বিশ্বাসঘাতক । পর্ব -০৬
আবির আয়নায় নিজের মুখ দেখে চিৎকার করে উঠলো। আবির আয়নায় তার আগের মুখের আকৃতি দেখতে পাচ্ছে না মুখের আকৃতি টা পাল্টে গেছে। আবির চিৎকার বলে বলল..
– এটা আমি নই আমার মুখটা এমন হলো কিভাবে?আবিরের র কথা শুনে তিতি বলল
– আপনি প্লিজ শান্ত হোন এভাবে চিৎকার করবেন না?
– ডক্টর আমি এ আয়নায় কি দেখতে পাচ্ছি। এটা তো আমি নই ডক্টর এটা কিভাবে হলো?তিথি বলল
– দেখুন মিস্টার আপনার মুখে এসিড ছুরে মারা হয়েছিলো, কে বা কারা এসিড মেরেছে তা জানিনা, আপনাকে এসিড মারার পর আমি আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি এসিড মারার কারনে আপনার পুরো মুখটা ঝলসে যায় আর আমি এর আগে আপনাকে কখনো দেখিনি তাই আপনাকে বাঁচাতে সার্জারি করে মুখের আকৃতি গত টা এমন করে দেই। আমি এটা করার জন্য দুঃখিত।.তিথির কথা শুনে আবির কিছুটা সময় স্তব্দ হয়ে থাকলো। আবিরের চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরলো। আবির ডক্টর কে কিভাবে কৃতজ্ঞতা জানাবে তা ভেবে পাচ্ছে না। আবির কাঁদতে কাঁদতে ইরার হাত ধরে বলল..
– থ্যাংকইউ ডক্টর, থ্যাংক ইউ সো মাচ, আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ জানাবো তা আমার জানা নেই।
– আরে এটা তো আমার দায়িত্ব। প্লিজ কাঁদবেন না। সেদিন যখন আপনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কেঁদেছিলেন সত্ত্যি বলতে আমার খুব খারাপ লেগেছিলো আর আপনাকে সুস্থ করার জন্য আমি অনেক কস্ট করেছি। আমি খুশি হয়েছি আপনাকে সুস্থ করতে পেরে।
– আপনি আমার মুখের আকার পাল্টে দিয়ে এক দিয়ে খুব ভালো একটা কাজ করেছেন ডক্টর। এতে আমার প্রতিশোধ নিতে আরো সহজ হবে!.আবিরের কথা শুনে তিথি একটু চমকে উঠলো আর বলল..
– কিসের প্রতিশোধ?
– আমার মুখে এসিড মারার প্রতিশোধ, আমার বোনের সংসার ভাঙার প্রতিশোধ, আমাকে আমার বাবা মায়ের কাছ থেকে আলাদা করার প্রতিশোধ।.তিথি আবিরের কথাগুলো অবাক হয়ে শুনেছিলো। তিথি বলল
– আপনি এতটা ক্ষীপ্র হবেন না এখন। কারন আপনি এখনও পুরোপুরী সুস্থ না।আপনি শুয়ে রেস্ট নিন এখন সন্ধায় বাসায় চলে যাবেন?তিথি আবিরকে কথাগুলো বলে চলে গেলো চেম্বারে। আবির বেডে শুয়ে শুয়ে পরিবারের কথা ভাবতে লাগলো আর কাঁদতে লাগলো।.এদিকে আবিরের পরিবার খুব টানাপোড়ার মধ্যে চলছে। আবিরের শোক পুরোপুরী কাটিয়ে উঠতে পারেনি এখনও। আবিরের বোনের একটা সুন্দর ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে তার নাম রেখেছে পিও তার শরীরটা তুলোর মতো নরম। আর ইমা নিজে চাকরী খোজার অনেক চেস্টা করছে কোনভাবেই চাকরী খুজে পাচ্ছে না। চাকরী না পেয়ে কয়েকটা টিউশনির করিয়ে তার বাবা মা কে নিয়ে সংসার টানছে।.সন্ধা ঘনিয়ে এসেছে আবির এখনও বেডে শুয়ে আছে। আবির কোথায় যাবে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। আবির মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো আগে প্রতিশোধ তারপর বাসায় যাবো। কিন্তু আমি থাকব কোথায় আর কি করেই বা প্রতিশোধ নিবো। এসব ভাবতে থাকে আবির। তখনই তিথি এসে বলল.
– কি খবর মিস্টার, কি ভাবছেন এতোকিছু?তিথির কথা শুনে আবিরের ভাবনার ঘর কেটে গেলো আর বলল
– না না ডক্টর কিছু না। আচ্ছা ডক্টর আপনার নামটা কি?
– তিথি!
– হুম খুব সুন্দর নাম তো।
– আচ্ছা আপনি বাসায় যাবেন না?তিথির কথা শুনে আবির হতবম্ব হয়ে গেলো কি বলবে কিছু মাথায় আসছে না। তারপর বলল
– আসলে ডক্টর আমার সাথে যা হয়েছে তার প্রতিশোধ না নেওয়া অবদি আমি বাসায় যাচ্ছি না।
– হুম তা তো বুঝলাম কিন্তু আপনি যাবেন কোথায়?
– জানিনা ডক্টর!
– আচ্ছা আপনি এক কাজ করতে পারেন। আপনি আমার সাথে আমার বাসায় থাকতে পারেন?তিথির কথা শুনে আবির কিছুটা অবাক হয়ে বলে..
– কি বলছেন ডক্টর, আপনার সাথে থাকবো মানে? আর আপনার বাবা মা কি বলবে?
– তা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আর একটা কথা?
– কি কথা ডক্টর?
– আপনার মুখ থেকে এই ডক্টর কথাটা শুনতে আমার মোটেও ভালো লাগছে না। আপনি বরং আমার নাম ধরে ডাকলেই খুশি হবো।
– ওকে ডক্টর।তিথিকে আবার ডক্টর বলাতে তিথি একটু রাগান্বিত কণ্ঠে বলে
– আবার ডক্টর ধ্যাত।
– ও সরি সরি। তিথি ।তারপর তিথি ও আবির হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গাড়ি করে তিথির বাসায় যাচ্ছে।তিথি লক্ষ্য করছে আবির চুপ করে আছে কিছু কথা বলছে না। তাই তিথি বলল.
– আচ্ছা আপনার নাম কি?
– জ্বি আমার নাম আবির।
– ওহহ সুন্দর নাম।তিথি ও আবির পুরোটা রাস্তা কথা বলতে বলতে বাসায় চলে আসলো। বাসায় ঢুকার পর আবির দেখলো বাসায় কোন লোকজন নেই অথচ বাসাটা অনেক বড় আর খুবই সুন্দর। আবির বলল.
– তিথি আপনার বাবা মা নেই?
– হ্যা আছে কিন্তু বাবা মা লন্ডনে থাকেন। আমিও লন্ডনে থেকে পড়ালেখা করি কিন্তু পড়ালেখা শেষ করে ভাবলাম দেশে এসে দেশের মানুষের চিকিৎসা করব। আমি ইচ্ছা করলে বিদেশে থেকে অনেক টাকা রোজগার করতে পারতাম। কিন্তু আমার টাকার কোনদিন অভাব হয়নি তাই এই সিদ্ধান্ত।.তিথির কথা শুনে আবির ও অবাক হয়। আর বলে
– তিথি আপনি সত্ত্যিই অনেক ভালো মানুষ। আপনার মতো যদি প্রতিটি মানুষ হতো তাহলে দেশটা কাজ এমন থাকতো না।
– হইছে হইছে আমার আর এত প্রশংশা করা লাগবে না। খুব খিদে লেগেছে আমি রান্না ঘরে গেলাম রান্না করতে আপনি ফ্রেস হয়ে নিন আর বাসাটা ভালো করে ঘুরে দেখুন।তারপর আবির ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে এসে রুমের মধ্যে বসে বসে ভাবছে কি করব আমি কিভাবে শুরু করবো কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
.নীলা ব্যালকনিতে বসে বসে কাঁদছে আর আবিরের কথা ভাবছে। কারন বড্ড বেশি ই ভালোবাসে আবির কে সেই প্রাইমারি লেবেল থেকে এদের ভালোবাসা আর শেষ পর্যায়ে এসে তা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। এমন সময় নীলার মা এসে বলল.
– মীলা মা আমার কাঁদিস না। দ্যাখ যা হবার তা তো হয়ে গেছে তুই এমন ভাবে নিজের জীবনটাকে শেষ করে দিস না মা। নতুন করে জীবনটা শুরু কর?মায়ের কথা শুনে নীলা বলল
– আমি যে আবিরকে খুব ভালোবাসি মা। আবিরকে ছাড়া বেঁচে থাকার কথা আমি ভাবতেও পারিনা। তাকে ছেড়ে ক্যামনে জিবন শুরু করবো বলো?
– তাহলে কেনো নিজে হাতে মারলি তোর ভালোবাসাকে। মারার আগে একটিবার ভাবিসনি?নীলা আর কিছু না বলে মা কে জরিয়ে ধরে কাঁদতে থাকলো। তার মা ও বুঝতে পারছে নীলার মনের অবস্থা কতটা ভয়াবহ। নীলার মা বলল
– নীলা আমি চাই কাল থেকে তুই আবার অফিসে জয়েন কর!
– না মা আমি পারব না এসব আমার পক্ষে আর সম্ভব না।
– কেনো সম্ভব না? অবশ্যই সম্ভব আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না নীলা আর হ্যা কালকে অফিসে কিছু লোক নেওয়া হবে আর এর দায়িত্ব তোর উপর থাকলো!
– কিন্তু মা?
– কোন কিন্তু না যা বলছি তাই! অনেক রাত হয়েছে খেতে আয়?.নীলার মা কথাগুলো বলে চলে গেলো। নীলা কোন কথা না বলে মায়ের কথা মেনে নিলো। তারপর খেতে গেলো আর খাওয়া শেষ করে শুতে গেলো নীলা।আবির ঘরের মধ্যে বসে বসে ভাবছে আমার এখন মুখের যা আকার তাতে নীলা কখনই আমাকে চিনতে পারবেনা। আবির ভাবলো প্রথমে নীলাকে তার প্রেমের ফাঁদে ফেলাবে আরুন তারপর প্রতিশোধ। এমন সময় তিথি এসে বলল.
– এই যে মিস্টার আসুন খেতে আসুন। খাবার সব রেডি!আবির তারপর খেতে গেলো আর খেতে খেতে বলল
– আচ্ছা তিথি আপনি আমার একটা উপকার করতে পারবেন?
– কি করতে হবে বলুন?
– আমি খবর নিয়ে জানতে পেরেছি আমার পরিবার খুব কস্টে আছে। আর আমার বোন একটা ভালো চাকরী খুজছে আপনি আমার বোনের একটা চাকরীর ব্যাবস্থা করতে পারবেন প্লিজ?
– ওকে হয়ে যাবে এখন খান?
– সত্ত্যি বলছেন তো?..তিথির কথা আবির বিশ্বাস করতে পারছে না তাই তিথি আবিরকে বলল
– আচ্ছা মিস্টার আমাকে দেখে আপনার কি মনে হয় আমি জোকার?
– ওমা এ কি বলছেন আপনি জোকার হতে যাবেন কেনো?
– তাহলে আমি যে বললাম আপনার বোনের চাকরী হবে বিশ্বাস করলেন না যে?.আবির আর কিছু না বলে খেতে লাগলো।খাওয়া শেষ করে ঘুমাতে গেলো আর শুয়ে শুয়ে ভাবছে তিথি মেয়েটা সত্ত্যি অনেক ভালো। আমার জন্য কতকিছুই না করলো।.
কিছুদিন পর..
আবিরের বোন ইমা চাকরী টা হয়ে গেছে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে আর বেতন মাসে ৩৫ হাজার টাকা। পরিবারের সবাই খুশি এই চাকরী টা হওয়াতে ইমার মনে মনে বললএবার আমার পরিবার টা একটু সচ্ছল হবে। কিন্তু তার মনে একটা দাগ থেকেই গেছে আর সেটা ভাই হারানোর দাগ।.আর এদিকে আবির নীলার কোম্পানিতে চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছে আর মনে মনে মনে যদি চাকরীটা হয়ে যায় তাহলে আমার কাজটা আরো অনেক সহজ হয়ে যাবে । আবির বেশ কিছুক্ষন ধরে বসে আছে ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য আর ভাবছে কবে আমাকে ডাকা হবে আর কবে চাকরী টা পাবো। অবশেষে ডাকা হলো আবিরকে। আবির দরজার সামনে যে যেতেই দেখতে পেলো সেখানে নীলা তানিয়া বসে আছে। আবির দেখতে পেলো নীলার শরীর টা কেমন পাল্টে গেছে। আবির বলল….
– আসতে পারি ম্যাডাম?… আবিরের কথা শুনে নীলা চমকে উঠলো আর আবিরের দিকে তাকালো। নীলা আবির কে দেখে কিছুক্ষনসময় স্তব্ধতা পালন করলো। অবাক হয়ে চেয়ে আছে আবিরের দিকে। নীলা এমন করে চেয়ে আছে দেখে আবির ভাবলো কি ব্যাপার নীলা এভাবে চেয়ে আছে কেনো আমার দিকে আমাকে কি চিনতে পেরেছে নাকি? কিন্তু আমাকে তো চেনার কথা না। আবির আবার বলল..
– ম্যাডাম আসতে পারি?… আবিরের কথা শুনে নীলা বলল
– হ্যা আসুন?আবির ভিতরে গেলো নীলা বসতে বলল।আবির বসলো চেয়ারে নীলা প্রশ্ন করলো
– নাম কি আপনার?.
চলবে…