Breaking News

আবছা আলো । শেষ পর্ব


নিশিতাঃ (এখন কী করবো আমি,,,?)
ডক্টরঃ Excuse me,,,,,
নিশিতাঃ (ডক্টর উঠে চলে যেতে নিলে তার পা আঁকড়ে ধরলাম,,,) প্লিজ স্যার এমন করবেন না,,,, দয়া করে অপারেশন করুন,,,
ডক্টরঃ আরে আরে করেছেনটা কী,,,,? পা ছাড়ুন প্লিজ,,, এভাবে হয় না,,,, বুঝতে পারছেন না কেনো,,,?
নিশিতাঃ আপনি যদি এখন অপারেশন না করেন আর উনার কিছু হয়ে যায়,,,, আমি সুইসাইড করে নিবো আর তার জন্য আপনি দায়ী থাকবেন,,,, 

আপনি তো এই ভয়েই অপারেশন করতে চাইছেন না,,, যদি আমার কিছু হয়ে যায় তাই না,,,, এবার আপনি কী করবেন ভেবে দেখুন,,,? অপারেশন থিয়েটারে আমার কিছু হলে আপনার বিপদ হবে না তার নিশ্চয়তা আমি আপনাকে দিচ্ছি,,, কিন্তু অপারেশন না করলে আপনার বিপদ হবে তার নিশ্চিয়তাও আমি দিচ্ছি,,,, এখন সিদ্ধান্ত আপনার,,,? (কঠিন গলায় বলে কেবিন থেকে বের হওয়ার জন্য দরজায় হাত রেখে আবার ফিরে তাকালাম,,,) হাতে কিন্তু সময় বেশি নেই,,,,।

ডক্টরঃ (এখন আমি কী করবো,,,? 
অপারেশন করলে উনার লাইফ রিস্ক আর না করলে দু’জনেরই লাইফ রিস্ক,,,)
নিশিতাঃ(বের হয়ে খালুজানের পাশে বসলাম,,, মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে খালুজান,,,)
খালুজানঃ কী হলো নিশিতা,,,? (নিশিতার দিকে তাকিয়ে,,)
নিশিতাঃ(কী বলবো এখন খালুজানকে,,,? আমি তো উনাকে কথা দিয়েছিলাম উনার ছেলে ফিরিয়ে দিবো,,,৷ এখন কোন মুখে বলবো আমার কিছু করার নেই,, কাঁপা গলায় বলতে লাগলাম) আ,,,আসলে খালুজান,,

ডক্টরঃ আমি অপারেশন করতে রেডি মিস নিশিতা,,,, (গম্ভীর গলায়) তবে তার জন্য আপনার কিছু ফর্মালিটি পূরণ করতে হবে,,,।
নিশিতাঃ ধন্যবাদ,,, আমি সব ফর্মালিটি পূরণ করতে রাজি,,, চলুন,,,। খালুজান আমি আসছি,,,(খালুজান কিছুই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে,,, ডক্টরের সাথে চলে গেলাম)
ডক্টরঃ এখানে সাইন করে দিন,,,
নিশিতাঃ এটা কী,,,?

ডক্টরঃ আপনি বলেছেন আপনার অভিভাবক আপনি নিজেই,,, এটা বন্ড পেপার,,,। অপারেশন থিয়েটারে আপনার কিছু হয়ে গেলে এর জন্য আমরা দায়ী থাকবো না,,,,, এর সম্পূর্ণ দায় আপনার হবে,,, যেহেতু আপনার অভিভাবক আপনি নিজেই,,, তাই সাইন করুন,,,

নিশিতাঃ(কোনোরকম চিন্তা ভাবনা ছাড়াই সাইন করে দিলাম,,,, কেনো যেনো মনে হচ্ছে আমার সময় হয়ে গেছে আমার আপন মানুষগুলোর কাছে চলে যাওয়ার,,, এই পৃথিবীতে থাকার জন্য আর কোনো কারণ বেঁচে নেই আমার,,,, বর্ষণ ভাইয়াকে আমি কখনো ভালোবাসিনি আর না কখনো ভালো বাসতে পারবো,,,,,। আমি মানি মেয়েদের বিয়ে একবারই হয় আর আমার সেটা হয়ে গেছে,,,, মুখে স্বীকার না করলেও মনের কোণে আমি ঠাই শ্রাবণকেই দিয়ে দিয়েছি,,, সে সব মিথ্যা বললেও আমার প্রতি তার ভালোবাসাটা মিথ্যা ছিলো না,,,, আমি তার নিয়তি ছিলাম তাই তার হয়েছি,,,,, বর্ষণ ভাইয়ার নিয়তিতে আমি লেখা নেই,,, তাহলে প্রথমেই তার থেকে আলাদা হতাম না,,,,)

ডক্টরঃ এখনও সময় আছে আপনি ভেবে নিন কী করবেন,,,
নিশিতাঃ আমি ভেবে নিয়েছি,,, অপারেশন কী এখনই করবেন,,,?
ডক্টরঃ আমাদের কাছে বেশি সময় নেই,,, যত তাড়াতাড়ি করবো ততই ভালো,,,
নিশিতাঃ আজকের দিনটা কী সময় দেওয়া যাবে আমাকে,,, আমার কিছু কাজ বাকি ছিলো,,,
ডক্টরঃ ঠিক আছে,,, অপারেশন আমরা রাতে করবো,,, আমি আরো কিছু স্পেশাল ডক্টর আনার চেষ্টা করছি,,,

নিশিতাঃ ঠিক আছে,,,, আমি এখন আসছি রাতে চলে আসবো,,,।
ডক্টরঃ মিস নিশিতা আমি বলছিলাম,,,, যদি আর একবার,,, আপনি বুঝতে পারছেন না,,, আপনার লাইফে কতটা রিস্ক আছে,,,।
নিশিতাঃ বলেছি তো মনে করেন এক জীবনের বিনিময়ে তিনটা জীবন আপনি বাঁচাচ্ছেন,,,,(মুচকি হেঁসে,,,) আর একটা কথা দিতে হবে আপনাকে,,,
ডক্টরঃ কী কথা,,,?
নিশিতাঃ আগে বলুন আপনি আমার কথাটা রাখবেন,,,।
ডক্টরঃ আপনার কথায় এতো রিস্কি অপারেশন করতে রাজি হয়েছি আর একটা কথাও নাহয় রাখলাম,,,, বলুন,,,।

নিশিতাঃ আপনি আমার চিন্তা না করে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন উনাকে বাঁচাতে,,,, উনার বিপদ কেটে তারপর নাহয় আমার কথা চিন্তা করবেন,,,, আর আমি উনাকে কিডনি দিয়েছি এটা কাউকে বলবেন না দয়া করে,,,,

ডক্টরঃ কিন্তু আপনি এতোবড় আত্মত্যাগ করছেন আর কাউকে জানাবো না,,,।
নিশিতাঃ এখানে আমি নিজেকে উদার প্রমাণ করতে আসিনি তাই আমি যেটা বলছি দয়া করে সেটা করবেন,,, আপনি কিন্তু কথা দিয়েছেন আমাকে,,,,
ডক্টরঃ ঠিক আছে,,,,

নিশিতাঃ(ডক্টরের কেবিন থেকে বের হয়ে খালুজানের পাশে বসলাম,,,) চিন্তা করবেন খালুজান,,,, উনি ঠিক হয়ে যাবেন,, আমি বাসা থেকে এখনই আসছি,,
খালুজানঃ তোমার খালামুনিকে এখন কিছু জানানোর প্রয়োজন নেই,,,, এমনই অসুস্থ,,,,
নিশিতাঃ ঠিক আছে,,, আমি কিছু বলবো না,,,, আপনি কিছু খেয়ে নিন কেন্টিন থেকে,,, কিছু না হবে উনার
খালুজানঃ হুম,,,,
নিশিতাঃ(হসপিটাল থেকে বের হয়ে সুজনকে কল দিলাম,,,)
সুজনঃ হ্যালো,,,,
নিশিতাঃ একটু দেখা করতে পারবি,,,?
সুজনঃ এখন,,,,?
নিশিতাঃ আমার হাতে বেশি সময় নেই,,,,
সুজনঃ সময় নেই মানে,,, কী বলছিস এসব আবোলতাবোল,,,,?
নিশিতাঃ দেখ প্লিজ,,, সময় নষ্ট না করে পার্কে চলে আয়,,, আমি দশ মিনিটে পার্কে আসছি,,,।
সুজনঃ ওকে ওকে আসছি,,,

নিশিতাঃ(সুজনের কল কেটে ইকরাকে কল দিলাম,,,, সেদিন ইকরার সাথে কথা শেষে নাম্বারও নিয়েছিলাম,,, দুবার রিং হতেই রিসিভ করলো,,,)
ইকরাঃ আসসালামু আলাইকুম আপু,,,,,
নিশিতাঃ চেয়েছিলাম তোমার সাথে সামনাসামনি কথা বলতে,,, সেটা হয়তো আর হয়ে উঠবে না,,,, বর্ষণ ভাইয়া হসপিটালে আছে,,, এটাই সঠিক সময় তোমার জন্য বর্ষণ ভাইয়ার মনে জায়গা করে নেওয়ার,,,,,
ইকরাঃ উনি ঠিক আছে তো আপু,,,, (কাঁদতে কাঁদতে)
নিশিতাঃ চিন্তা করো না,,, আমি উনার কিছু হতে দিবো না,,, উনার জ্ঞান ফিরতে ফিরতে আমি উনার থেকে দূরে চলে যাবো আর তুমি কাছে,,,

ইকরাঃ কোন হসপিটালে আছে উনি,,,,?
নিশিতাঃ(ইকরাকে হসপিটালের এড্রেস দিয়ে পার্কে চলে গেলাম,,, দেখি সুজন দাঁড়িয়ে আছে,,,,, ওকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সব খোলে বললাম,,,,)
সুজনঃ পাগল হয়ে গিয়েছিস তুই,,, মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর,,,(রেগে চিৎকার করে,,,)
নিশিতাঃ এ ছাড়া আমার আর কোনো পথ খোলা নেই,,, আমার জন্য কাঁদার কেউ নেই কিন্তু উনার কিছু হলে একটা পরিবার নষ্ট হয়ে যাবে,,, খালামুনি আর খালুজান পারবে না এই ধাক্কা সামলাতে,,,
সুজনঃ তোর জন্যও কারো জীবন থমকে যেতে পারে,,,
নিশিতাঃ সুজন প্লিজ এখন তুই আবার বলিস না তুইও আমাকে ভালোবাসিস,,, এই ভালোবাসা এখন অভিশাপ মনে হচ্ছে আমার কাছে,,,

সুজনঃ ন,,,না না এমন কিছু না,,,,
নিশিতাঃ আ,,,আমার যদি কিছু হয়ে যায় কাউকে না জানিয়ে গ্রামে নিয়ে যাস আর শ্রাবণের পাশে শুইয়ে দিস,,, আর যদি বেঁচে যাই ঐ হসপিটাল থেকে সরিয়ে আনিস,,,, সুস্থ হয়ে গেলে আমি আমার রাস্তা দেখে নিবো,,, প্লিজ এই হেল্পটা কর,,,(হাত জোর করে)
সুজনঃ ঠ,,,,ঠিক আছে,,,

নিশিতাঃ আর একটা কাজ বাকি আছে,,,,আমি এখন আসছি,,,(যেতে যেতে)
সুজনঃ (আমার দিকে তাকানোর কখনো সময়ই হয়নি তোর,,,, আজ কীভাবে হবে রে,,,? চোখের কোণ থেকে পানিটা মুছে নিলাম,,, কী কপাল আমার,,,? ভালোবাসার মানুষ নিজে এসে তার সমাধি করে দেওয়ার জন্য হাত জোর করছে,,,)
নিশিতাঃ (বাসায় চলে গেলাম,,, সোজা খালামুনির কাছে চলে গেলাম,,,) খাবার খেয়েছো খালামুনি,,,,?
খালামুনিঃ না,,, তুই হঠাৎ কোথায় চলে গিয়েছি,,,?
নিশিতাঃ খালামুনি খাবার নিয়ে আসছি আমি (খালামুনির জন্য খাবার নিয়ে এলাম) খালামুনি একটা কথা রাখবে,,,?

খালামুনিঃ কী কথা,,,?
নিশিতাঃ আজকে নিজের হাতে একটু খাইয়ে দেবে,,, কথা দিচ্ছি আর কখনো বলবো না,,,,।
খালামুনিঃ কী হয়েছে তোর,,,,? এভাবে কথা বলছিস কেনো আজ,,,,?
নিশিতাঃ কিছু না,,, সমস্যা হলে থাক,,,।
খালামুনিঃ না,,, সমস্যা নেই দিচ্ছি,,,

নিশিতাঃ (খালামুনি খুব যত্ন করে খাইয়ে দিলো,,, আজ যেনো মায়ের ছায়া দেখতে পাচ্ছি খালামুনির মাঝে,,, খাওয়া শেষে প্লেট পাশে রেখে দিলাম,,,,)
খালামুনিঃ জানিস নিশি আজ কেনো জানি মনটা বড্ড অস্থির লাগছে,,,? কিছু ভালো লাগছে না,,,। বর্ষণকে একটু কল দিয়ে জিজ্ঞেস কর না কখন আসবে,,,, আর তোর খালুজান,,,?
নিশিতাঃ আ,,,আমি কল দিয়েছিলাম,,, খালুজান ভাইয়ার কাছে গেছে,,, একটা কাজ আছে তারপর দুজন একসাথেই আসবে,,৷ (মায়ের মন যে,,, সন্তানের বিপদ ঠিক আঁচ করতে পরেছে,,,)
খালামুনিঃ ওহ,,,,,

নিশিতাঃ খালামুনি তোমার কোলে একটু মাথা রাখি,,,?
খালামুনিঃ খারাপ লাগছে,,,? ঠিক আছে রাখ,,, আমি মাথা টিপে দিচ্ছি,,,,
নিশিতাঃ(খালামুনির কোলে মাথা রেখে কখন যেনো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম,,,, সন্ধ্যায় খালামুনির ডাকে ঘুম ভাঙলো,,,, উঠে বসলাম,,,) খালামুনি আমি আজ চলে যাচ্ছি,,,,
খালামুনিঃ ক,,,কোথায় যাবি,,,?

নিশিতাঃ এটাই তো তোমার সাথে কথা ছিলো,,, তাই আজ রাতেই আমি চলে যাবো,,,।
খালামুনিঃ কিন্তু এই রাতের বেলা কোথায় যাবি তুই,,,,
নিশিতাঃ আমি তোমাকে একটা মেয়ের ছবি দিয়ে যাচ্ছি,,, মেয়েটা বর্ষণ ভাইয়াকে ভালোবাসে,,, অনেক ভালোবাসে,,, কয়েকদিন পর তোমার সাথে দেখা করতে আসবে,,, ভাইয়াকে বুঝিয়ে বিয়ে দিয়ে দিয়ো,,,
খালামুনিঃ কিন্তু,,,,

নিশিতাঃ আমি ছবি নিয়ে আসছি,,,,(খালামুনিকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজের রুমে এসে খালামুনির জন্য একটা চিঠি লিখলাম,,, চিঠি আর ছবি নিয়ে তার রুমে গেলাম,,,) এই নাও,,,
খালামুনিঃ(খামটা হাতে নিলাম,,, এটাই তো চেয়েছিলাম ও চলে যাক,,, তবে আজ কেনো কষ্ট হচ্ছে,,,, বলতেও পারছি না তুই থেকে যা নিশু,,, আমার মেয়ে হয়ে থেকে যা,,,)
নিশিতাঃ আমার বের হতে হবে,,, আসছি,,, আর হ্যাঁ,,, এটা আজ দেখতে হবে না,,, কাল সকালে খোলে দেখে নিও,,

খালামুনিঃ ঠ,,,ঠিক আছে,,,।
নিশিতাঃ(খালামুনির রুম থেকে নিজের রুমে গেলাম,,,, লেট হয়ে গেছে আমার,,, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলাম,,,, রুম থেকে বের হতেই আন্টি সামনে পড়লো,,)
আন্টিঃ কোথায় যাচ্ছো এই রাতের বেলা,,,?

নিশিতাঃ অনেক দূরে,,, তুমি খালামুনির একটা খেয়াল রেখো,,,(আন্টির উত্তরের অপেক্ষা না করে বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম,,,, বের হয়ে দেখি সুজন বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,,) তুই এখন এলি,,,
সুজনঃ এখনই,,, কেবল কল দিতে যাচ্ছিলাম তোকে,, চল,,,
নিশিতাঃ হুম,,,,(দেখতে দেখতে চলে এলাম হসপিটালে,,, রাস্তায় সুজন আমার সাথে একটা কথাও বলেনি,,, না আমি বলেছি,,,,, হসপিটালে এসে খালুজানের চোখ এড়িয়ে ডক্টরের কেবিনে চলে গেলাম,,,) ডক্টর

ডক্টরঃ ওহ,,,, আপনি চলে এসেছেন,,,?
নিশিতাঃ জী,,,, সব রেডি,,,?
ডক্টরঃ হ্যাঁ,,,, আমরা রক্তের ব্যবস্থা করে নিয়েছি,,, আর আপনার আঙ্কেলকেও বুঝিয়ে বলা হয়েছে অপারেশনের কথা,,, আরো রক্তের প্রয়োজন হলে উনি দিবেন,,,, আপনি রেডি,,,?
নিশিতাঃ জী চলুন,,,,

ডক্টরঃ আর একবার ভেবে দেখুন,,,,
নিশিতাঃ চলুন,,(ডক্টর বের হয়ে গেলে দেখি মাথা নিচু করে পাশে দাঁড়িয়ে আছে সুজন,,,) ভালো থাকিস,,, আর যদি ফিরে আসি আবার দেখা হবে,,,,
সুজনঃ প্লিজ নিশু,,,, (ভেজা চোখে)
নিশিতাঃ প্লিজ ,,,,, পাশে থাক আমার,,, দেখ তুই ছাড়া আর কেউ নেই আমার,,,, থাকবি না পাশে,,,?(কান্নাভেজা গলায়)

সুজনঃ হ,,,,,হুম,,,
নিশিতাঃ(বের হয়ে গেলাম,,, খালুজানের দিকে তাকিয়ে দেখি পাশে ইকরা বসে আছে,,, যাক কেউ আছে খালুজানকে সামলানোর জন্য,,,, নিশ্চিন্তে চলে গেলাম ডক্টরের সাথে,,,, অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হলো আমাকে,,, সেখানে নেওয়ার পর পাশে তাকিয়ে দেখি বর্ষণ ভাইয়া,,,, স্যালাইন লাগানো হয়েছে আমার হাতে,,, তবে ব্যাথা অনুভব হলো না কেনো জানি,,,, স্যালাইনে কিছু একটা ইনজেকশন দিলো আর আমার চোখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে এলো,,,, আমি তখনো বর্ষণ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে,,,, ভালো থাকবেন,,,,,)

খালামুনি তোমার তো মনে হয় শ্রাবণের মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী,,,, তোমার বুক খালি করে কেড়ে নিয়েছি তাকে,,,, তোমার এক সন্তান আমি কেড়ে নিয়েছিলাম তোমার মতে,,, আজ তোমার আরেক সন্তানকে ফিরিয়ে দিয়ে গেলাম তোমার বুকে,,, খালামুনি মায়ের আরেক রুপের নাম,,, আমি তোমাকে মায়ের জায়গায় দিয়েছি,,, কিন্তু তুমি আমাকে মেয়ের জায়গা দিতে পারলে না কখনো,,,, চলে গেলাম তোমাদের থেকে দূরে,,,, অনেক দূরে,,,
ভালো থেকো,,,
ইতি
তোমাদের অপয়া
নিশু

খালামুনিঃ (গতরাতে বর্ষন বা তার বাবা কেউ বাসায় ফেরেনি,,, সারারাত চিন্তায় ঘুমাতে পারিনি,,,, সকালে বর্ষণের বাবা বাসায় এসে বলে বর্ষন হসপিটালে,,, কাল নিশু হসপিটালে গিয়েছিলো সেটাও বলে,,,,, এখন বর্ষণের অবস্থা একটু ভালো তাই ইকরা নামের মেয়ে ওর বাবাকে বাসা থেকে ফ্রেস হয়ে যেতে বলেছে,,, সে বর্ষণের পাশে আছে,,,। উনি এসে নিশুর কথা জিজ্ঞেস করলে নিশুর দেওয়া খামটা বের করে দেই আর নিশুর বলা সব কথা বলি,,,, সেখান থেকেই চিঠিটা পেয়ে পড়ে শুনালো বর্ষণের বাবা,,,,) তাহলে নিশু কোথায়,,,?

খালাজানঃ দুপুরে চলে আসার পর নিশু আর হসপিটালে যায়নি,,,,,
খালামুনিঃ তাহলে কোথায় গেলো মেয়েটা,,,,? আর এই কথার মানে কী,,,,?
(হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো,,,,)
খালামুনিঃ এখন আবার কে এলো,,,?
খালুজানঃ আমি দেখছি,,,(উঠে গিয়ে দরজা খোলে দিয়ে) আপনারা কারা,,,,?
জাহাঙ্গীরঃ আমার নাতনি কোথায়,,,? আমার নিশু দিদি ভাই কোথায়,,,,?
মুক্তাঃ হ্যাঁ,,, কোথায় সে,,,?
খালুজানঃ আপনারা,,,,?
জাহাঙ্গীরঃ আমরা নিশুর দাদা-দাদি ,,,, (খুশি হয়ে)
খালুজানঃ নিশু এখানে নেই,,,।

জাহাঙ্গীরঃ মিথ্যা বলছেন,,, আমি খবর পেয়েছি আমার দিদিভাই এখানেই,,,,।
খালুজানঃ গতকাল পর্যন্ত ছিলো,,,, কিন্তু আজ নেই,,, গতরাতে সে চলে গেছে এখান থেকে,,,,।
জাহাঙ্গীরঃ এটা হতে পারে না,,,, এতো বছর পর খোঁজে পেয়ে আবার হারিয়ে ফেললাম,,,,,?
বর্ষণঃ (মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে,,, চোখ খোলতে পারছি না,,,,, ধীরে ধীরে চোখ খোলে আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম,,,, একটু পর বুঝতে পারলাম আমি হসপিটালে,,, আর এক্সিডেন্টের কথা মনে পরে গেলো,,, বাবার সাথে কথা বলছিলাম ফোনে,,, হঠাৎ করেই পাশ থেকে একটা ট্রাক এসে সজোরে ধাক্কা মারে,,, তারপর আর কিছু মনে নেই,,,, হঠাৎ চোখ গেলো পাশে বসে থাকা মেয়েটার দিকে,,, চেহারা দেখা যাচ্ছে না,,, চুলে ঢেকে আছে,,, কে এটা নিশিতা,,,? ধীর গলায় বললাম) নিশিতা,,,,,
ইকরাঃ (বর্ষণের গলা শুনে তার দিকে তাকালাম,,,) জ্ঞান ফিরেছে তোমার,,,? আমি এখনই ডক্টরকে ডেকে আনছি,,।(দৌড়ে গিয়ে ডক্টরকে ডেকে আনলাম,,,)
ডক্টরঃ You are safe now,,,,

বর্ষণঃ Thanks doctor,,,, (অনেক কষ্টে বললাম,,, কথা বলার শক্তিও পাচ্ছি না,,,)
ডক্টরঃ ধন্যবাদ তাকে দিন যে আপনার জীবন বাঁচিয়েছে,,,(গম্ভীর গলায়)
বর্ষণঃ মানে,,,,
ডক্টরঃ এক্সিডেন্টে আপনার একটা কিডনি পুরো ড্যামেজ হয়ে গিয়েছিলো আমরা সেটা বাদ দিয়ে দিয়েছি,, অন্যটার অবস্থাও সূচনীয় ছিলো,,,, ইমিডিয়েট একটা কিডনি দেওয়া প্রয়োজন ছিলো আপনাকে,,,, কিন্তু আমরা সেটা পাচ্ছিলাম না,,, পরে একজন আপনাকে সেটা দান করেছেন,,,,
বর্ষণঃ কে সে,,,,?

ডক্টরঃ সেটা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়,,,,(গম্ভীর গলায়) আসছি আমি,,,
বর্ষণঃ (ডক্টরকে এমন লাগছে কেনো,,? আর নিশিতা কোথায়,,,? আমার এই অবস্থায় নিশিতা আসবে না এমন তো হতে পারে না,,,) ন,,নিশিতা কোথায়,,,?
ইকরাঃ আমি জানি না,,,, উনাকে গতকাল উনার ফ্রেন্ড সুজনের সাথে দেখেছিলাম,,,, তারপর আর দেখিনি,,,

বর্ষণঃ ত,,তুমি এখান থেকে যাও প্লিজ,,,,
ইকরাঃ তুমি,,,,,
বর্ষণঃ তুমি এখানে থাকলে আমি উত্তেজিত হয়ে যাবো,,, তাতে হয়তো আমার ক্ষতি হবে,,, সেটা নিশ্চয়ই চাও না,,,। (কিছুটা উত্তেজিত হয়ে)
ইকরাঃ আপনি শান্ত হন আমি চলে যাচ্ছি,,,,

★দুই বছর পর★
বর্ষণঃ(দেখতে দেখতে দুটো বছর পার হয়ে গেলো,,,, ভাইয়ার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আছি,,, ভাইয়ার কবরের পাশেই আরো একটা কবর,,,, আমার মিষ্টির কবর,,, হ্যাঁ আমার মিষ্টির কবর,,,, সেদিন হসপিটালে ইকরা চলে যাবার পর বাবা আসে,,, তার কাছে মিষ্টির কথা জিজ্ঞেস করলে বলে সে জানে না,,,, মিষ্টি নাকি বাসা থেকে চলে গেছে,,,, হসপিটালে থাকতেই মিষ্টিকে খোঁজার জন্য লোক লাগিয়ে দেই,,,, খোঁজে পাই সুজনকে,,, আমার যেদিন অপারেশন করা হয় তার পনেরো দিন পর সুজন

অস্ট্রেলিয়া চলে গেছে বলে জানতে পারি,,,, সুজন ছাড়া আর কেউ নেই যে মিষ্টির খোঁজ দিতে পারবে,,,, কারণ ইকরা শেষবার সুজনের সাথই মিষ্টিকে দেখেছিলো,,, সুস্থ হওয়ার পর প্রথমেই চলে যাই অস্ট্রেলিয়ায় সুজনের কাছে,,, প্রথমে বলতে না চাইলেও পরে সব খোলে বলে আমাকে,,,,)
সুজনঃ সেদিন অপারেশন শেষে আপনাকে যখন কেবিনে নেওয়া হচ্ছিলো তখনই নিশিতার মৃত্যুর কথা আমাকে জানানো হয়,,,,, 

বেশি শক লাগেনি কারণ ডক্টর আগেই বলেছিলো অপারেশন থিয়েটারেই নিশুর মৃত্যুর চান্স ৯০%,,,, সব জেনেই নিশু রাজি হয়েছিলো,,, কারণ নিজের কপালের অপয়া অপবাদ থেকে তার মুক্তি পাওয়ার ছিলো,,, ঘুমিয়ে আছে নিশু,,, শান্তির ঘুম আপনার ভাইয়ার পাশে,,, 

নিশু আপনার জন্য ছিলো না,,,, আর না ছিলো আমার জন্য,,,,। যার জন্য ছিলো তার কাছেই চলে গেছে,,,। হ্যাঁ আমিও ভালোবাসতাম নিশুকে তাইতো ওর স্মৃতি থেকে পালাতে এই এতো দূরে চলে এসেছি তবু ওর স্মৃতি আমাকে প্রতিনিয়ত কষ্ট দেয়,,,(চোখ থেকে এক বিন্দু পানি গড়িয়ে পড়লো,,, পেছনে ফিরে দেখি বর্ষণ ভাইয়া মাটিতে বসে পড়েছে,,)

সবার কাছে ভালোবাসাকে পাওয়ার কপাল থাকে না,,,,
বর্ষণঃ (আমি তোমাকে পাওয়ার জন্য ভালোবাসিনি মিষ্টি,,, আমি তে তোমাকে দূর থেকেই সারাজীবন ভালোবেসে যাবো বলেছিলাম,,,, আমার শুধু চাওয়ার ছিলো তুমি যেখানেই থাকো ভালো থেকো,,,, তুমি ভালো আছো তো মিষ্টি,,,, ভাইয়া ভালো রেখেছিস তো আমার মিষ্টিকে,,,, ভালো রাখিস কিন্তু,,,, জানো তো মিষ্টি আমার জীবনযাপন কিন্তু পাল্টায়নি,,,, অফিস,,, 

বাসা আর দূর থেকে তোমাকে ভালোবাসা,,,, আমি এভাবে ছিলাম, আছি আর এভাবেই থাকবো,,,, তবে তোমাকে বড্ড মিস করি,,, এখন চাইলেও যে এক নজর তোমাকে দেখতে পাই না,,,, চোখ থেকে কখন পানি গড়িয়ে পড়েছে টের পায়নি,,,, আর জানো মিষ্টি এখন মা ভাইয়ার থেকে তোমার জন্য বেশি কান্না করে,,,, নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে তোমাকে হারিয়ে,,, আর আজ ইকরার বিয়ে,,, 

না না আমার সাথে নয়,,, দেরিতে বুঝলেও ইকরা বুঝতে পেরেছে আমার জীবনে মিষ্টি ছাড়া আর কারো জায়গা নেই,,, তা মিষ্টি আমার থেকে যত দূরেই থাক,,,,, আমি যেমন ছিলাম তেমন আছি আর থাকবো,,,, পিছনে ঘুরতেই সুজনকে দেখতে পেলাম,,,,) তুমি এখানে,,,,?
সুজনঃ আজই দেশে ফিরেছি,,, ওর সাথে দেখা না করলে হয়,,, তাই চলে এলাম দেখা করতে,,, আপনি এখানে,,,?

বর্ষণঃ আমার সপ্তাহের একটা দিন আমার মিষ্টির জন্য বরাদ্দকৃত,,,, (তারপর দুজনেই চুপ) বিয়ে করেছো,,?
সুজনঃ তার জন্যই দেশে আসা,,,, মাকে আর সামলে রাখা সম্ভব হচ্ছে না,,,, আপনি,,,?
বর্ষণঃ সেটা আমার পক্ষে কোনদিনই সম্ভব নয়,,,, চলো যাওয়া যাক,,,,
সুজনঃ হুম চলুন,,,,

(বর্ষণ আর সুজন কথা বলতে বলতে সামনে এগিয়ে যেতো লাগলো,,,, কিন্তু দুজনের মনই পিছনে ফেলে গেলো,,, নিশিতার দাদা দাদি নাতনির মৃত্যুর সংবাদটাও পেলো না,,,, 
তখন পায়ে ঢেলে দিয়েছিলো,,,যখন বুকে টেনে নিতে চাইলো তখন নিশিতাই তাদের ফাঁকি দিয়ে চলে গেলো,,,, সুজন চলে গেলো নিজের গন্তব্যের দিকে,,, বর্ষণ গাড়িতে উঠে সিটে হেলান দিয়ে তার মিষ্টির কবরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,,, সে কোথায় যাবে তার মিষ্টিকে রেখে,,,,?)

বর্ষণঃ গল্পটা চাইলে অন্যরকম হতে পারতো,,,, আবছা আলো থেকে ঝলমলে আলোতে চমকাতে পারতো আমাদের জীবন,,,,। কিন্তু আমাদের তিনটা জীবন  আবছা আলোতেই আটকে রইলো তাই না মিষ্টি,,,। শেষ পর্যন্ত তুই জিতে গেলি ভাইয়া,,,, হয়তো তোর আর মিষ্টির বলা কবুলের জোরে,,,,।

★ সমাপ্ত ★

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com