Breaking News

আই মিস ইউ | পর্ব-৩

“আপনি কি করেছেন শুভ্রর সাথে? ” তাথৈ এর মুখ দিয়ে প্রশ্ন টা বেরিয়ে গেলো।
“আগে বলো শুভ্র চৌধুরী ই তোমার বয়ফ্রেন্ড , সেই কানাডা প্রবাসী! “
তাথৈ মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি জানালো। আর তারপর ই সারা রুমে আরহামের হাসির শব্দে যেন দেয়ালের ওই কোন এই কোন বাড়ি খাচ্ছিল। তাথৈ এর অনেক রাগ লাগছে। একটা মানুষ এমন কিভাবে হতে পারে।
“আপনি কি বলবেন মিস্টার আরহাম? “
“আমি আমার হাসি থামাতে পারি না মিস সি আই ডি। সিরিয়াসলি এই ছেলের সাথে রিলেশন করেছেন! “
তাথৈ এর মুখের রক্ত যেন সরে গেলো। ও সাথে সাথে প্রশ্ন করল, “মানে? “
মানে কথাটার উত্তর দেওয়ার আগেই আরহামের ফোন টা বেজে উঠলো। আরহাম কথা না বলে টেবিল থেকে ফোন টা নিয়ে রিসিভ করল।
“ইয়াহ বেবি, আসবো আজকে আমি। তুমি কিন্তু সময় মত থাকবে। “
তাথৈ দাঁতে দাঁত চেপে ফোন টা আরহামের কান থেকে টেনে নিয়ে কল টা কেটে দিলো। আরহাম গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলো, “এটা কোন ধরনের ম্যানার? আমি তোমার বস ভুলে গেছো? “
“আমি কিছু মনে রাখতে চাই না, করতেও চাই না।আপনি শুধু আমাকে বলেন আপনি কি বলেছেন ওকে? “
“মিস তাথৈ আমার কাজ আছে। আমার গার্লফ্রেন্ড আমার জন্য ওয়েট করছে বারে। আর আমি এসে মিটিং করব।”
আরহাম ফোন টা টেনে নিলো তাথৈ এর হাত থেকে। তাথৈ উত্তর না পেয়ে পাগলের মত হয়ে যাচ্ছিলো। এক রকম রেগেই আরহামের হাত টা টেনে ধরল। এই প্রথম আরহামের গায়ে হাত দিলো তাথৈ। কিন্তু এই মুহুর্তে সবকিছু ভুলে ও বললো, “আমার উত্তর দিবেন প্লিজ। আমি হাত জোড় করছি মিস.আরহাম। “
আরহাম ভ্রু কুঁচকে কিছু সময় তাথৈ এর দিকে চেয়ে রইল। তারপর কি যেন ভেবে একটা বাকা হাসি দিয়ে বললো, “ওকে বলবো বাট একটা শর্ত আছে। “
তাথৈ অসহায়ের মত বললো, “কি শর্ত? “
“আমার সাথে বারে যেতে হবে। আমার কাজ শেষ করব তারপর বলবো আসার সময়। “
তাথৈ এর চোখের মনি দুটো একদম কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলো। “মানে কি! আমি কেনো আপনার সাথে সেখানে যাবো! “
“জানার ইচ্ছে থাকলে চলো না হয় থাক। সময় মত সব জানতে পারবে। অবশ্য তোমার সেই গুলিস্তানের বয়ফ্রেন্ড তোমাকে বলবেও না। আমি ও না জানালে তোমার জানার কোন উপায় ও নেই।”
তাথৈ এর নাক মুখ রাগে ফেটে পড়ছিল। চরম ক্ষোভ চেপে তাথৈ বললো, “আচ্ছা চলুন। বাট আমি ভেতরে যাবো না, আপনার জন্য গাড়িতেই ওয়েট করব। “
আরহাম হেসে বললো, “নো। তুমি ভেতরে যাবা যেহেতু তুমি আমার পিএ। তুমি ভেতরে ওয়েট করবে আমি কাজ সেরে তোমাকে নিয়ে আবার ব্যাক করব অফিসে। “
তাথৈ রাগ টা কে দাঁতে দাঁত চেপে সয়ে নিলো। কারন এই মুহুর্তে ওর জানা প্রয়োজন শুভ্রকে আরহাম কি বলেছে। শুভ্র সারাদিন অনলাইনে অথচ সকালের পর একবারো কথা বললো না।আর আরহাম কি করে জানে শুভ্রর কথা। আরহাম কে কোন ভরসা নেই ওর।
গাড়ি এসে থামলো গুলশানের নামকরা এক বারের সামনে। তাথৈ এক রকম বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল গাড়িতে।আরহাম নামার আগেই ও দ্রুত গাড়ির দরজা খুলে বের হয়ে গেলো। সারাটাক্ষন শুধু আরহাম ফোনে মেয়েদের সাথে কথা বলেছে। মনে হয়েছে যেন ও আজ দুনিয়ার সব মেয়েকে কলে নিয়ে এসেছে।
“বাহ! বারে ঢুকার এত শখ তোমার জানা ছিলো না তো। “
তাথৈ বাকা উত্তরে বললো, “আপনার সাথে এক জায়গায় বসে থাকার চাইতে বারে ঢুকে যাওয়া বেশি প্রিফার করব আমি।”
আরহাম গেট লক করে বললো, “ওকে দেন চল ভেতরে। দেখি কতটা প্রিফার কর।”
দুজন ভেতরে ঢুকে গেলো। ঘড়িতে রাত ৭.৩০। তেমন মানুষ জমে নি এখনো তবে নিতান্ত কম ও না মানুষ। ভেতরে ঢুকতেও তীব্র মিউজিক এর আওয়াজ কানে লাগলো তাথৈ এর। বিরক্ত হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে পাশে আরহাম কে কিছু বলার জন্য তাকাতেই দেখলো আরহাম হেঁটে একদম ড্রিংকস করার জায়গায় চলে গেলো।তাথৈ অতিরিক্ত রকমের বিরক্ত হচ্ছে আজ। আশেপাশে সবাই ও কে নিয়ে কথা বলছে সেটাও আন্দাজ করতে পারছে। মাথায় হিজাব আর এমন পোশাকে এখানে কেউ আসে নি আর হয়তো আসেও না। তাথৈ মাথা নিচু করে নিজের অস্বস্তি টা কে কাটাতে চেষ্টা করলো। লাল,সবুজ, হলুদ লাইটের আলোয় পুরো হল টা কে এক ভিন্নরূপ দিয়েছে।তাথৈ আরহাম কে খুঁজার জন্য সামনে এগিয়ে গেলো। কিছুদূর থেকেই দেখলো আরহাম একটা মেয়ের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে আছে। দুজন দুজনের হাত ধরে এমনভাবে বসে আছে যেন হাজবেন্ড ওয়াইফ। মাঝে মাঝে গালে গাল লাগিয়ে এত হাসাহাসি করছে। তাথৈ দূর থেকেই নির্লজ্জ বলে আরহাম কে গালাগাল করে উদ্ধার করতে লাগলো।
তাথৈ যখন ওদের কাছে পৌঁছালো, আরহাম ও কে দেখেও না দেখার ভান করলো। “এই যে শুনছেন.. “
পাশের মেয়েটা কিছুটা কপাল কুঁচকে বললো, “আরহাম হু হিজ শি? তোমাকে কেনো ডাকছে? “
আরহাম মহা বিরক্তি নিয়ে বললো, “আমার পিএ, ওরফে বাবার গোয়েন্দা। “
মেয়েটা কিছু বলার আগেই তাথৈ বললো, “আপনার কাজ শেষ হতে কত সময় লাগবে? আমি তাহলে গাড়িতে ওয়েট করবো। “
“সময় লাগবে। কনফারেন্স কয়টায় শুরু হবে? “
“৯.৩০ এ শুরু হবার কথা। আগেই পৌঁছাতে হবে কারন আমাদের ফাইলগুলো ও প্রিপেয়ার করতে হবে। “
আরহাম পাত্তা দিলো না। খুব গা-ছাড়া ভাব নিয়ে বললো “তুমি অপেক্ষা করো। আমি আসবো কিছু সময় পরে। আর এখন গাড়ি লক করা, খুলে দেওয়ার জন্য বাইরে যেতে পারবো না আমি।”
তাথৈ পালটা বলতে চাইলেও সুযোগ না দিয়ে আরহাম মেয়েটার হাত ধরে অন্যদিকে চলে গেলো। তাথৈ উপায় না পেয়ে এক কোনায় রাখা সোফায় বসে পড়লো। কিন্তু ওর কিছু ভালো লাগছে না। ছেলে মেয়ে গুল উন্মাদের মত কেমন করে নাচানাচি করছে। মদ খাচ্ছে আর না হয় নেশা করছে এক কোনায় বসে। কোন আক্কেলে যে তখন আরহামের কথায় রাজী হলো তাথৈ নিজেকে বুঝাতে পারছে না।
মাথা নিচু করে মোবাইল টিপছে এমন সময় একটা মধ্যবয়সী লোক এসে তাথৈ এর পাশে ধপ করে বসে পড়লো। তাথৈ ভয়ে আঁতকে উঠে একপাশে সরে গেলো।
লোকটা আরো কাছে চেপে এসে তাথৈ এর হাত ধরে বলল,
” কি এই লাইনে নতুন নাকি সোনা? উপরে চলো ৫০০০ দিবো আজকে সারা রাত। “
বলেই খেক খেক করে হাসতে লাগলো লোকটা।
তাথৈ চেচিয়ে বললো, “আমি এসবের জন্য না। আপনি এখান থেকে যান। “
লোকটা আবার তাথৈ এর পায়ে হাত দিয়ে বললো,
“ও সোনা আমার এত ঢং করছো কেনো?
তোমার শরীর হিসাব করে দিলাম। যাও বাড়িয়ে দিবো চল এখন। “
লোকটা তাথৈ এর হাত ধরে টান দিলো তাথৈ সহ্য করতে না পেরে রেগে লোকটার হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। লোকটা এবার হাসি বন্ধ করে মুখ টা কে গম্ভীর করে বললো ,
“শালী দেমাগ দেখাতে এসেছিস এখানে? ওই এদিকে আয় তো তোরা। “
সাথে সাথে আরো ৩/৪ জন মধ্যবয়সী লোক এসে ঘিরে দাঁড়ালো তাথৈ কে।
বাকিরা কোন ভ্রুক্ষেপ ই করলো না। যে যার যার মত ড্রিংক্স করতে ব্যস্ত কিংবা মেয়ে নিয়া ব্যস্ত।
তাথৈ অসহায়ের মত আরহাম কে খুঁজতে লাগলো কিন্তু পেলো না।
উলটো লোক গুলো মরিয়া হয়ে ওর খুব কাছে এসে দাঁড়ালো।
“দেখুন আমি এসবের জন্য আসি নাই।
আমি একজনের সাথে এসেছি প্লিজ আমাকে যেতে দিন।”
লোকটা চেচিয়ে বললো, “চুপ শালী।এখানে এসে বাহানা দেস।
এখানে তোর মত মেয়ে কি উদ্দেশ্যে আসে বুঝি না আমরা।
কার্ড দেখা তোর এখন কার্ড বাইর কর। “
তাথৈ অসহায়ের মত চেয়ে রইল। কিসের কার্ড, কোন কার্ড তাথৈ জানে না।
ব্যাগ থেকে ফোন বের করতে চাইলেই একটা লোক তাথৈ এর হাত খপ করে ধরে বললো,
“কিরে শালী কারে ফোন দেস? আয় তোরে একবারে ফ্রি কার্ড কইরা দিমু। “
তাথৈ হেল্প চাওয়ার জন্য চেঁচামেচি করতে লাগলো কিন্তু আশা পেলো না।
লোক গুলো ও কে টেনে উপরে নিয়ে যাচ্ছিলো।
তাথৈ এর মনে হচ্ছে আজ আরহামের জন্য নিজের সবচেয়ে বড় সম্পদ টা হারিয়ে ফেলবে।
চোখ টা বন্ধ করতেই হঠাৎ মনে হলো কেউ একজন ওর হাত টান দিয়ে সজোরে সামনের দিকে টেনে নিলো।
তাল সামলাতে না পেরে তাথৈ লোকটার বুকে যেয়ে আছড়ে পড়লো।
তাথৈ চোখ মেলে তাকিয়ে ব্যাপার টা বুঝার চেষ্টা করলো।
কিছুটা সরে যেয়ে মানুষটার দিকে তাকাতেই দেখলো আরহাম দাঁড়িয়ে আছে।
মুখের ভাবলেশ দেখে তাথৈ বুঝতে পারলো আরহাম খুব রেগে আছে।
এমন সময় সেই মদ্যপায়ী বয়স্ক লোক টা বললো,
“কিরে ছ্যামড়া আমার হাতের তে মাইয়া টান দেস সাহস তো কম না তোর? “
“সোজা ঘুরে এখান থেকে চলে যা।
পেছনে তাকাবি না, না হয় এমন অবস্থা করব সারাজীবন ভাববি কোন মেয়ের দিকে দ্বিতীয় বার তাকাতে। “
এতক্ষণে গান বন্ধ হয়ে গেলো।
সবাই স্থির দৃষ্টিতে সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনা উপভোগ করতে লাগলো।
লোক গুলো ক্ষিপ্ত হয়ে বললো , “আমাদের ভয় দেখাস? চিনোস তুই কে আমি? “
“তুই আমাকে এখনো চিনতে পারিস নি।
চিনলে দ্বিতীয় বার গলা দিয়ে শব্দ বের করতি না।আমি বারবার রিপিট করব না।”
তাথৈ আরহামের দিকে চেয়ে রইলো।
এই লোকটার এমন একটা রূপ ও আছে তাথৈ এর জানা ছিলো না।
তাথৈ আবিষ্কার করলো আরহাম তাথৈ এর হাত টা এখনো শক্ত করে ধরে আছে।
তাথৈ সেই হাত টার দিকে তাকিয়ে যেন অজানা ভয়ে কেঁপে উঠলো।
চলবে….

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com