Breaking News

কর্নেল সাহেব । লেখিকা- সুরিয়া মিম

অর্ধ উলঙ্গ হয়ে নাচানাচি করছ? আমি জামাকাপড় কিনে দেইনি তোমাকে? ব্যাস এই টুকু শুনে মেয়েটি কাঁপা কাঁপা হাতে মিউজিক প্লেয়ার টা বন্ধ করে আরচোখে পিছনে ফিরে দেখে,
দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে একযোগে মনোযোগ সহকারে মোবাইল ঘেটে দেখছেন তিনি।মেয়ে টা কোনো মতো দৌড়ে রুমে এসে ধাম করে দরজা লাগিয়ে দিয়ে মনেমনে বলে,”এই না গেলেন? কি করে ফিরে এলেন তিনি?” গোসল সেরে গামছা টা গায়ে জড়িয়ে হলে একটু নাচানাচি করতাম তাও দেখে ফেললেন তিনি?”
নিজের ঘরে এসে ইমান ইউনিফর্ম টা ছাড়তে ছাড়তে মনেমনে বলে,”এই মেয়ে টা যে কি চায়?
কিছুতেই বুঝতে পারি না আমি।ছয় মাস আগে কেন বিয়ের সাজে মেয়ে টা নিজের বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিল? তাও কিছু জানিনা আমি।তবে এতটুকু বুঝতে পারছি,দিনদিন মেয়ে টা আমার অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে কি?
কি জানি?”
মিম ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে এসে দরজায় নক করে ইমানকে জিজ্ঞেস করে,
– খাবার তো ঠান্ডা হয়ে গেলো কর্নেল সাহেব? খাবেন না নাকি? ইমান মৃদু হেসে ওকে বলে,
– তুমি কি তোমার চোখ দু’টো বাক্সবন্দি করে রাখো? দেখতে পাওনা নাকি? সেই কখন থেকে আমি তোমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছি? আমতা আমতা করে মিম বলে,
– ক্ষমা করবেন,আসলে ওই আরকি? নিজে তো রান্নাবান্না কিছু জানিনা।বেহায়ার মতো আপনার ঘাড়ে বসে খাচ্ছি।ইমান চোখ পাকিয়ে মিমকে বলে,
– আমি কি কখনো এসব নিয়ে তোমাকে কিছু বলেছি? বড্ড বেশি বকবক করো।চুপ করে দু’দণ্ড থাকতে পারো না নাকি? মিম মেকি হাসি দিয়ে ইমানকে বলে,
– কর্নেল সাহেব? আপনাকে আর একটু তরকারি দিই?
– আশ্চর্য!
আমি কি নিতে চেয়েছি? মিম বোকার মতো মাথা চুলকাতে-চুলকাতে বলে,
– না মানে।ওই আর কি? ইমান খেয়ে উঠে মিমকে জিজ্ঞেস করে,
– তুমি উঁকুন চাষি নাকি? বেচারি আমতা আমতা করে বলে,
– এটা আবার কেমন প্রশ্ন? আমি কি করেছি? ইমান ওর হাতে স্কয়ার কোম্পানির এলাচ নাম ঔষধ দিয়ে বলে,
– আজ সকালে আমি আমার মাথায় গোটা পাঁচেক উঁকুন পেয়েছি।মিম লজ্জা পেয়ে মনেমনে বলে,”হায় আল্লাহ,আমার মান সম্মান তো কিছুই রইলো না।ছিঃ ছিঃ ছিঃ।” ইমান গম্ভীর ভাব নিয়ে বলে,
– ঔষধ টা দশ মিনিট লাগিয়ে শ্যাম্পু করে ফেলো আর চাইলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে পারো আশাকরি বোঝাতে পরেরেছি? মিম মুখ ফসকে বলে ফেলে,
– আজ আমি বিদেশে থাকলে একপিস উঁকুন তিনশো টাকা করে বেচে বড়সড় বিজনেস ম্যান হয়ে যেতাম হি হি হি।ইমান ওর কথা শুনে হাসি সামলে নিয়ে বলে,
– মাথার তাঁর ছেঁড়া নাকি? লাইক সিরিয়াসলি? পাগল তুমি? মিম মুখে আঙুল দিয়ে পাঁচ মিনিট নিরবতা পালন করে বলে,
– কর্নেল সাহেব আপনি উঁকুনের চাষ করতে চান নাকি? ইমান ওকে টেনে এনে সোফায় বসিয়ে বলে,
– জি না,ঔষধ টা দাও লাগিয়ে দিচ্ছি আমি।মিম বিড়বিড় করে বলে,
– উঁকুন হলে আমার কি দোষ? কি জানি? মিমের চুল গুলো ইমানের মুখের ওপরে এসে পরতেই ও বিরক্ত হয়ে বলে,
– সমস্যা কি তোমার? সুস্থ হয়ে বসতে পারো না নাকি? মিম একটু রেগে গিয়ে বলে,
– আপনার কি সমস্যা কর্নেল সাহেব? আমি কি আপনাকে লাগিয়ে দিতে বলেছি? ইমান ব্রু কুঁচকে বলে,
– শুধু চ্যাটাং চ্যাটাং কথা মেয়ের? ওই আমি তোমার ঠেকা নিয়ে রেখেছি? মিম মন খারাপ করে বলে,
– সেদিন মরার জন্যই তো বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম।তাহলে ফেরেশতার মতো এসে কেন বাঁচালেন আপনি? ইমান নিশ্চুপ হয়ে মনেমনে বলে,”আজ আমি কি একটু ওকে বেশি করে বকে দিয়েছি?” কিছুক্ষন পর মৌনতা ভেঙে মিম বলে,
– খুব তাড়াতাড়ি আপনার জীবন থেকে চলে যাবো। শুধু ছোটোখাটো একটা চাকরি জোগাড় করেনি? ইমান একটু রেগে গিয়ে বলে,
– আশ্চর্য!
আমি কি তোমাকে এখান থেকে চলে যেতে বলেছি? তুমি তো প্রতি মাসে স্টুডেন্ট পড়িয়ে আমাকে একহাজার টাকা বাড়ি ভাড়া দাও সেটা কম নাকি? মিম অভিমান করে বলে,
– তবুও আমি আপনার ঘাড়ে বসে আছি।যাই হোক আজ একটা স্টুডেন্টের বার্থডে আমি একটু ওর সাথে দেখা দিয়ে আসি? ইমান ওর হাত চেপে ধরে বলে,
– ঝড়বৃষ্টির মধ্যে ভুলেও বাহিরে পা দিয়ো না।ঠ্যাং ভেঙে বাসায় বসিয়ে রাখবো মানুষ চেনো না তুমি।আমাকে মিথ্যে বলা? আজ তোমার কোন স্টুডেন্টের বার্থডে শুনি? মিম ভয় পেয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
– আপনাকে বলবো না আমি।ইমান হঠাৎ মিমের হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে এসে বলে,
– এতোটুকু এতদিনে বেশ বুঝতে পেরেছি বেশ আহ্লাদী তুমি? আমার কাছে ও আদর আহ্লাদ ঠিক তখন পাবে যখন আমার কথা শুনে চলবে তুমি।কত বার তোমাকে বাহির বাহিরে অফ সোল্ডার ব্লাউজ,গাউন বা ড্রেস পরে বের হতে না করেছি আমি? ছেলেরা তোমাকে বাজে নজরে দেখে ইল কমেন্ট পাস করে সেটা কি বুঝতে পারোনা তুমি? মিম বোকার মতো প্রশ্ন করে,
– আপনি থাকতে আমি এতো কিছু কেন বুঝতে যাবো শুনি? আপনি তো বলেন কেন মেয়ে? কি পড়ল? তা নিয়ে আপনার কোনো মাথা নেই শুধু আমার সাথে আপনি এমন করেন কেন শুনি? ইমান চুপ করে মিমের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি সে।ইমান নিজে ও বুঝতে পারছেনা মিমকে নিয়ে তার এতো কিসের চিন্তা? এতো কেন রক্ষনশীলতা ও অবলম্বন করছে এই মেয়েটির ব্যাপারে? কি ভেবে ইমান ওকে জিজ্ঞেস করে,
– তুমি ফিরে যেতে চাও তোমার মা ও ভাইদের কাছে? ও হাসতে হাসতে বলে,
– আমার জন্যেই তো আমার মায়ের যত কষ্ট।আমি গিয়ে কি করে মুখ দেখাবো তাকে? আজ আমি দোষ না কোরে ও দোষী সবার কাছে।আপনি কি জানেন নিজের ভালোবাসার মানুষ টাকে নিজের বোনের সাথে এক বিছানায় অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখতে কেমন লাগে? ওই মানুষ টার কোনো দোষ নেই আমার বোন বড্ড নোংরা খেলা খেলেছে সবার সাথে।আজ আমার বাবা আপুর পক্ষে নিতে গিয়ে মায়ের সাথে জেদ ধরে তার মরহুম বড় ভাইয়ের বয়সী বিধবা স্ত্রীকে বিয়ে করে নিয়েছে।এটা কতটা যুক্তিযুক্ত সবার কাছে?
সবাই শুধু আপুর বানানো মিথ্যে গল্প গুলো বিশ্বাস করেছে।
শুধু মা ছাড়া কেউ বিশ্বাস করেনি আমাকে।
আমি মাকে বলে ছিলাম বাবা যদি দাদুর কথায় অন্য একটা মহিলা কে বিয়ে করতে পারে তুমি কেন ছাড়তে পারবেনা তাকে?
মা আমাকে খুব মেরেছিল সেদিনের পর থেকে আমি আর কিছু বলিনি তাকে।
তারপর আমাকে জোড় করে একটা মদখোর মাতাল টাইপ লোকের সাথে বিয়ে দেওয়া হচ্ছিল।
আমি সেটা কি করে মেনে নিতাম বলুন আমাকে?
আরো অনেক কিছু আছে যা শুনলে আপনার মনে হবে এই মেয়ে টা কাঁদুনি গাইছে আপনার কাছে।
ইমান চুপ করে তাকিয়ে আছে ওর শুকনো মুখের দিকে।
ও বুঝতে পারছেনা আপাতত কি বলে শান্তনা টুকু দেওয়া যাবে মেয়ে টাকে?
কোর্টে কেস জিতে মাহি আলম চৌধুরী বড় ছেলেকে ডেকে বলেন,
– আজ আমি মুক্ত এমন একটা বাজে সম্পর্ক থেকে আর আজ আমার মেয়ে টা নেই আমার পাশে।মাহির চৌধুরীর মাহি আলম চৌধুরী কে বলেন,
– তোমার মেয়ে তো? দেখো হয়তো শুয়ে আছে কোনো পর পুরুষের সাথে।মাহি চৌধুরী তেড়ে গিয়ে তাকে ঠাস করে একটা চড় মেরে বলে,
– আমার মেয়ে বলেই আমি সবসময় আছি তার সাথে।আপনার ওই জারজ সন্তান আমি ও দেখবো খুশি থাকে কি ভাবে? কারো সুখ শান্তি কেড়ে নিয়ে সুখে থাকা যায় না সেভাবে।তাই আপনার ওই মেয়ে সুখ শান্তি কোনো টাই দেখবে না চোখে।
একদিন আমার মেয়ের সত্যতা প্রকাশ পাবে।তখন আর কিছু থাকবে না আপনার সাথে।
আপনি একটা ভুল মানুষের সঙ্গ দিতে গিয়ে হারালেন আপনার তিন বৈধ সন্তান এবং স্ত্রী কে আমার মেয়ের কথা বাদদিলাম ছেলে রাও চায় না আপনাকে।আপনি আমাকে ঠকিয়ে বিয়ে করেছিলেন।কিছুই ভুলিনি, আমি সবটাই মনে আছে।আর ওই জারজ সন্তান।
তাকে কোলে তুলে দিয়ে বলেছিলেন আমি তার মা।
মায়ের মতোই আচারণ করেছি আমি তার সাথে।কিন্তু সে কি করল? বেইমানি?
তাও আবার আমার মেয়ের সুখের সাথে?
বাপ বাটপার হেলে মেয়ে তো চিটার হবেই এর থেকে বেশি কি বা আশাকরা যায় আপনার কাছ থেকে।
আপনি একটা দুশ্চরিত্র লোক সেটা তো আপনি প্রামাণ করে দিয়েছিল আরো ছয় মাস আগে।এতোই যখন আপনার ভাবির সাথে প্রেম তখন আগে কেন বিয়ে করেননি তাকে? মাহির সাহেব চেঁচিয়ে বলে ওঠেন,
– তুমি ভুল করছ মাহি।একদিন পস্তাতে হবে তোমাকে?
– আমি সত্যের সাথে আছি একমাত্র আল্লাহ ছাড়া ভয় পাইনা কাওকে।আপনার এই নষ্টা মেয়ে কখনো সুখী হবে না।মিহা এগিয়ে এসে বলে,
– মা তুমি অভিশাপ দিয়ো না আমাকে।
– ওই মুখে তুমি আর কখনো মা বলে ডাকবে না আমাকে।
তোমার মতো মানুষের ভালো কামোনা আমি কখনোই করিনা।
মাহির সাহেব স্থির নয়নে তাকিয়ে আছেন তার চার সন্তানের মায়ের মুখের দিকে।
মানুষ টা কি করে পারলে হাসিমুখে বত্রিশ বছরের সংসারের ইতি টেনে দিতে?
মাহিম এগিয়ে এসে মাহির আলম চৌধুরী কে বলে,
– চলো মা,কথা খরচ করছ কেন এমন দুশ্চরিত্র লোকের সাথে?
বোনের খবর খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবো আমরা ও ঢাকায় আছে।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com