Breaking News

রক্তাক্ত লাশ । পর্ব -০৬

হঠাৎ আমার চোখ গেল অন্যদিকে। আমি হা হয়ে গেলাম। নিজের চোখ কেই বিশ্বাস করতে পারছিনা। চিন্তাও করিনি ওরে এখানে এভাবে দেখব। কি কপাল রে ভাই। এভাবেই সামনে আসল।
তুষারঃ কি দেখছিস ওভাবে?
আমিঃ নেহা
তুষারঃ কিহ
আমিঃ নেহা সামনে দেখ একটা ছেলের সাথে কথা কাটাকাটি করতে করতে যাচ্ছে।
দাড়া আমি আসিতেছি।
গিয়ে ওরা যে রুম থেকে বেড় হলো সে রুমে ডুকলাম।
আমিঃ একটু আগে একটা ছেলে আর মেয়ে বেড়িয়ে গেল যে। ওনারা কেন এসেছিল?
=> আপনি কে? আপনাকে কেন বলব?
বুঝলাম এভাবে কাজ হবেনা। ১০০ টাকা বেড় করে হাতে দিলাম। তখন মুখ খুলল।
=> ওনারা ডিভোর্স পিটিশন করেছেন।
আমিঃ কারন?
=> ওনাদের মধ্যে মিলছেনা। আন্ডার্স্টেন্ডিং ভালোনা।
আমিঃ আচ্ছা ধন্যবাদ।
বেড়িয়ে আসতেই,,
তুষারঃ চল যলদি। সবাই অপেক্ষা করছে
আমিঃ চলে এসেছে নাকি?
তুষারঃ হুম।
যলদি চললাম। ভিতরে ডুকতেই আমি হা হলাম। তাশফি ও এসেছে। ঠিক কতদিন পরে ওরে দেখলাম তা জানিনা।তাও কাল রাতেই পিকে যেভাবে দেখেছিলাম ঠিক সেভাবেই। নাকে নলক। শাড়ি পরহিত। মায়া মায়া মুখ। one more time crush খাইলাম।
ও আমাকে দেখে অভাক হয়নি। কারন হয়তো জানে শাওনের বিয়ে মানে আমি উপস্থিত থাকবই। যতই হোক কলিজার বন্ধু বলে কথা।
শাওনঃ এসে গেছিস। এইদিকে আয়। স্বাক্ষর কর।
আমিঃ ওহ হ্যা।
ওদের বিয়ে হয়ে গেল।
কেন জানিনা তাশফির সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু সাহস হচ্ছিল না। ইতস্ততবোধ করছি। কারন ওর সাথে আমি ভালো করিনি। নিজের স্বার্থের জন্য ব্যবহার করেছি। এতদিনেও যেহেতু আমার খোজ নেয়নি। তার মানে ভূলে গেছে। তাই আবেগে লাগাম টানলাম।
রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ল্যাপটপে একদিকে নেহার ছবি অন্যদিকে তাশফির ছবি লাগিয়ে দেখতেছি।
নেহা যার চোখের মোহে পড়ে এত ভালোবেসে ফেলেছিলাম ওরে ছাড়া কিছুই বুঝতাম না। কত কাব্যও রচনা করে ফেলেছি। কিন্তু বাকিটা ইতিহাস করে দিয়েছে। বিয়ে করে এখন ডিভোর্স এর এপ্লিকেশন করেছে। হায়রে ভালোবাসা।

অন্যদিকে তাশফি যার দিকে কোনোদিন ভালোভাবে তাকাই নি। সত্যি বলতে তখন এত চাপে ছিলাম যে কি ভালো কি খারাপ মাথায় ডুকছিল না। একটাই চিন্তা করতাম আর ধোকা খাওয়া যাবেনা। তাই তাশফিকে ওভাবে কষ্ট দেওয়া। ভালোবাসতাম কিনা জানিনা। হয়ত বাসিনি। আবার হয়তো বেসেছি। মাথা ঠিক ছিল না ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে পারিনি। তবে গত কাল দেখার পর কেন যেন মনে হচ্ছে আমার জীবন থেকে একটা হীরা হারিয়ে গেছে। সেটা তাশফিই। আমাকে অল্প সময়ে প্রচুর কেয়ার করেছে আগলে রেখেছে। বড়লোকের মেয়ে হয়েও ভালোবাসার কমতি রাখেনি। কোনোদিন প্রশ্নও করেনি কি করি? যাই করেছিল বলেছিলাম রাজমিস্ত্রি সেটা মেনেই নিয়েছিল। যদিও শাওন বলেছিল কিনা জানিনা। আমি শাওন কে না করেই দিয়েছিলাম।
পরদিন অফিসে,,

কাজ করছি। এমন সময় অফিসের কলিগ একটা মেয়ে। নাম নাহার। রিলেশন করে মনে হয়। কারন ভাব সাব তাই বলে। আজ কেবিনে আসল
আমিঃ কিছু বলবা?
নাহারঃ না মানে ভাইয়া একটা হেল্প লাগবে
আমিঃ কিসের হেল্প?
নাহারঃ একটা ফাইল রেডি করে দিবেন প্লিজ।
আমিঃ তুমি কোথায় যাবে?
নাহারঃ ওই আর কি। একটু বেড় হব। প্লিজ করে দিবেন
আমিঃ না নিজের কাজ নিজে করো
নাহারঃ করবেন কেন? কোনোদিন কাউকে ভালো তো বাসেন। বাসলে অবশ্যই ভালোবাসার মর্ম বুঝতেন।

হঠাৎ তাশফির কথা মনে পড়ল।।
নাহারঃ কি ভাবছেন?
আমিঃ আচ্ছা রেখে যাও।
নাহারঃ ওহো ভাইয়া thank you thank you so much..
আমিঃ হইছে।
ও চলে গেল।
আমি ভাবনায় সাগরে ডুবলাম।
তাশফিও তো আমাকে সবকিছুর উর্দ্ধে গিয়ে ভালোবেসেছিল। কিন্তু আমি বুঝতেই পারিনি। বুঝিনি ভালোবাসার মর্ম। নেহার ধোকার প্রতিশোধ ওর উপর চালিয়ে দিয়েছিলাম।
কয়েকদিন পাড় হয়ে গেল।

ঈদানিং তাশফির কথা একটু বেশিই চিন্তা করি। সেদিন রাতে চিন্তা করলাম। কি হবে জানিনা। তবে তাশফি কে ভালোবেসে ফেলেছি সেটা বুঝে গেছি। ওরে ছাড়া থাকা পসিবল না। জানিনা এখন রাজি হবে কিনা। তবে আমার কিছু একটা করতেই হবে।
তাই কল দিলাম। রিসিভ ও করল।
তাশফিঃ আসসালামু আলাইকুম
আমিঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছ?
তাশফিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?
আমিঃ চলছে।
কতক্ষন নিরবতা।
তাশফিঃ চুপ কেন? কিছু বলবেন?
আমিঃ না মানে কথা ছিল তোমার সাথে
তাশফিঃ বলুন
আমিঃ না মানে দেখা করবে
তাশফিঃ না করব না। আপনার সাথে দেখা করার কোনো ইচ্ছেই নেই।
আমিঃ অনেক ঘৃণা করো আমাকে?
তাশফিঃ নাহ। শুধু দেখা করতে চাচ্ছিনা।
আমিঃ করবা না?

তাশফিঃ না করব না। ওকে বায়। আম্মু আসছে দেখলে সমস্যা হবে।
বলেই ফোন কেটে দিল।
যাহোক হতাশ হলাম না। ওর সাথে যা যা করেছি। তাতে ও এইটুকু ফেরত দিবেই।
পরদিন অফিস ছিল তাই ঘুমিয়ে গেলাম।
অফিস শেষে বিকালে চায়ের দোকানে চা খাচ্ছি,,
শাওনঃ দোস্ত এবার বিয়ে করে ফেল। আর কত দেবদাস হয়ে ঘুরবি
তুষারঃ ভালো একটা কথা বলেছিস।
আমিঃ করব আগে দেখি ওরে রাজি করতে পারি কিনা।
শাওনঃ কাকে?
আমিঃ তাশফি রে।
শাওনঃ কিহ? তাশফি?
আমিঃ হ্যা। ভালোবাসি ওকে।

শাওনঃ কেমনে সম্ভব? তুই না ওরে ভালোবাসিস না বলে ছেড়ে দিলি। এখন?
আমিঃ সত্যি বলতে তখন ছেড়েছি। কারন নেহা বড়লোকের ছেলে হাতে পেতেই চলে গেল। মাথায় সেট ছিল সব মেয়েই একরকম। তাই ওই আবেগ টা নিয়া তাশফির সাথে সম্পর্কে যাইনি। ভাবতাম হারিয়ে যাবে। আবার ধোকা খাব। আর তোরা তো ভালো করেই জানিস আমি কি পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম। এখন চাকরি করছি ভালো সেলারি পাচ্ছি। এখন কোনো ভয় নাই। অন্তত পক্ষে বলতে পারবেনা আমি কিছু করিনা। ভালো ইনকাম করিনা।

তুষারঃ তুই ভালোবাসিস তাশফি কে?
আমিঃ সিউর না হলে কি? ওরে বিয়ের কথা চিন্তা করতেছি?
শাওনঃ কিন্তু তাশফি কি মানবে? ও কিন্তু তোর ওইসময়ের কিছুই জানেনা। তুই বলতে নিষেধ করেছিলি।
আমিঃ মানাইতে তো হবেই। ভালোবাসা টা বৃথা যেতে দিতে পারিনি। চল একটা কাজ করি
শাওনঃ কি?
আমিঃ ওর বাসার সামনে যাব চল।
তুষারঃ এখন?
আমিঃ চল না। সমস্যা কি
শাওনঃ আচ্ছা চল।
রিকশা নিলাম। তাশফির বাড়ির সামনে আসলাম।
দাড়োয়ান কে ডাক দিলাম।
আমিঃ তাশফি কে চিনো?
দাড়োয়ানঃ কেন? আপনাকে কেন বলব?
আমিঃ আমাকে বলবেন না। আচ্ছা ব্যবস্থা করছি।
১০০ টাকা হাতে দিলাম।
আমিঃ এবার তো বলবেন?
দাড়োয়ানঃ আপনার কি মনে হয় আমি ঘুষখোর? যতসব ফালতু।
আমরা অভাকই হলাম। ১০০ টাকা দিলে জেল থেকে বেড় হওয়া যায় দেশে। আর ওনি আমাদেরই ফালতু বলছেন। বুঝছি ওনি ঈমানদার।
শাওনঃ আচ্ছা তোরা সর আমি দেখছি।
আমিঃ শয়তানি বুদ্ধি কাজে লাগা।

শাওনঃ আচ্ছা বুঝছিস ওর এভাবে কাজ হবেনা। কন্ট্রোল রুমে কল দে তো। এক প্লাটুন সেনা পাঠাইতে বল। আমরা কে জানিস? গোয়েন্দা। এই বাড়িতে মাদকের ব্যবসা হয় আমরা খবর পেয়েছি। তুই ও ফাঁসবি। ১০০ টাকা দিলাম ভালো লাগেনি। এবার তুই আর তোর মালিক সহ সবগুলারে জেলে পাঠাইমু।
দাড়োয়ান এর কান্না কান্না ভাব।
দাড়োয়ানঃ স্যার আমি কিছু করিনি। প্লিজ আমাকে নিয়ে যাবেন না। আমার ছোট ছোট বাচ্চা আছে।
আমিঃ তাহলে বল তাশফিকে চিনিস তো?
দাড়োয়ানঃ হ্যা। বাড়িওয়ালার তিন টা মেয়ে। বড় মেয়ের নাম তাশফি। আর মেজো টা…
আমিঃ হইছে। আর লাগবেনা। যা বলি শুন। এই নে চিঠি। এটা সোজা তাশফির হাতে দিবি।
দাড়োয়ানঃ এটা কেন?

শাওনঃ আবার প্রশ্ন করিস? এ বাড়ির সবাইকে সন্ধেহ তাই এভাবে আমরা পরিক্ষা করছি। আজ তাশফি কে দিব কাল বাড়িওয়ালা কে দিব একেকদিন একেকজনকে টেষ্ট করব। তুই ঊনিশ বিষ করবি তো ভরে দিব জেলে। যা বলেছি করবি। আমরা নজর রাখব।
দাড়োয়ানঃ আইচ্ছা স্যার।
দিয়া আমরা চলে আসলাম।।
রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম। চিঠি টা পেয়ে ছে কিনা। এমন সময়েই তাশফির কল আসল। রিসিব করতেই,,
তাশফিঃ মানে কি এসবের হ্যা?
আমিঃ মানে যা লিখেছি তাই
তাশফিঃ ফাজলামি করবেন না একদম।
আমিঃ ফাজলামি না সিরিয়াসলি বলছি।
তাশফিঃ একবার বিশ্বাস করেছি। আপনি আমাকে যেভাবে ঠকিয়েছেন। তারপর আর আপনাকে মেনে সম্ভব না।


চলবে….

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com