Breaking News

ফিরে আয় | পর্ব -০৩

সবাই গাড়িতে উঠে বসলাম,ড্রাইভার গাড়ি চালাতে লাগলো,কিছুদূর যাওয়ার পর দেখি রাস্তার মাঝখানে লোকজনের ভির লেগে আছে,গাড়ি থেকে নেমে গেলাম কি ঘটেছে বিষয়টা দেখার জন্য,লোকজনের ভির ঠেলে সামনে যেতেই দেখি সাগর রক্ত মাখা অবস্থায় পরে আছে,আমার চোখ তো ছানাবড়া হয়ে গেলো এটা দেখে,সাগর তো মারা গিয়েছিলো,তাহলে আবার ফিরে আসলো কিভাবে..।
আমি ছেলেটাকে দেখে প্রায় থমকে গেছি,তখনই পিছন থেকে আম্মু এসে ধাক্কা দিলো,
–কিরে মাহফুজ এভাবে এখানে এসে দাড়িয়ে পরলি কেন..?
–আম্মু তাকিয়ে দেখো সাগর শুয়ে আসে,কিন্তু ছোটবেলায় তো সাগর মারা গিয়েছিলো,এখন ফিরে আসলো কিভাবে..?
–আরে মাহফুজ তোর মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি..? এটা সাগর নয়,ছেলেটাকে দেখতে সাগরের মতোই,দেখি এখন আমাকে বিষয়টা দেখতে দে তো..!
মাহফুজ, আম্মুর কথা শুনে ছেলেটার দিকে ভালো করে তাকালাম,আর তখনই একটা ধাক্কা খেলাম,আসলেই তো এটা সাগর নয়,ঠিক সাগরের মতোই দেখতে,
আম্মু, মাহফুজ তুই রাহাতের সাথে গিয়ে তাড়াতাড়ি স্ট্রেচার টা নিয়ে আয়,ছেলেটার শরীর থেকে অনেক রক্ত বের হয়ে গেছে,এখুনি ওকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে,নাহলে বাচানো সম্ভব হবে না।
মাহফুজ, তাড়াতাড়ি রাহাতের সাথে গিয়ে গাড়ি থেকে স্ট্রেচার নিয়ে আসলাম,ছেলেটাকে নিয়ে গাড়িতে উঠালাম।
আম্মু, ছেলেটার কাছ থেকে রক্তের গ্রুপ জেনে নেয়,মাহফুজ তুই হসপিটালে চলে যা,এক ব্যাগ O+ রক্ত লাগবে,তাড়াতাড়ি যা,
মাহফুজ, রাহাত তুই আম্মু দের সাথে চলে যা,আমি গিয়ে রক্ত নিয়ে আসছি,আম্মু তুমি হসপিটালে ফোন করে দাও,আমি চলে যাচ্ছি।
তারপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ঝড়ের গতিতে চালানো শুরু করলাম,যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে হসপিটালে পৌছাতে হবে।
এদিকে রাহাত সবাইকে নিয়ে হসপিটালের দিকে রওনা দিলো,
রোগীর অবস্থা বেশি ভালো না,এখন হসপিটালে যাওয়ার আগে রক্ত দিয়ে হবে রোগীকে।
একটু পরে মেইন রাস্তায় চলে যাওয়ার পরই রাহাত গাড়ি থামিয়ে দিলো,
মাহফুজের আম্মু, কি হলো রাহাত,তুই গাড়িটা থামিয়ে দিলি কেন..?
রাহাত, আন্টি সামনে প্রচুর পরিমানে জ্যাম হয়ে আছে,আর একটুও আগানো যাচ্ছে না।
মাহফুজের আম্মু, কিন্তু আমাদের তো দেড়ি করার সময় নাই,
ছেলেটা যেকোনো মুহূর্তে অজ্ঞান হয়ে যাবে।
রাহাত, আন্টি তুমি একটু অপেক্ষা করো,
আমি সামনে দেখে নিই জ্যাম কতো দূর আছে,
রাহাত গাড়ি থেকে নেমেই মাথায় হাত দিয়ে বসে,
কারন যতোদূর চোখ যাচ্ছে ততোদূর জ্যাম দেখা যাচ্ছে,
এই অবস্থায় তাদের এ্যাম্বুলেন্স একটুও আগানো যাবে না।
রাহাত গাড়ির কাছে চলে আসে,
আন্টি জ্যাম তো মনে হয় ক্লিয়ার হতে আরো কয়েক ঘন্টা লাগবে,
কারন যতেদূর চোখ যাচ্ছে, শুধুই গাড়িগুলো চোখে পড়ছে,
কথাটা শুনে মাহফুজের আম্মু অনেক চিন্তায় পরে যায়,
ছেলেটার শরীরে রক্ত পুষ না করলে অজ্ঞান হয়ে যাবে,
তখন আর বাচানো সম্ভব হবে না,মাহফুজের আম্মু তার মেয়ে সুমা দিকে অসহায় হয়ে তাকায়,
সেফা, আরে আম্মু তুমি চিন্তা করছো কেন..? ভাইয়া তো আছেই,
তুমি তো ভাইয়াকে বলছো যে রক্তের ব্যবস্থা করে নিয়ে আসতে,
সেফা মোবাইলটা বের করে ডায়াল নাম্বারে যায়,
মাহফুজের আম্মু, কিরে সেফা তুই কাকে ফোন করছিস..?
সেফা, আরে আম্মু আমি ভাইয়াকে ফোন করছি,
ভাইয়া ঠিকই কোনো না কোনো পায় বের করে ব্লাড নিয়ে আসবে।
তারপর সেফা মাহফুজকে ফোন করে, আরে ভাইয়া তুমি কোথায় আছো..?
মাহফুজ, এই তো আমি চলে আসছি,কিন্তু সামনে একটু জ্যাম ধরে আছে,
এটা সরলেই চলে আসছি,
সেফা, ভাইয়া আমি তোর লোকেশন দেখেছি,
তুই যেখানে আছিস,তার থেকে দুই কিলোমিটার দূরে আমরা আছি,
আর এই পর্যন্ত পুরো টাই জ্যাম হয়ে আছে,প্লিজ তুই তাড়াতাড়ি ব্লাড টা নিয়ে আয়,
রোগীর অবস্থা একদম খারাপ হয়ে গেছে।
মাহফুজ, ওহহহ সিট কি বলিস তুই..?
আচ্ছা ফোনটা রাখ আমি দেখছি কি করা যায়,
তারপর ফোনটা কেটে দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পরলাম,
তারপর গারির উপরে উঠে সামনে তাকিয়ে দেখি রাস্তার একটা জায়গাও আর বাকি নাই,
পুরোটাই গাড়ি দিয়ে ব্লক করা।
নাহহ এখন কি করা যায়,যে করেই হোক রোগীটাকে বাচাতে হবে,
ঠিক তখনই মনে পরলো আমার ড্রোনের কথা,
বাড়ি থেকে আসার সময় ড্রোনটাকে নিয়ে এসেছিলাম।
গাড়ির ব্যাক সিট থেকে ড্রোনটাকে বের করে নিলাম,
এবার এই ড্রোনটাই আমাকে সাহায্য করতে পারে,
ড্রোনের নিচে ব্লাডের ব্যাগটাকে আটকে দিয়ে ড্রোনটা উড়িয়ে দিলাম।
কিন্তু একটু দূরে যেতেই সিগনাল লষ্ট দেখাল,
ওহহহ এই সময়ে ড্রোন তুই কি শুরু করলি,অন্তত আজকে তো উড়ে যা।
আর তোকে উড়তে হবে না।
দৌড়ে ড্রোনের কাছে চলে গেলাম,
এভাবে একটু দূরে গেলেই ড্রোনটা সিগনাল লষ্ট দেখাচ্ছে,কি করা যায়..?
হা মনে আসছে একটা ব্যাপার,বাসায় যখন ড্রোনটাকে নিয়ে প্রাকটিস করছিলাম,
তখন ছাদ থেকে উড়িয়েছিলাম,উচু জায়গা তে গিয়ে ড্রোন অনেক ভালো উড়েছিলো।
ঠিক এখানেও আমার কোনো উচু জায়গায় যেতে হবে।
তারপর আর দেরি না করে আশেপাশে তাকালাম,একটি উচু বিল্ডিং আছে,
এটা আমার ড্রোনটাকে উড়ানোর জন্য পারফেক্ট একটা জায়গা।
তখনই বিল্ডিংটাতে উঠার জন্য দৌড়ানো শুরু করলাম,
আর আস্তে আস্তে আমার ড্রোনটাও চলতে শুরু করলো।
অনেক কষ্টে বিল্ডিং এর উপরে উঠে গেলাম,কিন্তু হঠাৎ ড্রোনটা দেখতে পেলাম না,
আরে ড্রোন তুই আবার কোথায় গেলি..!
ওহহহ দেখতে পেয়েছি,আরে তুই তো পানিতে নেমে যাচ্ছিস,
এখন প্লিজ উড়ে যা,এখানে জীবন মরনের ব্যাপার হচ্ছে,
বুকটা দুরুদুরু করতে লাগলো,ড্রোনটা যদি এখন না উড়ে যায়,
তাহলে একটা নিরীহ মানুষের প্রাণ চলে যাবে।
হঠাৎ করে তাকিয়ে দেখি ড্রোনটা উপরে চলে আসছে,
আমি তো প্রচন্ড খুশিতে লাফ দিয়ে উঠলাম,
তারপর মোবাইলটা বের করে সেফার লোকেশনে ড্রোনটা ফিট করে দিলাম,
এবার ড্রোনটা খালি জায়গা আর ভালো কানেকশন পেয়ে উড়তে শুরু করলো।
এদিকে সেফা আর অপেক্ষা না করতে পেরে গাড়ি থেকে নেমে আসলো।
ঠিক তখনই ওর বাবা সামনে পরলো,
–বাবা তুমি এখানে গাড়ি থেকে নেমে এসেছো কেন..?
–তো কি করবো বল..? তোর ভাইকে তো পাঠিয়ে ছিলাম যে ব্লাড নিয়ে আসার জন্য,
কিন্তু এখোনো তো আসছে না।আবাস এই এতো জ্যাম…!
–জানি না বাবা,ভাইয়া তো বললো ব্লাড নিয়ে আসছে,
কিন্তু কিভাবে ব্লাড নিয়ে আসবে সেটা তো জানি না।
–কি বলিস তুই,এখানে দুই কিলোমিটার ধরে জ্যাম লেগে আছে,
এখানে মাহফুজ আসবে কিভাবে..?
–সেফা যখনই কথা বলতে যাবে,তখনই উপরের দিকো চোখ পড়ে,
সাথে সাথে ফোনটাও বেজে ওঠে,
মাহফুজ, সেফা তুই কি ড্রোনটা দেখতে পাচ্ছিস..?
সেফা, হ্যা ভাইয়া আমি ড্রোনটা দেখতে পাচ্ছি☺ সেফা খুশির আবেশে কেদে ফেলে…
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com