লেডি কুইন । পর্ব -১৯
আশফা আরোহীকে জিঙ্গেস করলো
-সত্যি করে একটা কথা বল তো
-কি
-তুই কি মেহেরাবকে লাইক করিস।
-কি বলছিস এসব।
নেহা বলে উঠলো
-আমাদের তো তাই মনে হচ্ছে।
-তোদের মাথা কি গেছে। আমি ওকে কোন দিক দিয়ে লাইক করবো৷
-তাহলে ওকে সাথে সাথে রাখছিস যে। তোর বাসায় ও থাকতে দিচ্ছিস।
শুভ্র মেহেরাবকে জিঙ্গেস করাতে মেহেরাব বললো
-কোথায় চাদ আর কোথায় বামুন।
-মানে কি?
-তোরা যেটা ভাবছিস তার কিছুই না। আমাকে রাখছে ওর গার্ড হিসেবে। মাস গেলে বেতন দিবে।
-ও রাখলো আর তুই রাজি হয়ে গেলি।
-রাজি হয়নি। তবে জোড় করে রাখছে। আমি চলে যাবো।
-শোন তোর যেখানে যা লাগে আমাকে বলিস আমি সব দিবো। তুই আমার বাসায় থাকিস।
-আমি কারো দয়া নিয়ে বাচতে চাই না। আমি আগে যেমন ছিলাম এখন ও তেমন থাকবো।
আশফা বললো
-সত্য কোনটা বলবি
-আমার তো ওর প্রতি মায়া হয় তাই রেখেছি কাজ করানোর জন্য।
আমার যেমন আর পাঁচটা কাজের লোক আছে ও তেমন।
নেহা আশফার মুখটা কালো হয়ে যায়। আরোহী গাড়ি নিয়ে চলে যায়।
হৃদয় শুভ্র ও মুখটা কালো করে এসে ওদের সামনে দাঁড়ায়। একে অপরের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। আশফা বললো
-এদের ভেতর কোন একটা গন্ডগোল আছে।
-কিভাবে বুঝলে।
-খেয়াল করে দেখছো আরোহী মেহেরাবকে না নিয়ে চলে গেলো। মেহেরাব একা অন্যদিকে চলে গেলো।
-এই যাওয়ার পিছনে কারণ কি?
-কারণটায় খুজতে হবে আমাদের।
-কি দরকার আর খুঁজে৷ লাগবে না। তবে মেহেরাব কাজ করবে না এটাই ফাইনাল কথা।
-হ্যা ঠিকি বলছো।
নেহা হৃদয় শুভ্র আশফা যে যার বাসা ফিরে গেলো। আরোহী বাসায় যেয়ে বাসার সব জিনিস পত্র ভাঙ্গতে শুরু করলো। কুহু দৌড়ে এসে
-কি হয়েছে তোর। পাগল হলি নাকি। এভাবে ভাঙ্গিস কেন?
-আমার জিনিস আমি ভাঙ্গবো তোকে কয়ফিয়ত দিবো আমি। সামনে থেকে যা।
-আরোহী কি বলছিস তুই এসব।
-শোন তুই কাজের লোক কাজের লোকের মতো থাক।
কুহু আরোহীর কথা শুনে চোখ বেয়ে পানি ঝরে পড়লো। কুহু নিজের রুমে চলে গেলো।
আরোহী কথাটা বলে যেনো শকড্ খেলো৷
ভাঙ্গা বাদ দিয়ে কুহুর রুমে গেলো। খাটের এক কোণে বসে আছে কুহু।
আরোহী খাটের আরেক কোণে বসে
-আচ্ছা বল তো Love at first site টা কেমন হয়।
কুহু পিছনে ফিরে অবাক হয়ে
-জানি না।
-বল না। মুখটা ওমন করে রেখে আছিস কেন?
কুহু লক্ষ্য করলো আরোহীর চোখ বেয়ে পানি ঝরছে। কুহু আরোহীর কাছে এসে আরোহীর চোখের পানি মুছে দিয়ে
-কি হয়েছে তোর?
-প্রথম ভালবাসাটা যদি না পায় তখন কেমন লাগে বল তো৷
-খুব খারাপ। কিন্তু তুই কাকে ভালবাসলি
-কাউকে না। আমি কাউকে ভালবাসতে পারি না। এই দেখ রিং আমার বিয়ে টা মম ঠিক করে গেছে।
কুহু হা হয়ে
-কি বলছিস।
-হুম। যার সাথে ডিল ছিলো তার ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিবে। এটাই লাস্ট কথা।
-আন্টি তোর কাছে না শুনে এমন কাজটা করলো কিভাবে।
-আমি হেরে গেলাম।
পরেরদিন
ভার্সিটিতে ক্যাম্পাসের এক কোণে মেহেরাব বসে আছে।
আরোহী গেইট এ বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। গেইট দিয়ে সাদা রংয়ের একটা কার ঢুকলো।
আরোহীর সামনে যেয়ে গাড়িটা থামলো। সবাই অবাক হয়ে গেলো।
গাড়ি থেকে চোখে সানগ্লাস পড়া একটা মেয়ে নামলো।
আরোহীর সামনে দাঁড়িয়ে একটা ছবি বের করে
-এই ছেলেটাকে কই পাবো।
আরোহী ছবিটা দেখে হা হয়ে গেলো।
আরোহীর থেকে কুহু নিয়ে দেখলো। একে একে সবাই দেখলো।
কুহু জিঙ্গেস করলো
-কি দরকার একে দিয়ে।
-ছেলেটাকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।
খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারলাম এই ভার্সিটিতে। মম ওকে সাথে করে নিয়ে যেতে বলছে।
-তুমি কি জানো ও কে? ওর স্ট্যাটার্স।
-হ্যা সব জানি। ও গরীব। ওকে পার্কে দেখে ওর কাজ দেখে আমি ফিদা।
আরোহীরা একে অপরের দিকে তাকালো
-এখান থেকে বিদায় হও। এই ছেলের জিএফ আছে।
-হোয়াইট। এটা কিভাবে সম্ভব৷ কে?
-লেডি কুইনের নাম শুনেছো
-হ্যা।
-লেডি কুইন এ ওর জিএফ। তো ও যদি জানতে পারে কি হবে বুঝতে পারছো।
মেয়েটা গাড়িতে উঠে চলে গেলো। আরোহীরা হাসতে লাগলো। আরোহী কুহু কে বললো
-কি দরকার ছিলো মিথ্যে বলার।
-ধৈর্য্য রাখ সব পাবি।
-মানে
-সত্যি কখনো মিথ্যে হয় না। আমার মন বলছে।
শুভ্র মেহেরাবের পিছনে দাঁড়িয়ে
-এখানে বসে থাকবি না ক্লাসে যাবি।
মেহেরাব পিছনে ফিরে
-আজ ক্লাস করবো না। তুই যা।
-মা এসেছে। তোকে যেতে বলছে।
মেহেরাব উঠে দাঁড়িয়ে
-কখন আসছে।
-আজকেই।
আশফা একটা টিফিনবাক্স নিয়ে এগিয়ে আসলো।
শুভ্র টিফিনবাক্স মেহেরাবের দিকে এগিয়ে দিয়ে
-মা তোর জন্য পাঠিয়েছে নিজে রান্না করে। ব্যস্ত খেয়ে নে।
তোর খাওয়ার পর মা খাবে।
মেহেরাব অবাক হয়ে গেলো। পুরোনো কথাগুলো মনে পড়ে গেলো।
শুভ্রর সাথে যখন শুভ্রর বাসায় যেতো তখন শুভ্রের মা কিছু না কিছু রান্না করবে।
মেহেরাব যেই খেতে চাইতো না তখন শুভ্র মা বলতো খাবি না তো আমি ও খাবো না।
যতক্ষণ না তুই খাবি।
শুভ্রের কথায় পুরোনো কথা ভাবা থেকে বেরিয়ে আসলো। মেহেরাবের চোখে পানি।
ছোট বেলায় মা কে হারিয়েছে। শুভ্রের মায়ের ভালোবাসায় অভাবটা পূরণ করে দিছে।
মেহেরাব নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। ভোনা খেচুরি মাংস দিয়ে। শুভ্র ফোন দিয়ে মাকে বলে দিলো।
এর ভেতর আরোহী চলে এসে
-কাল রাতে বাসায় ফিরিসনি কেন?
মেহেরাব কিছু না বলে খেয়েই চলছে। শুভ্র বলে উঠলো
-ও এখন কিছু শুনবে না। মায়ের হাতের রান্না পেয়ে আর কোনো দিকে খেয়াল নেই।
-মায়ের হাতে রান্না মানে
আরোহী যেয়ে মেহেরাবের কাছ থেকে টিফিনবাক্স কেড়ে নিয়ে বসে পড়লো।
মেহেরাব অবাক হয়ে গেলো।
মেহেরাব টিফিনবাক্স কারতে যাবে আরোহী সরিয়ে নেয়
-তুই একা কেন মায়ের হাতের খাবি আমি ও খাবো৷
আরোহী খাওয়া শুরু করলো।
আরোহী ও ছোট থেকে মায়ের হাতের রান্না খাওয়া থেকে বঞ্চিত।
শুভ্র আশফা মুচকি হাসতে লাগলো। আরোহীর ঢোক দিতে লাগলো মেহেরাব পানি এগিয়ে দিলো।
আরোহী খেয়ে নিলো।
-খুব সুন্দর হয়েছে। রোজ যদি খেতে পারতাম
শুভ্র বলে উঠলো
-তাহলে বাসায় চলে আসিছ। খেতে পারবি।
মেহেরাব বলে উঠলো
-শুভ্র তুই এক লাইন বেশি বুঝিস।
-কেন রে?
-তুই কেন বাসায় যেতে বলছিস। আমার ভাগেরটা আর পাবো না।
আরোহী বলে উঠলো
-কেমন হিংসে করে। আমি যাব। যেয়ে বসে থাকবো
-মেহেরাব মাকে বেশি করে রান্না করতে বলবো কম পড়বে না।
-আমার আদরটা এভাবে কমিয়ে নিবি।
-কই না তো।
আশফা বলে উঠলো
-তোদের জন্য আমি যে খেতে পারি না৷
আরোহী মেহেরাব আশফার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে পড়লো। এর ভেতর কুহু এসে
-আরোহী ব্যস্ত চল। রাজের লোকেরা ঝামেলা পাকাচ্ছে।
আরোহী উঠে দাঁড়িয়ে
-চল।
শুভ্র আরোহীকে বলে উঠলো
-আরোহী রাজের সাথে পেড়ে উঠবি না যাস না তুই।
-আরোহী কাউকে ভয় পায় না। ওকে আমি বুঝিয়ে দিবো আমি কি জিনিস?
কুহুকে নিয়ে চলে গেলো।
মেহেরাব শুভ্রকে বললো
-রাজ কে?
-টপ মাফিয়া। যত চোরাকারবারির কাজ আছে সব ও করে। ওর লোকজন জনবল বেশি। কেউ ওর সামনে টিকটে পারে না। আরোহী যেয়ে ভূল করলো
-কেন?
-রাজকে বোঝা খুব কঠিন। ওর খাবারে যে হাত দেয় তাকে আর এই দুনিয়ায় রাখে না। এই তো ১০ দিন আগের কাহিনী
পার্টিতে মগ্ন রাজ। সেখানে বসে ডিল করছিলো। একজন তা ক্যামেরায় ধারণ করে ওর মুখোশ খুলে দিবে বলে। কিন্তু ওর লোকেরা তাকে ধরে ফেলে। সাথে সাথে রাজ গুলি করে মেরে দেয়। ওর কথায় যে অবাধ্য হয় তাকে বাচিয়ে রাখে না।
আরোহী চলে যায়। ওর লোকের সাথে ঝামেলা করছে। আরোহী যেতে সবাই থেমে যায়। রাজের লোকদের ভেতর একজন বলে উঠলো
-লেডি কুইন হাজির। কাজটা করতে সুবিধা হবে। গাইস এ্যাটাক। লেডি কুইনকে নিয়ে বসের সামনে নিতে হবে।
শুরু হয় মারামারি একে অপরের দলের সাথে। মাঝখান থেকে আরোহীর মাথায় একজন পিছন থেকে বারি মেরে বেহুশ করে নিয়ে চলে যায়। রাজের লোকেরা এক এক করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। কুহু আরোহীকে খুজতে থাকে কিন্তু পায় না। খবরটা ছড়াছড়ি হয়ে গেছে। মর্জিনা খান খবর পেয়ে সব জায়গায় খবর লাগিয়ে দেয়।
রাত বারটা
আরোহীর ঙ্গান ফিরলো। মাথার পিছনে রক্ত জমাট বেধে আছে।
আরোহী চোখ তুলতেই দেখলো একটা গ্যারেজের ভেতর সে।
চারপাশে অস্ত্র হাতে নিয়ে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। উপর থেকে আওয়াজ আসতে লাগলো
-ওয়লকাম লেডি কুইন।
আরোহী সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে যায়
চলবে..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com