাবা বলবে আল্লাহ্ কি আমাদের কম দিয়েছে?
ঢাকা গেলে পড়ারশুনার জন্য,এখন তা না করে পয়সা রুজি আরম্ব করলে।
জানিনা তোমার কি মতিগতি।এরকম ডায়লগ হরহামেসাই বাবা দিয়ে থাকে।
আর মায়ের কথা,এত পরিশ্রম করলে অসুস্থ্য হয়ে পরবি।নইলে একটা বিয়ে করে নে।তাহলে বাসায় ফিরে নিশ্চিন্তে খাইতে পারবি।
ভালই উপভোগ করছি জীবনটা।
কয়েক মাস পরে বাসটা পুরবি হলের সামনে থামলো।বাহিরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।চারিদিকে অন্ধকার হয়ে আছে।
গাড়িতে বসেই মানি ব্যাগ ও মোবাইল টিফিন বক্সের বাটি ভিতরে ঢুকিয়ে রাখলাম।
দশ মিনিটের রাস্তা।
প্রচন্ড বৃষ্টি মধ্যেই গাড়ি থেকে নেমে পরলাম।মেইন রোড থেকে গলির ভিতর ঢুকতেই মেয়েলি কন্ঠ শুনতে পেলাম।
এই যে ভাই শুনুন।
আমি ঘুরে দাড়ালাম।
দেখি একটা বোরখা পরা মেয়ে।
তার শরীরটা ভিজে শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুটে উঠেছে।
জি আমাকে কিছু বলছেন?
হু আপনাকেই।
দেখছেন না সব দোকান পাটবন্ধ।রাস্তায়ও তেমন লোকজনও নাই।
আমার ভয় করছে।
এখান কার ছেলেগুলো ভাল না।
তা আপনার জন্য কি করতে পারি?
আমি আপনার সাথে যাবো!
আপনি আমার সাথে যাবেন,মানে কি? বুঝলাম না।
মেয়েটা বলল,
আমার বাসা আপনার বাসা কয়েক বাড়ির পরেই।
তাই….
ও আচ্ছা,
কথা না বাড়িতে হাটা আরম্ভ করলাম।
গলির ভিতরে ছেলেরা বৃষ্টিতে ভিজতে ছিলো।
কেউ কেউ খুব বাজে মন্তব্য করলো।
যা বলতে আমার রুচিতে বাধে।
আমি মেয়েটা তার বাসা পর্যন্ত পৌছে দিলাম।ভিতরে ঢুকে যাওয়ার আগে বলল।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
দেখলেনত ছেলেগুলো কি আজেবাজে কথা বলল।
আপনি না থাকলে হয়ত মুখে যা বলেছে তা করেই দেখাইত।
আমার চোখেত দিকে তাকিয়ে মেয়েটা কথাগুলো বলল।
মেয়েটার মায়াবি চোখদুটো আলো আধারিতেও জল জল করছে।
আমি কোন কথা না বলে চলে আসলাম।
এমনিতেই আমি চাপা স্বভাবের মানুষ।কথা না বলে থাকতে পারলে সহজে মুখ খুলি না।নিচের দিকে চেয়ে হাটি।
ছোট বেলা থেকেই আমার এ অভ্যাস।বন্ধুরা অবশ্য এ নিয়ে প্রায় মজা করতো।
পরদিন সকালে গেইট দিয়ে বেরিয়ে দেখি
একটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে।
মেয়েটি আমাকে ছালাম দিলো।
আমি ছালামের উত্তর দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম ।
আপনাকেত ঠিক চিনতে পারলাম না।
মেয়েটি হেসে বলল গতকাল আমার এত বড় উপকার করলেন।আজই তা ভুলে গেলেন।
আমি বললাম,
আসলে আপনার মুখ ঢাকাছিলো,আজও তাই চিনতে পারি নি।
তবে চোখ দুটো খুব চিনা চিনা লাগছে।
চলবে..
পরবর্তী পর্বগুলো দেখতে আমাদের ব্লগের সাথেই থাকুন।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com