Breaking News

লেডি কুইন । পর্ব-০৯

লিমন কুহুকে বললো
-আরোহীর কি হলো বল তো।
-জানি না রে। এরকমটা আমি কখনো ওকে হতে দেখিনি।
-যা হবার তো হয়ে গেছে।
-আরোহী অনুতপ্ত রে। ক্ষ্যাত ছেলেটার উপর মায়া জন্মে গেছে। আরোহী কেমন চেন্জ হয়ে গেছে।
করিম চাচা এগিয়ে এসে
-ছেলেটা বস্তিতে থাকাতে আমাদের সবার খুব সুন্দর ভাবেই জীবনযাপন চলছিলো। এখানে কোনো ঝগড়া মারামারি ফ্যাসাদ ঘটে না এখন আর আগের মতো সবাই মিলে মিশে থাকে এখন।
-আপনারা ওকে খোঁজেন নি।
-খুজেছি কিন্তু পায়নি।
একটা মধ্যবয়সী মেয়ে এসে বললো
-মেহেরাব ভাইয়ার কোন খোঁজ পেয়েছেন আপনারা।
-না। আমরাও তো খুজছি ওকে।
-ছেলেটা কত ভালো ছিলো। আমার শুশুর বাড়ির লোকজন আমাকে দু চোখে দেখতে পারতো না। স্বামীটে আমাকে আর রাখবে না। খুব অত্যাচার করতো কিন্তু এখন অনেক সুখে আছি। সবাই কত ভালোবাসে। মেহেরাব যদি না যেতো হয়তো এতদিন আমি শুশুর বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতাম।
আরোহী অবাক হয়ে
-মানে কি করছিলো। আর কবে কার ঘটনা।
-১ মাস ৮ দিন আগের কথা। আমি বাপের বাড়িতে আসি কান্না করতে করতে। আমার গায়ে মাইরের দাগ স্পষ্ট। মেহেরাব তখন আমাকে দেখে আমাদের ঘরে এসে
(-কি হয়েছে আপনার। আর আপনি কান্না করছেন কেন?
মেয়েটির মা কান্না করে বললো
-পোড়া কপাল আমাদের৷ মেয়েটার কপালে হয়তো সুখ নেয়।
-কেন?
-ওর স্বামী ওকে রাখবে না। শাশুড়ী ননদ এ জ্বালাই খুব। স্বামীতে ফিরলে মিথ্যা বলে মার খাওয়ায়। ওকে এখন ছেড়ে দিবে। আমরা কিছু করতে পারলে যেনো করিয়ে দেখায়। আমাদের পাশে এক আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই।
-চাচি আপনি শান্ত হোন। আপনার শশুর বাড়ি কোথায়। কাল সকালে আমাকে একবার নিয়ে যাবেন।
-না না ভাই ওরা তোমাকে দেখলে মারবে।
-আপনি আমার সাথে যেয়েন। আমি সবটা দেখবো।
পরেরদিন মেয়েটি মেহেরাবকে নিয়ে গ্রামে যায়। মেহেরাব রহিমাকে বললো
-চেয়ারম্যানের বাসাটা কোথায়?
-ঐদিকে। কেন?
-চলুন আমার সাথে।
মেহেরাব রহিমাকে সাথে করে নিয়ে চেয়ারম্যানের বাসায় গেলো। চেয়্যারম্যান তখন বাসা থেকে বের হচ্ছিলো মেহেরাব সামনে দাঁড়িয়ে
-আসসালামু আলাইকুম
-ওয়ালাইকুম আসসালাম। কে তুমি?
-আমি মেহেরাব। আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো।
-আমার হাতে তো এখন টাইম নেই। তুমি আমার কাউন্সিলে এসো।
-আপনি ১০ মিনিট পর যান৷ আপনাকে একটা বিচার করতে হবে।
চেয়ারম্যান রাগ হয়ে
-তোমার কথা মতো কি আমাকে চলতে হবে মিয়া। তুমি চেনো আমাকে। কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছো।
-সরি স্যার ভূল হয়ে গেছে।
মেহেরাব রহিমাকে নিয়ে গেইটের দিকে এগোলো। চেয়ারম্যান মোবাইলে টাইমটা দেখলো তখন মেহেরাবকে ডাক দিলো
-এই যাচ্ছো কোথায় ভেতরে এসো কি নালিশ বলবা তো। আমি না হয় একটু রাগ করে বলেছি। তোমাদের সেবা করার জন্যই আমাকে চেয়ারম্যান বানানো হয়েছে।
রহিমা চেয়ারম্যানের এমন কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো। মেহেরাব রহিমাকে নিয়ে চেয়ারম্যানের ড্রয়িংরুমে বসলো। চেয়ারম্যান বললো
-বলো কি জন্য এসেছো।
-রহিমার শশুর বাড়ির সবাইকে ডেকে শুনবেন মেয়েটার কি দোষ৷ কি জন্য তারা এমন অত্যাচার করছে। ওরা যদি না শুদ্ধালে আমি আইনের ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো। এটা আপনার গ্রাম আপনার গ্রামের লোকজনকে দেখা আপনার দায়িত্ব। তাই প্রথম নালিশ টা আপনার কাছে দিলাম। যেটা ভালো হয় তাই করেন।
-ঠিক আছে আমি ওদের এখন ডাকিয়ে আনার ব্যবস্থা করছি।
রহিমার শশুর বাড়ির সবাইকে ডেকে আনা হলো। চেয়ারম্যান রহিমার স্বামীকে জিঙ্গেস করলো
-কি ব্যাপার শাহিন তুমি ওর উপর নির্যাতন করো কেন? আমি তো তোমাকে ভালো জানতাম।
-ও কোনো কাজের না। আমি ওকে ছেড়ে দিবো।
-তুমি কি ভেবে বলছো।
-হ্যা।
-তাহলে ওর দেনমোহরের সকল টাকাগুলো বুঝিয়ে দিয়ে দিবে এখনি। তা না করতে পারলে তোমাদের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নিবো।
মেহেরাব শাহিনের মায়ের কাছে যেয়ে
-শুনলাম আপনার ও নাকি দুটো মেয়ে আছে। তাদের যখন বিয়ে দিবেন তখন তাদের উপর যদি এমন অত্যাচার করে তখন কেমন লাগবে।
-খারাপ লাগবে। মেয়ের জামাইকে আস্তো রাখবো না।
-ওহ এটা তো নিজের মেয়ে তাই কষ্ট বেশি। আর ও হচ্ছে পরের মেয়ে মুখ বুঝে সব সহ্য করে যাচ্ছে আর আপনারা হাসিখুশি ভাবে নির্যাতন করে যাচ্ছেন। তাহলে ওর মা বাবা আপনাদের কি করা উচিত।
শাহিনের মা মাথা নিচু করে আছে।
চেয়ারম্যান বলে উঠলো
-শাহিন তোমরা দুজন আগে ভালোভাবে পাশে যেয়ে কথা বলো। কি সিদ্ধান্ত নিবে এসে বলো।
রহিমা আর শাহিন পাশে চলে গেলো।
মেহেরাব শাহিনের ফ্যামিলির সাথে অনেক কথা বললো। কিছুক্ষণ পর শাহিন এসে
-আমরা এক সাথে থাকতে চাই।
চেয়ারম্যান হাসিখুশি মুখে
-এই তো খুশির কথা। এই কে আছিস মিষ্টি নিয়ে আই।
মেহেরাব রহিমাকে নিয়ে শাহিনের মার হাতে হাত ধরিয়ে দিয়ে
-আজ থেকে এ হলো আপনার মেয়ে। নিজের মেয়ে। আর উনি আপনার নিজের মা। নিজের মায়ের সাথে যেমন হাসিখুশি থাকেন বিপদে আপদে মন খুলে মাকে বলেন ঠিক তেমনি তাকে ও বলবেন। দেখবেন সবাই খুব সুখে থাকবেন। আর হ্যা আর একটা কথা চাচি যতদিন বেচে থাকবেন ওর পাশে সবসময় থেকেন। স্বামীতে কি করলো না করলো দেখার বিষয় না। আপনি পাশে থাকলে শাহীন আর কিছু করতে পারবে না। মেহেরাব সেখান থেকে চলে আসে )
লিমন পিছন থেকে এসে আরোহীকে বললো
-পাইনি কোথাও। কেউ বলতে পারছে না।
-আচ্ছা ওর গ্রামে ফোন লাগা। দেখ পাওয়া যায় কি না?
-ঠিক আছে।
আরোহী করিম চাচাকে বললো
-চিন্তা করেন না। ও হয়তো কোন কাজে আছে৷ ফিরে আসবে।
-তাই জেনো হয়।
আরোহী বাইকের কাছে এসে কুহুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। কুহু অবাক হয়ে গেলো।
-কি হয়েছে আরোহী ।
-আমি দেখ কত বোকা একটা ক্ষ্যাত মার্কা ছেলের ভেতর কত ভালোগুন ছিলো আর আমি কি না ওকেই ভূল বুঝলাম। আমি নিজেকে তো কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না।
-শান্ত হ। কি হলো তোর ওর জন্য।
-আমি জানি না রে। আমার কিছুই ভালো লাগছে না। ওকে খুজে না পাওয়া পর্যন্ত আমি শান্তিতে থাকতে পারবো না।
বস্তি থেকে চলে গেলো।
নেহা আর হৃদয় রেস্টুরেন্টে বসে ডিনার করছে এমন সময় একটা লোক ঢুকে একটা ছবি হাতে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। সবাইকে ছবিটা দেখাচ্ছে কিন্তু কেউ চিন্তে পারছে না। লোকটার পরনে লুঙ্গি। গায়ে সাদা রংয়ের গেঞ্জি। চুল পাক ধরা। নেহা আর হৃদয়ের কাছে ছবিটা দেখলো। ওরা ছবিটা দেখে অবাক হয়ে গেলো। নেহা বলে উঠলো
-একে খুজছেন কেন আপনি?
-তুমি কি চেনো একে। ছেলেটাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওকে খুজছি৷
-হ্যা চিনি তো। কিন্তু আমরা ও তাকে খুজছি পাচ্ছি না।
-তোমার নাম্বারটা দাও। ওকে পেলে আমাকে কল দিয়ো। তোমার নাম্বারে মিস কল দিয়ে রাখবো।
-ঠিক আছে। আপনার নাম্বারটা দেন।
-আমার ফোন তো বাসায়।
নেহা লোকটাকে নাম্বার দিলো। লোকটা চলে গেলো। নেহা হৃদয়কে বললো
-মেহেরাব হঠাৎ ভ্যানিশ হলো কেনো?
-ওর কেউ কোনো ক্ষতি করলো না তো।
-আমি ও না বুঝতে পারছি না।
পরেরদিন সকাল
কুহু গেইটের দিকে চোখ পড়তে দৌড়ে চলে গেলো আরোহীর কাছে। কুহু হাফাচ্ছে। আরোহী বললো
-কি হয়েছে এভাবে হাফাচ্ছিস কেন?
কুহুর মুখ থেকে আর কোনো কথা বের হচ্ছে না হাত শুধু গেইটের ওদিকে দিলো। আরোহী গেইটের দিকে দৌড়ে দিলো
চলবে….

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com