চিরকুট । শেষ পর্ব

আমি উৎসকে একটা চিরকুটে লিখে দিলাম,
আমার পক্ষে আপনাকে বিয়ে করা সম্ভব না আমাকে ক্ষমা করবেন
চিরকুট টা দেখে এত ক্ষণে উৎস ছন্নছাড়া,পাগলের মত হয়ে গেছে আমি জানি।
কিন্তু আমার যে এ ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
উৎস আবার চিরকুট পাঠাতে লাগলো,
আমি চিরকুট গুলো পড়ি কিন্তু উত্তর দেয়ার মত কোন সাহস পাচ্ছিলাম না।
বার বার মনে হচ্ছিলো,ও আমার সত্যিটা জানলে কি আমাকে মেনে নেবে?
দুই তিন দিন পর হঠাৎ সকাল বেলা নাস্তার টেবিলে আম্মু আব্বু আমাকে বলেন,
সামনের বাসার ভাই আর ভাবী তাদের ছেলের জন্য তোকে আজ দেখতে আসবেন,
তুই রেডী থাকিস।
কথা টা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে যাই।এ কি করে সম্ভব?
আমি আম্মু আব্বুকে কিছু বলবো তখনই তারা আমাকে মাঝ পথেই আটকে দিলেন।
আর বললেন,তারা খুব ভালো মানুষ।
তাদের ছেলেটাও ভালো।সব জানি আমরা ওদের সম্পর্কে।
আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করবো আমি,
উৎসর বাবা মা আমাকে বিকেলে দেখতে আসলেন।
উৎস এসে চুপচাপ বসে আছে।

উৎসর বাবা মা কয়েকটা প্রশ্ন করলেন,যার উত্তর আমার আম্মু দিলেন।
তারপর তারা বললেন,তাদের ছেলে উৎসর জন্য আমাকেই বউ হিসেবে চান তারা।
কারণ উৎস আমাকে পছন্দ করে।
আমার আব্বু আম্মু জানেন তাদের উপরে আমি কোন কথাই বলবোনা।
তাদের মতামতই আমার মতামত।
তাই তারাও বললেন,আমাদেরও কোন আপত্তি নেই।
চোখের পলকে যেন সব কিছু হয়ে যাচ্ছিলো।
উৎস আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে ছিলো,
আমি শুধু একবার ওর দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেলেছিলাম।
২য় বার আর তাকানোর সাহস পাইনি।
কথা যখন সব পাকাপাকি হয়ে যাচ্ছিলো ঠিক তখনই উৎস ওর মাকে ইশারায় বল্লো ও আমার সাথে একা কথা বলতে চায়।

ওর মা আম্মুকে বল্লো ওদের একটু আলাদা কথা বলতে দিলে ভালো হতো।
আপনাদের কোন আপত্তি আছে?
আম্মু আমাকে বললেন আমি যেন উৎসকে আমাদের ছাদে নিয়ে যাই।
আমি উৎসকে ছাদে নিয়ে গেলাম।
আমি হাঁটছিলাম আর উৎস আমার পিছু পিছু আসছিলো।
আমি উৎসর দিকে তাকাতে পারছিলাম না।
উৎস আমাকে ইশারায় বল্লো,কেন আমার সাথে এমন করলে তুমি?
আমার চিরকুটের জবাব কই?
আমি অবাক হয়ে উৎসর দিকে তাকিয়ে আছি।
তবে কি উৎস জানে,আমি কথা বলতে পারিনা!তাই ও ইশারায় কথা বলছে আমার সাথে?
আমি উৎসকে ইশারায় বল্লাম,আমি বোবা।
তাই আমার স্বপ্ন দেখার হক থাকলেও তা পূরণ করার হক নেই।
আমি জানতাম না আপনি আমার এই অক্ষমতার কথা জেনেও যে আমাকে বিয়ে করতে চাইবেন।
উৎস এবার ইশারায় আমাকে বল্লো,
আমিও যে তোমারই মত কথা বলতে পারিনা।
তাই বলে কি আমারো স্বপ্ন পূরণের অধিকার নেই?
আমি এবার চরম অবাক হই।
আর মনে মনে গিলটি ফীল করতে থাকি,আমি ওকে না জেনে না বুঝে এত দিন এতটা কষ্ট দিয়েছি।
আমি ওকে ইশারায় বললাম,
-আপনার বাবা মা সব জানেন?

হ্যাঁ।আর আমিও এবং তোমার বাবা মাও সব জানেন।
কিন্তু বিশ্বাস করুন,আমি কিছুই জানিনা।
তারপর আমার ইশারার কথা থামিয়ে দিয়ে উৎস আমাকে একটা ওর পকেট থেকে চিরকুট বের করে দেয়।
আমি চিরকুট টা হাতে নিয়ে দেখি ওখানে লিখা-
আমার সাথে সারাজীবন চিরকুটে কথা বলবে?
আমাকে বিয়ে করবে?
আমরা না সারাজীবন চিরকুটে কথা বলবো।
তুমি কি রাজি?
আমি চিরকুট টা পড়ে মাথা ঝাঁকিয়ে উৎসকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
হ্যাঁ আমি রাজি।

<>সমাপ্ত<>

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url