Breaking News

বিশ্বাসঘাতক। পর্ব -১০

আবির স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো তিথি কল করেছে।কল ধরার পর তিথি বলল
-কি মিস্টার কি করছেন?
– একটু আগে নীলাকে ধর্ষন করে এখন ছাদে সিগারেট টানছি।আবিরের কথা শুনে তিথি অবাক হয়ে বলে

– আপনার মাথা ঠিক আছে তো। এই ভর দুপুরে কি যা তা বলছেন? বিয়ে করে পাগল হলেন নাকি?
– দেখুন কেউ যদি কোন মেয়ের অমতে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে তাহলে সেটাকে বলে ধর্ষন। আর আমি ঠিক সেটাই করেছি।
– কিন্তু বিয়েটা তো নীলার মতেই করেছেন তাহলে এমন করলেন কেনো?
– দেখুন তিথি নীলা আমার সাথে কি কি করেছে তা কি আপনি ভুলে গেছেন?
– না ভুলিনি!

– তাহলে এমন মূর্খের মতো প্রশ্ন করছেন কেনো?,আবিরের কথা শুনে তিথি বেশ কিছুক্ষন নিরবতা পালন করলো। কি বলবে কিছুই বুঝতেছে না। তারপর বলল
– আপনি তো সিগারেট খান না তাহলে কেনো এখন এসব ছাই পাস খাচ্ছেন?
– আমার মাথা ঠিক নেই তাই এই ছাই পাস খেয়ে মাথা ঠান্ডা করছি!

– আচ্ছা ঠিক আছে আপনি মাথা ঠান্ডা করুন আমার এখন রোগী দেখতে হবে।.তিথি ফোন কেটে দিলো। আর এদিকে আবির আরো দুইটা সিগারেট ধরালো। আবির আগে ভাবতো মানুষ এসব কেনো খায় কিন্তু এখন বুঝতে পারছে এর আসল রহস্য। সিগারেট খাওয়া শেষ আবির ঘরে চলে গেলো আর সেখানে গিয়ে দেখলো নীলা গলায় কাপড় পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যান এর সাথে সুইসাইড করার চেস্টা করছে। নীলার এমন কান্ড দেখে আবির একটু ও বাধা দিলো না। নীলাকে বলল,
– নীলা তুমি সুইসাইড করবে ভালো কথা কিন্তু তুমি যদি সুইসাইড করো তাহলে তোমার বাবা মা ও যে সুইসাইড করবে।আবিরের কথা শুনে নীলা কান্না ভেজা কন্ঠে আর তোতলাতে তোতলাতে বলল
– মা মা মানে?

– তোমার বাবা মা আমার হাতে হাতে বন্দি।যদি তুমি আত্নহত্যা করো তাহলে সেদিন ই তোমার বাবা মা কে আমি মেরে ফেলব!,আবিরের কথা শুনে নীলা বলল
– প্লিজ এমন কিছু করো না? আমার মা,বাবার কিছু হলে আমি বাঁচব না।
– তাহলে সুইসাইড করতে যাচ্ছিলে কেনো?
– নীল তোমার পায়ে পড়ি প্লিজ আমার বাবা মায়ের ক্ষতি করো না। আমি কোনদিন ও সুইসাইড করার চিন্তা করব না । প্লিজ আমার বাবা মাকে ছেড়ে দাও?
– তোমার বাবা মাকে ছেড়ে দিবো কি দিবো না সেটা ডিপেন্ড করবে তোমার উপর!যাও বাথরুমে গিয়ে স্নান করে আসো?

নীলা কথা না বারিয়ে বাথরুমে চলে গেলো আর বাথরুমে গিয়ে ডুঁকরে ডুঁকরে কাঁদতে লাগলো। তার সাথে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। খুব জোরে জোরে কাঁদছে নীলা কিন্তু তার কান্নার শব্দ দেয়াল ভেদ করতে পারছে না। প্রায় ৪৫ মিনিট পর আবির বাথরুমের কাছে গিয়ে চেঁচিয়ে বলল,,,
– বাথরুমে এত সময় ধরে করছো টা কি? দরজা কিন্তু এবার ভেঙে ফেলবো।আবিরের চিৎকার শুনে নীলা নিজেকে সামলিয়ে কান্না থামিয়ে বলল..

– এইতো হয়ে গেছে আর একটু।,,,আবির বিছানায় শুয়ে টিভি দেখা শুরু করলো। কিছুক্ষন পর নীলা বাথরুম থেকে বের হয়ে আসলো। আবির নীলাকে দেখে বেশ কিছুক্ষন সময় চোখের পলক ফেলালো না। কারন আজ নীলাকে অনেক সুন্দর লাগছে। ভেজা চুলে যে একজন নারী কে এতটা সুন্দর লাগতে পারে তা আগে জানা ছিলো না আবির। মৃনাল টিভির দিকে না চেয়ে নীলার দিকে ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে আছে।,,,,, আবিরের এমন চাহনি দেখে মনে মনে বলল

– ইচ্ছে করছে চোখ দুটো ফুটো করে দেই ব্যাটা হনুমান একটা।,,কিন্ত নীলা মুখে কিছু বলল না। নীলা শাড়ী পড়ে আয়নার সামনে চুলগুলো আছড়াতে লাগলো। আবির বার বার আড় চোখে তাকাচ্ছে নীলার দিকে ইচ্ছে করছে গিয়ে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে ঘাড়ে চুম্বন একে দিতে কিন্তু তা পারছে না। আবির ভাবছে না এখন আমার রোমান্টিক হওয়া মোটেও চলবে না আমাকে ভিলেন হতে হবে ভিলেন।
,,,,,আবির ও বাথেরুমে গিয়ে স্নান সেরে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ঘুম ঘুম পাচ্ছে আবিরের কেননা কাল রাতে একটু ও ঘুমাতে পারেনি। তাই খুব সহজেই ঘুম এসে গেলো আবিরের।আবির ঘুম যাবার পর নীলা ভাবলো নীল তো দুপুরে কিছু খায়নি আর যদি ঘুম থেকে উঠে খাবার না পায় তাহলে না জানি কি হতে কি করে বসে। তাই নীলা রান্না ঘরে গিয়ে রান্না টা সেরে নিলো।

,,আবিরের ঘুম ভাঙ্গল বিকেলে। ঘুম থেকে ওঠার পর খুব খিদে ও পেয়েছে তার। তখনই নীলা এসে বলল
– খাবার রেডি আছে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে আসুন?আবির ফ্রেশ হয়ে খেতে গেলো। খাবারের সুন্দর ঘ্রাণ আসছে। না খেয়ে বসে আছে আবির। নীলা একটু খেয়ে বলল,,
– খাবারে বিষ দেইনি খেতে পারেন?আবির একটু নীলার দিকে তাকিয়ে খেতে লাগলো
আচ্ছা আমাকে বিয়ে করলে কেনো?
– বিয়ে করেছি আমার বাবা মায়ের কথায়। আর এখন পর্যন্ত আপনার সামনে দাড়িয়ে আছি শুধু মাত্র আমার বাবা মায়ের জন্য।
– শুনেছি এর আগে আপনার একটা বয়ফ্রেন্ড ও ছিলো নাম নাকি আবির। আপনার সাথে তার কিছু হয়নি?

– মুখ সামলে কথা বলুন মিস্টার নীল। না জেনে না শুনে এমন কথা বলতে আপনার লজ্জা করেনা। ও আপনার মতো ছিলো না অনেক ভালো ছিলো আমার কাছে ।
– তাহলে কেনো নিজে হাতে মারলে তাকে?,,,,,,আবিরের এই প্রশ্নটা শুনে নীলা বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। কিছু বলার ভাষা খুজে পাচ্ছে না। কি বলবে কিছুই বুঝতেছে না নীলা। আবিরের কাছ থেকে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে চলে গেলো নীলা আর বিছানায় শুয়ে প্রচন্ড শব্দ করে কাঁদতে থাকলো। আবির আর খেলো না। না খেয়ে চলে এলো তার রুমে আর এসে দেখতে নীলার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে।
,,,,,নীলার কান্না দেখে আবির নীলাকে উদ্দেশ্য করে মনে মনে বলল”,,,, নীলা আমিও এমন ভাবেই কেঁদেছিলাম যখন আমার বোনের ডিভোর্স হয়েছিলো আমি ঠিক এমন ভাবেই কেঁদেছিলাম যখন তুমি আমার চাকরী কেরে নিয়েছিলে। আমার পরিবারের সুখ তোমার জন্য চলে গেছে। আমি তোমাকে অত সহজে ক্ষমা করবো না।

,,,আবির ঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। নীলা একটা হিসাব মিলাতে পারছে না তা হলো, নীল কেনো তার সাথে এমন করেছে। আমিতো নীলের কোন ক্ষতি করিনি কিন্তু তারপরও কেনো নীল এমন করছে। বিয়ের আগে তো সব ঠিক ই ছিলো আর এখন এসব করছে কেনো?
,,,আবির এরপর থেকে প্রতিনিয়ত নীলার সাথে বাজে ব্যাবহার করে। আর নীলা আবিরের সব অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করে নেয় কারন নীলা কিছু করলে নীলার বাবা মায়ের ক্ষতি করবে আবির। আবির প্রতিদিন মদ খেয়ে এসে নীলার সাথে খারাপ আচরন করে মাঝে মাঝে শরীরে আঘাত করে, কত যে থাপ্পর মেরেছে নীলাকে তার খেয়াল নেই।

,,,,এভাবে কেটে যায় প্রায় ৮ মাস। এই ৮ মাসে নীলা যে পরিমান কস্ট সহ্য করেছে তার হিসেবে নেই। নীলা মেডিকেল রিপোর্ট এ জানতে পারে সে প্রেগন্যান্ট, মা হতে চলেছে নীলা। কিন্তু আবিরকে জানায়নি একটি ভয়ে আর তা হলো যদি পেটের সন্তান কে মেরে ফেলে সেই ভয়ে। কিন্তু আবির সব জানে, নীলা যে প্রেগন্যান্ট তা ভালো করেই জানে আবির।

নীলা পেটের সন্তান কে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখছে। নীলার ধারনা আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। বিছানায় শুয়ে আছে নীলা এমন সময় তানিয়া কল করেছে নীলা কল ধরা মাত্রই তানিয়া বলে উঠলো..
– নীলা তোকে একটা সত্ত্যি কথা বলার আছে।
– কি কথা?
– আবির নির্দোষ!

– হোয়াট? কি বলছিস এসব তুই?ওপাশ থেকে কিছু বলছে না তানিয়া।
ফোন কেটে দিয়ে সিম কার্ড টা খুলে ফেলেছে তানিয়া।
নীলা তানিয়ার নাম্বারে বার বার কল দিচ্ছে কিন্তু নাম্বার অফ।
নীলার চোখ বেয়ে টপ টপ করে জল গড়িয়ে পরছে কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।
তানিয়ার কথার হিসেব মিলাতে পারছে না নীলা।
আজ এতদিন পর তানিয়া এসব কেনো বলল।
এসব জানার তিব্র ইচ্ছা নীলার মনে কিন্তু কি করে জানবে তা ভেবে পাচ্ছে না।
এমন সময় আবির ঘরের ভিতর ঢুকে নীলাকে বলল
– এই নাও ডিভোর্স পেপার, আমি আর তোমার সাথে সংসার করতে চাই না আমি বিচ্ছেদ চাই আর সেটা এখনই?আবিরের কথা শুনে নীলা কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। একদিকে তানিয়ার কথা আর একদিকে ডিভোর্স পেপার। নীলা বলল,,,
– নীল তুমি এসব কি বলছো? আমি মা হতে চলেছি আর তুমি এই সময়ে কেনো ডিভোর্স চাচ্ছো?আবির বলল

– মনে পড়ে নীলা সেদিনের কথা যেদিন তুমি আমার বোনের ডিভোর্স টা নিজে করিয়েছিলে। আর তখন আমার বোন ও গর্ভবতী ছিলো।নীলা কাঁদতে কাঁদতে বলল
– নীল তুমি এসব কি বলছো আমি কেনো তোমার বোনের ডিভোর্স করাবো।
আমি তো তোমার বোন কে চিনিনা আর দেখিনি কখন ওআবির চিৎকার করে বলল…
– কারন আমি নীল না আমি হলাম আবির। আর আমার বোন হলো ইমা।
– এসব তুমি কি বলছো নীল। আমিতো আবিরকে এসিড দিয়ে মেরে ফেলেছি।
– হ্যা এসিড মেরেছিলে আর আমি বেঁচেও গেছি। তুমি আমার বোনের সংসার ভেঙেছ আর আমি তোমার সংসার ভাঙব।

 আবির নিজের জামা খুলে তার শরীর নীলা কে দেখালো আর বলল
– চিনতে পারছো আমায় নীলা?
তোমার তো না চেনার কথা না কারন এই ক্ষত গুলো তুমিই করেছো নিজে হাতে।
নীলা কিছু বলছে না কেঁদেই চলেছে। সব কিছু অন্ধকার দেখছে নীলা।
বাস্তবেই আবির নীলার সামনে দাড়িয়ে হাতে ডিভোর্স পেপার নিয়ে। নীলা বলল…,,
– প্লিজ আমার কথাটা শুনো আগে। আমি একটা বিষয় তোমার সাথে শেয়ার করতে চাই?
– তোমার আর আমি কোন কথা শুনব না কোন কথা না। তুমি এখনি এই পেপারে সাক্ষর করে দিবে তোমার আমার সবকিছু শেষ।,নীলা কোন কিছু না ভেবে আবিরের পা জরিয়ে ধরে বলে
– প্লিজ আবির প্লিজ! আমাকে একটু সময় দাও। পরে তুমি যা বলবে তাই করবো আমি।
নীলা অনেক রিকুয়েস্ট করছে কিন্তু আবির কিছুতেই নীলা

কথায় কান দিচ্ছে না কারন আবির বিনা দোষে এতদিন অনেক কিছু সহ্য করেছে কিন্তু আর না।
আবির জোর করে নীলার কাছ থেকে ডিভোর্স পেপারে সাক্ষর করিয়ে নিতে চাচ্ছে
কিন্তু নীলা কোনভাবেই সাক্ষর করতে চাচ্ছে না।
আবির কিছু উপায় না পেয়ে টেবিলের উপর থেকের একটু কালির প্রলেপ
এনে নীলার আঙুলে মাখিয়ে জোর করে একটা টিপসই নিয়ে নিলো

চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com