সে আসবেই । পর্ব -০১



১৭ বছরের মেয়ে প্রেগন্যান্ট, কথাটি শুনে তার বয়ফ্রেন্ড আয়ান আতঙ্ক খেয়ে যায়।
বয়ফ্রেন্ড বলল ” এই বাচ্চা আমি নিতে চাই না,
কালকে আমরা ডাক্তারের কাছে গিয়ে বাচ্চাটি নষ্ট করে ফেলবো।
প্রেমিকা বলল “”এসব কি বলছো তুমি আয়ান?আমি তাকে পৃথিবীতে আনতে চাই।
তুমি তাড়াতাড়ি আমাকে বিয়ে করে ফেলো”বয়ফ্রেন্ড এর উত্তর “” না, এইটা কিভাবে সম্ভব।
এক্ষুনি আমাদের বিয়ে করা কি খুবই দরকার?
আমার এখন একটা ভালো চাকরি হয়নি, বিয়ের পর তোমাকে খাওয়াবো কি।
তার চেয়ে ভালো এ বাচ্চা নষ্ট করে ফেলো।তোমাকে তো আমি বিয়ে করব, তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করো না?
প্রেমিকার উত্তর “”এইটা বিশ্বাসের কথা না।
এইরকম হলে তুমি বাচ্চা নিয়েছিলে কেন আয়ান?আমি পারবো না,
প্লিজ তাড়াতাড়ি বিয়ের ব্যবস্থা করো, আমরা বিয়ে করবো।”” ( কান্না স্বরে) প্রেমিকের উত্তর “” দেখো?
তুমি বোঝার চেষ্টা করো। আমার এখন বিয়ের সময় হয়নি। আমি আগে সবগুলো ঠিক করে ফেলি। তারপর আমরা বিয়ে করি। “”
প্রেমিকা বলল “”দেখো আয়ান? এরকমটা কথা না। তুমি বুঝার চেস্টা করো প্লিজ।
আমি আমার প্রথম বাচ্চা কিভাবে মেরে ফেলবো। পারবো না আমি,
আর আমাদের কারনে সে পৃথিবীতে আসতে পারবে না কেন? তার দোষ কি?
সে তো কোন দোষ করেনি? তাহলে সে এই পৃথিবীর মুখ দেখবে না কেনো।
তুমি যেভাবেই পারো বিয়ের ব্যবস্থা করো আয়ান।
প্রেমিক বলল “” ঠিক আছে শোনো, আগামীকাল তুমি আমার বন্ধুর বাসায় চলে আসো।
সেখান থেকে আমরা পালিয়ে বিয়ে করবো। প্রেমিকা বলল “”কার বাসায়?””
প্রেমিক বলল “” আসিফ এর বাসায় চলে আসো। সেখান থেকে আমরা পালিয়ে যাব। “”
আয়ানের এমন কথা শুনে মেঘলা প্রশ্ন করে বসলো “”পালিয়ে যেতে বাসায় কেন.. আমরা তো এমনি পালাতে পারি। তুমি বাস স্টেশনে চলে এসো। আমি সেখানে আসব””
আয়ান বলল “” তোমাকে যেটা বলেছি সেটা করো। বাসায় আসতে বলেছি সেখানে এসো। সেখান থেকে আমরা পালাবো। এর বেশি কোন কথা বলতে চাইলে বিয়ে করার দরকার নাই। “” নিরুপায় হয়ে মেঘলা বলল “” আচ্ছা ঠিক আছে, আমি আসিফ এর বাসায় চলে আসব। কিন্তু কখন? “”আয়ান বলল “”বিকাল টার দিকে “” মেঘলা বলল “” আচ্ছা””
( মেঘলা, আয়ানকে বিদায় দিয়ে বাসার দিকে চলে গেল। সন্ধ্যা যখন নেমে আসে, তখন মেঘলার মাথার মধ্যে হাজারো চিন্তা। একটু চিন্তা মুক্ত হওয়ার জন্য, মেঘলা ফোন দেয় তার বান্ধবী মিলিকে।)
— হ্যালো মিলি?
— হ্যাঁ মেঘলা বল, কি খবর তোর?
–আমার কথা আর জিজ্ঞেস করিস না। আমি ভালো নেই।
— কেন কি হয়েছে?
–অনেক কিছু হয়ে গেছে মিলি?
–হ্যাঁ বুঝেছি অনেক কিছু, কিন্তু কি আমাকে তো বলবি।
— আমি প্রেগন্যান্ট, আমার পেটে তিন মাসের বাচ্চা।
— কি বলছিস এসব!! আয়ানকে কিছু বলেছিস? সে জানে?
— হ্যাঁ, আয়ানকে বলেছি।কালকে আমরা পালিয়ে বিয়ে করতে যাচ্ছি।
— ওকে, সাবধানে যাস। একটু চিন্তা ভাবনা করে কাজ করিস।
— সেটাইতো বেশি চিন্তা হচ্ছে! এদিকে আমার বাচ্চাকে আমি পৃথিবীতে আনবো, সেজন্যই এখন আমাকে পালিয়ে বিয়ে করতে হচ্ছে। আচ্ছা শোন, এই ব্যাপারে তুই কারো সাথে কোন কথা বলিস না।
–ঠিক আছে মেঘলা,আমি কাউকে বলবো না। তুই যা। আর কোন সমস্যা হলে আমাকে ফোন দিস।
–ঠিক আছে, রাখলাম।
— ওকে ( মিলির সাথে কথা বলার পর মেঘলা ফোন দিলো আয়ানকে। কিন্তু রিং হবার পরেই সাথে সাথে ফোনটা কেটে দিল আয়ান অদ্ভুত রকমের ভাবনা ফিল করতে লাগল মেঘলা। মিনিট পর আয়ান ফোন ব্যাক করে বলল)
— হ্যালো মেঘলা?
— কি হয়েছে? ফোন কেটে দিচ্ছ কেন?
— কালকের ব্যাপার নিয়ে কথা বলছিলাম। যাইহোক, তুমি প্রস্তুত তো?
— হুম, আমি প্রস্তুত।
— ওকে এখন রাখলাম,একটু ব্যাস্ত, পরে কথা বলি।
— ওকে (রাতভর মেঘলার চোখে কোন ঘুম নেই। কেমন একটা অদ্ভূত চিন্তা করতে লাগলো, কেমন যেন একটা অনুভুতি হচ্ছে। যে অনুভূতি তাকে বারবার সায় দিচ্ছে, মেঘলা তুই যাস না…. কিন্তু মেঘলা কি করবে, মেঘলা এখন আয়ানের তিন মাসের বাচ্চার মা। সে তো পারে না তার বাচ্চাকে নষ্ট করতে। কোনো মা চায়না, তার বাচ্চাকে নষ্ট করতে। তেমনটা মেঘলা ও চায়না। সত্যিই তো? বাচ্চাটির তো কোন দোষ নেই? তাহলে সে কেন শুধু শুধু পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করবে।
পরের দিন সকাল হতেই, মেঘলা তার আম্মুর আলমারি থেকে অনেকগুলো স্বর্ণ গয়না নিয়ে বিক্রি করে দিল। এতে কিছু ভালো টাকা পেয়েছে। টাকাগুলো বিয়ের পর কাজে লাগতে পারে ভেবে তার কাছে রাখল। দুপুর হতেই মেঘলা তার কলেজ ব্যাগের মধ্যে ২-১ টা জামা এবং কিছু ব্যবহারিক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে নিল। বেশি কিছু মেঘলা তার সাথে নেয়নি। ভাবলো এত কিছু যদি নিজের সাথে নিয়ে যায়, তাহলে বাড়ির সবাই মেঘলাকে সন্দেহ করতে পারে। সেজন্য সে দু একটা জামা কাপড় নিয়ে নিয়েছে। বিকাল ৪ টা বাজতেই মেঘলা প্রাইভেটের নাম করে বাসা থেকে বের হল । বাহিরে বের হয়ে আয়ানকে ফোন করল)
— হ্যালো আয়ান? কই তুমি? আমি বাড়ি থেকে বের হয়েছি।
— তোমাকে তো বলেছি সোজা আসিফ বাসায় চলে আসো। আমি ওর বাসায় আছি।
–ঠিক আছে, আমি আসছি।
(মেঘলা ধীরে ধীরে তার বিপদের দিকে এগোচ্ছে। ওহ হে, বিপদ কথাটি বলা হয়েছে কারণ সত্যিই মেঘলা বিপদে পড়তে যাচ্ছে। যাইহোক পরের ঘটনা পড়ার পর আপনারা বুঝবেন, বিপদটা কি।মেঘলা সোজা আসিফ বাসার সামনে গেল। বাসার সামনে দাঁড়িয়ে মেঘলা কলিংবেল বাজাতেই দরজা খোলল আয়ান। দরজা খুলেই মেঘলাকে ভিতরে নিয়ে দরজাটা ভেতর থেকে লক করে দিল আয়ান। মেঘলা বাসার ভিতরে ঢুকেই চমকে উঠল। গিয়ে দেখল বাসার ভেতর আয়ানের তিনজন বন্ধু বসে আছে। মেঘলার কাছে ব্যাপারটা ভালো ঠেকলো না। সে আবার হেটে আয়ানের কাছে গিয়ে বলল)
— আয়ান, আমরা পালাবো কখন?
–এইতো সোনা, আমরা একটু পরেই পালাচ্ছি। একটু অপেক্ষা করো। বন্ধুদের কাছ থেকে কিছু টাকা পয়সা নিয়ে নি। (আয়ান রিয়াকে একটা রুমে নিয়ে গেলো। রিয়া ভিতরে মেঘলা আশায় বসে থাকে। মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করতেছে। কারণ তারা পালাতে যাচ্ছিল, এখানে আসিফ বাসায় একটি রুমের মধ্যে রাখার কারণ কি। এমন সময় দরজা খুলে আয়ান। সাথে তার তিনজন বন্ধু। আসিফ, রনি, আর রবি। মেঘলা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, আয়ানের মুখটা কেমন একটা ভয়ঙ্কর শয়তানের মত হয়ে গেছে। সে কেমন যেন একটা হাসি দিচ্ছে, যে হাসির আড়ালে অনেক শয়তানি লুকিয়ে আছে। তারপর মেঘলা আয়ানকে জিজ্ঞাসা করলো।)
চলবে..
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url