Breaking News

আবছা আলো | পর্ব -০৭

নিশিতাঃ (একটু আগে রুমে এসে শুয়েছি,,,,, ঘুম আসছে না,,,, এপাশ ওপাশ করছি,,,, ভাইয়ার কথাগুলো কানে বাজছে,,, ভাইয়া ভুল কিছু বলেনি,,, যেটা হয়ে গেছে সেটা আমি পরিবর্তন করতে পারবো না,,,, কিন্তু আমি চাইলে আমার সামনের দিনগুলো ভালো করতে পারি,,,, হ্যাঁ আমাকে এখান থেকে চলে যেতে হবে,,,, একমাত্র পড়াশোনা করেই আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি,,,, কারো ওপর আর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে না,,,,, মনে মনে ঠিক করে নিলাম আর ঠিক দুমাস পরই আমি এখান থেকে চলে যাবো,,,,,)
বর্ষণঃ (তোমার নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে,,,, আত্মনির্ভরশীল হতে হবে,,,, তবে আড়াল থেকে আমি সবসময় তোমার সাথে থাকবো,,,,)
,,,,,,
নিশিতাঃ ফজরের আযানে ঘুম ভেঙে গেলো,,, তাড়াতাড়ি উঠে ওযু করে নামাজ পরে নিলাম,,,, নামাজ পরে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম,,,, একটুপর কিচেনে যাবো,,, বাগানে চোখ গেলে অবাক হয়ে গেলাম,,, বর্ষণ ভাইয়া বাড়ির দিকে আসছে,,, একটা কালো পাঞ্জাবি গায়ে,,, জিন্স প্যান্ট আর মাথায় টুপি,,,, হয়তো নামাজ পড়ে এসেছেন,,,, ভাইয়া আবার নামাজও পরে জানা ছিলো না,,,, দেখে তো মনে হয় নামাজ কালামের ধারে কাছে যায় না,,, কিন্তু নামাজ পড়তে গেলে মানুষ বেশিরভাগ সাদা পাঞ্জাবি পরে আর উনি কালো,,,, সত্যি অদ্ভুত মানুষ উনি,,,,, একটু সামনে গার্ডেনে দোলায় পড়নের পাঞ্জাবি খোলে রাখলেন,,,, উনার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম,,, শুধু একটা গেঞ্জি গায়ে,,,, তাড়াতাড়ি কিচেনের দিকে চলে গেলাম,,,, লেট হয়ে গেছে,,,,, রান্না শুরু করে দিলাম,,,,,রান্না প্রায় শেষের দিকে,,,, খালামুনি এলো,,,
খালামুনিঃ রান্না শেষ হয়েছে,,,,??
নিশিতাঃ না খালামুনি,,, আর একটু বাকি আছে,,,
খালামুনিঃ তাড়াতাড়ি কর,,,, তোর খালুজান আবার গুদামে যাবে,,,
নিশিতাঃ ঠিক আছে,,,,, আর একটু সময় লাগবে,,,
খালামুনিঃ কী কী করেছিস,,,,??
নিশিতাঃ পরোটা,,, ডিম ভাজা,,, সবজি,,,, ফলের জুস,,,,, ফল,,,, আর বর্ষণ ভাইয়ার জন্য সবজির খিচুড়ি,,,,
খালামুনিঃ ভালো করেছিস,,, আমার তো মনেই ছিলো না,,,, বর্ষণ সকালে খিচুড়ি খায়,,, ডিম সিদ্ধ রেখেছিস,,,,??
নিশিতাঃ হ্যাঁ রেখেছি,,,, আমার সব মনে আছে,,,,(মুচকি হেঁসে)
খালামুনিঃ ঠিক আছে,,,, এখন তাড়াতাড়ি শেষ কর,,,
নিশিতাঃ তুমি খালুজানকে ডেকে নিয়ে এসো আমি খাবার দিচ্ছি,,,,
খালামুনিঃ হ্যাঁ যাচ্ছি,,,,
নিশিতাঃ (খালামুনি চলে যেতেই বর্ষণ ভাইয়া রুমে আসলো,,,, ঘেমে গায়ের টিশার্ট গায়ে লেপ্টে আছে,,, বডি বোঝা যাচ্ছে স্পষ্ট,,,, শ্রাবণ ভাইয়ার থেকে বর্ষণ ভাইয়ার গায়ের রং ফর্সা,,,, দেখতেও হ্যান্ডসাম বেশি,,,, ধূর আমি এসব কী ভাবছি,,?? নিজের কাজে মন দিলাম,,,, ভাইয়া নিজের রুমের দিকে চলে গেলেন আর আমি সব খাবার টেবিলে সাজাতে লাগলাম,,,, একটু পর খালামুনি আর খালুজান এসেছে টেবিলে বসলেন,,,,)
খালামুনিঃ বর্ষণ এসেছে,,,,,??
নিশিতাঃ হ্যাঁ খালামুনি,,,, একটু আগে রুমে গেছে,,, হয়তো ফ্রেশ হচ্ছে,,,,
খালুজানঃ তাহলে একটু অপেক্ষা করি,,,,
খালামুনিঃ ঠিক আছে,,, নিশিতা তুই গিয়ে একটু ডেকে আয়,,, না না থাক আমি মতিকে বলছি,,, এই মতি,,,,
মতি(কাজের ছেলে) জী আম্মা,,,,
খালামুনিঃ যা তোর ছোট ভাইজানকে একটু ডেকে নিয়ে আয়,,,,
মতিঃ ঠিক আছে আম্মা,,,,
নিশিতাঃ(খালামুনি আমাকে কেন যেতে নিষেধ করলো,,,,?? কী জানি,,,)
মতিঃ ভাইজান,,,,
বর্ষণঃ কে,,,,??
মতিঃ ভাইজান,,, আমি মতি,,, আম্মা আপনাকে ডাইনিং টেবিলে যেতে বলেছেন,,,, সবাই অপেক্ষা করছে,,,
বর্ষণঃ ঠিক আছে,,, তুই যা,,, আমি আসছি,,,,
মতিঃ ঠিক আছে ভাইজান,,,(নিচে চলে গেলো,,,) আম্মা ভাইজান আইতাছে,,,
খালামুনিঃ ঠিক আছে,,, তুই যা,,,,
নিশিতাঃ(একটু পরে ভাইয়া সিড়ি দিয়ে নেমে আসছে,,,,, একটা কালো টিশার্ট আর জিন্স পান্ট পরে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে নামছে,,, বুঝি না উনি সবসময় কালো কেনো পরেন,,,,??)
বর্ষণঃ (নিচে এসে দেখি বাবা-মা টেবিলে বসে অপেক্ষা করছে আর নিশিতা পাশে দাঁড়িয়ে আছে,,,) নিশি দাঁড়িয়ে আছো কেন,,,??
নিশিতাঃ(চমকে ভাইয়ার দিকে তাকালাম,,,, তারপর খালামুনি আর খালুজানের দিকে তাকালাম,,, উনাদের মুখ কালো হয়ে গেছে,,,,)
খালামুনিঃ ও পরে খেয়ে নেবে,,,
বর্ষণঃ কেনো,,,,,??
খালামুনিঃ ও সবসময় আমাদের পরেই খায়,,,,
বর্ষণঃ (এবার মুখ তোলে মায়ের দিকে তাকালাম,,,) কেনো সবার পরে খায় ও,,,??
খালামুনিঃ ম,,মানে,,,,(কী বলবো এখন,,,?? কোনো অপয়ার সাথে এক টেবিলে বসে খেতে পারবো না বলে ও সবার পরে খায়,,,)
বর্ষণঃ কী হলো বলো,,,???
খালামুনিঃ ইয়ে,,, ম,,মানে,,
নিশিতাঃ আ,,,আমার সবার সাথে বসে খেতে আনইজি লাগে,,,, একা খেতেই ভালো লাগে,,,
বর্ষণঃ (মিথ্যে বলে আমাকে বুঝাতে পারবে নিশি,,, আমি সব জানি,,,,) ঠিক আছে,,,, এখন থেকে সাথে খাওয়ার অভ্যাস করো,,,,নাও বসে পড়ো,,,
নিশিতাঃ আমি একাই খেয়ে নিবো,,,, আপনারা শুরু করুন,,,,
বর্ষণঃ আমি আগেই বলেছি এক কথা দ্বিতীয় বার বলা পছন্দ করি না,,
খালামুনিঃ বসে পর,,,, একসাথেই খাবি,,,,,
নিশিতাঃ কিন্তু,,৷
খালামুনিঃ এক কথা তোকে কতবার বলতে হবে,,,, শুনতে পাসনি কী বলেছি,,,??
নিশিতাঃ (চুপচাপ বসে পড়লাম,,,, খালামুনি প্লেটে পরোটা আর সবজি দিলো,,,, সবাই খাচ্ছে আর আমি প্লেটে আঙ্গুল দিয়ে আঁকিবুঁকি করছি,,,,)
বর্ষণঃ নিশি খাচ্ছো না কেনো,,,,??(নিজের প্লেটের দিকে তাকিয়ে)
নিশিতাঃ(সবাই আমার দিকে তাকলো,,,) খ,,,খাচ্ছি তো,,,,
বর্ষণঃ কই খাচ্ছো,,, পরোটা তো তেমনই আছে,,,,
খালামুনিঃ কী হয়েছে নিশিতা,,,,?? খাচ্ছিস না কেনো,,,??
নিশিতাঃ(এক টুকরো পরোটা সবজি দিয়ে মুখে দিলাম,,,) এই তো খাচ্ছি,,,
বর্ষণঃ খিচুড়ি রান্না করেছে কে,,,??
খালামুনিঃ কেনো,,, ভালো হয়নি,,, নিশিতা করেছে,,, আমি কিছু করে দিবো,,??
বর্ষণঃ না মা,,, অনেক ভালো হয়েছে,,,,
খালামুনিঃ ওহ্ ,,,,, তাহলে খাওয়া শেষ কর,,,,
খালুজানঃ বর্ষণ,,, আজ কী কোথাও যাবে,,??
বর্ষণঃ হ্যাঁ বাবা,,, এখানে আমার অনেক ফ্রেন্ড আছে,,, তাদের সাথে দেখা করবো আর একটু ঘুরাঘুরি করবো,,,,, খেয়েই বের হয়ে যাবো,,,
খালামুনিঃ তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস,,,,
বর্ষণঃ এখনো যাইনি মা,,,, আসতে মনে হয় রাত হবে,,,,
খালামুনিঃ তাও আগে আসার চেষ্টা করিস,,,
বর্ষণঃ ঠিক আছে,,,,
নিশিতাঃ(চুপচাপ সবার কথা শুনে যাচ্ছি,,,, খাওয়া শেষ করে সবাই চলে গেলো,,,, আমি টেবিল গুছিয়ে পরিষ্কার করে নিলাম,,,,, গুছিয়ে রেখে ওপরে উঠার জন্য সিঁড়িতে পা রাখতেই উপরে তাকিয়ে দেখি ভাইয়া নামছে,,,,)
বর্ষণঃ তোমার কিছু লাগবে,,,,(নিশিতাকে দেখে দাঁড়িয়ে গিয়ে)
নিশিতাঃ ন,,না ভাইয়া,,, কিছু লাগবে না,,,,
বর্ষণঃ (ভাইয়া ডাক শুনে কেমন চমকে উঠলাম,,, মুহুর্তের মধ্যে মুখে কঠিন ভাব চলে এলো,,, নিজের সীমা যেনো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো নিশির মুখের ভাইয়া ডাক,,,) হুম,,, ঠিক আছে,,,,
চলবে,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com