Breaking News

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি। পর্ব -০৫

আদ্র কেক হাতে এগিয়ে আসলো অনুর সামনে। অনু আদ্রের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। শুধু মনে মনে অনু একটা কথাই ভাবছে এই আদ্র ভাইয়া যেন কেক মুখে লাগিয়ে ভূত না বানায়। সবাই যে নাহলে হাসাহাসি করবে। কিন্তু আদ্র অনুকে অবাক করে দিয়ে কেকটা অনুর মুখের সামনে বাড়িয়ে দিয়ে শান্ত স্বরে বলল,
–এই অনু হা করো। কেকটা খাও।

অনু চারপাশে তাকালো। সবাই অনু এবং আদ্রের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আদ্র এবং অনুর মা-বাবাও খুব অবাক হলো। কিন্তু মুখে কিছু বললো না। তারা কেউ ভাবতেও পারে নি আদ্র এমনটা করবে। অনু ভেবেছিল আদ্র হয়তো মুখে কেক মাখিয়ে ভূত বানাবে। কিন্তু এইটা তো আরও মহা ঝামেলা। অনু বেশি কথা বাড়ালো না। চুপচাপ হা করলো। কারণ এই অল্প সময়তেই অনু বুঝে গেছে আদ্র ভীষণ রাগী। অনু কথা না শুনলে আদ্র অশান্তি করতে পারে। আদ্র অনুকে কেক খাইয়ে দিলো। কেকটা চকলেট কেক ছিল তাই অনুর খেতে বেশ ভালোই লাগছিল। আদ্রের হাত থেকে কেক খাওয়ার সময় অনুর হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গিয়েছিল। মনের মধ্যে এক আলাদা অনুভূতি কাজ করছিল। অনুকে আদ্র কেক খাইয়ে দেওয়াতে রিনি রেগে গেল। রিনি সামনে এগিয়ে এসে রেগে গিয়ে আদ্রকে বলল,

–আমরা এতোগুলা বন্ধু ছিলাম। তুই আমাদের কেক না খাইয়ে দিয়ে এই মেয়েটাকে কেন কেক খাওয়ালি?
আদ্র রিনিকে গম্ভীর স্বরে বলল,
–আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই আমি অনুকে কেক খাইয়ে দিয়েছি। এতে তোর যদি গায়ে জ্বালা ধরে তাতে আমার কিছু করার নেই রিনি।
রিনি রেগে গিয়ে আদ্রকে বলল,
–আদ্র তুই আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছিস কেন? একটু আগে এই মেয়েটার জন্য তুই সুমির সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিলি এখন আবার আমার সাথেও খারাপ ব্যবহার করছিস?
আদ্র রিনিকে শান্ত স্বরে বলল,
–আমার ব্যবহার তোদের কাছে ভালো লাগলেও আমার কিছু যায় আসে না। খারাপ লাগলেও আমার কাছে কিছু যায় আসে না। তোরা জাহান্নামে যা।

অনু যেন নিরব দর্শক। এখানে অনুর কি বলার আছে তা অনু বুঝতে পারছে না। তাই অনু চুপ করে আছে। এখানে কিছু বলতেও অনুর ভয় লাগছে। আনোয়ার হোসেন এগিয়ে এসে আদ্রকে গম্ভীর স্বরে বলল,
–আদ্র চুপ করো। কি শুরু করলে তুমি?
আদ্র আনোয়ার হোসেনকে বলল,
–আমার কি দোষ বলো তো বাবা? আমি অনুকে আমার ইচ্ছায় কেক খাইয়ে দিয়েছি এতে রিনির কি সমস্যা?
রিনি আনোয়ার হোসেনকে মন খারাপ করে বলল,
–আংকেল আপনি দেখেছেন আদ্র এই মেয়েটার জন্য আমাকে অপমান করছে।
আনোয়ার হোসেন রিনিকে বলল,

–রিনি দেখো মা ওর একটা নাম আছে। ওর নাম অনু। তুমি অনুকে এই মেয়ে বলছো এটা তো ঠিক নয়।
রিনি রেগে গিয়ে আনোয়ার হোসেনকে বলল,
–আংকেল আপনিও আদ্রের মতো এই মেয়েটার পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন? আপনারা সবাই আমাকে অপমান করছেন। এটা কিন্তু ঠিক নয়।
সুমি রিনির পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
–রিনি তুই মন খারাপ করিস না। তোর কষ্ট কেউ বুঝবে না। আদ্র এখন আর আমাদের বন্ধু নেই রে রিনি।
রিনি কান্নারত মুখ করে সুমিকে বলল,
–হ্যা সুমি তুই ঠিক বলেছিস।
আদ্রের বন্ধু নিলয় গম্ভীর স্বরে সুমি এবং রিনিকে বলল,
–তোরা কি এখানে নাটক শুরু করেছিস? আদ্র যদি অনুকে কেক খাইয়ে দেয় তাহলে তোদের এতো কষ্ট কিসের? মাথার বুদ্ধি কি তোদের গেছে?
রিনি নিলয়কে গম্ভীর স্বরে বলল,

–তুই বুঝবি না নিলয়।
আদ্র এবার দাঁতে দাঁত চেপে রেগে বলল,
–চুপ কর সবাই। আমার এসব আর ভালো লাগছে না।
আমি তোদের কেক না খাইয়ে দিয়ে অনুকে কেন কেক খাইয়ে দিয়েছি এটাই তো জানতে চাস তোরা তাই না?
সুমি আদ্রকে বলল,
–হ্যা আদ্র বল কেন তুই অনুকে নিয়ে এতো বাড়াবাড়ি করছিস? কেন অনুকে কেক খাইয়ে দিয়েছিস?কেন এই একদিনের মাঝেই অনুর জন্য তোর এতো দরদ হলো?
আদ্র অনুর দিকে তাকাল। অনুর ভীষণ ভয় হচ্ছে। এখন ঠিক কি বলতে পারে আদ্র ভাইয়া তা অনু ভাবছে। আদ্র মুচকি হেসে বলল,
–কারণ তোদের থেকে অনু সবচেয়ে আলাদা। অনু একদমই আলাদা স্বভাবের মেয়ে। তাই আমি অনুকে কেক খাইয়ে দিয়েছি।

আদ্রের মুখে এই কথা শুনার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না। অনু স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আদ্রের কথার মানে কেউ বুঝতে পারল না। আদ্র পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–আমি কারণটা বলেছি। তাই এই নিয়ে আমি কারও মুখে আর কোনো কথা শুনতে চাই না।
সবাই লাঞ্চ করে যে যার মতো বাসায় যেতে লাগলো। অনুও তার মা-বাবার সাথে বাসায় যাওয়ার জন্য আদ্রের বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। আদ্রের সাথে অনুর আর কোনো কথা হলো না। অবাক করার বিষয় হলো আদ্রের মা রেহেনা পারভিন অনুর মা-বাবার সাথে কথা বললেও অনুর সাথে তেমন কোনো কথাই বললো না। এতে অনুর মন খারাপও হয়। বাসায় ফিরে এসে অনু মনে মনে বলতে লাগল,
–আদ্র ভাইয়াটা মানুষ হিসেবে বড় অদ্ভুত। ওড়নার ক্লিপটা তিনি আমার হাতেও দিতে পারতো। কিন্তু তিনি আমাকে একটা রুমে নিয়ে গিয়ে সবার আড়ালে ক্লিপটা দিলো। আবার কারণে অকারণে আমাকে ছুঁয়েছিল।

নিজের বন্ধুদের সাথে আমাকে নিয়ে আদ্র ভাইয়া এতো রাগারাগি করলো। আমাকে সবার থেকে আলাদা বলার কারণটাও আমি জানি না। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে এতো অদ্ভুত পরিস্থিতিতে কেন যে আমাকে পড়তে হলো কে জানে! আই উইশ আর কখনো যেন এই আদ্র ভাইয়ার সাথে আমার দেখা না হয়। কখনো না।

রাতে আদ্র গম্ভীর হয়ে বসে আছে। অনুর কথা বারবার না চাইতেও আদ্রের মাথায় আসছে। আদ্র নিজের দুই চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। রাতে আদ্রের ঘুম হলো না। কেন ঘুম হলো না তাও আদ্রের অজানা। পরেরদিন সকালের নাস্তার টেবিলে আদ্র আনোয়ার হোসনকে গম্ভীর স্বরে বলল,
–বাবা অনুর বাসার ঠিকানাটা আমাকে দাও।
আনোয়ার হোসেন খাওয়া অফ করে আদ্রের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল,
–অনুর বাসার ঠিকানা তুমি কেন চাচ্ছো?
আদ্র গম্ভীর স্বরে আনোয়ার হোসেনকে বলল,

–আমার দরকার আছে বাবা। প্লিজ অনুর বাসার ঠিকানাটা আমাকে দাও।
আদ্র অনেক রাগী আর বদমেজাজি। এখন যদি অনুর বাসার ঠিকানা আনোয়ার হোসেন না দেন তাহলে আদ্র নিজের বাসার সবকিছু ভেঙে চুড়ে ফেলতে পারে। তাই আর কোনো কথা না বাড়িয়ে আনোয়ার হোসেন আদ্রকে অনুর বাসার ঠিকানা বলে দিলো। আনোয়ার হোসেন আদ্রকে বলল,
–আমি তোমাকে অনুর বাসার ঠিকানা দিয়েছি কিন্তু তুমি অনুর বাসায় আবার কোনো গন্ডগোল করো না।

আদ্র হেসে আনোয়ার হোসেনকে বলল,
–বাবা আমি কেন অনুর বাসায় গন্ডগোল করবো? তুমি কোনো চিন্তা করো না। আমি এমনিতেই অনুর বাসার ঠিকানাটা জেনে রাখলাম।
অনু ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হবে এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠল। অনু দরজা খুলে প্রচুর অবাক হলো। এতোটাই অবাক হলো যে আরেকটু হলে অনু মাথা ঘুরে পড়েই যেতো। অনু মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিলে আদ্র অনুকে ধরে ফেললো। আদ্র বিচলিত হয়ে অনুকে জিজ্ঞেস করলো,
–আর ইউ অলরাইট অনু? তোমার কি হলো?

অনু নিজেকে আদ্রের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
–আমি ঠিক আছি। কিন্তু আপনি আমার বাসায় কি করে এলেন আদ্র ভাইয়া? আমার বাসার ঠিকানা আপনি জানলেন কি করে? এটা কি করে সম্ভব?

চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com