প্রথম প্রেম | লেখা- রাফিন রাফি
![](https://www.lovestory-bd.com/wp-content/uploads/2021/04/Purnima-lovestory-bd.jpg)
বাসরঘরেই ডুকতেই ঘুমটার আড়ালে থেকে বউয়ের মুখে প্রথম কথা “বিয়ের আগে আজ পর্যন্ত কয়টা প্রেম করেছেন?”
– মানে?
– মানে কি বুঝেন না? কয়টা মেয়ের সাথে প্রেম ছিলো?
– ইয়ে.. মানে..
– এতো ইয়ে মানের কি আছে? সমস্যা নাই বলতে পারেন। আমারওতো প্রায় পনেরটা রিলেশন ছিলো।
– ওহ প্রায় কেন?
– কারণ আরেকটা খালি হতে যাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই আপনার সাথে বিয়ে হয়ে গেলোত তাই পুরোপুরি হয়নি।
– ওহ
– হুম তো এবার বলেন আপনার কয়টা ছিলো?
এবার রিহান চিন্তায় পরে গেলো। কি বলা উচিত? করেনি বললে কেমন হয়? কিন্তু যেখানে তার বউ নাকি প্রায় পনেরটা প্রেম করেছিলো সেখানি সে যদি বলে একটাও করেনি। তাহলে ব্যাপরটা খুব আনস্মার্টনেস হয়ে যায়। বললে বউয়ের থেকে বেশিই বলতে হবে। তাই কোনোকিছু না ভেবেই বলে দিলো..
– হবে বিশ-পচিশটার মতো।
– বিশটা নাকি পচিশটা
– তেইশটা মনে হয়।
– ওহ আচ্ছা..?
– জি?
– একদম আমি যেরকম ভেবেছিলাম ঠিক সেইরকমই।
– কি?
– আপনি। আপনার মতো ভদ্র সেজে থাকা ছেলেদের আসল চেহারাটা সবসময় এমনই হয়।
– মানে?
– মানে আমি চেক করতে চাচ্ছিলাম আপনাকে। আর আমার ধারণাই ঠিক প্রমাণিত হলো।
– হে.. কি বলতে চাচ্ছেন আপনি?
– কিছুনা আসলে আমার কোনো রিলেশন টিলেশন ছিলো না। আপনার কথা বের করার জন্য একটা ছোট মিথ্যা বলেছি।
-ওহ
রিহানের এখন কিছু বলার মতো নাই। বড় একটা নিশ্বাস ছেড়ে খাটের কোনায় বসতে যেতেই বউ প্রায় চিল্লিয়ে বলে উঠলো..
– এই একদম না। একদম খাটের ধারে কাছেও আসবেন না।
– মানে?
– আপনার মতো বদলোক আমি একদম সহ্য করতে পারি না।
– আচ্ছা
– আরে কোথায় যাচ্ছেন?
– জাহান্নামে![?](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t65/1.5/16/1f620.png)
![?](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t65/1.5/16/1f620.png)
– এতোগুলো মেয়ের জীবন নষ্ট করছেন জাহান্নামেই যেতে হবে।
– এই আপনার সমস্যা কি? আমিও ঐটা মিথ্যাই বলেছিলাম।আমি কোনো মেয়েরই জীবন নষ্ট করি নি। আর আপনি আমার সম্পর্কে সবকিছু জেনেই নিশ্চয়ই বিয়ে করেছেন। আপনার বাড়ির লোকও নিশ্চিয়ই খুজ খবর নিয়ে তারপরই আপনাকে বিয়ে দিয়েছে। তারপরও যদি সমস্যা হয় চলে যান।
– চলে যাব কেন?
– আমিতো বদলোক। বদলোকের সাথে নিশ্চয়ই সংসার করা যায় না।
– করা যায় কি করা যায় না সেটা আমি ঠিক করবো। আচ্ছা আপনি কি কখনোই প্রেম করেননি?
– না বললাম তো।
– সত্যি!
– না মিথ্যা
– তারমানে করছেন?
– আরে ভাই তুই কিরে.. বললামতো আমি এসবের ধারে কাছেও যাইনি।
– আমি আপনার ভাই কবে হলাম হুম? তাছাড়া আমিতো একটা মেয়ে।
– আচ্ছা।
– আরে আবার কোথায় যাচ্ছেন?
– ভালো লাগছে না আমার।
– আচ্ছা আসলে সত্যি বলতে কি আমি একটা প্রেম করেছিলাম।
– করলে ভালো।
– চলে যাচ্ছেন কেন? এখনো নতুন বউয়ের মুখও দেখলেন না। আমি কিন্তু খুবই সুন্দরী।
– আচ্ছা।
– আরে আপনি সব কথায় আচ্ছা আচ্ছা করেন কেন বলুনতো?
– জানিনা।
– সবার জীবনেই কিন্তু প্রথম প্রেম একটা থাকে।আমারও আছে।
– আপনার মাথায় কি সীট আছে?
– নাতো!
বিরক্ত লাগছে রিহানের এখন। কি ভেবে এসেছিলো আর কি হলো। এরকম বাঁচাল মেয়ে জানলে বিয়েই করতো না। বিরক্তি কাটাতে বেলকনিতে এসে একটা সিগারেট ধরালো। অবশ্য মেয়েটা একটা কথা ঠিক বলেছে। সবার জীবনেই প্রথম প্রেম বলে একটা জিনিস থাকে। রিহানের জীবনেও ছিলো। আর প্রথম প্রেমগুলো হয়তো সবক্ষেত্রেই একই হয়। কখনোই পূর্ণতা পায় না।
°°°°°
প্রায় সাত বছর আগে..
ঠাস!
– মারলেন কেন?
-ক্লাস টেনে পড়ে কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে প্রপোজ করলে থাপ্পড়তো খাবা..ই।
– তাই বলে এতো জোড়ে মারবেন?
– আরে আরে কান্না করছো কেন?
– বাজে কথা বলবেন না। আমি কোথায় কান্না করছি?
– এইযে চোখ কেমন টলমল করছে।
– আপনি কলেজে পড়েন?
– কি মনে হয় তোমার বাবু? (গাল টেনে)
– আমি আসলে জানতাম না।
– ওহ আচ্ছা… (বলেই সবগুলো মেয়ে একসাথে হেসে উঠলো)
– আমার ফুল আর কার্ডটা ফেরত দিয়ে দিন।
– ওমা কেন?
– কেন আবার কি? আমার জিনিস আমাকে দিবেন না?
– আচ্ছা তোমার পকেটে এটা কি?
– কিছুনা। এতো কথা না বলে আমার জিনিস আমাকে ফেরত দিন।
– আচ্ছা.. পকেটের রেপারটায় কি কোনো গিফ্ট আছে?
– হ্যা তো? আপনি জেনে কি করবেন?
– দেখিতো।
দেখিতো বলেই নীলা রিফাতের পকেট থেকে নীল রেপারে মুড়া গিফটটা ছিনিয়ে নিলো। আর সোজা তার ব্যাগে ডুকিয়ে দিয়ে বললো এবার যাও।
– কিন্তু আমা.. আমার..
– আবার কথা বলে? যাও যাও বাড়ি যাও।
– প্লিজ আপু প্লিজ। অনেক কষ্টে টিফিনের টাকা জমিয়ে কিনেছি।
– তো আমি কি করবো। তুমিতো আমার জন্যই কিনেছিলে তাইনা। তাই আমিই রেখে দিলাম।
– সরি আপু। ভুল হয়ে গেছে। আমি ভেবেছিলাম আপনি ঐ পাশের গার্লস স্কুলে পড়েন। আপনাকে দেখে তাই মনে হয়।
– ওহ আচ্ছা? কেন বলত?
– আপনি দেখতে ছোটতো। বুঝাই যায় না কলেজে পড়েন।
ঠাস!
কি বললি তুই?![?](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/te6/1.5/16/1f621.png)
![?](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/te6/1.5/16/1f621.png)
(নীলা আসলে একটু খাটো। খাটো বলতে বয়স অনুযায়ী সময় মতো তার তেমন বৃদ্ধি ঘটেনি। বান্ধবীরা মাঝেমধ্যেই এটা নিয়ে তাকে খেপায়। যেটা সে মুটেই পছন্দ করে না)
বাম গালে আরেকটা জোড়ালো থাপ্পড় খেয়ে কোনো মতে নিজের চোখের পানি আটকে রেখে রিহান। আর এদিকে নীলা একেবারে ক্ষেপে আগুন। কারণ আশেপাশে বান্ধবীরা মুখ টিপে হাসছে। তখন নীলা রাগী গলায় বললো..
– তোর সাহস তো কম না এখনো এখানে দাড়িয়ে আছিস? দেবো আরেকটা![?](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t69/1.5/16/1f624.png)
![?](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t69/1.5/16/1f624.png)
রিহানের আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকার সাহস হলো না। ওখানে থেকে চলে এলো। রিহানের কান এখনো গরম হয়ে আছে। এতো জোড়ে থাপ্পড়টা পড়েছে না..। গালে নিশ্চয়ই দাগ বসে গেছে। কেন যে দীপুর কথা শুনতে গেলো? রিহান শুধু একদিন কথায় কথায় নীলাকে দেখিয়ে বলেছিলো ঐ মেয়েটাকে ওর ভালো লাগে। আর তাতেই দীপু কি কি খুজ খবর নিয়ে পরেরদিন হাজির। যে মেয়টার নাম নীলা,দীপুর কাজিন আদিবার সাথে একই স্কুলে পড়ে। কি খেতে পছন্দ করে,কি রং পছন্দ, বাড়ি কোথায় ইত্যাদি আবিজাবি সব। দীপুই রিহানকে ফুল, কার্ড আর গিফ্ট নিয়ে প্রপোজ করার আইডিয়া দিয়েছিলো। ক্লাসের সাবাই জানে দীপু এই বিষয়ে খুবই এক্সপার্ট। ক্লাস এইট থেকে সে রিলেশন করছে। রিহানেরও শখ ছিলো প্রেম করার। আর দীপুর এতো উষ্কানিতে শেষ পর্যন্ত নিজে কোনোকিছু না ভেবেই বোকার মতো কাজটা করে বসলো। আর এখন কি হলো? দুইগালে দুইটা মগড়া মগড়া থাপ্পড় খেলো। আর উপরন্তু এতো কষ্টে জমানো টাকাগুলো জলে গেলো।
রিহানের দীপুর উপর খুব রাগ হচ্ছে। এখন যদি আশেপাশে দীপু থাকতো তাহলে নিশ্চিত ওর মাথা ফাটিয়ে দিত। কিন্তু সে রিহানকে থাপ্পড় খেতে দেখেই পগারপার হয়ে গেছে। সেদিনের মতো বাড়ি ফিরে যায় রিহান। কিন্তু বাড়িতে এসেও নিস্তার নেই। গালে কি হয়েছে? কে মারলো? এতো জোড়ে কেন মারলো? এসব বলে মা রিহানের চেপে রাখতে চাওয়া কষ্টটা আরো বাড়িয়ে দিলো।
বিকালে খেলার পর রিহান বাড়ি ফিরছিলো। তখনই পিছনে থেকে একটা মেয়ে কন্ঠে রিহান ঘুরে দাঁড়ায়। ঘুরে নীলাকে দেখেই সে উল্টো পথে আবার দৌড় লাগালো। পিছন থেকে হয়তো তাকে ডাকতেছিলো কিন্তুু রিহান থামার অবস্থায় ছিলো না। একেবারে সোজা বাড়ি চলে আসে। কিন্তু রিহানের কপালটা হয়তো তেমন ভালো ছিলো না। সন্ধ্যা বেলা আবার যখন একটু বাইরে বেরুবে ঠিক করলো। আর দরজা খুলতেই তার আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয়ে যায়…..
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com