Breaking News

ডিভোর্স । পর্ব - ৩৯



অন্তরাঃ যখন প্রথম ওর আগমনের কথা শুনেছিলাম বলে বুঝাতে পারবো না সেই অনুভূতি মনে হয়েছিলো এ বুঝি মরা গাছে ফুল ফোঁটার মতো

হৃদয় অন্তরার হাত ধরে পাশে বসে আছে কেমন ভয় ভয় করছে ইচ্ছে করছে ডক্টরের কথায় বিশ্বাস করতে
কিন্তু ভয় হচ্ছে যদি মিথ্যে হয়
হৃদয়ঃ হঠাৎ অন্তরা নড়েচড়ে ওঠলো । 
অন্তরা..
অন্তরাঃ ম--মাথাটা এতো ভার লাগছে কেন?
হৃদয়ঃ তুমি একটু অসুস্থ তাই এমন লাগছে।
অন্তরাঃ কী.কী হয়েছে আমার?

হৃদয়ঃ আরো না খেয়ে থাকো বেশি করে,,, তাহলে আর অজ্ঞান হয়ে পরে থাকবে না,,(রাগ করে)
অন্তরাঃ আমি অসুস্থ আপনি তাও আমার সাথে রাগারাগি করছেন,,,(ধীরে ধীরে চোখ খোলে হৃদয়ের দিকে তাকালাম,,,,। কিন্তু এটা তো আমাদের রুম নয়,,,। রুম দেখে চট করে ওঠে বসলাম,,,)
হৃদয়ঃ কী হলো আবার,,,??

অন্তরাঃ এটা কোথায়,,,, এটাতো আমাদের রুম নয়,,
হৃদয়ঃ এটা হসপিটাল,,,, অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে,, কিছুতেই জ্ঞান ফিরছিলো না,,, তাই হসপিটালে নিয়ে এসেছি,,,,
অন্তরাঃ কিন্তু আপনার চোখমুখ এমন কেন লাগছে,,,??
হৃদয়ঃ ক,,,কই এমনই,,,,

অন্তরাঃ আপনি কী কান্না করেছেন,,,?? ছিহ্ ছিহ্ ছিহ্ হৃদয় চৌধুরী এতো ভিতু,,, বউ অজ্ঞান হয়ে গেছে দেখে কান্না করে দিয়েছে,,,,, (ব্যাঙ্গ করে,,,) আমি হৃদয় চৌধুরী কাউকে ভয় পাই না,,,(হৃদয়কে কপি করে)
হৃদয়ঃ অন্তরা আমি এখন একদম মজা করার মুডে নেই,,,,
অন্তরাঃ ওহ্ তাই বুঝি,,,,, একটু অজ্ঞান হয়েছি বলে এই হাল,,, যদি মরে যাই তখন কী করবেন,,,??
হৃদয়ঃ অন্তরা,,,,,,,,,,,(রেগে ধমক দিয়ে,,,)
অন্তরাঃ (উনার চোখেমুখে আমাকে হারানোর ভয় যেন জেঁকে বসেছে,,,, কিন্তু কেন,,,) সরি,,,,,
(আস্তে করে অন্তরা সরি বলতেই হৃদয় অন্তরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,,,)
হৃদয়ঃ কবে আমাকে বুঝবি তুই,,,,?? বলতে পারিস,,, আমার কষ্ট কী কোনদিন বুঝবি না,,,,??
অন্তরাঃ সরি,,,(আমিও উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম,,,)
নার্সঃ উহুম,,,,,,,

(নার্সের আসার শব্দে দুজন দুজনকে ছেড়ে বসলো)
নার্সঃ টেস্টের সব রেডি,,, রোগীকে নিয়ে যেতে হবে,,,
অন্তরাঃ আবার এসব করার কী আছে,,?? অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম এখন জ্ঞান ফিরেছে,,, বাসায় চলে যাবো,,,,

হৃদয়ঃ সিস্টার,,, কতো সময় লাগবে,,,,
নার্সঃ ইমারজেন্সি করা হচ্ছে তো,,, বেশি সময় লাগবে না,,,, আর রিপোর্টও আজই পেয়ে যাবেন,,
হৃদয়ঃ ওকে,,,, অন্তরা উনার সাথে যাও,,,,
অন্তরাঃ কিন্তু,,,,,,
হৃদয়ঃ আমি বলেছি যেতে,,,(কঠিন গলায়)
অন্তরাঃ (উনার ভয়ে আর কিছু বলতে পারলাম না,,,
নার্সের সাথে যেতে লাগলাম,,,)

হৃদয়ঃ (অন্তরা আবার ঘুমিয়ে পড়েছে বেডে,,, আমি পাশে বসে আছি,,,, রিপোর্ট নিয়ে তারপর বাসায় যাবো,,,,। মাকে বলে দিয়েছি অন্তরা একটু অসুস্থ তাই ডক্টরের কাছে নিয়ে এসেছি,,,। অন্তরাও কিছু জানে না এখনো,,,,, এই অপেক্ষার প্রহর যেন শেষই হচ্ছে না,,,,।)
ডক্টরঃ মিস্টার হৃদয়,,,,,

ডক্টরঃ ই,,ইয়েস ডক্টর,,, (উত্তর দিতেও গলা কাঁপছে,,, কী আছে রিপোর্টে,,,?? অন্তরা মা হতে না পারলেও সমস্যা নেই,,,, সেটা আমি আগেই মেনে নিয়েছি,,, ওর যেনো কোন কিছু না হয় আল্লাহ,,,। ও আমার কাছে থাকলেই হবে আর কিছু চাই না,,,, আমার সন্তান আছে,,, আমার সিয়াম)
ডক্টরঃ আমার রিপোর্ট ভুল,,,,,

হৃদয়ঃ জানতাম আপনার রিপোর্ট ভুল ছিলো,,,,
ডক্টরঃ আমার কথাটা আগে শেষ করতে দিন,,,, আমি বলেছিলাম আমার রিপোর্টে কোন ভুল হতে পারে না,,,, সেটা প্রমাণ করার জন্য আমি বারবার টেস্ট করেছি,,, কিন্তু একই রিপোর্ট এসেছে,,, মিসেস চৌধুরী ৩ মাসের প্রেগনেন্ট,,,,

হৃদয়ঃ ক,,,কিন্তু এ,,এটা কীভাবে সম্ভব,,,,, (পাথর হয়ে,,)
ডক্টরঃ কেন,,,, আপনি খুশি হননি,,,,??
হৃদয়ঃ আপনি আর একবার যদি,,,,,
ডক্টরঃ আমি বারবার করেছি,,, একবার নয়,,,, বারবার করেছি,,,, কিন্তু আপনি বিশ্বাস কেন করতে চাইছেন না,,,,??

হৃদয়ঃ ত,,তার মানে আমি সত্যি বাবা হতে চলেছি আর অন্তরা মা,,,,??
ডক্টরঃ হ্যাঁ,,,, (মিষ্টি হেঁসে,,,,)
(হৃদয় কী রিয়্যাকশন দিবে বুঝতে পারছে না,,,?? স্তব্ধ হয়ে বসে আছে,,,। মানুষ যেমন অতি আঘাতে পাথর হয়ে যায়,,, হৃদয় আজ অতি আনন্দে পাথর হয়ে গেছে,,,,,, ডক্টর কিছুই বুঝতে পারছে না,,,,। বাচ্চার কথা শুনলে সবাই খুশি হয় কিন্তু হৃদয় কোন রিয়্যাকশন দিচ্ছে না,,,,। এক দৃষ্টিতে অন্তরার পেটের দিকে তাকিয়ে আছে,,,। ডক্টর কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকা হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে যেতে গেলে ,,)
হৃদয়ঃ ডক্টর,,,,,,,

ডক্টরঃ জী বলুন,,,??
হৃদয়ঃ (কোনো কথা না বলে অন্তরার আগের রিপোর্টগুলো উনার হাতে দিলাম,,,, অন্তরার টেস্ট করাতে নিয়ে গেলে অন্তরার বাসা থেকে এগুলো আনিয়েছি,,, ডক্টর রিপোর্টগুলো নিয়ে দেখতে লাগলো,,,,)
ডক্টরঃ এটা কীভাবে সম্ভব,,,?? এই রিপোর্ট সম্পূর্ণ ভুল,,, উনাকে কোন অপারেশনই করা হয়নি,,, তাহলে এটা কীভাবে হতে পারে,,,??

হৃদয়ঃ এই রিপোর্ট ভুল,,,,,?? (অবাক হয়ে)
ডক্টরঃ সম্পূর্ণ ভুল,,,, আপনি এই ডক্টরের সাথে আবার যোগাযোগ করুন,,,, এমন একটা রিপোর্ট কেন দিয়েছে আমি বুঝতে পারছি না,,,,।
হৃদয়ঃ হুম,,,,(রাগে চোখমুখ লাল হয়ে গেছে হৃদয়ের,,,)
ডক্টরঃ উনার খেয়াল রাখবেন,,,,, প্রথমবার মিসক্যারেজ হওয়ার জন্য এইবার ঝুঁকি অনেক বেশি,,,, অনেক সাবধানে রাখতে হবে,,,,। উনাকে বেড রেস্টে রাখাই ভালো,,,, শরীরও অনেক দূর্বল,,
হৃদয়ঃ অনেক বেশি খেয়াল রাখবো ওর,,,
ডক্টরঃ হুম,,,,

(ডক্টর মিষ্টি হেঁসে বের হয়ে গেলেন,,,, হৃদয় অন্তরার দিকে তাকালো,,,, কী নিষ্পাপ মুখটা,,,,?? মিথ্যে অপবাদ দিয়ে ভেতর থেকে কতটা ভেঙে দিয়েছিলো মেয়েটাকে,,,,)
হৃদয়ঃ অ,,,অন্তরা এটা কী কোন স্বপ্ন,,,?? নিজের হাতে চিমটি কাটলাম,,,,না স্বপ্নতো নয়,,, নিজের কাজে নিজেই অবাক হচ্ছি,,,, আমার কী মাথা খারাপ হয়ে গেছে,,,?? অন্তরার কাছে গিয়ে পেটের ওপর থেকে জামা সরিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি,,,, hey,,, can you hear me,,,, You know you’re coming, I still can’t believe it,,,,The happiest man in the world seems to be himself today,,,,,,love you a lot,,,,,,(কোমর জড়িয়ে পেটে মুখ গুঁজে দিলাম,,,। চোখ থেকে টপটপ পানি পড়ছে নিজেই জানি না,,,)
অন্তরাঃ (পেটে গরম তরল পদার্থ অনুভব করতেই ঘুম ভেঙে গেলো,,, চোখ খোলে অবাক হয়ে গেলাম,,,, উনি চেয়ারে বসে বেডে আমার পেট জড়িয়ে আছে,,,,। 

কী হয়েছে উনার,,,??) ক,,,কী হয়েছে আপনার,,,??
হৃদয়ঃ (অন্তরার কথা শুনে ওর দিকে তাকালাম,,,)
অন্তরাঃ(উনাকে দেখে ভয় পেয়ে গেলাম,,,, উনার চোখে পানি কেন,,,?? কী হয়েছে,,,,??) কী হয়েছে আপনার,,,?? আপনি কাঁদছেন কেন,,,??
হৃদয়ঃ (কোন কথা না বলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম অন্তরাকে,,,,।)
অন্তরাঃ আ,,,, আমার কিন্তু এখন ভয় করছে,,, কী হয়েছে বলুন আমাকে,,,??
হৃদয়ঃ (অন্তরাকে ছেড়ে ওর মুখোমুখি বসে চোখের দিকে তাকালাম,,, সত্যি ভয় পাচ্ছে ও,,,,। 

ওর হাতটা ধরে ওর নিজের পেটে রাখলাম,,,)
অন্তরাঃ(উনি আমার হাত পেটে কেন রাখলেন,,,, প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম,,,)
হৃদয়ঃ এইখানে একটু একটু করে বড় হচ্ছে আমাদের ভালোবাসার প্রতীক,,,,(ফিসফিস করে)
অন্তরাঃ(উনার কথা শুনে পেট থেকে ছিটকে হাত সরিয়ে ফেললাম,,,,। উনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন,,,,) মিথ্যে আশা দেবেন না,,,,, কষ্টগুলো দ্বিগুণ হয়ে যায়,,, এটা কখনো সম্ভব নয়,,,,,(ডুকরে কেঁদে ওঠে)
হৃদয়ঃ (অন্তরার মুখটা দুহাতের আঁজলে নিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে দুচোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে একটা কিস করলাম,,,) তাকাও আমার দিকে,,,,

অন্তরাঃ(উনার দিকে তাকালাম,,,, উনার চোখে পানি আর ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি,,,)
হৃদয়ঃ আমি কী এমন কিছু বলতে পারি যার জন্য আমার অন্তুর কষ্ট দিগুণ হতে পারে,,,,??
অন্তরাঃ(মাথা দুলিয়ে না বললাম,,,)
হৃদয়ঃ আমি যা বলছি সব সত্যি অন্তরা,,,,। তুমি মা হতে চলেছো আর আমি বাবা,,,,
অন্তরাঃ(উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠলাম) কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব,,,??
হৃদয়ঃ (কিছু বললাম না,,, অনেক সময় কেঁদে অন্তরা একটু শান্ত হয়ে এসেছে তারপর বললাম,,,) তোমার আগের রিপোর্ট সব মিথ্যে ছিলো,,,,

অন্তরাঃ(অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম) মিথ্যে,,,, কিন্তু কেন,,,??
হৃদয়ঃ এর উত্তর তো সেই ডক্টরই দিতে পারবে,,, তার থেকেই এর উত্তর আদায় করবো,,,,
অন্তরাঃ ত,,তারমানে সত্যি আমি,,,,,(পেটে হাত রাখলাম,,,, এই অনুভুতি প্রকাশ করার কোন শব্দ হয়েতো এখনো আবিষ্কার হয়নি,,,)
হৃদয়ঃ (অন্তরার ঠোঁটে ছোট করে একটা কিস করলাম,,,,) হুম সত্যি,,,,,,

সারাঃ মা,,,,,,,,
অন্তরাঃ (সারার ডাকে ঘোর কাটলো,,, ওর দিকে তাকালাম,,, একদম হৃদয়ের কার্বন কপি,,,,, চোখ,, নাক,,, ঠোঁট,,, হাসি সব হৃদয়ের মতো,,,)
সারাঃ মা,,,,,,
অন্তরাঃ কী হয়েছে সোনা,,,?? ঘুম হয়েছে,,??
সারাঃ হুম হয়েছে তো,,,,, ভাইয়া কোতায়,,,,??
অন্তরাঃ( এখনো কিছু শব্দ বলতে পারে না সারা,,,,) ভাইয়া তো খেলতে চলে গেছে,,,,,
সারাঃ আমিও যাবো,,,,
অন্তরাঃ যেতে হবে না,,, ভাইয়া একটু পর চলেই আসবে,,, তুমি এখন চলো ফ্রেশ হবে,,,,
সারাঃ না আমি ভাইয়া যাবো,,,,,
অন্তরাঃ সারা,,,, জেদ কেন করছো,,,,??
সারাঃ আমি ভাইয়া যাবো,,,,,,

অন্তরাঃ(এই মেয়ের এতো জেদ কীভাবে হলো আল্লাহ জানে,,,, যা বলবে তাই হবে,,,। 
এখন তার ভাইয়ার কাছে না নিয়ে গেলে কিছুই করবে না,,,) চলো তোমার ভাইয়া কাছে,,,,
সারাঃ ইয়াহু,,,, চলো,,,,,
অন্তরাঃ(মেয়ের পাগলামি দেখে মুচকি হাসলাম। ভাইয়ার জন্য পাগল একদম। 
সারা আর সিয়ামের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই আমার কাছে মা হওয়ার স্বাদ সিয়াম আমাকে প্রথম দিয়েছে তাই সেই আমার প্রথম সন্তান

জ্যোতিঃ এতো ঝামেলা ভালো লাগে না আমার বাপ মেয়ে দুটোতেই আমার লাইফ হেল করে দিলো এই মেয়ে সারাদিন ক্যা ক্যা করবে কিন্তু খাবে না

মেয়ের খাবার রেডি করছিলাম পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরলো খালি পেটে হাত রেখে চুলে মুখ গুঁজে দিয়েছে
চলবে,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com